কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার ও জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আরো ১০ হাজার পরিবার পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। গত কয়েকদিনের বর্ষণের কারণে কক্সবাজারে পাহাড়ে থাকা লোকজন ভয়ংকরভাবে জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আজমুল হুদা বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফে সাড়ে ৬ হাজার একরের বেশি পাহাড় কেটে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। এদের অধিকাংশ পরিবার পাহাড়ের ধসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
‘এর পাশাপাশি কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর বাদশাঘোনা, লাইট হাউজ, দক্ষিণ ডিগকুল, দক্ষিণ হাজি পাড়া,পাহাড়তলী, সাহিক্যিকা পল্লী, ঘোনারপাড়া, মহেশখাইল্ল্যা পাড়া, কলাতলী আদর্শগ্রাম, বড়ছড়া, বৈদ্যঘোনা, মোহাজের পাড়া, লিংকরোড, মুহুরী পাড়া জানারঘোনা পাহাড়ি এলাকার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে অনেকে,’ যোগ করেন তিনি।
আজমুল হুদা বলেন, ‘রামু, মহেশখালী, টেকনাফ, উখিয়া ও পেকুয়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ১০ হাজার পরিবার ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। আর এসব বসতি বনভূমি ও পাহাড়ি খাস জমিতে গড়ে উঠেছে।’
ইউএনবি প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে শহরের বাসিন্দারা জানান, জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন বনভূমি ও পাহাড় কেটে বহু অবৈধ স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, বর্ষা মৌসুমের আগে পাহাড়ে অবৈধভাবে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করা জরুরি ছিল। পাহাড়ে দিন দিন অবৈধ বসতি বেড়ে যাচ্ছে। এখন পাহাড় ধস হলেই মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হবে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরুল আমিন বলেন, ‘২০১০ সালে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূমিধসের কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন সদস্যসহ অন্তত ৫৪ জন মারা গেছে। ভূমিধসে ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুই শতাধিক প্রাণহানি হয়েছে।’
তিনি বলেন, প্রতিবছর পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। এই জন্য শুধু অভিযান করে এর সমাধান হবে না। সবাইকে সচেতন হতে হবে।
নূরুল আমিন জানান, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। তবে লোকবল কম থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থানে চুরি করে পাহাড় কাটা হয়। খবর পেয়ে পরে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ বনবিভাগে প্রায় ৫ হাজার ৩৪১ হেক্টর জমি এবং পশ্চিম বন বিভাগের অধীনে ৭ হাজার ০৫৩ হেক্টর জমি দখল হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের আওতাধীন খাস খতিয়ানের অনেক পাহাড়ি ভূমিও দখল হয়ে গেছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন ইউএনবিকে বলেন, পাহাড়ে বসবাসরত ব্যক্তিদের গত বছরের মতো এবারও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হবে। গত বছর সমন্বিতভাবে কাজ করার কারণে কোনো গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটেনি। এবারও কমিটি গঠন করে পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি ও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করা হবে।