জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কয়রায় ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৯ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এছাড়া ৩২টি মাধ্যমিক এবং তিনটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৩ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
কিছু সংখ্যক নলকূপ ভালো থাকলেও প্রচুর লবণাক্ততার কারণে সেগুলোর পানি পান করার উপযোগী নয়। এ কারণে কয়রার অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলোতে খাবার পানি সংকটের বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে সর্বত্রই।
জানা গেছে, কয়রা উপজেলার কয়েকটি এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সুপেয় পানি সংকট দূর করতে ও শিক্ষার্থীদের আর্সেনিক থেকে রক্ষার জন্য সরকার পিইডিপি-২ প্রকল্পের আওতায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে আর্সেনিকমুক্ত রিং টিউবওয়েল বা ইদারাযুক্ত নলকূপ স্থাপন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। সরকারি বরাদ্দে ওই অর্থবছরে প্রতিটি নলকূপ স্থাপনে প্রায় ১ লাখ টাকা করে খরচ করা হয়।
কিন্তু ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যেনতেনভাবে কাজ করায় নলকূপগুলো বর্তমানে অকার্যকর হয়ে পড়ে রয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত স্থাপিত নলকূপগুলোর মধ্যে মদিনাবাদ মডেল, গড়িয়াবাড়ি, মনোরমা, ৬নং কয়রা, কাশির খাল ধার, পাথর খালি, ৪নং কয়রা, ৩নং কয়রা, বতুল বাজার, খেজুর বাগ, সিদ্দিকিয়া, মঠবাড়ি, হায়াতখালি, উত্তরচক, হড্ডা ডি.এম, পল্লীমঙ্গল, চৌকুনী, কালীকাপুর, ভাগবা, গিলাবাড়িসহ বিভিন্ন মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
স্থানীয়রা জানায়, এ সকল নলকূপ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে আসছে না। অনেক নলকূপে পানি ওঠে না, আবার উঠলেও তা লবণাক্ততার কারণে পান করা সম্ভব হয় না। তাছাড়াও নলকূপগুলো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
গড়িয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকুমার থান্দার বলেন, নলকূপগুলো স্থাপন করার পর কিছুদিন ভালো ছিল। তবে কিছুদিন পর সংস্কারের অভাবে সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে।
‘নলকূপগুলো স্থাপন করার সময় ত্রুটি ছিল। যত গভীর করার প্রয়োজন ছিল ততটা করা হয়নি। বর্ষা মৌসুমে কিছু দিন পানি থাকে। শুষ্ক মৌসুমে মোটেও পানি থাকে না। অনেক কষ্টে কিছু পানি উঠলেও তা লবণাক্ততার কারণে পান করা যায় না,’ উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে মনোরমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, মনোরমা বিদ্যালয়ে একটি নলকূপ স্থাপন করা হলেও বর্তমানে সেটি অকেজো। সম্প্রতি একটি নলকূপ বসানো হলেও সেটির পানি অতিরিক্ত লবণাক্ত হওয়ায় পান করার অযোগ্য।
বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছ আলী বলেন, তার বিদ্যালয়ে নলকূপ বসানো হলেও প্রচুর লবণাক্ত থাকায় তা পান করা যাচ্ছে না। যে কারণে বাধ্য হয়ে এর পানি শুধু হাত ও মুখ ধোয়ার কাজে ব্যবহার করছে শিক্ষার্থীরা।
গড়িয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর অভিভাবক মো. সাহেব আলী বলেন, বিদ্যালয়ের পানিতে সমস্যা থাকায় তিনি তার সন্তানের স্কুল ব্যাগে প্রতিদিন বোতলে করে পানি দিয়ে স্কুলে পাঠান। এ রকম সমস্যা রয়েছে প্রায় সব বিদ্যালয়ে।
এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার বলেন, বিষয়টি আমলে নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দ পাওয়া গেলে এগুলো সংস্কার করা হবে।