পরিবেশ অধিদপ্তর, সড়ক বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভূমি অফিস অবৈধ এই স্থাপনাটি উচ্ছেদে একমত হলেও বেসরকারি সংস্থাটির নানা তৎপরতায় পেরে উঠতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন।
এমনকি নদী তীরের এই অবৈধ স্থাপনা রক্ষায় জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানদের বিবাদী করে বগুড়ার দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করেছে এনজিও সংস্থা টিএমএসএস।
সূত্র জানায়, সরকারের নির্দেশনায় সারাদেশের মতো নদী দখলমুক্ত করতে বগুড়ায়ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো মাঠে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় বারবাকপুর মৌজার ৬৪০৫ নং দাগে সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত করতোয়া নদীর সীমানা সিএস নকসা অনুসারে সরেজমিন পরিমাপ করা হয়। পরিমাপে দেখা যায় ৬৪০৫ নং খাস খতিয়ানভুক্ত করতোয়া নদীর সিংহভাগ টিএমএসএস’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘মম ইন পার্কের’ স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। অবৈধ অংশের স্থাপনাটির পরিমান ০.০৬০৬ একর।
অবৈধ এই স্থাপনা চিহ্নিত করার পর তা উচ্ছেদে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানান পওর নির্বাহী প্রকৌশলী। এরপর টিএমএসএস নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম তার প্রতিষ্ঠানের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মুখে পড়ছে- এমন অবস্থা আঁচ করতে পেরে গত ১০ এপ্রিল বগুড়া জেলা প্রশাসক, পওর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২৭ জুন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। যার ফলে নদীর বালুচরে টিএমএসএস’র দখলে থাকা ওই অবৈধ স্থাপনাটি উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত হয়ে যায়।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, জায়গাটি দখলে রাখতে টিএমএসএস শুরু থেকেই অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যেহেতু বিষয়টি এখন আদালতে গড়িয়েছে, তাই আদালত যেভাবে বলবেন আমরা সেভাবে এগোবো।
বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আদেশ রয়েছে। জরিপে খাস জায়গা পাওয়া গেছে। যেহেতু এটি আদালতে উঠেছে, আমরাও কাগজপত্রে জবাব দেব। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনজিও সংস্থা টিএমএসএস একটি ক্ষুদ্রঋণ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৮০ সালে বগুড়ায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে। এটি একটি নারীভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এবং দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিধি মোটামোটি সারাদেশে বিস্তৃত হলেও মূল কর্মযজ্ঞ বগুড়া কেন্দ্রিক। টিএমএসএস’ উদ্যেগে বগুড়া শহরসহ আশপাশে গড়ে উঠেছে বহু কল্যাণমুলক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান করতে বিভিন্ন সময়ে সরকারি খাস জমি দখলসহ স্থানীয়দের জায়গা নামমাত্র মুল্যে দখল করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ১১ এপ্রিল বারবাকপুর মৌজার ৪৪৮০ এবং ৪৪৮১ নং দাগের সওজ (সড়ক ও জনপথ) বিভাগের সম্পতি এবং করতোয়া নদীর ৬৪০৫ দাগের সরকারি খাসজমি পরিমাপ করা হয়। ওই জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়- টিএমএসএস নির্মানাধীন পাকা স্থাপনাটির অধিকাংশ করতোয়া নদীর ৬৪০৫ নং দাগের সরকারি খাস জমিতে অবস্থিত। স্থাপনাটির অবৈধ জমির পরিমান ০.০৬৮৫ একর। ওই প্রতিবেদনে জরুরি ভিত্তিতে স্থাপনাটি উচ্ছেদের কথা বলা হয়। গত ৩ মার্চ স্থাপনাটি উচ্ছেদের জন্য ৭ দিনের মধ্যে টিএমএসএসকে চিঠি দেওয়া হয়। অন্যথায় পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ টিএমএসএসকে উচ্ছেদের ব্যয় বহন করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে । উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে পুনরায় জরিপ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন জানায় টিএমএসএস।
পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, টিএমএসএস’র নির্বাহী পরিচালক একটি আবেদন জমা দিয়েছেন। এরপর সংশ্লিষ্টদের ম্যাপসহ সরেজমিন প্রতিবেদন দিতে বলেছি, তারা প্রতিবেদন দিলে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো যাবে।
এ প্রসঙ্গে টিএমএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, সরকারি জায়গা দখল করে নয়, নিজের জায়গাতেই পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জরিপ করেছেন। জরিপকালে আমি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলাম এবং তার ছবি আছে। নদীর জায়গায় নয়, টিলার উপর পার্ক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করেছি। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতই রায় দেবে টিএমএসএস সঠিক না বেঠিক।