মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় মোট ৪৪ জন কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক ৪ জন, নার্স ৩ জন ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন ১১ জন। আর সাধারণ মানুষের সংখ্যা ২৬ জন।
যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, অধিকাংশ রোগীর করোনার উপসর্গ না থাকা, ভ্রমণ তথ্য গোপন করা, কারও সংস্পর্শে গিয়েও প্রকাশ না করার কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু অজানায় থেকে যাচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত রোগীরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবে। চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়বে।
বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) যশোর জেলা শাখার নেতারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সিভিল সার্জন আরও জানান, করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে যশোর মেডিকেল কলেজের নাক, কান, গলা বিভাগের ১ জন সহকারি অধ্যাপক, যশোর সিভিল সার্জন অফিসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১ জন মেডিকেল অফিসার, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১ জন ও কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১ জন রয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত তিনজন নার্স চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এছাড়া আক্রান্ত ১১ জন স্বাস্থ্যকর্মী বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে কোনো করোনা রোগীর সংস্পর্শ এর প্রধান কারণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীরা রোগের তথ্য গোপন করছেন। ফলে করোনা শনাক্ত হচ্ছে না। এ কারণে তাদের থেকে আরও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্তরালে থাকা এসব রোগীদের কারণে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ মানুষের মনে শঙ্কা বাড়াচ্ছে। এসব রোগীদের চিহ্নিত করতে না পারলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, চিকিৎসক, সেবাদানকারী ও অন্য মানুষের সুরক্ষায় করোনা উপসর্গের কথা যেন কোনো রোগী না লুকায়। এটি সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। কারণ করোনাভাইরাস অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে প্রস্তুতি ছাড়া কেউ এলে তারও রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) যশোর জেলা শাখার সভাপতি ডা. একেএম কামরুল ইসলাম বেনু জানান, রোগী অনুপাতে যশোরে করোনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের হার বেশি। চিকিৎসক, সেবিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শতভাগ ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) পরে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থায় কর্তৃপক্ষের সজাগ হওয়া উচিৎ।
তিনি বলেন, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া করোনার উপসর্গ থাকা রোগী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতরা একের পর এক করোনায় আক্রান্ত হতে থাকলে ভয়ে তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে অসম্মতি জানাতে পারেন। এতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, সরাসরি যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তারা সুস্থ আছেন। কারণ তারা শতভাগ প্রস্তুতি নিয়েই রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। কিন্তু যারা না জেনে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তারা নিজেদের অন্তরালে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কোনো রোগী যেন তাদের উপসর্গ গোপন না করে। এছাড়া কেউ যদি ঢাকা বা অন্য কোনো এলাকা থেকে যশোরে আসার পর হাসপাতালে যান, সেই বিষয়টি আগেই চিকিৎসাসেবিকা বা অন্যদের কাছে প্রকাশ করবেন। উপসর্গ গোপন করার কারণে যশোরে ৪ জন চিকিৎসক ৩ জন সেবিকা ও ১১ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সিভিল সার্জন আরও জানান, আক্রান্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। বর্তমানে শারীরিকভাবে তারা সুস্থ আছেন। মেডিকেল টিমের সদস্যরা নিয়মিত তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে আরও ১৮ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের জীবাণু মিলেছে। ২টি জেলার মোট ৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮ রোগীর কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। এরমধ্যে যশোরে ৪৭ নমুনায় ১০ জন ও ঝিনাইদহের ২৩টি নমুনায় ৮ জন রয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেনোম সেন্টারের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ।