মরা খালে পরিণত হওয়া তিতাসের বিভিন্ন জায়গায় চর জেগে নদী এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। নদীকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহকারীরা তাদের জৌলুস হারিয়েছেন। খরস্রোতা তিতাসের বিশালতা এখন শুধুই সোনালি অতীত। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নদীর নাব্যতা ফেরাতে খননের কাজ চলছে। দ্রুতই নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে।
তিতাস নদীকে ঘিরে এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসা, বাণিজ্য ও কৃষিসহ এলাকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ ছিল। লঞ্চের শব্দ আর বড় পাল তোলা নৌকার মাঝি-মাল্লাদের কণ্ঠধ্বনিতে তিতাস পাড়ের মানুষের ঘুম ভাঙত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই তিতাস সরু খালে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১০ কিলোমিটার নদীর ১০৩ কিলোমিটারের বিভিন্ন অংশে পলি জমে ও ভরাট হয়ে চর জেগেছে।
প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্যে পৌর এলাকার আনন্দ বাজার, মেড্ডা, শিমরাইল কান্দি, সদর উপজেলার উজানিশারসহ বিভিন্ন জায়গায় নদীর দুপাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ফলে নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নদীকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহীরা বিপাকে পড়েছেন। এছাড়া, বিভিন্ন নালার পানিতে নদী দূষিত হয়ে পড়ছে।
তিতাস নদীকে ঘিরে স্বপ্ন বুনা জেলে সম্প্রদায়ে চরম দুর্দিন নেমে এসেছে। নদীর পানি শুকিয়ে মাছ শূন্য হয়ে পড়ায় জেলেরা হতাশা। জেলে রবি দাস জানান, নদীতে এখন আর আগের মত পানি নেই, মাছও নেই। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে তাদের দিন কাটছে।
অপর জেলে কাজল দাস বলেন, ‘আগে জাল ফেললেই মাছ পেতাম। কিন্তু এখন তেমন একটা মাছ পাওয়া যায় না।’
নদী পথে চলাচলকারীরা জানান, পানি কমে যাওয়ায় নৌ চলাচলে বেশি সময় লাগছে। তাছাড়া খনন কাজ শুরু হলেও তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে না।
লঞ্চ চালক মো. সিরাজ মিয়া বলেন, ‘৪০ বছর ধরে লঞ্চ চালাই। তিতাসের বুকে পানির যে উত্তাল ঢেউ ছিল তা এখন আর চোখে পড়ে না। সঠিকভাবে খনন কাজ না করলে এ নদী পথে লঞ্চ, নৌকা ও ভলগেট চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, নদী দখলের মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে নদীর দুই পাড়ে বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা ফেলে তাতে অবৈধভাবে ছোট ছোট স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই সাথে নদীর মাঝখানে তৈরি করা হচ্ছে বড় বড় ভবন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গৌরপদ সূত্রধর জানিয়েছেন, নদীর স্বাভাবিক গতি ফেরাতে খনন প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদীর পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি নদী নাব্যতা ফিরে পাবে।
জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খাঁন বলেন, ‘নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা বিভিন্নভাবে স্থাপনা তৈরি করে জায়গা দখল করে রেখেছেন। আমরা ইতোমধ্যে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে ৬২৩ দখলবাজদের সুনির্দিষ্ট তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। শিগগিরই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে অভিযান শুরু হবে।’