পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন ভবনে এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুরউদ্দিনের আদালতে গ্রেনেড হামলার দুই মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে।
সোমবার দ্বিতীয় দিনে আইনী পয়েন্টে চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এ মামলার বিশেষ কৌসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল।
তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হলেন তারেক রহমান। তার নির্দেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। হি ইজ দ্যা আর্কিটেকচার অব দিস কেস। তিনি অন্যান্য আসামিদের সকল প্রকার প্রশাসনিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।’
এরপর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘এ হামলার পরিকল্পনায় তারেক রহমান ছিলেন বস। তার নির্দেশনায় এবং প্রশাসনিক সহায়তায় এই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের একটি পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতেই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করা হয়।’
এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড, অর্থ ও প্রশিক্ষিত লোক আনা হয় বলে দাবি করেন তিনি। ‘তারা এদেশে এসে হাওয়া ভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে। যেহেতু তারেক রহমানের সাথে ওই প্রশিক্ষিত লোকদের সুসম্পর্ক ছিল, তাই তাদের সাথে একত্রিত হয়ে আমাদের দেশের কয়েকজন জঙ্গি হামলা চালায়। এ হামলার সাথে হরকাতুল জেহাদ, লস্কর-ই তৈয়েবাসহ একাধিক জঙ্গি সংগঠন জড়িত।’
কাজল আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারলে পাকিস্তান চাইলে একটি নৈরাজ্যকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আজীবন ক্ষমতায় থাকা যাবে- এই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। সে সময় হাওয়া ভবন থেকে দিকনির্দেশনা দেয়া হতো। আর সেই হাওয়া ভবনের নেতৃত্বে ছিলেন তারেক রহমান। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত হয়েছে। কারণ তারেক রহমান ছিলেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পাদপীঠে।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। সাধারণ কোনো প্রেক্ষাপট নয়। এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের একটি অংশ। এ মামলার আসামিরাও কোনো সাধারণ ব্যক্তি নন। তারা প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এ ঘটনায় প্রত্যেক ব্যক্তিই জড়িত ও অপরাধী।
আদালতকে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, যেখানে ষড়যন্ত্র হয়, সেখানে কোনো প্রমাণ থাকে না। যারা এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল তারা কোনো প্রমাণ রাখেননি। ষড়যন্ত্র বহু জায়গায় হতে পারে, বহুভাবে হতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাসহ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর মামলার রায়ের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে আদালতকে বলেন, ‘মামলার প্রত্যেক আসামিই ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন। তাই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।’
কৌসুলি কাজল আরো বলেন, ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা চালানো হয় মুলত দুটি কারণে। প্রথমটি হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ অনেককে হত্যা করা, দ্বিতীয়তটি হচ্ছে- বাংলাদেশকে পাকিস্তান রাষ্ট্র বানানো।’
তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই রাজনৈতিক দাঙ্গা বা গোলামাল হয়ে থাকে। কিন্তু ২১ আগস্টের হামলা এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। বিরল ঘটনা। এখানে আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে নিরস্ত্র জনগণের ওপর হামলা করা ইতিহাসে বিরল।
আগামীকাল মঙ্গলবার এই দুই মামলায় ফের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলবে।
প্রসঙ্গত, ২১ আগস্ট ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিনজন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল। এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন পলাতক। লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন আসামি কারাগারে এবং আট জন জামিনে রয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। অল্পের জন্য বেঁচে যান বতর্মান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ হামলায় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।