জাবি
জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলায় শিক্ষার্থীর নামে জিডি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সাহার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জিডি করেছেন ওই শিক্ষক।
মার্কেটিং বিভাগের ২০১৬-১৭ (৪৬ তম আবর্তন) এক শিক্ষার্থী নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক সাজু সাহার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি অভিযোগ তুললে ওই শিক্ষার্থীর নামে মিরপুর মডেল থানায় গত ২৪ মার্চ সাধারণ ডায়েরি করেন শিক্ষক সাজু সাহা।
গত ২৩ মার্চ তিনি তার ফেসবুক একাউন্টে যৌন হয়রানি অভিযোগ করে বলেন, 'সহকারী অধ্যাপক সাজু সাহা তাকে কাউন্সিলিং করানোর নামে যৌন হয়রানি করেছে। এছাড়া তিনি আমার গায়ে হাত দিয়েছে। তিনি আমার সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক করার জন্য রেস্টুরেন্টে পা পর্যন্ত ধরতে চেয়েছিল। এসবের কারণে আমি ঠিকমতো ক্লাস পর্যন্ত করতে পারিনি।'
ওই শিক্ষকের ব্যাপারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওনার এত কনফিডেন্স যে আমি কিছু প্রমাণ করতে পারব না.. কারণ উনি প্রমাণ রাখার মত কিছু রাখেন নাই.. তবে যা আছে, তা ওনার দোষ প্রমাণ করতে যথেষ্ট.. এত হ্যারাসমেন্ট -এর পরেও আমার বিশ্বাস ছিল উনি গিল্টি ফিল করবেন। কিন্তু ওনার মধ্যে কোনো অনুতপ্ত হওয়ার চিহ্ন নেই। শুধু ডিপার্টমেন্ট শেষ করার জন্য আমি ওনার সঙ্গে ভালো আচরণ করে গেছি।’
আরও পড়ুন: জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলায় শিক্ষার্থীর নামে জিডি
একদিনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি পোস্টে আরও বলেন, ‘উনি যে রিকশায় আমার গায়ে জোর করে হাত দিয়েছেন, তার কি প্রমাণ আমি দেব?? রিকশাওয়ালাকে খুঁজে নিয়ে আসব?? এটা কি আদৌ সম্ভব! আমি এরপরও ভয়ে ওনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি।’
ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার পরে সাজু সাহা বিভিন্ন জনের মাধ্যমে আমরা সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি আমাকে পরোক্ষভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। আমার কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে তাকে অভিযুক্ত করার। আমাকে হ্যারেজ করার পর তিনি(সাজু সাহা) বার বার বলতে থাকেন আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে তুমি এ নিয়ে কাউকে কিছু বলোনা।'
ভুক্তভোগী আরও বলেন,'আমাদের কথোপকথনের রেকর্ড আমার কাছে আছে। তিনি অনেক মেসেজই ডিলিট করলে আমাকে ক্যাম্পাসের বাইরে দেখা করার মেসেজ আছে।'
জিডি বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের ওই শিক্ষক প্রথমে অস্বীকার করেন পরে জিডির কপি দেখালে তিনি বলেন,'আমি লিগ্যালি হ্যান্ডেল করব।'
যৌন হয়রানি বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নিজেও অবাক। আসলে হঠাৎ করে এ ধরণের অভিযোগ, আমি নিজেও বুঝতেছি না। আমার কাছে এটার কোন ভিত্তিই নাই। আমি কি করেছি সেটাও আমি বুঝতেছি না। তার পোস্ট পড়ে আমি যতটুকু বুঝলাম, আমার কাছে বিষয়টা স্ট্রেঞ্জই লাগছে। এটা ও ই ভালো বলতে পারবে। আমি দেখেছি বিষয়টা— এটা নিয়ে কি করা যায়। আমি আইনগতভাবে যাব।
সিগন্যাল অ্যাপ
অ্যাপ এর ব্যপারে ওই শিক্ষক বলেন,আমি ভুক্তভোগীকে এই ধরনের কোন মেসেজ আদান প্রদানের অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলিনি। কেউ না চাইলে কি কাউকে জোর করে কোন কিছু করানো যাবে।
উল্লেখ্য,অভিযুক্ত শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে হোয়াটাঅ্যাপে সিগন্যাল নামে একটি গোপন বার্তা পাঠানোর অ্যাপের লিংক পাঠান এবং ডাউনলোড করতে বলেন।
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফুল হক বলেন, আমি বিষয়টি দেখেছি। এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। যদি আসে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই ঘটনার পরে,বিভাগের নিয়মিত একাডেমি কাউন্সিল সভায় সাজু সাহার বিষয়ে আলোচনা করা হয় এবং আলোচনা শেষে ওই বিভাগের সকল শিক্ষক উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন।
এছাড়াও সাজু সাহা ওই শিক্ষার্থীর নামে উপাচার্য বরারব যৌন হয়রানি অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে লিখত অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন: ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কার্যক্রমের প্রতিবাদে বুয়েট শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দিনের আন্দোলন অব্যাহত
জাবির ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্র ইউনিয়নে সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়।
বৃহস্পতিবার(২২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনমুতিক্রমে বিকাল পাঁচটায় আশুলিয়া থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন।
কলা ও মানবিক অনুষদের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণ ও স্বৈরাচার বিরোধী গ্রাফিতি আঁকার ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অমর্ত্য রায় এবং সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু, প্রতি আসনে লড়ছেন ১০৮ জন
