প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে শত শত যানবাহনে যশোর, খুলনা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে কয়েক হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। এই টার্মিনালের সামনের চত্বরে ছোট্ট একটি ডোবা আছে। দীর্ঘদিন থেকে ওই ডোবায় ফেলা আবর্জনা ডোবা ছাপিয়ে এখন টার্মিনাল চত্বর পেরিয়ে সড়কে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে বাস টার্মিনালটি এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যে কারণে ময়লার ভাগাড়টি এখন উম্মুক্ত, যে কেউ ময়লা ফেলে চলে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাস টার্মিনাল চত্বর ও তার আশপাশ জুড়ে ময়লার একটি বিশাল স্তুপ পড়ে আছে। জেলা শহরের একমাত্র ময়লার ভাগাড় এটি। শহরের বাড়িঘর ও বাজারের সবধরনের আবর্জনা, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের ময়লা এখানে ফেলা হচ্ছে। এ থেকে চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশে নষ্ট হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি যাত্রী ও পথচারীর নাভিশ্বাস অবস্থা।
টার্মিনাল ঘিরে গড়ে উঠেছে গাড়ি ও যন্ত্রাংশ মেরামতের ২৪টি কারখানা। দুর্গন্ধের কারণে এ কারখানার কর্মীরা নাকে ও মুখে গামছা বা মাস্ক বেঁধে কাজ করেন। আছে একটি মাত্র চায়ের দোকান। তবে দুর্গন্ধের কারণে সেখানে কেউ বসেন না। এমনকি দুর্গন্ধ ঠেকাতে টার্মিনালের দোতলায় শ্রমিক কার্যালয়ের দরজা-জানালা বন্ধ করে বসেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ময়লার ভ্যানে করে এখানে ময়লা ফেলতে এসেছিলেন শহর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি এনজিওর শ্রমিক বুলবুল ইসলাম ও ইউনুছ শেখ। তারা জানান, প্রায় তিন বছর ধরে তারা এখানে শহরের ময়লা ফেলছেন। শহরে আর কোনো বিকল্প ভাগাড় নেই।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় যন্ত্রাংশ মেরামত কারখানার মালিক মো. কালাচাঁন বলেন, নড়াইল সদর পৌরসভার ময়লাগুলো এনে রাস্তার পাশেই ফেলে চলে যায়। পৌরসভা এলাকার প্রতিদিনের ময়লার রাখতে রাখতে ময়লার বিশাল স্তুপ হয়ে উঠেছে। এতে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে অবস্থানকারীরা মাঝে মাঝেই অসুস্থ হচ্ছেন। যে কারণে অন্যকোনো দোকানপাট এখানে বসে না। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এখানে থাকি।
স্থানীয় ও শ্রমিকেরা জানান, দ্বিতল ভবন তৈরি করে ২০০৪ সালে এ বাস টার্মিনাল চালু হয়। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে এখানে ময়লা- আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে পথচারীদের অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে।
বাস টার্মিনাল মসজিদের মোয়াজ্জিন আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, দুর্গন্ধের কারণে মসজিদে বসে থাকা যায় না। এলাকাবাসী বিষয়টি মেয়র ও জেলা প্রশাসনকে বারবার বললেও এর কোনো প্রতিকার নেই।
জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, যাত্রীরা এখানে বসবে, দাঁড়াবে দুর্গন্ধের জন্য সে অবস্থা নেই। জেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির জুন মাসের সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে নড়াইলের মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, ভাগাড় তৈরির জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। বাইরে জমি কিনে করার জন্য পৌরসভার পর্যাপ্ত তহবিলও নেই। তবুও বিকল্প ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে আর ওই স্থানে উম্মুক্তভাবে ময়লা ফেলানো হবে না।
জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘নড়াইল শহরে ঢুকতেই এ দৃশ্য দেখছেন বাইরে থেকে আসা লোকজন। এতে জেলা সম্পর্কে খারাপ ধারণা হওয়া স্বাভাবিক। এছাড়া স্থানীয়দের দুর্ভোগতো আছেই। বিকল্প জায়গার অভাব। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’