গায়ে গায়ে লেগে থাকা ইজিবাইকের জন্য ফুটপাথবিহীন রাস্তায় হাঁটা-চলা করাই এখন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজটে পৌর এলাকায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের জীবনযাত্রা অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে অনভিজ্ঞ চালকের বেপরোয়া এসব ইজিবাইকের চাপায় চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, যুবক, শিশুসহ অনেকেই হতাহত হয়েছে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসন ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত এসব ভ্যানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার পর কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও আবারও সড়কে ফিরে আসে অবৈধ এসব যানবাহন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজিবাইকের চেয়ে বেশি ভয়ংকর ব্রেকবিহীন ব্যাটারিচালিত ভ্যান। ঝুঁকিপূর্ণ ইঞ্জিনচালিত ভ্যান পুরো পৌর শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়ায়। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত নানা বয়সের চালক বেপরোয়া গতিতে যাত্রী বহন করছে। প্রতিদিন প্রায় ১০টি নতুন ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ইজিবাইক পৌর এলাকার রাস্তায় নামছে।
সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব অবৈধ যান চলাচল বন্ধে কয়েক দফা সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি।
পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যাটারিচালিত ভ্যানকে বিপজ্জনক যান হিসেবে চিহ্নিত করে পৌর এলাকায় চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে মাইকে প্রচারও চালিয়েছে। কিন্তু এসব ভ্যানের চাকা থামেনি। মাঝেমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ‘চোর পুলিশ’ খেলা করে। পুলিশ ব্যাটারি খুলে নেয়, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ভ্যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দুদিন পরই আবার সেই আগের অবস্থাই চলে।
এদিকে সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ইজিবাইক চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করায় শহরে যানজটের নিরসন হচ্ছে না। ইটাগাছা এলাকার আকরাম আলী জানান, এই যানের কারণে শহরে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত দুই মাস আগে তার সামনেই ইজিবাইক ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার নিহত হয়েছেন। কলেজছাত্রী রেহানা পারভীন বলেন, ‘চার্জার ভ্যান উঠলে বুক কাঁপতে থাকে। কিন্তু উপায় নেই। ফুটপথ না থাকায় পায়ে হাঁটাও যায় না। যে কারণে বাধ্য হয়ে চার্জার ভ্যানে উঠতে হয়।’
সাতক্ষীরা সচেতন নাগরিক কমিটির নেতা অ্যাডভোকেট ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, ‘ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান সাতক্ষীরা শহরের যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এটি পৌর শহরের ঐতিহ্যকেও নষ্ট করে দিয়েছে। এ দুটি বাহন নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকীন আহমেদ চিশতি বলেন, ‘সাতক্ষীরা পৌর এলাকার মধ্যে ৬০০ ইজিবাইক চলাচলের অনুমোদন দেয়া আছে। আর যেসব ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেয়া আছে তার রং হলুদ। কিন্তু তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ইজিবাইক পৌর এলাকায় চলাচল করছে। আর ইঞ্জিন বা ব্যাটারিচালিত ভ্যান সবই অবৈধ। এসব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। পৌরসভা সেক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।’
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভায় একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। সাতক্ষীরা জেলা শহরকে একটি বাসযোগ্য শহরে পরিণত করতে ‘কিন্তু সাতক্ষীরা, গ্রিন সাতক্ষীরা’ নামে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছে।
শিগগিরই জেলা শহরের যানজট সমস্যা দূর হবে বলেও আশা করেন তিনি।