জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার শেরপুরে দুই নারীর শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। তাদের সংস্পর্শে এসেছিল এমন আত্মীয়-স্বজনসহ ১৮ জন ও আরও ৯ জনসহ মোট ২৭ জনের নমুনা মঙ্গলবার রাতে সংগ্রহ করা হয়। তবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সেসব নমুনা পরীক্ষা করে তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
বুধবার সকালে জেলার করোনা বিষয়ক সমন্বয়কারী চিকিৎসক শেরপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোবারক হোসেন জানান, করোনা আক্রান্ত দুই নারীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও তাদের সংস্পর্শে আসা ২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ নেগেটিভ ফলাফল এসেছে। এটা একটা স্বস্থির খবর। তাছাড়া আক্রান্ত ওই দুই নারীও জেলা হাসপাতালের আইসোলেশনে ভালো অবস্থায় রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পুনরায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। যদি আইসোলেশনে থাকাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে এবং ৪৮ ঘণ্টা পর একবার এবং তারও ৪৮ ঘণ্টা পর আরেকবার এভাবে দুই বারের পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসে তাহলে তাদের আর আইসোলেশনে রাখা হবে না।
তবে ডা. মোবারক আরেকটি অস্বস্তির খবর জানিয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জ এখন দেশের দ্বিতীয় করোনা সংক্রমিত এলাকা। লকডাউন থাকা সত্ত্বেও মঙ্গলবার ভোরে করোনার ভয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে শেরপুরে অন্তত দুই ট্রাকভর্তি লোক এসেছে। আগতরা শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের নলবাইদ এলাকার লোক বলে জানা গেছে। তাদের নিয়ে আমরা অস্বস্তির মধ্যে রয়েছি। তাদেরকে খুঁজে বের করতেই হবে। কারণ তাদেরকে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে একটি পীরের ওরস মাহফিলে যোগদান শেষে তারা শেরপুরে ফেরেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশ আগতদের খুঁজছে। ইতোমধ্যে ৩০ জনের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের প্রত্যেককে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সিভিল সার্জন ডা. এ.কে.এম. আনওয়ারুর রউফ জানান, করোনায় আক্রান্ত দুজনের স্বজন ও সংস্পর্শে আসাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ পাওয়া না গেলেও লকডাউনে থাকা এলাকাগুলোতে সীমিত আকারে লকডাউন চলবে। নারায়ণগঞ্জ থেকে আগতদের খুঁজতে ইতোমধ্যেই ব্যাপক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ জন। তারা আইসোলেশনে রয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১৪৯ জন। এছাড়া কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৪৭ জন। ১ মার্চ থেকে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের সংখ্যা ৫১১ জন। এরমধ্যে ঠিকানা ও অবস্থান চিহ্নিত করা গেছে ১৭০ জনের। করোনা রোগীর চিকিৎসায় ১৫০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চাহিদা অনুযায়ী ১৯৬টি পিপিই স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। মজুদ রয়েছে ২ হাজার ২৮টি। জেলায় সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ৬২৪ মেট্রিক টন চাল মানবিক সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ৫ উপজেলায় ২০ হাজার ৬৫টি পরিবারের মাঝে ৩৫০ মেট্রিক টন চাল খাদ্য সহায়তা এবং ১৫ লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া শিশু খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে এক লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।