কথাগুলো বলছিলেন জোয়ারের পানিতে এখনও তলিয়ে থাকা খুলনার কয়রার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ। বেড়িবাঁধ ভেঙে এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন তারা। পানিতে ডুবে আছে ঘর, উঠানে বুক সমান পানি। ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকে উঁচু রাস্তা ও সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত ২০ আগস্ট লঘুচাপের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার তিন ইউনিয়ন উত্তর বেদকাশি, কয়রা ও মহারাজপুরের অধিকাংশ এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট সাড়ে ৮ হাজার পরিবার। লোকজন অনাহারে অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে।
এর আগে আম্পানে বাঁধ ভেঙে লোনা পানিতে সব ডুবে যাওয়ার পর গ্রামবাসী স্বেচ্ছায় তা মেরামত করেছিলেন। কিন্তু এখন জোয়ারের পানির তোড়ে অনেক স্থানে বাঁধ ভেঙে আবারও প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। জনজীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২০ আগস্ট থেকে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। রিংবাঁধ ভেঙে কয়েকটি জায়গা দিয়ে পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে গেছে। গ্রামবাসী দলবেঁধে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে হরিণখোলা-ঘাটাখালি রিংবাঁধটি মেরামত করেছে। কিন্তু কয়েকটি স্থানের রিংবাঁধ এখনও মেরামত করা হয়নি। কয়রা সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাশির হাটখোলা ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়ার বেড়িবাঁধ এখনও ভাঙা।
উত্তর বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সাবেক ছাত্র ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘পানিবন্দী মানুষগুলো একদিকে আশ্রয়হীনতা ও সর্বস্ব হারানোর বেদনা, অন্যদিকে খাদ্যাভাব ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবে দিশেহারা। কেবল খাদ্যাভাব নয়, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে।’
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বাড়িঘর, বেড়িবাঁধ ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ পানির কারণে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। অস্তিত্ব রক্ষায় কয়রাবাসী নিজেরাই দলবেঁধে বাঁধ মেরামত করেছিল। কিন্তু প্রবল জোয়োরে আবারও তা ভেঙেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘরে কোমর পর্যন্ত পানি ঢুকে যাওয়ায় জনসাধারণ বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। কে কার সহায়তায় এগিয়ে আসবে? কে কাকে উপকার করবে? সবাই তো পানিবন্দী, সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’
কয়রাকে রক্ষায় ১৪/১ পোল্ডারের প্রায় ৯৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদনের দাবি জানান তিনি।
এদিকে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বেড়িবাঁধ ভাঙনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাঠিয়েছেন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কাছে।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ২০ আগস্ট বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে প্রবল জোয়ারের ফলে কয়রা ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা খালের গোড়া, ঘাটাখালি ও কাশিরখালধার, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাশির হাটখোলা ও পুটিঘেরি এবং মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়ায় ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে। এ স্থানগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। স্থানগুলোতে জরুরিভিত্তিতে রিংবাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না হলে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ এলাকায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে।