প্রিন্স চার্লস
জীবনভর প্রস্তুতি নিয়ে ৭৩ বছর বয়সে রাজা হলেন প্রিন্স চার্লস
অবশেষে ৭৩ বছর বয়সে সিংহাসনে বসলেন প্রিন্স চার্লস।
চার্লস, ব্রিটিশ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়া সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি। তার মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার তৃতীয় চার্লস রাজা হন। তার রাজ্যাভিষেকের কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
তিনিই প্রথম রাজ উত্তরাধিকারী যিনি রাজপরিবারের প্রথাগত নিয়মানুসারে বাড়িতে শিক্ষা গ্রহণ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজকুমারী ডায়ানার সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ, রাজপরিবারের সদস্যদের জনসাধারণের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করে,পরিবেশ সুরক্ষা ও স্থাপত্য সংরক্ষণের মতো বিষয় নিয়ে একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন চার্লস।
ইতিহাসবিদ এড ওয়েনস বলেন, অবশেষে তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন; জীবনের শরৎকালে এসে কীভাবে নিজেকে একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে তিনি তার ইমেজ প্রতিষ্ঠা করেন সেটা এখন দেখার বিষয়। কেননা কোথাও তার মায়ের মতো জনপ্রিয়তা তার নেই।
ওয়েন্স বলেন, চার্লসকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে কিভাবে ‘জনসাধারণের সমর্থন ও ভালোবাসার’ তৈরি করা যায়, ব্রিটিশ জনসাধারণের সঙ্গে এলিজাবেথের যে ধরনের সম্পর্ক ছিল।
অন্য কথায়, চার্লস কি তার প্রজাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে? এটি এমন একটি প্রশ্ন যা তার পুরো জীবনে বহুবার আলোচিত হয়েছে।
তার সিংহাসনে আরোহণ সম্ভবত ব্রিটেনের বৃহৎ আনুষ্ঠানিক রাজতন্ত্রের ভবিষ্যত সম্পর্কে বিতর্ককে উস্কে দেবে। কেউ কেউ এটিকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এবং অন্যরা এটিকে সামন্ততান্ত্রিক ইতিহাসের অপ্রচলিত চিহ্ন হিসেবে মনে করে।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২): ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
চার্লস একাধারে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও পাপুয়া নিউ গিনি সহ ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন।
২০১৮ সালের একটি ডকুমেন্টারি ‘প্রিন্স, সন অ্যান্ড হেয়ার: ৭০ বছর বয়সী চার্লস’-এ তিনি বলেছিলেন, রাজা হিসেবে তিনি কথা বলতে বা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কারণ প্রিন্স অব ওয়েলসের সার্বভৌম ভূমিকা আলাদা।
চার্লস বলেছেন যে তিনি রাজপরিবারের সদস্যদের সংখ্যা কমাতে চান, খরচ কমাতে চান ও আধুনিক ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্ব করতে চান।
কিন্তু ডায়ানার সঙ্গে তার বিবাহের বিচ্ছেদের পর অনেকেই সিংহাসনের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
জীবনীকার স্যালি বেডেল স্মিথ, ‘প্রিন্স চার্লস: দ্য প্যাশনস অ্যান্ড প্যারাডক্সেস অব অ্যান ইম্পরোবেবল লাইফ’-এর লেখক বলেন, তার সৌভাগ্য সত্ত্বেও বরাবরই তাকে পরিবারের অন্যদের সামনে ম্লান বলে মনে হয়েছে।
স্মিথ পিবিএসকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি হতাশা এটা নয় যে তাকে সিংহাসনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল, আমি মনে করি তার প্রধান হতাশা হল যে সে অনেক কিছু করেছে এবং ... তাকে ব্যাপক ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৯৯৭ সালে প্যারিসের একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় ‘সাধারণ মানুষের রাজকুমারী’ মারা যাওয়ার আগে ডায়ানার সঙ্গে স্বীকারোক্তিমূলক বিশ্বাসঘাতকতার জন্য চার্লসকে ক্ষমা করতে ব্রিটেনে অনেকেরই অনেক বছর লেগেছিল। কিন্তু ২০০৫ সালে ক্যামিলা পার্কার বোলসকে বিয়ে করার পর জনসাধারণের মন নরম হয় এবং তিনি কর্নওয়ালের ডাচেস হন।
যদিও চার্লস ও ডায়ানার বিচ্ছেদে ক্যামিলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তবুও তার ব্যক্তিত্ব ও সেন্স অফ হিউমার অবশেষে অনেক ব্রিটিশের মন জয় করে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ জনসমক্ষে বলেছিলেন যে এটি তার ‘আন্তরিক ইচ্ছা’ ছিল যে তার ছেলে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পরে ক্যামিলাকে ‘কুইন কনসোর্ট’ হিসেবে পরিচিত করা উচিত।
প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ ১৪ নভেম্বর, ১৯৪৮ সালে বাকিংহাম প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। যখন তার মা ১৯৫২ সালে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন, ৩ বছর বয়সী রাজকুমার কর্নওয়ালের ডিউক হন। তিনি ২০ বছর বয়সে প্রিন্স অব ওয়েলস হন।
তার স্কুলজীবন সুখকর ছিল না, একটি স্কটিশ বোর্ডিং স্কুলে তিনি সহপাঠীদের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছিল।
চার্লস কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে ইতিহাসে পড়েন এবং ১৯৭০ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনকারী প্রথম ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্য হন।
