বন বিভাগ
শেরপুরে আরেকটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার
শেরপুরে ঝিনাইগাতীতে আরেকটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। বৃহস্পতিবার দুপুরে গজনী অবকাশের পশ্চিম পাশের বেরী এলাকা থেকে ওই হাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে গত ৭ মাসের মধ্যে শেরপুরের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদে চারটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হলো।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন যাবত ৩০ থেকে ৪০টি বন্যহাতির একটি দল ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি এলাকায় বিচরণ করে আসছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে গজনী অবকাশের বেরী এলাকায় অসুস্থ্য হয়ে একটি পুরুষ হাতি খাদে পড়ে যায়। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় আশপাশের লোকজন বন্যহাতিটি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে প্রশাসনকে অবহিত করেন। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা পরীক্ষা করে হাতিটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মৃত হাতিটিকে ঘটনাস্থলের পাশেই মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।
শেরপুর জেলা জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার জানান, প্রাণিটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হবে।
পড়ুন: রাঙ্গুনিয়ায় বিলের কাদায় আটকে পড়া হাতি ৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার
রাঙামাটিতে বন্য হাতির আক্রমণে মানসিক প্রতিবন্ধীর মৃত্যু
সুন্দরবনে ৩ মাস মাছ ধরা নিষেধ
সুন্দরবনে ১ জুন থেকে মাছ আহরণ ও দর্শণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্লানেলের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী এই তিন মাস বেশিরভাগ প্রজাতির মাছের প্রজনন সময়। তাই সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি গণনা করা হবে হরিণ ও শূকর
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রবেশের অনুমতি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে বন বিভাগ এবং সুন্দরবনেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ডিএফও বলেন, সাধারণ ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। এই বছর মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই নিষেধাজ্ঞা এক মাস বৃদ্ধি করে ১ জুন থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় মাছের প্রজনন আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে পর্যটন: সেবা কার্যক্রম উন্নত করতে অটোমেশনের দিকে নজর
সুন্দরবনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে ২১০ প্রজাতির সাদামাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার রয়েছে।
সুন্দরবনে মধু আহরণ শুরু
দেশে মধু উৎপাদনের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র সুন্দরবনে আজ মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে মধু আহরণ শুরু হচ্ছে। এ বছর ১৫ দিন আগেই শুরু হচ্ছে মধু ও মোম সংগ্রহের কাজ।
এবার সুন্দরবনে মধু ও মোম সংগ্রহে বাড়তি রাজস্ব গুণতে হবে মৌয়ালদের। সুন্দরবন ভ্রমণ, মধু, মোমসহ প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে রাজস্ব আদায়ের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বন বিভাগের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারির গেজেট অনুযায়ী সুন্দরবনের প্রতি কুইন্টাল মধু সংগ্রহে রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৬০০ টাকা। যা পূর্বে ছিল এক হাজার টাকা। ফলে প্রতি কুইন্টাল মধুতে রাজস্ব বেড়েছে ৬০০ টাকা। আর প্রতি কেজি মধুতে বেড়েছে ৬ টাকা।
একই সাথে প্রতি কুইন্টাল মোম সংগ্রহে রাজস্ব বেড়েছে ২০০ টাকা। আর প্রতি কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। পূর্বে প্রতি কুইন্টাল মোমে রাজস্ব দিতে হতো ২ হাজার টাকা। বর্তমানে বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকা।
বন বিভাগের সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার ২৪০ কেজি মধু ও মোম সংগ্রহ করা হয়। মধু ও মোম থেকে থেকে রাজস্ব আদায় হয় ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার ৪১৩ টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৫ কেজি মধু থেকে ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৩ টাকা এবং এক লাখ ৩৩ হাজার ৯০৫ কেজি মোম থেকে ১৩ লাখ ৩৯০ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব আয় হয়।
