আবেদনে সরকারের ইন্ধনে যেসব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা তাদের আইনগত সীমা অতিক্রম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
রবিবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের খাস কামরায় গিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এই আবেদন দাখিল করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল অধস্তন আদালতের তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হাইকোর্ট বিভাগের হাতে থাকায় নির্বাহী বিভাগকে অবশ্যই যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিতে হবে। যে কারণে সুপ্রিম কোর্টের মতামত ছাড়াই কোনো আদালত স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার কারণে আদালত স্থানান্তরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো এখতিয়ার নির্বাহী বিভাগের নেই।
আবেদন দাখিলের সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন প্রমুখ।
পরে খাস কামরা থেকে বের হয়ে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সংবিধানের অভিভাবক হচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট। আর সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ (হাইকোর্ট ডিভিশন) রুলস ১৯৭৩ এর রুল ১৯বি অনুসারে আদালত কোথায় বসবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের। সুপ্রিম কোর্টের সাথে আলোচনা না করে এই ধরনের কোর্ট স্থাপন করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে না। এই কথাগুলো আমরা বলেছি। এও বলেছি, মাননীয় প্রধান বিচারপতি আপনি এই জুডিশিয়ারির অভিভাবক। আপনার সাথে আলোচনা না করে রাতের অন্ধকারে এই ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি বিচার বিভাগের জন্য খুবই দুঃখজনক। কোনো বিচারালয় এইভাবে স্থানান্তর করতে পারে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ধৈর্যের সাথে আমাদের কথা শুনেছেন। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, তিনি এটা দেখবেন।’
এদিকে আবেদন দাখিলের পরপরই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করতে আসেন।
খাস কামরা থেক বের হওয়ার পর এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আইনমন্ত্রী বিএনপির আইনজীবীদের সমালোচনা করে বলেন, ‘তারা আইন জানেন না।’
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারের ভেতরের একটি কক্ষকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়। ওই আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার
বিচার করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাত সংক্রান্ত মামলার বিচার কার্যক্রম ঢাকা মহানগরের বকসি বাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলাকালে এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে বিধায় নিরাপত্তাজনিত কারণে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-১৮৮৯-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার মামলাটির বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষটি অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করিল।