এর আগে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি এক বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় তাদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন,'বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করা হয়েছে। আজ(বৃহস্পতিবার) বিকাল আমি আশুলিয়া থানায় মামলার কাজ সম্পন্ন করেছি।'
এর আগে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের (অমর্ত্য রায়-ঋদ্ধ অনিন্দ্য) নেতা-কর্মীরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি দুপুর থেকে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে টানা চারদিন অনশনে বসেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। এরপর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম। এসময় তিনি জড়িতদের শাস্তির আশ্বাস দিয়ে ডাবের পানি পান করিয়ে তাদের অনশন ভাঙেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকায় জাবি ছাত্র ইউনিয়নের ২ নেতা বহিষ্কার
জাবি ক্যাম্পাসে ধর্ষণের ঘটনায় আরও ২ জন গ্রেপ্তার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে ৩ ফেব্রুয়ারি স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আরও দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তারা হলেন- ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন ও মো. মুরাদ।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আল আমিন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ রাজধানীর ফার্মগেট ও নওগাঁ জেলায় একযোগে অভিযান চালিয়ে যথাক্রমে মামুন ও মুরাদকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন: জাবিতে ধর্ষণকাণ্ডে কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি
এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনায় এক ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাবি শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান খান। অন্যরা হলেন- মোস্তফা মনোয়ার ওরফে সাগর সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র হাসানুজ্জামান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাব্বির হোসেন।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় জাবি কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনায় ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যাবেন।
আরও পড়ুন: জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জন রিমান্ডে
জাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জন আটক
জাবিতে ধর্ষণকাণ্ডে কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ ও সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করতে তিন সদস্যেরে একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধর্ষণের ঘটনায় কি ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কেন এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে সেটি খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কমিটি গঠনের কথা জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর
আরও পড়ুন: জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জন রিমান্ডে
অভিযোগের প্রতিকার ব্যবস্থা এবং জিআরএস সফটওয়্যার বিষয়ক দিনব্যাপী এই কর্মশালাটির আয়োজন করে ইউজিসি।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন- কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান।
প্রফেসর আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানিসহ অনিয়মের অভিযোগসমূহের নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা ও প্রতিকারে পদক্ষেপ গ্রহণে ইউজিসি শিগগিরই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেল গঠন করবে। এখানে দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে এই সেল তদারকি করবে এবং তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণকাণ্ড বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যৌন হয়রানিসহ নানা অপকর্মে দৃশ্যমান ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়া, এসব অপরাধের বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও অপরাধীদের প্রশ্রয়ের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়নি।
ড. আলমগীর বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ ঘটনা আমাদের মর্মাহত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: জাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জন আটক
আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত না করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে এবং অছাত্ররা দিনের পর দিন কীভাবে হলে থাকছেন, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ হলেই কেবল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি, শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।
