জেলায় তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়ছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটর। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটর) বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে তিস্তার পানি প্রবাহ বাড়তে থাকে। যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার সকাল ৬টার দিকে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ৩ ঘণ্টা পর কিছুটা কমে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর আসে।
স্থানীয়রা জানান, শুকিয়ে মৃত প্রায় তিস্তা উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আবারও ফুলে ফেঁপে উঠে ফিরে পেয়েছে চিরচেনা রূপ। হেঁটে পাড়ি দেয়া তিস্তায় চলতে শুরু করেছে নৌকা। হাকডাক বেড়েছে মাঝি মাল্লাদের। কর্মব্যস্থতা দেখা দিয়েছে তিস্তাপাড়ের জেলে পরিবারে।
অপরদিকে, পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা বন্যার আশঙ্কা করলেও সে সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
তারা বলছে, বৃষ্টির কারণে উজানের ঢেউয়ে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানে ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাবে বলে দাবি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়া শাখা।
পলি ও বালু জমে তিস্তা ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই তিস্তার পানি প্রবাহ লোকালয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যা দেখা দেয়। তবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যা দেখা দিলে চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। এছাড়া তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দী পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
আদিতমারী উপজেলার তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়ায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানিবন্দী পরিবারগুলোর তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে বরাদ্দ নিয়ে ত্রাণ বিতরণ শুরু করা হবে।
তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ শুক্রবার রাতে থেকে বাড়তে থাকে। শনিবার সকালে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় কমে গিয়ে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’
ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে এবং ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় শনিবার বিকালের মধ্যে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।