গত ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১৬তম অনলাইন সভার সিদ্ধান্তক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে নীতিমালা গ্রহণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের আক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সকল বিভাগ/দপ্তরে নির্দেশনা প্রেরণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন- হ্যান্ড স্যানিটাইজার, থার্মোমিটার, ব্লিচিং পাউডার ইত্যাদি সেন্ট্রাল স্টোর থেকে সকল বিভাগ, দপ্তর ও যানবাহনে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি বিভাগ ও দপ্তরের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা সংক্রান্ত পৃথক পৃথক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। সেখানে মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। উল্লেখযোগ্য বিধির মধ্যে রয়েছে- করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কর্মস্থলে আসা যাবে না, কর্মস্থলে মাস্ক বাধ্যতামূলক ব্যবহার করতে হবে, চলাফেরা, কথা বলা এবং অফিসে কাজ করার সময় অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, ঘন ঘন সাবান পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে, শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে মিটিং পরিহার অথবা অতীব জরুরি হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিটিং করতে হবে। এছাড়াও পরিস্থিতির উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল করা যাবে না এবং মসজিদে ভিড় এড়িয়ে সঠিক দূরত্ব মেনে নামাজ আদায় করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না এ বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদারকে আহ্বায়ক করে ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিদর্শন টিম গঠন করা হয়েছে।
অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনাকালীন সময়ে কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় তা নিয়ে উপাচার্য স্যার প্রথম থেকেই তৎপর ছিলেন। স্যারের দূরদর্শিতায় এ সংক্রমণকালেও বিশ্ববিদ্যালয় চালু রাখা সম্ভব হয়েছে।‘
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনিটরিং টিম প্রতিনিয়ত কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রতিটি সদস্য যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত না হন সেদিকে আমাদের নজর আছে। শারীরিকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালু হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের টিম সার্বক্ষণিক কাজ করতে প্রস্তুত আছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অকারণে প্রবেশ ও ঘুরাফেরা নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রক্টরিয়াল বডির তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আবু হেনা পহিল বলেন, ‘সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের কোনো কাজ ছাড়া শুধু ক্যাম্পাস দেখতে না আসার জন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তারা করোনাভাইরাসের বিস্তার শেষ হয়ে গেলে ইচ্ছেমতো ঘুরতে পারবেন।’
‘বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন ও শিক্ষিত মানুষে ভরপুর। আমাদের দেখে দেখে দেশের মানুষ শিখবে। আমরাই যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখি, অকারণে চলাচল সীমিত না করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি তবে দেশের মানুষ নিন্দা করবে। একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া ক্যাম্পাসে আসা নিরুৎসাহিত করতে কিছু পদক্ষেপ আমরা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছি,’ বলেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনা মহামারিতে আমাদের শিক্ষা ও গবেষণার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। দাপ্তরিক কাজও সীমিত আকারে চলছে। সবই করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এমতাবস্থায় আমরা একটি কমিটির মাধ্যমে ডব্লিউএইচও এবং জাতীয় স্বাস্থ্যবিধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে অবশ্যই পালনীয় স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করেছি। সিন্ডিকেট সভায় এ নীতিমালা অনুমোদিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলের সুরক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করছে। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রকেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জমাদি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে।’
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, ক্যাফেটারিয়া, ক্লাবসহ সকল স্থাপনা জীবাণুমুক্ত করাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ‘বর্তমানে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হলে যখন শিক্ষার্থীরা আসবে তাদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’