শ্বাস-প্রশ্বাসে কিছুটা সমস্যা এবং মাস্ক ব্যবহারে মুখ বন্ধ হয়ে থাকার কারণে অনেকেই মুখে মাস্ক না ব্যবহার করে মুখের নিচে দিয়ে রাখে। এর ফলে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা খুলনায় ২ হাজার ৯৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় জেলা ও মহানগরীতে নতুন করে ৮০ জন শনাক্ত হয়েছে। মোট আক্রান্তের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৬৯৯ জন, মারা গেছে ৪৩ জন।
খুলনার রিকশাচালক আব্দুল করিম বলেন, মাস্ক মুখে দিয়ে রিকশা চালালে অনেক সময় দম লেগে যায়। মনে হয় আর চালাতে পারবো না। এজন্য পেটের দায়ে অনেক সময় মাস্ক মুখের নিচে দিয়ে রাখি।
ইজিবাইক চালক সোবহান মিয়া বলেন, করোনাভাইরাসের প্রথম দিকে সবাই মাস্ক ব্যবহার করতে খুব আগ্রহী ছিল। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই মাস্কই ব্যবহার করে না।
দিনমজুর সালেহা খাতুন বলেন, তার এমনিই শ্বাস কষ্টের সমস্যা। তারপরও কাজ করে খেতে হয়। তাই মাস্ক ব্যবহার করতে পারি না।
খুলনা জেলা ডেপটি সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, মাস্ক মুখে সঠিক উপায়ে ব্যবহার না করলে আক্রান্তের ঝুঁকি অবশ্যই বাড়বে। কেননা হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে এ ভাইরাসটি ছড়ায়। মাস্ক ব্যবহারে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণে সমস্যা ছাড়া আরও কিছু সমস্যা হয়। তারপরও নিজে, নিজের পরিবার ও নিজের কমিউনিটিকে রক্ষা করার জন্য কষ্ট হলেও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তবে কিছুটা কষ্ট নিবারণ করার জন্য গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করেছেন এ কর্মকর্তা।
এদিকে, খুলনা মহানগরী ও জেলার তিনটি এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন করার পর থেকে করোনা রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গত দুই সপ্তাহ আগে যেখানে প্রতি লাখে ১০ জন করে মানুষ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছিল, সেখানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ জনে। বর্তমানে এ তিনটি জায়গা রেড জোন থেকে ইয়েলো জোনে নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, লকডাউনের কারণে মানুষের চলাচল কমে যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা এবং দোকানপাট বন্ধ রাখার কারণে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকায় গত ২৫ জুন মধ্য রাত থেকে ২১ দিনের জন্য খুলনা মহানগরীর ১৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং রূপসা উপজেলার আইচগাতি ইউনিয়নকে রেড জোন ঘোষণার মাধ্যমে লকডাউন করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত খুলনা জেলা কমিটি। রেড জোন সফলে নগরীর ১৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং আইচগাতি ইউনিয়নের ৬৪টি সড়কের প্রবেশ দ্বারে ব্যারিকেড ও আইচগাতি ইউনিয়নের ৬টি ঘাটে ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া এসব স্থানে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, লকডাউন ঘোষিত তিনটি এলাকায় প্রায় ১ লাখ ২০হাজার মানুষ বসবাস করে। রেড জোন ঘোষণার আগে উক্ত তিনটি এলাকায় ১০জনের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে, লকডাউন শুরু হওয়ার পর গত ১৩ দিনে তা কমে ৮জনে নেমে এসেছে।
লকডাউন ঘোষণার আগে রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নে ৪৬জন করোনা রোগী ছিল। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২১জনে। এছাড়া লকডাউন ঘোষণার পর জনবহুল এ ইউনিয়নে কেউ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়নি। লকডাউন ঘোষণার আগে নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩৩ জন। গত দুই সপ্তাহে এ ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৮ জন। এর আগে যারা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন তাদের অধিকাংশই সুস্থ হয়েছেন। অপরদিকে লকডাউন ঘোষণার আগে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৬৫জন। গত দুই সপ্তাহে এ ওয়ার্ডে মাত্র একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আইচগাতী ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন বোঝা যাচ্ছে, মানুষ সচেতন হলে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, মানুষ প্রথম দিকে করোনাকে গুরুত্বই দেয়নি। এ সব মানুষের জন্যই আমাদের ওয়ার্ডে লকডাউন দিতে হয়েছে।
অপরদিকে, নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মফিজুর রহমান গোর্কি বলেন, মানুষ সচেতন না হলে লডডাউন দিয়েও করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে না।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, খুলনা মহানগরীর ১৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ তিনটি জায়গায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। লকডাউনের কারণে গত দু’সপ্তাহে এ তিনটি জায়গায় করোনা রোগীর সংখ্যা কমেছে।
তিনি আরও বলেন, লকডাউনের কারণে মূলত মানুষের চলাচল কমে যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাজারঘাট নিয়ন্ত্রণে থাকা এবং দোকানপাট বন্ধ রাখার কারণে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে এই তিনটি জায়গা রেড জোন থেকে ইয়েলো জোনে নেমে এসেছে।
সিভিল সার্জন জানান, করোনা রোগীদের জন্য খুলনা সদর হাসপাতালে ১২টি নিবিড় পরিচর্যাসহ (আইসিইউ) ৪২ বেড প্রস্তুত করা হচ্ছে। এটি চালু হলে করোনা রোগীরা আরও বেশি সেবা পাবে।