অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থীরা এবং দেশের জনগণ একটি ভাল ডাকসু নির্বাচনের জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করলেও দুর্ভাগ্যজনকভবে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে বিতর্ক ও অনিয়মের নির্বাচনে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, তারা শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করেননি, তবে শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মতো জালিয়াতি ও এ ধরনের অনিয়মের কথা কল্পনাও করতে পারেননি।
সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘১১ মার্চের বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে অনেক প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে কুয়েত মৈত্রী হল থেকে সিলমালা বস্তাভর্তি ব্যালট পেপার উদ্ধার করা বিস্ময়কর ঘটনা। রোকেয়া হলেও সিলমারা ব্যালট বাক্স পাওয়া যায়। এছাড়াও ছাত্র সংগঠনগুলো কিছু গুরুতর অভিযোগ এনেছে।’
ড. আরেফিন বলেন, ডাকসু নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ও জালিয়াতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে চিহ্নিত করা এবং তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। অতীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নির্বাচন এমন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল না। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বের করতে হবে কেন এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
তিনি বলেন, নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স কেন ব্যবহার করা হয়নি ও সোমবার সকালের বদলে রবিবার রাতে কেন পাঠানো হয়েছে সে বিষয়েও তদন্ত করা দরকার। ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট ড. মিজানুর রহমানকে ভোটের মাত্র দুই দিন আগে কেন পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় সেটা নিয়ে তদন্ত করতে হবে।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রখ্যাত অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ডাকসু বিতর্কিত হয়েছে কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সকল শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তিনি বলেন, হলের পরিবর্তে প্রশাসনিক বা একাডেমিক ভবনগুলোতে নির্বাচন করা উচিত ছিল। ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের হলগুলোতে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম ছিল না।
এছাড়া তিনি বলেন, নির্বাচন সময় সংক্ষিপ্ত ছিল এবং এটি অন্তত আট ঘণ্টা হতে পারতো।
বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ মনে করেন, পুনর্নির্বাচনের জন্য শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেবে কর্তৃপক্ষ এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। শিক্ষার্থীদের সত্যিকারের অভিভাবক হিসেবে নিরপেক্ষ ও সৎ ভূমিকা পালন না করলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।
এদিকে স্বাধীনতার পর ডাকসুর প্রথম ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আপনি এটিকে কোনভাবেই নির্বাচন বলতে পারবেন না। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের যৌথভাবে মঞ্চায়িত একটি প্রতারণা ও প্রহসন।’
তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এখন নির্বাচন অনিয়মের তদন্ত করতে সুপ্রিম কোর্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত সংস্থা গঠন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও মর্যাদা বজায় রাখার জন্য ডাকসু পুনর্নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি সেলিম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি দুর্ভাগ্যজনক যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ভোটের অধিকার ছিনতাই করার পরিবর্তে ভোট জালিয়াতি সঙ্গে জড়িত। আমাদের শিক্ষকরা সততার সঙ্গে আপোস করছেন যা দেশের জন্য একটি অশুভ সংকেত।’
ডাকসুর সর্বশেষ ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হয় জনগণকে তা দেখানোর সুযোগ পেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা করতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা তাদের নৈতিকতা, মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একটি পক্ষের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করেছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য এখন নিরপেক্ষ শিক্ষকদের অধীনে পুননির্বাচনের ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা হারাবে।