এরপর তিনি রয়্যাল নেভিতে যোগদানের আগে রয়্যাল এয়ার ফোর্স পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। সেখানে তিনি হেলিকপ্টার চালানো শিখেছিলেন। তিনি ১৯৭৬ সালে একজন মাইনসুইপার এইচএমএস ব্রনিংটনের কমান্ডার হিসেবে তার সামরিক কর্মজীবন শেষ করেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
ক্যামিলার সঙ্গে চার্লসের সম্পর্ক নেভিতে যোগ দেয়ার আগে থেকেই। তবে ক্যামিলা তখন একজন অশ্বারোহী অফিসারকে বিয়ে করেছিলেন।
অন্যদিকে, ১৯৭৭ সালে চার্লসের ১৬ বছর বয়সী লেডি ডায়ানা স্পেনসারের সঙ্গে দেখা হয়, যখন তিনি তার বড় বোনের সঙ্গে প্রেম করছিলেন। ডায়ানা ১৯৮০ সালে চার্লস ও রাজপরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য আমন্ত্রিত হওয়ার পরেই তাদের বাগদানের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
তারা ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের বাগদানের ঘোষণা দেন।
এই দম্পতি ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে বিয়ে করেন। এর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বর্তমান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সালে তার ভাই প্রিন্স হ্যারি জন্মগ্রহণ করেন।
তবে বহুল আলোচিত এই রূপকথার গল্প শিগগিরই শেষ হয়ে যায়। চার্লস ১৯৯৪ সালে এক টিভি ইন্টারভিউয়ে পরকীয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন।
এছাড়া আরেক সাক্ষাত্কারে ডায়ানা ক্যামিলার সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন: ‘এই বিয়েতে আমরা তিনজন ছিলাম।’
এই বিষয়গুলো চার্লসের জনপ্রিয়তা হ্রাস করেছিল।
তবে, ২০১৮ সালে তাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ৫৪টি দেশ নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে রানির মনোনীত উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। চলতি বছরের ১০মে পার্লামেন্টের রাষ্ট্রীয় উদ্বোধনের আগে রানি চার্লসকে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব অর্পণ করে সভাপতিত্ব করতে বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে
বিন লাদেনের আত্মীয়ের কাছ থেকে অনুদান পেয়েছে প্রিন্স চার্লসের দাতব্য সংস্থা
ওসামা বিন লাদেনের আত্মীয়দের কাছ থেকে এক মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান হিসেবে গ্রহণ করেছেন- একটি সংবাদপত্রে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস তার দাতব্য সংস্থা নিয়ে আরও প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।
দ্য সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রিন্স অব ওয়েলসের চ্যারিটেবল ফান্ড ২০১৩ সালে এক সৌদি সমৃদ্ধ পরিবারের কর্তাব্যক্তি বাকের বিন লাদেন ও তার ভাই শফিকের কাছ থেকে তহবিলটি গ্রহণ করেন। তারা দুজনই আল-কায়েদার সাবেক নেতা ও ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর হাতে পাকিস্তানে নিহতের সৎ ভাই।
সংবাদপত্রটি বলছে, উপদেষ্টারা অনুদান না নিতে চার্লসকে অনুরোধ করেছিলেন।
চার্লসের ক্লারেন্স হাউজ অফিস এ নিয়ে নানা বিতর্ক করলেও অনুদানটি সম্পন্ন হয়েছে বলে স্বীকার করেছে। তাদের দাবি, অর্থ গ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রিন্স নয়, দাতব্য সংস্থার ট্রাস্টিরা নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সমবেদনা জানালেন প্রিন্স চার্লস
‘জীবনের পরিবর্তন ও টেকসই কমিউনিটি গড়তে’ ১৯৭৯ সালে দ্য প্রিন্স অব ওয়েল’স চ্যারিটি ফান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭৩ বছর বয়সী চার্লস তার দাতব্য সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে একাধিক অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। গত মাসে সানডে টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, তিনি কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হামাদ বিন জসিম বিন জাবের আল থানির কাছ থেকে নগদ তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যাগ গ্রহণ করেছেন।
প্রিন্সের আরেকটি দাতব্য সংস্থার- প্রিন্স ফাউন্ডেশন-সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা অনুদানের বিনিময়ে সম্মান ও নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়ে এক সৌদি ধনকুবেরকে প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমানে লন্ডন পুলিশ এ অভিযোগ তদন্ত করছে। তবে ক্লারেন্স হাউস বলছে, চার্লস এই ধরনের কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে জ্ঞান না।
এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রিন্স উইলিয়াম
ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়াম তার বাবা প্রিন্স চার্লসের কাছাকাছি সময়ে গত এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, খবর বিবিসি।
বাংলাদেশে আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সমবেদনা জানালেন প্রিন্স চার্লস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এক চিঠিতে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন প্রিন্স চার্লস।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন প্রিন্স চার্লস
দ্য প্রিন্স অবওয়েলস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ব্রিটিশ রাজ পরিবার। খবর:বিবিসি।