তিনি দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানিসহ যেকোন অপরাধের ঘটনা দ্রুত আমলে নেওয়া, এটিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখা, ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখা এবং লৈঙ্গিক বৈষম্য রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
ড. ফেরদৌস জামান যৌন হয়রানি বন্ধে প্রতিরোধ কমিটি শক্তিশালীকরণ ও মনিটরিং জোরদার করার পরামর্শ দেন। এছাড়া সকল ধরণের হয়রানি বন্ধে নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ইউজিসি’র উপপরিচালক ও অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার ফোকাল পয়েন্ট মৌলি আজাদের সঞ্চালনায় কর্মশালায় কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
আরও পড়ুন: জাবিতে প্রথম বর্ষে ভর্তির আবেদনের তারিখ ঘোষণা
জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জন রিমান্ডে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ চার আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগমের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর, ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিক ও ৪৫তম ব্যাচের হাসানুজ্জামান।
আরও পড়ুন: জাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জন আটক
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়ার থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. মিজানুর রহমান আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর জামিনের বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে ধর্ষণ করেন আসামিরা। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী রাতেই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: ৩ দিনের রিমান্ডে বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ নবী
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন রিমান্ডে
জাবি সিনেট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের জয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভ করেছে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ।
নির্বাচনে ৩৩টি পদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের প্রার্থীরা ২৪টি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা ৮টি পদে ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: জাবি ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটি গঠন
সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টায় এ ফলাফল ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু হাসান।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত শিক্ষক ক্লাবে ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে ৫৭৭ জন শিক্ষক ভোট দেন।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে নিরাপত্তা জোরদারে ই-সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স চালু
জাবি ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটি গঠন
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংসদের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদকে।
যুগ্ম আহ্বায়ক জানার্লিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের হাসিব জামান, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রায়হান শরীফ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ইসহাক সরকার।
আরও পড়ুন: জাবির ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে রবিবার (৮ অক্টোবর) “এসো নষ্ট স্রোতের বিপরীতে সুন্দরের সহযাত্রী হই” এই স্লোগান সামনে রেখে কর্মীসভার মধ্য দিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৩ সদস্য বিশিষ্ট নবগঠিত এই আহ্বায়ক কমিটির অন্যন্য সদস্যরা হলেন- সাইফুল ইসলাম, আকাশ আহমেদ, ইমন, কাউসার আহমেদ, তানজিম আহমেদ, ফাতেমাতুজ জোহরা, সাব্বির হোসেন। দুইটি পদ কো অপ্ট রাখা হয়েছে।
নবগঠিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দীপক শীল৷ এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি শাহরিয়ার ইব্রাহিম মিমো, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজওয়ান হক মুক্ত এবং সদস্য এ্যানি সেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর নবনির্বাচিত কমিটির নেতারা উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম, জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল, সাধারণ সম্পাদক ইমরান হিমু এবং প্রেস ক্লাবের সভাপতি শিহাব উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক হাসিব সোহেল, ছাত্রফ্রন্ট নেত্রী সোহাগী সামিয়াসহ অন্যন্য নেতাদের সঙ্গে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেন।
আরও পড়ুন: জাবি ছাত্রাবাসে সাংবাদিককে মারধর
জাবিতে পরীক্ষায় অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ
জাবি ছাত্রাবাসে সাংবাদিককে মারধর
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আসিফ আল মামুন নামে এক সাংবাদিককে মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
সোমবার (২১ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে হলের ভেতরের খেলার মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের ঘটনায় জড়িতরা সবাই একই হলের আবাসিক ছাত্র এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী।
