বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে গত ১৯ আগস্ট চার বাংলাদেশিকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। অন্য তিনজন হলেন ব্র্যাকের রিজভী হাসান, অনুবাদক সিফাত নূর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত।
আঁখি বলেন, ‘দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য আজ এত বড় স্বীকৃতি পেয়েছি। সারাজীবন অসহায়দের পাশে থাকতে চাই।’
ভবিষ্যতে নিজের দোকানের পরিধি আরও বড় করে পরিবারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি অসহায় মেয়েদের কাজের সুযোগ দেয়ার ইচ্ছার কথা জানান মাসুদ মোল্লা ও আনোয়ারা বেগমের দ্বিতীয় মেয়ে আঁখি।
পঞ্চম শ্রেণি পাস করা এ কিশোরী বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে বাজারে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছিল না। কিছু দোকানে দাম ছিল চড়া। দরিদ্র মানুষেরা সেটি কিনতে পারত না। কিন্তু করোনা থেকে মুক্ত থাকতে মাস্কই ভরসা। তাই নিজেই মাস্ক বানিয়ে কম দামে বিক্রি করেছি। দরিদ্ররা সেগুলো ব্যবহার করেছেন। অনেক অসহায় মানুষকে বিনামূল্যেও মাস্ক দিয়েছি।’
চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করার সময় আঁখির বাবা দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। মা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু তার একার রোজগারে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে বড় বোনের সাথে আঁখিও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি কারখানায় কাজ করতেন।
দুই বছর আগে ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত ‘জীবনের জন্য’ প্রকল্পের কর্মী আবেদা সুলতানা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতে দেখেন আঁখিকে। পরে তাকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে আঁখি ওই প্রকল্প থেকে একটি সেলাই মেশিন ও কিছু থান কাপড় পান। এরপর শুরু হয় তার পোশাক তৈরির গল্প।
ঘরে বসেই স্থানীয়দের পোশাক বানিয়ে মাসে গড়ে তিন হাজার টাকা রোজগার করতে থাকা আঁখি আস্তে আস্তে হয়ে ওঠেন জীবনযুদ্ধে জয়ী সত্যিকারের এক নায়িকা।