শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড ১৯ মহামারির স্বাস্থ্যসেবার দুটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য ও মেডিকেল ডিভাইস লির গুরুত্বের প্রতিরূপ নতুনভাবে অঙ্কিত করেছে এবং চলমান টিকা কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট আকারে সামনে নিয়ে এসেছে। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেছে, যা দেশটির ওষুধে স্বনির্ভরতা মাঝেই নয়, বিশ্বের শতাধিক দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রপ্তানির মধ্যেও প্রতীয়মান হচ্ছে। দুর্ভাগ্যক্রমে মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটি সম্পূর্ণ বিপরীত।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয়তা মাত্র ১০ শতাংশের যোগান দিচ্ছে। বাকি ৯০ শতাংশের জন্য বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের উপরে নির্ভরশীল। প্রায় সব মেডিকেল ডিভাইস বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এএনসিসহ কেবল মাত্র চারটি বড় দেশীয় প্রতিষ্ঠান এই মেডিকেল ডিভাইসগুলো উৎপাদন করছে। আন্তর্জাতিক মানের সার্জিকাল ডিভাইস উৎপাদনের মাধ্যমে দেশীয় চাহিদার ঘাটতি পূরণ করতে এএনসি মেডিকেল ডিভাইস বিডি লিমিটেড অগ্রগণ্য ভূমিকা নিতে আরও জোড়ালোভাবে এগিয়ে এসেছে। প্রচেষ্টার চার বছরে, এটি একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। এএনসির মূল লক্ষ্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্বমানের মেডিকেল এবং সার্জিকাল ডিভাইস তৈরি করা। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে এএনসি মেডিকেল ডিভাইজ বিডি লিমিটেড উৎপাদন শুরু করেছে ।
আরও পড়ুন: প্রাণ ফিরে পাচ্ছে বিসিক কুমিল্লা, খুলছে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এএনসি এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে যা জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। এটি বাংলাদেশের স্থানীয় জনগণের জন্য ৩ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এএনসি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশি বাজারে রপ্তানি করার কথা বিবেচনা করছে। এএনসি ০.৫ মিলি অটো-ডিসেবল সিরিঞ্জ তৈরি করছে। বর্তমানে এএনসি ডিজিডিএ থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত ২২টি পণ্যের মধ্যে ৫টি পণ্য (তিন ধরনের ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, অ্যালকোহল প্রি-প্যাড ও ভ্যাকুয়াম রক্ত সংগ্রহ টিউব) উৎপাদন করে বাজারজাত করছে।
প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) ড. বিজয় কুমার শর্মা বলেন, ‘আমি ভারতে ৩৭ বছর ধরে মেডিকেল ডিভাইস সেক্টরে কাজ করেছি। আমার দীর্ঘ কার্য সময়ে আমি ভারতের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছি। তবে আমি এএনসি মেডিকেল ডিভাইস বিডির মতো এমন আধুনিক এবং সুপার স্ট্রাকচার্ড মেডিকেল ডিভাইস কারখানা দেখিনি যা কিনা আবার দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশেই অবস্থিত।’
এর আগে ২ মার্চ কারখানা পরিদর্শন শেষে ভারতের সাবেক ডেপুটি ড্রাগস কন্ট্রোলার মলয় কুমার মিত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের ডিজিডিএর বিধি অনুযায়ী এএনসি মেডিকেল ডিভাইস একটি সুন্দর এবং সুপার স্ট্রাকচার্ড মেডিকেল ডিভাইস কারখানা স্থাপন করেছে, যা বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইস বাজারে মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
আরও পড়ুন: গ্লোবাল বিজনেস অ্যান্ড সিএসআর অ্যাওয়ার্ড পেলেন বিসিক চেয়ারম্যান
এএনসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মো. মোস্তাফা জামান বলেন, ‘এএনসি হলো আমাদের টানা চার বছরের নিরলস পরিশ্রমের ফল। আমি আত্মবিশ্বাসী- এএনসি বাংলাদেশের মেডিকেল ডিভাইস বাজারে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনবে।’
এএনসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. চৌধুরী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি মেডিকেল ডিভাইসের বাজারে রয়েছে। অথচ বিনিয়োগকারী শিল্পপতিরা এই মেডিকেল ডিভাইস খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়। বাংলাদেশের মেডিকেল ডিভাইস সেক্টর সম্প্রসারণের জন্য আমি এএনসি মেডিকেল ডিভাইস বিডি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিকিৎসা খাতের উন্নয়নে কাজ করতে বদ্ধপরিকর এবং এ আকাঙক্ষা থেকেই এখনো কাজ করে যাচ্ছি যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে বলেই আমার বিশ্বাস।’
এএনসি-জিএমই গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রাফিক মেশিনারি এন্ড ইকুপমেন্ট (জিএমই ) গ্রুপ গত ৩০ বছর ধরে বিশ্বমানের মেডিকেল ও সার্জিক্যাল সরঞ্জামাদি সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিশিষ্ট সেবা দিয়ে চলেছে। এএনসি জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভারতের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: আয়োডিনের দাম কমাল বিসিক
এএনসির অনুমোদন প্রাপ্ত ২২টি পণ্যের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের ডিসপোজবল সিরিঞ্জ, ইনসুলিন সিরিঞ্জ, ভ্যাকুয়াম রক্ত সংগ্রহ টিউব, ডিসপোজেবল সুই ইনফিউশন সেট, অ্যালকোহল প্রি প্যাড, ফার্স্ট এইড ব্যান্ডেজ, স্কাল্প ভেইন সেট বা বাটারফ্লাই নিডেল, ব্লাড কালেকশন স্ট্রেইট নিডেল বা ফ্ল্যাশব্যাক, ব্লাড কালেকশন বাটারফ্লাই নিডেল, আইভি ক্যানুলা, দুটি ধরনের এডি সিরিঞ্জ, বুরেট সেট, অ্যাম্বিলিক্যালকর্ড ক্ল্যাম্প, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট ও স্পাইনাল নিডেল।