গত সাড়ে ৬ মাসে জেলার বিভিন্ন থানায় ২১টি মামলা হয়েছে। ২৬টি খুনের মামলা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১৭১ জন ও খুনের ঘটনায় ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
৩৮টি সংঘর্ষের ঘটনার মধ্যে জেলার সরাইল উপজেলায় ১৭টি, নবীনগর,সদরে তিনটি করে, নাসিরনগরে পাঁচটি, বিজয়নগরে চারটি, বাঞ্চারামপুর, আশুগঞ্জ ও কসবা উপজেলায় দুইটি করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত ৫ এপ্রিল সরাইল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৭টি ও সদর উপজেলার ভাদুঘর গ্রামে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, জমি নিয়ে, বাড়ির সীমানা নিয়ে, রাস্তা নিয়ে বিরোধ, পুকুরে মাছ ধরা, নির্বাচনী বিরোধ, ধানের ওপর দিয়ে ট্রাক্টর যাওয়া, এক বাড়ির হাঁস আরেক বাড়িতে যাওয়া, কথা কাটাকাটিসহ বিভিন্ন ছোটখাট ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সব সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ব্যাপক লাঠিপেটার পাশাপাশি টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ছুড়ে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ১৯ জন পুলিশ সদস্যও আহত হন। তবে এর মধ্যে দেশব্যাপী আলোচিত ছিল গত ১২ এপ্রিল নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি গ্রামে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষের মোবারক মিয়া-(৩৫) নামক এক যুবকের পা কেটে প্রতিপক্ষের লোকদের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে এলাকায় উল্লাস করা।
সবশেষ গত ১৭ জুলাই আসামি ধরতে গিয়ে আসামির ছুরিকাঘাতে সদর থানার এএসআই আমির হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
করোনার কারণে সরকারি ছুটি ঘোষণার পর গত ২৬ মার্চ থেকে গত ৪ মে পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কমপক্ষে ২১টিরও বেশি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহ্বায়ক আবদুন নূর বলেন, গ্রামে সংঘর্ষ লাগিয়ে রাখা এক শ্রেণির সর্দারের ব্যবসা। তারা নিজেদের স্বার্থে গ্রামে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ লাগিয়ে রাখে। এই বিষয়টি সাধারণ মানুষকে বুঝাতে হবে। আইনশৃংখলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ জেড এম আরিফ হোসেন বলেন, যে কোনো ব্যক্তিই কিন্তু এক একটি অর্থনৈতিক এজেন্ট। মারামারি, সংঘর্ষের ফলে ব্যক্তি ও সমাজে যে অস্থিতিশীলতা ও মানসিক চাপ তৈরি হয় তা সুষ্ঠুভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সুষ্ঠু সামাজিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যে কোন উপায়ে সংঘর্ষের পথ পরিহার করে সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো সমুন্নত রাখতে হবে।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম উদ্দিন জানান, নতুন করে আর যাতে কোনো সংঘর্ষ না হয় সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।
ওসি বলেন, ‘আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের সোর্সরা খোঁজ-খবর রাখছে। এছাড়াও এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আগের মতো সংঘর্ষ এখন আর নেই। সংঘর্ষ যাতে না হয় সেজন্য আমরা প্রতিটি এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে সচেতন করছি। এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরকে নিয়ে এলাকায় যাতে ঝগড়া-ঝাটি না হয় সেজন্য কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহার আগে ও পরে যাতে কোনো এলাকায় সংঘর্ষ না হয় সেজন্য আমরা তৎপরতা চালাচ্ছি। যে সংঘর্ষগুলোর মামলা হয়েছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসামি গ্রেপ্তার করছি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ‘