শুক্রবার বিকালে রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন। পথে পথে বাধা অতিক্রম করে আপনারা গণতন্ত্রের জন্য এসেছেন।
‘এখন সংকট আরও কঠিন, আরও ভয়াবহ। আজকে প্রশ্ন, গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না। আমাদের কথা বলার অধিকার, ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে কি না, তা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এই স্বৈরাচার সরকার আটকে রেখেছে। তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল, সেখান থেকে তাকে জেলখানায় নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। তারা পুলিশ দিয়ে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে মানুষকে গণতন্ত্রের অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে বাংলাদেশের মুক্তি জন্য লড়াই করছি। সে জন্য আমরা সংলাপে বসেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তারা তা করেনি।’
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সব রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে, তবেই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে, নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে।’
‘রাজশাহীর মানুষ সংগ্রামী মানুষ, বৃটিশ আমল থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন। জনগণের ঐক্যবন্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন হবে এ বিশ্বাস আমাদের আছে,’ বলেন তিনি।
পরে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য সবাইকে শপথ করান ফখরুল।
সমাবেশে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, আমাদের উসকানি দেবেন না। ৭ দফা না মানলে দেশে নির্বাচন হবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দুই দফা সংলাপে বসেছিল। আমরা সাত দফা দাবি উত্থাপন করেছিলাম। কিন্তু সেই সংলাপ সফল হয়নি। কারণ স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।’ এবার ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের মৌলিক দাবি সংসদ ভেঙে দিতে হবে। বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী যে কথা দিয়েছিলেন সেই কথাও রাখেননি। সংলাপের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার কথার বরখেলাপ করেছেন। এক দিনেই দুই হাজার ২০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়া ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলেন বলে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি, এবারও তাকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।’
ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে আজ প্রথমবারের মতো যোগ দেন এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে বলছি, নির্বাচন পিছিয়ে দিন। এমন ফাঁদ পেতেছেন যেন আমরা নির্বাচন করতে না পারি। কিন্তু আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে সব ফাঁদ ছিন্নভিন্ন করে ফেলব। একতরফা নির্বাচন কোনোভাবে হতে দেব না।’
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করলাম। তিনি বলেছিলেন সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া হবে না, গ্রেপ্তার করা হবে না। কিন্তু আমরা কী দেখলাম? তাহলে আমরা কি ধরে নেব, হয় প্রধানমন্ত্রীর কথা প্রশাসন মানে না অথবা তিনি দিনে আমাদের সাথে এক কথা বলেন, আর রাতে প্রশাসনকে এক রকম নির্দেশ দেন।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারের ভীত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় সুনিশ্চিত। এবার আপনারা জয়ী হবেন। জয়ী হলে কী হবে? কৃষক শ্রমিকদের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। কৃষকের পণ্যের মূল্য নেই, শ্রমিকের শ্রমের মূল্য নেই। এসব প্রতিষ্ঠিত হবে।’
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত-উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।