খুলনা ১৭ নভেম্বর ২০১৮ (ইউএনবি)- খুলনার শিপইয়ার্ড সড়ক ৪ লেন প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই ব্যয় বাড়ছে আরও ১৩৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ৭ মে একনেকে অনুমোদিত হয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি। পৌনে ৩ কিলোমিটার এই সংযোগ সড়কের তখনকার ব্যয় ছিলো ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু সঠিক সময় কাজ শুরু করতে পারেনি খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)।
যার কারণে প্রথম দফায় জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ২৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় গত ১৫ অক্টোবর প্রকল্প সংশোধন করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে যাচ্ছে আরও ১৩৩ কোটি টাকা। দুই দফায় ব্যয় বাড়লেও সাড়ে ৫ বছরে একটি ইটও বসেনি সড়কটিতে। ব্যয় বাড়লেও সাড়ে ৫ বছরে প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় ভীষণ ক্ষুব্ধ খুলনার মানুষ।
তবে আশার কথা হচ্ছে, দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে প্রকল্পটি। ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করা জমি বুঝে নিয়েছে কেডিএ। দু’টি স্থানে স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে। বাকিটুকু শুরু হবে এই মাসেই। সবঠিক থাকলে আগামী বছর শুরু হবে কাঙ্খিত এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ-পূর্বের জেলাগুলো থেকে খুলনা শহরে প্রবেশ করতে প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। রূপসা সেতুর নিচে দিয়ে মহানগরীতে প্রবেশের জন্য একটি সড়ক থাকলেও সেটি খুবই সরু। পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে ৫ বছর আগে নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে রূপসা সেতু পর্যন্ত সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)।
কেডিএ থেকে জানা গেছে, রূপসা নদী ঘিরে শিল্পায়ন ও নদীর তীরকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে ৩ দশমিক ৭৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। সড়কের দুই পাশে মানুষের হাটার জন্য প্রশস্ত ফুটপাত, মাঝখানে দশমিক ৯২ মিটার রোড ডিভাইডারে ফুলের বাগান করার পরিকল্পনা আছে। মূল রাস্তা, রোড ডিভাইডার, ড্রেন ও ফুটপাত মিলিয়ে সড়কটি ৬০ ফুট চওড়া হবে। সড়কের দুই পাশে ড্রেন, সড়ক বাতি, একটি কালভার্ট, মতিয়াখালী স্লুইস গেট পুর্নর্নিমাণ ও লবণচরায় একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে সড়কটি নকশা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত সড়কটি নির্মাণের জন্য বর্তমান সড়কের দুই পাশের ২ দশমিক ৮৯৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত জমি নিয়ে স্থানীয়দের আন্দোলন, মামলা, জমির ম্যাপ, খতিয়ানসহ বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করতেই সময় লেগেছে প্রায় ৫ বছর। মূলত জমি জটিলতাতেই এই কাজ পিছিয়ে গেছে।
প্রকল্পের পরিচালক ও কেডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরমান হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে প্রত্যাশিত সড়কের কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। কিন্তু সময় যাওয়ায় প্রতিটি জিনিসের ব্যয় বেড়েছে। গত ৪ বছরে শুধু জমির দাম বেড়েছে ২৭ কোটি টাকা। প্রথম দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ১২৬ কোটি টাকা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পরামর্শক সংস্থা নকশা ও ব্যয় প্রাক্কলন করেছে। নতুন প্রাক্কলন হিসেবে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ২৫৯ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এজন্য প্রকল্প সংশোধনের জন্য গত ১৫ অক্টোবর ঢাকায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি অধিগ্রহণ করা জায়গার স্থাপনা অপসারণের কাজ চলছে।
কেডিএর প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী সাবিরুল আলম বলেন, চলতি মাসে বাকি অংশের স্থাপনা অপসারণের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ এগিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, আমরা যে কোনো মূল্যে চলতি বছরের মধ্যে সড়কের কাজ শুরু করতে চাই। এজন্য চতুর্মুখী কাজ চলছে। প্রকল্প সংশোধনের সঙ্গে সঙ্গে দরপত্র প্রক্রিয়াও এগিয়ে রেখেছি। দ্রুত যাতে কাজটি শেষ করা যায় এজন্য দেশের শীর্ষ স্থানীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখছে। প্রকল্প অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই ৪ লেন সড়ক দৃশ্যমান হবে।