তবে এ অবস্থায় চাষীদের লোকসান কিছুটা হলেও লাঘব করতে এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী। সেনা সদস্যরা মাঠে মাঠে গিয়ে চাষীদের কাছ থেকে সবজি কিনছেন।
এদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার অন্তর্গত বিত্তিপাড়া, লক্ষিপুর ও শেখপাড়া পাইকারি এ তিনটি সবজি বাজার ঘুরে ইউএনবির এই প্রতিনিধি দেখেন, প্রান্তিক চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও লাভবান হচ্ছেন পাইকাররা। এখানকার সাপ্তাহিক পাইকারি হাটে সরাসরি ঢাকা থেকে ব্যাপারীরা এসে বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার মন সবজি কিনে নিয়ে যান।
জানা যায়, কুষ্টিয়ার পাইকারি সবজি বাজারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ মণ বেগুন আসে। স্থানীয় আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এ সবজির একটি অংশ ক্রয় করে থাকেন। তবে উৎপাদিত এসব সবজির সিংহভাগই চলে যায় ঢাকার কাওরানবাজারস্থ সবজি মোকামে।
কুষ্টিয়ার পাইকারি বাজারে সর্বোচ্চ ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি বেগুন। অথচ সেই একই বেগুন কুষ্টিয়ার বিভিন্ন শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। এছাড়া পাইকারি বাজারে লম্বা জাতের নতুন বেগুন ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি হলেও শহরের বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি। এর ফলে পাইকার ও মধ্যসত্ত্বভোগীরা লাভবান হলেও প্রান্তিক চাষীরা লাভের মুখ দেখছেন না।
এদিকে পাইকারি এ বাজারে শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২০/২৫ টাকা দরে। করোনা সংকটের আগে শসার পাইকারি দর ছিল প্রতি কেজি ৩০ টাকা। বর্তমানে শহরের বাজারগুলোতে প্রতি কেজি শসার খুচরা দর ৩৫/৪০ টাকা। এছাড়া মরিচের দাম আগের তুলনায় একেবারে পড়ে গেছে। খুচরা বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরের কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫/৩০ টাকা দরে। কাঁচা মরিচের পাইকারি বাজার দর আরও কম।
কৃষকরা জানান, বাজারে সরবরাহ প্রচুর হলেও সে তুলনায় চাহিদা ঘাটতি পড়ায় সবজির বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে।
বিত্তিপাড়া বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রাজ্জাক মন্ডল জানান, সবজির বাজার এখন নিন্মমুখী। তবে সবজির বাজার ওঠা-নামা করে বলেও তিনি জানান।
কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটি বাজারের সবজি আড়ৎদার বাবু জানান, কাঁচামালের বাজার প্রতিদিন এক থাকে না। এছাড়া চাহিদা ও সরবরাহের উপর সবজির মতো কাঁচামালের দাম নির্ভর করে।
কুষ্টিয়ার কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার জেলায় ১০৬০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩৪.০৯ মেট্রিক টন হিসাবে মোট উৎপাদন টার্গেট নির্ধারণ করা হয় ৩৬ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন বেগুন। এছাড়া শসা চাষ করা হয় ৪০৩ হেক্টর জমিতে। এতে প্রতি হেক্টরে ২১ মেট্রিক টন হিসাবে মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৪ হাজার ৯ মেট্রিক টন শসা। আর ১৬৯৫ হেক্টর জমিতে চাষকৃত মরিচে প্রতি হেক্টরে ৩ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। জেলায় ১৩ হাজার কৃষকের প্রত্যেককে এক বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদনের সমপরিমান বীজ ও সার দেয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে ৩০ হাজার কেজি আউশ ধানের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শ্যামল কুমার বিশ্বাস জানান, যেকোনো মহামারির পর খাদ্য সংকট দেখা দিবে এটা স্বাভাবিক। তবে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যশোর সেনানিবাসের ২০ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা সদস্যরা জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক সবজি চাষীদের জমিতে থাকা সবজি বাজার মূল্যে কিনে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অস্বচ্ছল পরিবারের মাঝে তা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর ফলে এলাকার বিপুল সংখ্যক চাষী বর্তমান সময়ে ব্যাপক উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি নগদ টাকা হাতে পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
জেলার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামের সবজি চাষী শুর আলী বলেন, সঠিক মূল্য না পাওয়ায় জমিতেই অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এখন সেনাবাহিনী এসব সবজি ন্যায্যমূল্যে কিনে নেয়াতে আমরা নগদ টাকা হাতে পেয়েছি।
একই গ্রামের সবজি চাষী সাদেমুল বলেন, আমার জমিতে আবাদকৃত কুমড়া বিক্রি করতে না পারায় দু:চিন্তায় ছিলাম। এখন সেনাবাহিনী নগদ অর্থে বাজার মূল্যে কুমড়া কিনে নেয়ায় আমি উপকৃত হয়েছি। সেনাবাহিনীর এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে কৃষকেরা দারুনভাবে উপকৃত হবে বলে জানান কৃষকরা।
এ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকা সেনাবাহিনীর সদস্য মেজর ওয়াহিদ জানান, করোনার কারণে বাজারে চাষীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে যেতে পারছেন না। এছাড়া বাজারে ক্রেতা কম থাকায় সবজি বিক্রিতে উপযুক্ত মূল্য না পাওয়াতে অনেক স্থানে জমিতেই কৃষকের কষ্টের ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার পাশাপাশি প্রান্তিক অসহায় রোজগারহীন পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ এবং জেলার প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে শাক সবজি ক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই সবজি ক্রয় করে যশোর সেনানাবিাসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থানে অস্বচ্ছল মানুষদের মাঝে তা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।