প্রতিদিনই ৮ থেকে ১০টি বিয়ে নৌকা বা বজরা দেখা যায় হাওরে। ওইসব নৌকা বাহারি সাজে সজ্জিত। বিয়ের নৌকাগুলো পাড়ি দিচ্ছে হাওরের বিশাল জলরাশি। সেই সাথে বাঁজছে সানাই, বাদ্যযন্ত্র। সানাইয়ের করুন সুর হাওরপাড়ের মানুষের মনে দিচ্ছে উচ্ছ্বল আনন্দ।
গত দু’বছর হাওর অঞ্চলের মানুষের একমাত্র জীবন-জীবীকার উৎস কৃষকের উৎপাদিত বোরো ধান অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের আর্থিক মেরুদন্ড ভেঙে যায়। তাই তারা কোনোভাবে খেয়ে-পড়ে বাঁচলেও বিয়েসহ সামাজিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান করতে পারিনি।
এবছর হাওরের কৃষকরা তাদের একমাত্র বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারায় পরিবারগুলোতে ফিরেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। তাই বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের দিকে ফিরেছে হাওরবাসী। গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায় দেখা মিলছে আত্মীয়-স্বজনদের। এ বর্ষা মৌসুমে হাওর এখন নতুন-পুরানো আত্মীয়-স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
শাল্লা উপজেলার মুনায়া গ্রামের তাবুর মিয়া এ বছরেই বিয়ে দিয়েছেন তিন ভাইকে। তিনি ইউএনবিকে জানান, টানা দু’বছর অকালে ফসলহানীর কারণে বিয়ে উপযুক্ত ভাইদের বিয়ে দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক সংকটের কারণে সম্ভব হয়নি। এ বছর জমিতে উৎপাদিত ফসল নিরাপদে ঘরে তুলতে পারায় তিন ভাইয়ের বিয়ের আয়োজন করেছি।
নারকিলা গ্রামের সুদিন তালুকদার জানান, আমার পরিবারের সবকিছুই নির্ভর করে একমাত্র বোরো ফসলের উপর। তাই গত দুই বছর ফসল তুলতে না পারায় ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে পারিনি। এবছর ফসল ভাল হাওয়ায় ও ঘরে তুলতে পারায় আনন্দের সাথে ছেলে ও মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছি।
হাওর অঞ্চলে সাধারণত বর্ষা মৌসুমেই বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের অয়োজন হয়ে থাকে। সেই চিরাচরিত নিয়মেই এ ভরা বর্ষায় হাওরের বিশাল জলরাশিতে দেখা মিলছে বাহারি সাজে সজ্জিত বিয়ের নৌকা। আবার কোনো বিয়ের নৌকাতে দেখা যাচ্ছে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র, বাজছে সানাইও। আগেকার দিনের মতো শুধু মাইক বাঁজিয়ে বিয়ের বজরা যেতে দেখা যায় না। এখন সানাই-বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েই হাওরের বিশাল জলরাশি ছুঁয়ে বিয়ের নৌকাগুলো ভাসতে দেখা যায়। বিয়ে নৌকাগুলোর সাজসজ্জায় তুলে ধরা হয় এ ভাটির সংস্কৃতি, কৃষ্টি। বাজানো হয় ঐতিহ্যবাহী গ্রাম-বাংলার ধামালী গান।