জানা গেছে, ১৮৬০ সাল থেকে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা হয়। বনসংলগ্ন একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বংশ পরম্পরায় মধু সংগ্রহ করে। এদের মৌয়াল বলা হয়। সুন্দরবনের সবচেয়ে ভালো মানের মধু খোলসী ফুলের ‘পদ্ম মধু’। মানের দিক থেকে এরপরেই গরান ও গর্জন ফুলের ‘বালিহার মধু’। মৌসুমের একেবারে শেষে আসা কেওড়া ও গেওয়া ফুলের মধু অপেক্ষাকৃত কম সুস্বাদু। মধু সংগ্রহের জন্য প্রতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে তিন মাসের (এপ্রিল, মে ও জুন) জন্য বন বিভাগ মৌয়ালদের অনুমতিপত্র (পাস) দেয়। মধু সংগ্রহ করতে যাওয়ার আগে বিশেষ প্রার্থনা করে নেন মৌয়ালরা। এবার ১৫ দিন আগেই অর্থাৎ ১৫ মার্চ থেকে মধু সংগ্রহের পাস পারমিট দিচ্ছে বন বিভাগ।
পড়ুন: সুন্দরবনের রাজস্ব বৃদ্ধিতে ক্ষতির মুখে পর্যটন ব্যবসায়ীরা
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, আগে মৌয়ালদের পাস-পারমিট দেয়া হতো। কিন্তু কিছু মৌয়াল পাস-পারমিট না নিয়ে অবৈধভাবে আগেই বনে ঢুকে মধু আহরণ শুরু করেন। এর ফলে পাস-পারমিট নিয়ে বনে যাওয়া মৌয়ালরা তাদের কাঙ্ক্ষিত মধু আহরণ করতে পারেন না। বনের মৌচাকগুলোতে ১৫ মার্চ থেকেই মধু পাওয়া যায়। সে কারণে এ বছর ১৫ মার্চ থেকে মধু সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, এবার ১৫ মার্চ থেকে সুন্দরবনে মধু ও মোম আহরণের পাস দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, এবার মধু ও মোম সংগ্রহে রাজস্ব বেড়েছে। প্রতি কেজি মধুতে ৬ টাকা এবং প্রতি কেজি মোম সংগ্রহে ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
পড়ুন: সুন্দরবনে লবণাক্ততা বাড়ছে, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
শরণখোলায় ২ হরিণের চামড়া উদ্ধার
বাগেরহাটের শরণখোলায় এক বাড়ি থেকে দু’টি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে সুন্দরবনসংলগ্ন উপজেলার সোনাতলা গ্রাম থেকে চামড়াগুলো উদ্ধার করে বন বিভাগের সদস্যরা।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, খবর পেয়ে বন বিভাগের সদস্যরা সোনাতলা গ্রামের সুমন মুন্সির বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় বাড়িতে লুকিয়ে রাখা হরিণের দু’টি শুকানো চামড়া উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: দাম না পেয়ে যশোরের হাটেই রেখে গেছেন চামড়া
তবে বন বিভাগের সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায় বলে ডিএফও জানিয়েছেন।
শেরপুরে আরেকটি মৃত বন্যহাতি উদ্ধার
শেরপুরে ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী সীমান্ত থেকে একটি মৃত বন্যহাতির উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার ভোরে সীমান্তের আঠারোঝোরা এলাকা থেকে হাতিটি উদ্ধার করে বন বিভাগ।
বনবিভাগের ঝিনাইগাতীর গজনী বিট কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ জানান, উদ্ধার করা হাতিটি মাদি হাতি। বয়স আনুমানিক ১১ বছর হবে। হালচাটি গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে ভারত সীমান্ত সংলগ্ন আঠেরোঝোরা এলাকায় মৃত বন্যহাতিটি পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কৃষকরা জানালে সেটি উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বন্য হাতির মৃত্যু
তিনি জানান, হাতিটির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত বন্যহাতিটিকে মাটিচাপা দেয়া হবে।
এ নিয়ে গত চার মাসের ব্যবধানে শেরপুর সীমান্তে তিনটি মৃত বন্যহাতির উদ্ধারের ঘটনা ঘটল। এর আগে গত ৯ নভেম্বর শ্রীবরদী সীমান্তের মালাকোচা এলাকায় এবং ১৯ নভেম্বর নালিতাবাড়ী সীমান্তের পানিহাতা এলাকার মায়াঘাসি গ্রাম থেকে দুটি মৃত বন্যহাতি উদ্ধার হয়েছিল।
আরও পড়ুন: শেরপুর সীমান্তে হাতি আতঙ্কে ঘুম নেই পাহাড়ি অধিবাসীদের
বিশ্বনাথে বিরল প্রজাতির ‘গন্ধগোকুল’ উদ্ধার
সিলেটের বিশ্বনাথে বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী গন্ধগোকুল উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার(১৩ ফেব্রয়ারি) টুকেরকান্দি গ্রামের জঙ্গল থেকে এটি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারের পর উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা হলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে ছুটে আসেন।
টুকেরকান্দি গ্রামের তোয়াব আলী বলেন, আমাদের বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে বন্যপ্রাণী গন্ধগোকুলকে আটক করেছি।
তিনি বলেন, প্রাণীসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসে গন্ধগোকুলটি নিয়ে যায়।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম ইমন বলেন, ‘আমরা প্রাণীটিকে চিকিৎসা দিয়ে বন বিভাগে হস্তান্তর করব।’
পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে বিরল প্রজাতির ‘রেড কোরাল কুকরি’ উদ্ধার
পলাশবাড়িতে বিরল প্রজাতির তক্ষকসহ আটক ৪
সুন্দরবনে ২১ বছরে ৪০ বাঘের মৃত্যু
