উপজেলায় ফাতেমা হোসেনের বয়সে তার মতো উচ্চতা ও ওজনের আর কোনো শিক্ষার্থীর সন্ধান না পাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে সে উপজেলায় সবচেয়ে খর্বকায় (খাটো) শিক্ষার্থী।
ফাতেমা উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের আলাপুর গ্রামের মৃত হোসেন আলী ও সাহেনা বেগম দম্পতির বড় মেয়ে এবং স্থানীয় জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী।
ফাতেমার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করে ফাতেমা হোসেন। জন্মের পর থেকে চার বছর বয়স পর্যন্ত তার শরীরের গড়ন স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। চার বছর পর হঠাৎ করে তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমতে থাকে। তখন তাকে নিয়ে সিলেট শহরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় তার পরিবার। চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
পরে ফাতেমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দীর্ঘদিন চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান ফাতেমার শরীরে বর্ন হরমোন না থাকায় তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। তাই তার ৮ বছর বয়সের মধ্যে ভারত থেকে বর্ন হরমোন এনে প্রতি মাসে একবার করে টানা ৪ বছর শরীরে প্রয়োগ করতে হবে। তাতে ফাতেমার শরীর স্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বর্ন হরমোন প্রয়োগের ফলে স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথাও জানান চিকিৎসক। এনিয়ে এবং চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েন পরিবারের লোকজন। তবে অর্থাভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার।
ফাতেমার বেড়ে ওঠারও আর কোনো আশা নেই। তবে এ নিয়ে কোনো রাগ, দুঃখ, অভিমান নেই ১৭ বছর বয়সী এই তরুণীর।
ফাতেমা হোসেন জানায়, ২০১৭ সালে তার বাবা হোসেন আলী আরব আমিরাতে হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে মা সাহেনা বেগম, ছোট ভাই হাফেজ জাহির হোসেন (১৩) ও ছোট বোন ফাবিহা হোসেন মাইসাকে (২) নিয়ে নিজ গ্রামেই অবস্থিত মামার বাড়িতে বসবাস করে আসছে। তাকে সকলেই আদর করে। সে জীবনটাকে হাসিখুশিভাবে কাটাতেই ভালোবাসে। সে পড়ালেখা করে ভবিষ্যতে বড় চাকরি করার স্বপ্ন দেখছে।
এ ব্যাপারে জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফখরুল ইসলাম বলেন, ফাতেমা হোসেন বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। সে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক তাকে লেখাপড়ার জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।