ঢাকা, ২৪ জুন (ইউএনবি)- পৃথিবীতে কিছু কালজয়ী মানুষ আছেন যারা কিনা জীবদ্দশায় যেমন আলো ছড়িয়ে গেছেন তেমনি মৃত্যুর পরও সে আলোর ছোঁয়ায় অনেককে আলোকিত করে চলেছেন।
বলছিলাম ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কথা। আলোর কিরণে যেন সবই আলোকিত করে গেছেন তিনি। কালজয়ী সব সৃষ্টি কর্মের কারণে যুগের পর যুগ ভক্তকূলের হৃদয়ে হেমন্ত থাকবেন।
কিন্তু তার এই সাফল্যের পেছনে ছিল একরাশ হতাশার গল্প। তবে কখনোই হতাশা তাকে স্পর্শ করেনি বলেই তার অর্জনের পাল্লাটা এতটা ভারি।
রেকর্ড কোম্পানির দরজায় দরজায় ঘুরেছেন। ঘণ্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও একটি গান রেকর্ড করাতে পারেননি। এমনও হয়েছে জলসায় গাইতে দেবার কথা বলে চার ঘণ্টা বসে থেকে শুনেছেন, দূর মশাই আপনার গান কে শুনবে? দেখছেন না পঙ্কজ মল্লিক চলে এসেছে! ওনার গান শুনে চলে যান।
কে জানতো এই অবহেলা করা বালকটি যে বিশ্ব মাতাবেন। ভারত বর্ষে তো রীতিমতো কর্তৃত্ব করে গেছেন। অলির ও কথা শুনে, ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস, এই মেঘলা দিনে একলা, আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম, ওগো মেঘ তুমি উড়ে যাও, তুমি এলে অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো, টাপুর-টুপুর বৃষ্টি পড়ে, এই রাত তোমার আমার, রানারসহ অসংখ্য গানে শ্রোতার মন ভরিয়েছেন।
আয় খুকু আয় গানটি তো এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে এটি শুধু মানুষের মুখেই নয় অন্তরে গেঁথে গেছে লোকের। বাংলা চলচ্চিত্র থেকে বলিউড তার পদচারনায় মুখরিত ছিল।
প্রিয় ভক্তরা এখনো গেয়ে ওঠেন ‘আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি’। ‘আমি যে তোমারি’ অ্যালবামের সুপারহিট গান এটি। প্রেমের প্রকাশ ঘটিয়ে তার কণ্ঠে বেজে উঠেছিল ‘কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো’ গানটি। এ গানেই প্রেমিক হৃদয় কেঁদে উঠেছিল। আবেগের খেলায় যেন মেতেছিল ভক্তকূল। সত্তরের দশকে যেন গানের আলো ছড়িয়েছেন দুর্বার গতিতে।
কালীদাস মুখোপাধ্যায়ের চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় হেমন্ত। হেমন্ত ছোট বেলা থেকেই গানের সাথে সন্ধি পেতে ছিলেন। এমনও হয়েছে যে এই গানের জন্য তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কারও হতে হয়েছিল। মেট্রিক পরীক্ষার মাত্র তিন মাস আগে তাকে গান গাওয়ার অপরাধে স্কুলচ্যুত হতে হয়। হেমন্তের বাবার তাকে নিয়ে ছিল বড় স্বপ্ন। প্রায় হাতে পায়ে ধরেই হেমন্তকে আবার স্কুলে ভর্তি করাতে পেরেছিলেন তার বাবা।
সেই ছেলে আজ বিশ্ব দরবারে চেনা এক মুখ। চিরবসন্ত যেন তার কণ্ঠে মুহিত। ১৯২০ সালের ১৬ জুন জন্ম হেমন্তের।
তবে দুর্ভাগ্য গুণী এ শিল্পী ভারত সরকারের কাছ থেকে পাননি কোনো জাতীয় সম্মান। অতীতের রাজ্য সরকারও তাকে দেয়নি কোনো সম্মাননা। জন্মশতবর্ষে দাঁড়িয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে উপযুক্ত সম্মান জানানো এখন সময়ের দাবি।
২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।