সুন্দরবনে গত ২১ বছরে ৪০টি বাঘ মারা গেছে। সর্বশেষ শুক্রবার সকালে পূর্ব বন বিভাগের বাগেরহাটের দুবলারচরের কাছে রুপার খাল থেকে একটি মৃত বাঘ উদ্ধার করা হয়েছে। বাঘটি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে বলে ধারণা করছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বন বিভাগের সদস্যরা শুক্রবার সকালে টহল দেয়ার সময় বনের রূপার খালে মৃত অবস্থায় একটি বাঘ ভাসতে দেখে। পরে তারা গিয়ে মৃত বাঘটি উদ্ধার করে। বাঘটির আনুমানিক বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর এবং বাঘটি পুরুষ প্রজাতির। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে বাঘটির ময়নাতদন্ত করা হবে বলে তিনি জানান।
ডিএফও আরও জানান, বন বিভাগের সদস্যরা বাঘটিকে তীরে উঠানোর পর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে বাঘের শরীরের কোথাও কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন নেই। ধরাণা করা হচ্ছে, বাঘটি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে।
বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০১ থেকে ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনে নানাভাবে ৪০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২৪টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে মৃত বাঘ উদ্ধার
কখনও শিকারির হাতে কিংবা সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে বের হলে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যায় বাঘ। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও বার্ধক্যজনিত কারণেও বাঘ মারা গেছে।
এ সময়ে ২০টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে।
২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তবে এখন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কত তা বলতে পারেনি বন বিভাগ। বাঘ রক্ষায় নানামুখী উদ্যোগ নেয়ায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে- এমনটাই প্রত্যাশা বন বিভাগের।
বাঘ রক্ষায় উদ্যোগ
ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বাঘ রক্ষায় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সুন্দরবনে বাঘসহ বন্যপ্রাণির আবাসস্থল বৃদ্ধি করা হয়েছে। মোট ছয় লাখ এক হাজার ৭০০ হেক্টর বনের মধ্যে এখন তিন লাখ ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর অভয়ারণ্য এলাকা। আগে ছিল মাত্র এক লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর।
২০১৭ সালে সরকার সুন্দরবনে অভায়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণ করে। সুন্দরবনে বাঘের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল ফাঁড়ির কার্যক্রমের পাশাপাশি স্মার্ট পেট্রোল করা হচ্ছে সুন্দরনে। এছাড়া বনের সীমান্ত এলাকায় বন বিভাগের টহল বাড়ানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক বন বিভাগ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে ডিএফও জানান।
জানা গেছে, সুন্দরবনে প্রতিটি বাঘ তাদের আবাসস্থলের জন্য ১৪ থেকে ১৬ বর্গ কিলোমিটার (হোমরেঞ্জ) চিহ্নিত করে সেখানে বাস করে। আর গোটা সুন্দরবন জুড়েই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ।
আরও পড়ুন: মতলবে খাঁচায় বন্দি মেছো বাঘ, জনমনে আতঙ্ক
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে লবণাক্ততা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করছে বাঘ।
নদী-খাল ভরাট হওয়ার কারণে বাঘ মাঝে মধ্যে সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বন সংলগ্ন গ্রামে ঢুকে পড়লে গ্রামবাসীর হাতে মাঝে মধ্যে বাঘের প্রাণহানি ঘটে। আর সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের তৎপরতা একেবারে বন্ধ করাও সম্ভব হয়নি।
বিভিন্ন সূত্র মতে, বাঘের আট উপ-প্রজাতির তিনটি ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের মাত্র ১২টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। সারা বিশ্বের বন উজাড়, শিকারি ও পাচারকারীদের কারণে বাঘ ‘বিপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
শরণখোলায় অজগর উদ্ধার, সুন্দরবনে অবমুক্ত
বাগেরহাটের শরণখোলায় পুকুর থেকে একটি অজগর উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের একটি পুকুর থেকে বন সুরক্ষা বিষয়ক ওয়াইল্ড টিম ও ভিটি আরটির সদস্যরা ওই অজগরটি উদ্ধার করে। সন্ধ্যায় অজগরটিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় অবমুক্ত করে বন বিভাগ।
পুকুর থেকে উদ্ধার করা অজগরটির দৈর্ঘ ১০ ফুট এবং ওজন প্রায় ১০ কেজি।
স্থানীয়রা জানান, তারা উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের জীতেন গাইনের বাড়ির পুকুরে বিশাল আকৃতির ওই অজগরটিকে দেখতে পায়। এরপর ওয়াইল্ড টিম ও ভিটি আরটির সদস্যদের খবর দেয়। তারা এসে অজগরটিকে উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: কাপ্তাইয়ে ১৫ ফুট দীর্ঘ অজগর উদ্ধারের পর অবমুক্ত
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. সামছুল আরিফিন জানান, ওই অজগরটি সুন্দরবন ছেড়ে ভোলা নদী পাড়ি দিয়ে লোকালয়ে আসে। পুকুর থেকে অজগরটি উদ্ধার করার পর সন্ধ্যায় সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, এক বছরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা এবং চাঁদপাই রেঞ্জ সংলগ্ন লোকালয় থেকে শতাধিক অজগর উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায়ই নদী-খাল পাড়ি দিয়ে অজগর লোকালয়ে আসছে।
ডিএফও বলেন, সুন্দরবনে অন্যান্য বণ্যপ্রাণীর সঙ্গে অজগরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে মাঝে মধ্যে অজগর এবং হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে আসছে। বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এলে না মেরে বন বিভাগকে খবর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে ১৩ ডিসেম্বর শরণখোলা উপজেলার জিলবুনিয়া গ্রামের ধানক্ষেত থেকে বিশাল আকৃতির একটি অজগর উদ্ধার করে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ২০ ফুট দীর্ঘ অজগর উদ্ধারের পর অবমুক্ত
বাগেরহাটে বন বিভাগের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা
বাগেরহাটে বন বিভাগের সদস্যদের ওপর সুন্দরবনের হরিণ শিকারিদের হামলা ও অস্ত্র ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। নয়জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত পরিচয়ের ১৫ থেকে ২০ জনকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের জিউধরা স্টেশন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় মোড়েলগঞ্জ থানায় ওই মামলা করেন। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ ওই মামলার কোন আসামি আটক করতে পারেনি।
মোড়েলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, বন বিভাগের সদস্যদের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাঁধা, অস্ত্র ভাঙচুর, গুলি ছিনিয়ে নেয়া এবং মারধরের অভিযোগ এনে বন বিভাগ এজাহার দায়ের করে। মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। শিগগিরই আসামিরা ধরা পরবে বলে তিনি আশাবাদী।
আরও পড়ুন: বন বিভাগের অনুমতির আগেই ২০০ গাছ কেটে ফেলল সিসিক
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) এনামুল হক জানান, বন বিভাগের সদস্যদের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে তারা সবাই সুন্দরবনের হরিণ শিকারি চক্রের সদস্য। এ ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ভোরে বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা গ্রামে হরিণের মাংস উদ্ধার করতে গেলে একদল হরিণ শিকারি বন বিভাগের সদস্যদের উপর হামলা চালায়। হামলায় বন বিভাগের দুজন নৌকা চালক আহত হয়। হামলাকারীরা এসময় বন প্রহরীদের একটি চাইনিজ রাইফেল ভাঙচুর করে এবং পাঁচ রাউন্ড গুলি লুট করে। এরপর বন বিভাগের সদস্যদের তারা একটি ঘরে আটকে রাখে। পরে পুলিশ এবং বন কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর চরে হবে বন বিভাগের টহল ফাঁড়ি
চিকিৎসার পর বন বিভাগ কার্যালয়ে বিলুপ্তপ্রায় শকুন
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার পঞ্চগড় ইউনিয়নের চারমাইল এলাকা থেকে একটি শকুন উদ্ধার করে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে স্থানীয়রা।
শকুনটিকে প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকের চিকিৎসা শেষে বনবিভাগ কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।
বুধবার বিকালে ঢিল মেরে আহত করলে শুকনটি এলাকার একটি পুকুরে নেমে পড়েলে স্থানীয়রা শুকনটিকে উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে ফরিদপুরে ২০ হাজার হেক্টর ফসলের খেত
পঞ্চগড় সদরের ভেটেরিনারী সার্জন ডা. মরিয়ম রহমান জানান, শকুনটি সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
পঞ্চগড় সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঋষিকেশ চন্দ্র রায় ও বন বিভাগের পঞ্চগড় সদর বিট কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, একটি আহত শকুন ধরা পড়েছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শকুনটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। শকুনটিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এটি মোটামুটি সুস্থ রয়েছে। শকুনটির আনুমানিক ওজন ১১ থেকে ১২ কেজি হবে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ৭৩৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত
দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পরামর্শে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তারা।