আহত সাংবাদিক আসিফ আল মামুন ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি) ক্যাম্পাস প্রতিনিধি। তিনি হলের প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: জাবিতে পরীক্ষায় অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি শেষে হলের (গেস্টরুমে) ৪৭, ৪৮ ও ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা করছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সন্দেহ হয়, বাইরে থেকে কেউ ভিডিও বানাচ্ছে।
এ সময় আসিফ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় হলের ভেতরের দোকানে চা খাচ্ছিলেন। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের চিৎকারে ছুটে যান আসিফ ও অমর্ত্য। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অন্ধকারে আসিফকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন।
আসিফ নিজেকে হলের ছাত্র ও সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। মারধরের সময় ছাত্রলীগ নেতারা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে শনাক্ত করেছেন।
আসিফ আল মামুন বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ও অমর্ত্য চা খাচ্ছিলাম। তখন আমরা চিৎকার শুনতে পাই। অনেক সময় সাইকেল বা অন্যান্য জিনিসপত্র চুরির ঘটনাও ঘটে। তাই সেই চিৎকার শুনে কৌতূহল থেকেই মাঠে গিয়েছিলাম। সেখানে তারা আমাকে মারধর করে। আমি আমার পরিচয় দিয়েছি। আমি হলের বাসিন্দা। আমি একজন সাংবাদিক। এরপর তারা আমাকে আরও মারধর করে। এমনকি তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে আমি গেস্ট রুমের আশেপাশে আছি কি না, আমি ভিডিও তৈরি করছি কি না। পরিচয় দেওয়ার পরেও তারা আমাকে নির্মমভাবে মারধর করে।’
প্রত্যক্ষদর্শী ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় বলেন, ‘ঘটনার এক ঘণ্টা আগে আমি ও আসিফ ভাই একসঙ্গে ছিলাম। বটতলা থেকে হলে আমরা একসঙ্গে চা খাচ্ছিলাম। চিৎকার শুনে আসিফ হলের মাঠে নেমে এলে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়।’
জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওয়ার্ডেন পলাশ সাহা বলেন, 'আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রভোস্ট স্যার আজ রাতে একটি সভা ডেকেছেন।’
এ বিষয়ে প্রক্টর এ এস এম ফিরোজ উল হাসান বলেন, 'আমি প্রভোস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
আরও পড়ুন: জাবির ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত
জাবির ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সি’ ইউনিটের পরীক্ষায় পরদিন অনুষ্ঠিতব্য ‘বি’ ইউনিটের উত্তরপত্র (ওএমআর) পেয়েছেন ভর্তিচ্ছু ছয়জন শিক্ষার্থী।
রবিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে ‘সি’ ইউনিটের ফলাফল প্রস্তুত করতে গেলে বিষয়টি নজরে আসে সংশ্লিষ্টদের।
ওইদিন ‘সি’ ইউনিটভুক্ত কলা ও মানবিক অনুষদ; বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ভর্তি পরীক্ষার চতুর্থ শিফটের ‘সি’ ইউনিটের পরিবর্তে ‘বি’ ইউনিটের ৬টি ওএমআর সরবরাহ করা হয়। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারি ১৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: জাবির ফার্মেসি বিভাগে দীর্ঘ সেশন জট, দায় নিতে রাজি নয় কেউ
এ বিষয়ে জার্নালিজম ও মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল বলেন, ‘সি’ ইউনিটের ওএমআরগুলো স্ক্যান করার সময় ‘বি’ ইউনিটের ৬টি ওএমআর পাওয়া যায়। পরীক্ষা শেষে ওই কক্ষ থেকে ফেরত পাঠানো বাড়তি প্রশ্নপত্র এবং ওএমআরগুলোর মধ্যে ‘বি’ ইউনিটের আরও ৪৫টি ওএমআর খুঁজে পেয়েছি।
এছাড়াও সেখানে আরও বাতিল করা ৩টি ওএমআর পেয়েছি যেগুলো ‘বি’ ইউনিটের হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে এবং এর পরিবর্তে ‘সি’ ইউনিটের ওএমআর দেওয়া হয়েছে।
এতে বুঝা যায় ওই রুমে দায়িত্বরত শিক্ষক ও ওই কয়েকজন শিক্ষার্থী সেটা শনাক্ত করতে পেরেছেন কিন্তু এ বিষয়টি অনুষদের ডিন স্যারকে বলা হয়নি।
এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে কল কেটে দেন।
সি’ ইউনিট সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, এটা কীভাবে ঘটলো সেটি জানি না। তবে ডিন অফিস থেকে তো ‘সি’ ইউনিট ছাড়া অন্য কোনো ওএমআর সরবরাহ করা হয়নি।
তাই বিষয়টি একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। রাত পৌনে ৩টায় এ বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে ফলাফল স্থগিত করে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
এদিকে ‘বি’ ইউনিটের ওএমআর হওয়ার পরও কর্তব্যরত শিক্ষকরা বিষয়টি না দেখেই সেখানে সই করায় পরীক্ষার কক্ষের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
আরও পড়ুন: জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু, প্রতি আসনের বিপরীতে লড়ছেন ১৩৫ জন পরীক্ষার্থী
সাংবাদিক শামসের মুক্তির দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ জাবির প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের
