হুইপের করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই আদেশ দেন।
এ আদেশের ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ স ম ফিরোজের অংশগ্রহণের বাধা কাটল বলে মনে করছেন তার আইনজীবীরা।
এর আগে গত ২২ নভেম্বর পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাউফলের পৌর মেয়র মো. জিয়াউল হকের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আ স ম ফিরোজের ঋণ পুন:তফসিলের আদেশ স্থগিত করেন। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আজ আপিল বিভাগে আবেদন করেন আ স ম ফিরোজ।
আদালতে ফিরোজের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম ও তানিয়া আমীর। রিটকারী মো. জিয়াউল হকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ; সঙ্গে ছিলেন ও এম মাইনুল ইসলাম। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।
তানিয়া আমীর পরে বলেন, ‘হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল সে আদেশটি আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনি (ফিরোজ) প্রার্থী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই এখন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিটকারী তার ব্যক্তিগত স্বার্থে রিটটি দায়ের করেছেন। কারণ ওই নির্বাচনী আসনে তিনিও প্রার্থী। ফলে রিটটি কোনোভাবেই জনস্বার্থে রিট না।’
এই আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের (বিআরপিডি) পঞ্চদশ সার্কুলার অনুযায়ী ঋণ তিনবারের বেশি পুনঃতফসিল করা যায় না বলে যে যুক্তি রিটে দেখানো হয়েছে, তা সাধারণ ঋণের বেলায়। এই ঋণটি একটি বিশেষ উৎপাদনমুখী, কৃষিমুখী ঋণ। এই ঋণের সঙ্গে শ্রমিকদের জীবিকা জড়িত। আর এই ঋণের পুনঃতফসিল তো হয়েই গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও তার অনুমোদন করেছে। হাইকোর্টে তারা সেটি গোপন করেছে। তাছাড়া ঋণ পুনঃতফসিল করাটা বৈধ না অবৈধ, সে মামলাটি তো হাইকোর্টে পেন্ডিং আছেই। সেটি তো আর স্থগিত করা হয়নি।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশনস অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের (বিআরপিডি) ১৫তম সার্কুলার অনুযায়ী ঋণ তিনবারের বেশি পুনঃতফসিল করা যায় না। কিন্তু মেসার্স পটুয়াখালী জুট মিলস লিমিটেডের নামে আ স ম ফিরোজের মালিকানাধীন মেসার্স পটুয়াখালী জুট মিলস লিমিটেডের নামে নেয়া ঋণ সোনালী ব্যাংক ১৯৯৪ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত নয়বার পুনঃতফসিল করেছে।
সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট সোনলী ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদ ঋণের সুদ মওকুফ করে নবমবারের মত ওই ঋণ পুনঃতফসিল করে। পরে সোনালী ব্যাংকের ঋণ মওকুফ ও পুনঃতফসিলের এ সিদ্ধান্তকে গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয় বাংলদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে গত সপ্তাহে হাইকোর্টে রিট করেন বাউফল পৌর মেয়র।
রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুলে মেসার্স পটুয়াখালী জুট মিলের ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করার ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা মানতে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
এছাড়াও, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার-১৫ অনুযায়ী মেসার্স পটুয়াখালী জুট মিলের ঋণ পুনঃতফসিল করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।
সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানান আ স ম ফিরোজ।