মঙ্গলবার বিকালে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.৫০ সেন্টিমিটার, যা স্বাভাবিকের (৫২.৬০ সেন্টিমিটার) চেয়ে ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে ২৫ জুন মধ্যরাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫-২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তার বাম তীরের লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার টানা পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল।
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিকে টানা ২৪ ঘণ্টা বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তার পানি। ফলে নিম্নাঞ্চলে শুরু হয় বন্যা। যা ক্রমে কমে গিয়ে বন্যার উন্নতি ঘটে। এর রেশ কাটতে না কাটতে ২৫ জুন আবারও উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা ব্যারেজ রক্ষার্থে সবকটি গেট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। যা টানা চার দিন ধরে অব্যাহত থাকে। ফলে জেলার ৫টি উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
সোমবার সকাল থেকে কমতে শুরু করে তিস্তার পানি প্রবাহ। ফলে বন্যা পরিস্থতি উন্নতি ঘটে। পানি নামতে শুরু করলে পানিবন্দী থেকে মুক্তি পায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। পানি কমে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাকবলিতদের। টানা চার দিনের বন্যায় ডুবে থাকায় ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে আমন বীজতলা, বাদাম ও ভুট্টাসহ নানান জাতের সবজি। বন্যায় নষ্ট হওয়া ঘরবাড়ি মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
এদিকে, তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা, আদিতমারীর কুটিরপাড়, চন্ডিমারী, দক্ষিণ বালাপাড়া, কালীগঞ্জের শৈলমারী চর, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিন্দুর্না, ডাউয়াবাড়ি ও গড্ডিমারীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে জেলার শতাধিক বসতবাড়ি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে কয়েকশ ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের।
হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের মজিবর রহমান, জহের আলী ও আসমত জানান, তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। রবিবার রাতে তাদের বসতভিটা তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরের টিন খুলে নিয়ে রাস্তায় রেখেছেন। নতুন করে বাড়ি করার মত জায়গা না থাকায় রাস্তায় আশ্রয় হয়েছে তাদের। তিস্তার তীরে বন্যা ও ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে তিস্তা খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
হাতীবান্ধা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘পানিবন্দী ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করা হয়েছে। পানিবন্দী প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল, আলু এবং নদী ভাঙনের ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য জনপ্রতি ২০ কেজি চাল ও সাত হাজার টাকা বিতরণ করা হয়।’
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বলেন, ‘পানিবন্দী ৮ হাজার পরিবারের জন্য ৬৮ দশমিক৬৬ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ৬ লাখ ২৬ হাজার ২০০টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু করা হয়েছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৪১ পরিবারকে জনপ্রতি ২০ কেজি চাল ও ঘর মেরামত বাবদ নগদ সাত হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।’
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ ২৫ জুন রাত থেকে বাড়তে থাকে। ২৬ জুন সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে লালমনিরহাটে বন্যা দেখা দেয়। টানা চার দিন পরে মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। ফলে জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি ঘটেছে।’