সোমবার থেকে সুন্দরবনের ছোট সব খালে মৎস্য ও অন্য জলজ প্রাণীর নিরাপদ প্রজনন, সংরক্ষণ ও বিষ প্রয়োগ বন্ধে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মৎস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চারটি রেঞ্জ শরণখোলা, চাঁদপাই, খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকায় ইতোমধ্যে ২৫ ফুটের নিচের প্রস্থের প্রায় চার শতাধিক খালকে নিষিদ্ধের তালিকায় নেয়া হয়েছে। তবে ২৫ ফুটের অধিক প্রস্থের খাল ও বনের নদী এলাকা এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বনের মধ্যে দিয়ে ভোলা, বলেশ্বর, শ্যালা, পশুরসহ ১৩টি বড় নদ-নদী ও ৪৫০টি ছোট খাল প্রবাহিত হয়েছে। এ সব নদী ও খালে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও লবস্টার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন।
জুলাই ও আগস্ট মাস সুন্দরবনে মাছের প্রজনন মওসুম। এ প্রজনন মওসুমে সুন্দরবনের ছোট ছোট খালে মাছের আধিক্য বেশি থাকার সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু জেলে গোপনে ছোট খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে থাকে। এ কারণে বনের মৎস্য ও অন্য জলজ প্রাণীর নিরাপদ প্রজনন ও সংরক্ষণসহ বিষ প্রয়োগ বন্ধে এ দুই মাস সুন্দরবনের অধিকাংশ খালে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. শাহীন কবির বলেন, পাস-পারমিট নিতে আসা জেলেদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগে থেকেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দুই মাস নির্দিষ্ট করে দেয়া বড়-বড় নদীগুলো থেকে মাছ আহরণের জন্য জেলেদের সীমিত আকারে পাস-পারমিট দেয়া হবে। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে বনবিভাগের পাশাপাশি সুন্দরবনসহ ব্যবস্থাপনা কমিটি, সিপিজি, ভিটিআরটি, ওয়াইল্ড টিমের সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, সুন্দরবনের মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব দিয়ে বনজীবীরা পাস পারমিট নেয়। তবে অনেকে অবৈধভাবে বনে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে কেউ কেউ সুন্দরবনের মৎস্য ও মৎস্য প্রজাতির সম্পদ আহরণ করে। সাদা মাছের প্রজনন মওসুমে মাছের আধিক্য থাকায় এক শ্রেণির অসাধু জেলে অধিক লাভের জন্য সুন্দরবনের খালগুলোতে বিষ দিয়ে মাছ ধরেন।
তিনি আরও বলেন, খালে বিষ দেয়ায় ছোট-বড় সব মাছ ও মৎস্য প্রজাতির প্রাণী মারা যায়। পাশাপাশি সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে এ বছরের জুলাই-আগস্ট থেকে সব খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এই দুই মাস সুন্দরবনের নির্দিষ্ট বড় নদ-নদী থেকে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা।
এদিকে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই কোনো বিকল্প পেশার ব্যবস্থা না করে সুন্দরবনের খালে বন বিভাগ নতুন করে দু’মাস মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করায় সুন্দরবন ও সাগর এলাকার ওপর নির্ভরশীল এ অঞ্চলের হাজার হাজার জেলে বেকার হওয়ার আশঙ্কায় চরম হতাশা আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। মহাজনদের কাছ থেকে নেয়া দাদনের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন আর সামনের দিনগুলোতে কিভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাবেন সে চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।