ফরিদপুর, ২১ নভেম্বর (ইউএনবি)- ফরিদপুর শহরতলীর সিএন্ডবি ঘাটটিকে দুই বছর আগে পূর্ণাঙ্গ নৌবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্ত ওই ঘোষণাই সার, নৌবন্দরের প্রাপ্য কোনো সুযোগ-সুবিধাই সেখানে এখনও মিলেনি। এমনকি শীত মৌসুমের আগেই নাব্যতা সংকটে প্রায় অচল হতে বসেছে বন্দরটি।
বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের একমাত্র নৌবন্দর এটি। পদ্মা নদীর তীরে শতবছরের ঐহিত্যবাহী এই ঘাটটিতে নৌবন্দরের উন্নীত হওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিল পণ্য পরিবহনসংশ্লিষ্ট ও ব্যবসায়ীরা। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও প্রত্যাশা করেছিল তাদের জীবনমান উন্নয়নের।
কার্যত ঘোষিত নৌবন্দরের দীর্ঘ সময়েও বাস্তবে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন চোখে না পড়ায় হতাশ স্থানীয়রা।
ফরিদপুর নৌবন্দরের কয়লা ও রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বিআইডব্লিউটিয়ের উদাসীনতায় আজও সংস্থাটির নিজস্ব কোনো স্থায়ী জায়গা বা অফিস নেই, নেই সংযোগ সড়কও।
তিনি বলেন, একটিমাত্র পন্টুন দিয়ে ধীরগতিতে নামছে বন্দরের আসা জাহাজ, কারগো’র মালামাল।
মালবোঝাই জাহাজের নাবিক মো. দীন ইসলাম জানান, বন্দরে সার, সিমেন্ট, চাল, পাথর, কয়লা, বালুসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী জাহাজগুলো সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা থাকতে হয় পদ্মা নদীতে। এতে প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়ছে এই রুটে পণ্য বহনকারী জাহাজ-কারগো মালিক ও পণ্য সরবরহকারী ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বন্দর সচল না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ছে ঘাট শ্রমিকরাও।
কুষ্টিয়ার সিমেন্ট ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, সময় মতো মালামাল না আসায় ও আটকে থাকা নৌযান থেকে ছোট ছোট নৌযান ব্যবহার করে পণ্য খালাস করে ঘাটে আনায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
ফরিদপুর নদী-বন্দরের কুলি শ্রমিকের সরদার জাফর শেখ জানান, এই বন্দরে ৬ হাজার বেশি শ্রমিকের জীবন-জীবীকা রয়েছে। যাদের একটি বড় অংশ এখন অলস সময় কাটাচ্ছেন।
তিনি বলেন, নদীর নাব্যতা না থাকায় কার্গো ঝাহাজ এখন কম আসছে। এতে বেকার হয়ে পড়ছে শ্রমিকরা।
বন্দর ইজারাদার কর্তৃপক্ষ নাফিজুর রহমান তাপস জানান, বর্তমান এলজিআরডি মন্ত্রীর চেষ্টায় সিএন্ডবি ঘাট ফরিদপুর নদীবন্দরে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে চট্রগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য আসে ফরিদপুর নদীবন্দরে। আর ফরিদপুর থেকে প্রতিদিন গরু ও ধান, পাটসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয় বিভিন্ন এলাকায় এবং বিভিন্ন বন্দর থেকে সিমেন্ট, বালু, কয়লা, রডসহ কমপক্ষে ৫০ ধরনের পণ্য আনা-নেয়া করা হয়।
তিনি বলেন, নাব্যতা সংকট দুরীভূত না হলে মালামাল পরিবহন কমে যাবে, এতে কমে যাবে রাজস্ব আদায়।
‘ড্রেজিং করে ফরিদপুর নৌবন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ যাতায়াতের সুব্যবস্থা করার পাশা-পাশি বন্দরের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান বন্দর ইজারাদার।
ফরিদপুর চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ফরিদপুর নদীবন্দরটি এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘাটটি বন্দর ঘোষণার পরেও বিআইডব্লিউটিএ’র দৃশ্যমাণ কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড না থাকায় বন্দরটি দিন দিন তার ঐহিত্য হারাতে বসেছে।
তিনি নদীতে নাব্যতা সমস্যা নিরসনসহ বন্দরের সরকারি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার সেলিম রেজা ফরিদপুর বন্দরের বিষয়ে বলেন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এরই মধ্যে জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। জরিপ শেষে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। এছাড়াও এই বন্দরের বড় ধরনের উন্নয়ন কাজের জন্য ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ।