কিন্তু তার পুরোপুরি সুস্থ হওয়া নিয়ে চিকিৎসকরা আশা ছেড়ে দিয়েছেন। যতদিন বেঁচে থাকেন এভাবেই তার চিকিৎসা চলবে। অর্থাৎ মাঝে-মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করে শেকড়ের মতো অংশগুলো কেটে ফেলা হয়। এজন্য হতাশায় দিন কাটছে আবুল হোসেন বাজনদারের।
তার বৃদ্ধ মায়ের আর্তি, ‘আমার ছেলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিল সরকার, এখন আশা ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে, আমি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
ঢামেক বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সমন্বয় ডা. সামন্ত লাল সেনসহ পুরো একটি টিম আবুল হোসেন বাজনাদারের চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত। আড়াই বছর ধরে চিকিৎসা গ্রহণ হলেও আবুল হোসেন বাজনদারের চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রই তাকে দেয়া হয়নি। এমনকি তাকে দেয়া হয়নি কোনো ছাড়পত্র এবং প্রেশক্রিপশনও।
আবুল হোসেন বাজনাদার বলেন, বাড়িতে বসে যখন ব্যথা অনুভব হয় তখন দোকান থেকে নিজেই ব্যথার ওষুধ কিনে খান। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে সেটি জেনেও শুধুমাত্র ব্যথা দূর করতে তার এ চেষ্টা। তিনি বলেন, যেহেতু ডাক্তাররা তাকে কোনো প্রেসক্রিপশন দেননি সেহেতু তার ব্যথা দূর করতে এর বিকল্প নেই।
আবুল বাজনাদার বলেন, শুধুমাত্র ডা. সামন্ত লাল সেনের মোবাইল নম্বরটিই বড় প্রমাণ তার কাছে। প্রয়োজন হলে ডা. সামন্ত লাল সেনের কাছে ফোন দেন। তিনি (চিকিৎসক) যখন যেতে বলেন তখন ঢামেক হাসপাতালে গিয়েই চিকিৎসা নিয়ে আসেন।
সর্বশেষ আবারো তাকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে মোবাইলে ইউএনবিকে ডা, সামন্ত লাল সেন জানান, আবুল বাজনদারের আবারো অপারেশন প্রয়োজন। এজন্য তাকে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। ঢাকায় এলেই আবারো তার হাত-পায়ে অস্ত্রোপচার করা হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ডাক্তার ও বিভিন্ন ব্যক্তির সহায়তায় খুলনা জেলার পাইকগাছা পৌরসভার শিববাড়ি বিল এলাকায় ১০ শতক জমি কিনে টিনসেডের একটি বাড়ি করে সেখানে পরিবার নিয়ে থাকেন আবুল বাজনাদার। স্ত্রী, চার বছরের একটি কন্যা সন্তান আর বৃদ্ধ পিতা-মাতা এই পাঁচজনের সংসার তার। মাথা গোঁজার ঠাই হলেও ঘরে খাবার যোগাড় করার মতো উপায় নেই। খেয়ে না খেয়ে চলছে দিন।
আবুল বাজনাদারের মা আমেনা বিবি বলেন, তাদেরকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, এ রোগ থেকে আর ভাল হওয়ার সুযোগ নেই। এখন যতদিন বেঁচে থাকবে ততোদিন এভাবেই চলতে হবে। এতে তার মধ্যে হতাশা প্রকট হচ্ছে।
এদিকে কিভাবে সংসার চলবে, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে কে দেখবেন, কিভাবে মেয়ের লেখাপড়া করাবেন এসব নিয়ে সার্বক্ষণিক ভাবনায় থাকতে হয় আবুল বাজনদারকে।
আবুল বাজনদারের স্ত্রী হালিমা আক্তার বলেন, যেভাবে পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে তার স্বামীর চিকিৎসার বিষয়টি প্রচার হয়েছে তাতে তাদের অন্তত আশা ছিল যে, দেশে-বিদেশে যেখানেই হোক উন্নত চিকিৎসা হবে। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই বছর পর আশা ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় তারাও হতাশ। তার স্বামীর চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে ডাক্তারদের গবেষণার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার ফলাফল শূন্য। গবেষণা করেও তার স্বামী যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন সেটিই তার একমাত্র চাওয়া বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আবুল বাজনদারের পিতা মানিক বাজনদার এবং মাতা আমেনা বিবি। চিকিৎসার পাশাপাশি ডাক্তারদের সহযোগিতায় বাড়ি করে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেও দিন চলছে চরম অর্থকষ্টে। বৃদ্ধ পিতা মানিক বাজনদারের আয়ের ওপর চলছে তাদের পাঁচজনের সংসার। তার পিতা কখনও দিনমজুরী, কখনও কৃষি কাজে সম্পৃক্ত থেকে উপার্জন করেন। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে ৬ষ্ঠ আবুল বাজনদার। অন্য সব ভাই-বোন বিবাহিত।