একই সঙ্গে চার শিশু ও তাদের অভিভাবকদের নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বলেছেন আদালত।
রবিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত আগামী ২২ নভেম্বর আদেশের পরবর্তী তারিখ রেখেছেন।
এর আগে গত ৮ অক্টোবর ৪ শিশু নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ৪ শিশুকে তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
একইসঙ্গে রবিবার বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে হাইকোর্টে হাজির এবং ওই ৪ শিশুকে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে হাইকোর্টে নিয়ে আসতে বাকেরগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ওই আদেশ অনুসারে বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের জামিন দিয়ে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দিতে পদক্ষেপ নেন সংশ্লিষ্টরা। পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টা ৫০মিনিটে ওই ৪ শিশুকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
আদালতের নির্দেশ অনুসারে রবিবার ওসি শিশুসহ তাদের অভিভাবকদের নিয়ে হাইকোর্টে উপস্থিত হন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও হাইকোর্টে হাজির হন। প্রথমে শিশুদের আদালতের খাসকামরায় নেয়া হয়। এরপর আদালত দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শুনানি শুরু করেন।
চার শিশুর অভিভাবক, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, থানার ওসি, থানার শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা প্রবেশন অফিসারের বক্তব্য শোনেন আদালত। শুনানিকালে ওই ম্যাজিস্ট্রেট নিঃশর্ত ক্ষমা চান। পরে আদালত আদেশ দেন।
শুনানি শেষে আদালত ওই শিশুদের মামলার কার্যক্রম স্থগিত, শিশু ও শিশুদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং বিচারককে হাইকোর্টে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ২২ নভেম্বর ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
গত ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় ছয় বছর বয়সের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ওই শিশুটির খেলার সঙ্গী। ৪ অক্টোবর বিকালে বাগানের মধ্যে খেলার সময় তাকে তিন আসামির সহযোগিতায় এক আসামি ধর্ষণ করে। মামলার আসামিদের একজনের বয়স ১১ ও বাকি তিন জনের বয়স ১০ বছর দেখানো হয়েছে। পরে বুধবার ৭ অক্টোবর বিকালে তাদের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাকেরগঞ্জ আমলী আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
আদালতের বিচারক মো. এনায়েতউল্লাহ এক আদেশে আসামি চার শিশুকে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। চার শিশুর স্বজনদের দাবি, মামলায় এসব শিশুর বয়স ১০ থেকে ১১ বছর উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের বয়স ৮ থেকে ৯ বছরের মধ্যে। ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মূলত জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।