জাবির ফার্মেসি বিভাগে দীর্ঘ সেশন জট, দায় নিতে রাজি নয় কেউ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে দীর্ঘ সেশন জট চলছে কিন্তু এর দায় নিতে চায় না বিভাগ কিংবা সংশ্লিষ্ট কেউ।ভর্তির পর ছয় বছর পার হয়ে গেলেও এখনও তৃতীয়বর্ষ পার হতে পারেননি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফার্মেসি বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের(৪৬ ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা।
তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। তবে এখনও ফল প্রকাশিত হয়নি। এরমধ্যে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষাও নিয়ে নিয়েছে বিভাগ।
যদিও আগের বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগে পরবর্তী বর্ষের পরীক্ষা নেয়ার কোন নজির বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। তবুও নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না নেয়া ও ফল প্রকাশ করতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকতেই বিভাগের শিক্ষকরা নিয়মের সব বিধি উপেক্ষা করেই ’সেশনজট কমাতে’ চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষও করে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ জাবি ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে
কিন্তু তৃতীয় বর্ষের ফল প্রকাশ না করে কীভাবে শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় বসানো হলো তার কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট কারও কাছে।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন বলছেন, দীর্ঘ সেশনজটের কবল থেকে শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।
পাশাপাশি উঠে এসেছে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিভাগের শিক্ষকদের অবহেলার বিষয়টিও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে থাকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের মাধ্যমে। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখাননি।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, কোনো শিক্ষার্থী যদি তৃতীয় বর্ষে অকৃতকার্য হয় তাহলে সে কী করবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী দুই বিষয়ে কেউ অকৃতকার্য হলে সে একই ব্যাচের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। আর অকৃতকার্য হওয়া ওই দুই বিষয় তাকে পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে হবে। যেটা ‘ইমপ্রুভমেন্ট’ হিসেবে গণ্য হবে এবং তার ‘ইয়ার ড্রপ’ হবে না। আর তিন বা তারও বেশি কোর্সে অকৃতকার্য হলে নীচের কোন ব্যাচের সঙ্গে তাকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। যেটি ‘ইয়ার ড্রপ’ হবে। এছাড়া অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা তো থাকছেই।
ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিভাগের শিক্ষকরা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা নিয়ে নিয়েছেন যে, যাই হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের বিশেষ পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ তো থাকছে।
এরমধ্যে কিন্তু ৪৭ ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেছে। এখন ৪৬ ব্যাচের কেউ যদি তিন বিষয় বা তারও বেশি কোর্সে অকৃতকার্য হয় তাহলে তিনি দুই বছর পিছিয়ে পড়বেন। অর্থাৎ তাকে ৪৮ ব্যাচের সঙ্গে পড়াশোনা চালাতে হবে, অথবা দ্রুত বসতে হবে বিশেষ পরীক্ষায়। এমন অবস্থায় ৪৬ ব্যাচের সব শিক্ষার্থী হতাশা ও অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ফার্মেসি বিভাগের ৪৬ ব্যাচের (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ২০১৯ সালে হওয়ার কথা থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয় আড়াই বছর পর ২০২১ সালে। করোনার কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে ২০২১ সালের ২১ আগস্ট শুরু হয়ে ১০ অক্টোবর (তত্ত্বীয়) শেষ হয়। এর ৭ মাস পর শুরু হয় ব্যবহারিক (ল্যাব) পরীক্ষা। ২০২২ সালের ১৮ মে থেকে শুরু হয়ে ২ জুন পর্যন্ত চলে ল্যাব পরীক্ষা।
পরীক্ষার ৯ মাস পার হয়ে গেলেও ফল প্রকাশ করা হয়নি। এরই মধ্যে চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষাও (তত্ত্বীয় ও ল্যাব) সম্পন্ন হয়ে গেছে। যেটি ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয় নভেম্বরের শেষে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভুগছেন চরম অস্থিরতায়। তারা আদৌ জানেন না তারা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করেছেন কী না। আর যদি উত্তীর্ণ না হন তাহলে তাদের শিক্ষাজীবন আরও অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। এদিকে, ৪৬ ব্যাচের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করছেন।
তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন তানিয়া বিনতে ওয়াহিদ, আর সদস্য হিসেবে আছেন অধ্যাপক সোহেল রানা এবং সহযোগী অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করেই ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাইরে চলে যান সভাপতি তানিয়া। এরপরই পরীক্ষা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। এরপরও পেরিয়ে গেছে ৫ মাস। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ করতে পারেননি কমিটির সদস্যরা। আর চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ড. সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু।
অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষা শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হবে।
আরও পড়ুন: জাবিতে গাড়ি থামানোয় নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর শিক্ষার্থীর
এদিকে আগের বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করেই পরবর্তী বর্ষের পরীক্ষা নেয়া যায় কী না- জানতে চাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ডিন ও অধ্যাপক পদমর্যার এক শিক্ষকের কাছে। তারা জানান, এমন কোন নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। যদি তা হয়ে থাকে তাহলে উপাচার্যের বিশেষ অনুমতিতে হতে পারে অথবা বিভাগের শিক্ষকদের চাপে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় পরীক্ষা নিয়ে থাকতে পারে। অথবা বিভাগ আবেদন করার পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় খেয়ালই করেননি যে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল আটকে আছে; তাদের চোখের ফাঁক গলে বিষয়টি সংঘটিত হয়ে গেছে।
তবে, উপাচার্যের বিশেষ কোন অনুমতি নেই এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কেউ সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বুঝা গেছে, বিভাগের শিক্ষকদের চাপ থাকলে সেখানে তাদেরও খুব একটা কিছু করার থাকে না। ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেও এই কথার সত্যতা আঁচ করা গেছে।
আর যে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অধীনে ফার্মেসী বিভাগের পরীক্ষা হয়েছে তিনি বর্তমানে শারীরিকভাবে কিছুটা অক্ষম। নিয়মিত অফিস করলেও খুব একটা কথা বলতে পারেন না। ফলে তার কাছ থেকেও ঘটনার বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে তৎকালীন সময়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও বর্তমান গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.ফরিদ আহমেদও এই বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হননি।
তিনি বলেন, ‘এখন দায়িত্বে নেই, ফলে সবকিছু মনেও নেই। তাই এই বিষয়ে মন্তব্য না করাই ভালো মনে করছি।’
এরপর যোগাযোগ করা হয় তৎকালীন উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা মাসুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বর্তমানে অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন। বিষয়টি তার মনে নেই জানিয়ে বলেন, ‘সব ছেড়ে চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে মাথা থেকে সব কাজ ফেলে দিয়েছি, সাত দিনও রাখিনি। ওই সময়ের কথা তেমন কিছুই মনে নেই। তাই কিছু বলতেও পারব না।’
এদিকে তৃতীয় বর্ষের ফল প্রকাশের আগেই চতুর্থ বর্ষের তত্ত্বীয় পরীক্ষা নেয়া হলেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ের বিষয়ে বিভাগের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে চতুর্থ বর্ষের ফলও কবে প্রকাশিত হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের অন্য বিভাগের বন্ধুরা অনার্স শেষ করে এখন মাস্টার্সে ক্লাস করছে। আর আমাদের তৃতীয় বর্ষের ফলাফলই প্রকাশিত হয়নি। ফলে বিসিএসসহ সব ধরনের চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ আমরা পাচ্ছি না, এমনিক আমাদের সেক্টরেও চাকরির বাজারেও আবেদন করতে পারছি না।’
বিভাগের অবহেলাকে পুরোপুরি দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সেশনজটের কবলে পড়েছি। আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ে গেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে বিভাগে কিছু সেশনজট তৈরি হয়েছে। করোনার মধ্যে তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনলাইনে নেয়ার অনুমতি থাকলেও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে আমরা ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো নিতে পারিনি। এখন আমরা আগে তত্ত্বীয় পরীক্ষা হওয়া সাপেক্ষে বিভিন্ন ব্যাচের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেব।’
‘আর চতুর্থ বর্ষের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ের জন্য আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করছি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের ট্রেনিং করছে। কিছু শিক্ষার্থীর বাকি আছে আশা করছি দ্রুতই এর সমাধান হবে।’
তবে তৃতীয় বর্ষের ফল প্রকাশের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারের সঙ্গে কথা বলতে দুই দিন বিভাগে গিয়েও পাওয়া যায়নি। পরে, মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগের শিক্ষকরা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ায় ব্যস্ত থাকেন। যার কারণে এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাবিতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত শিক্ষার্থী লাইফ সাপোর্টে