দুর্নীতি
দুর্নীতি: বিমানের ১৭ কর্মকর্তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিমানের সাবেক ও বর্তমান ১৭ কর্মকর্তাকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ওই ১৭ জন কর্মকর্তা হাজির হয়ে আগাম জামিন আবেদনের পর বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও আসিফ হাসান। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এআরএম হাসানুজ্জামান।
আরও পড়ুন: টিপু-প্রীতি হত্যা: বিডি বাবুকে জামিন দেননি হাইকোর্ট
এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন—বিমানের ফ্লাইট অপারেশন্সের পরিচালক ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ, ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক, মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রহমান ফুকই, সাবেক মুখ্য প্রকৌশলী শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফি, সাবেক মুখ্য প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরী, এয়ারওরথিনেস কনসালটেন্ট (সিএএবি) গোলাম সারওয়ার, প্রকৌশলী মো. সাদেকুল ইসলাম ভূঞা, ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার শরীফ রুহুল কুদ্দুস, ক্যাপ্টেন মো. নজরুল ইসলাম শামীম, জিয়া আহমেদ, চিফ পার্সার কাজী মোসাদ্দেক আলী, ফ্লাইট পার্সার মো. শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আজাদ রহমান, ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাদির, উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, ইঞ্জিনিয়ার অফিসার মো. জাহিদ হোসেন, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক বসুনিয়া, ব্যবস্থাপক মো. আতাউর রহমান, চিফ পার্সার মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক, ফ্লাইট পার্সার শাহনাজ বেগম ঝর্ণা, চিফ ইঞ্জিনিয়ার গাজী মাহমুদ ইকবাল।
অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে আগে নিজেরা লাভবান হয়ে ও পরে অপরকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি প্লেন লিজ নেন। পরে রি-ডেলিভারি পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের এক হাজার ১৬১ কোটি টাকার ক্ষতি ও অর্থ আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধির ১০৯/৪০৯/৪২০ ধারায় এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।’
আরও পড়ুন: শর্ত সাপেক্ষে আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে মিসরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের উড়োজাহাজ দুটি লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। প্রথম বছর শেষেই দুটি এয়ারক্রাফটেরই ইঞ্জিন বিকল হয়। ইঞ্জিনগুলো প্রায় ১২-১৫ বছরের পুরোনো এবং এর উড্ডয়ন যোগ্যতার মেয়াদকাল কম থাকায় পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। প্লেন সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় সেটিও। এতে পাঁচ বছরে দেশের ক্ষতি হয়েছে ১১০০ কোটি টাকা। যা একাদশ জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে।
এর আগে ২০২২ সালের ২৮ মে তারিখ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর চিঠি দিয়ে লিজ সংক্রান্ত নথি তলব করে দুদক। ইতোমধ্যে এয়ারক্রাফট লিজ নেয়ার প্রক্রিয়ায় সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগটি গভীরভাবে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১ নম্বর সাব-কমিটির দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মিসরীয় প্লেন লিজ নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়মের এই অনুসন্ধান দুদক শুরু করে।
সংসদীয় কমিটি মনে করে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের এয়ারক্রাফট বহর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে মিসরীয় দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর এয়ারক্রাফট লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।
দুদক জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি প্রাথমিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয় আরও গভীরভাবে তদন্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠায়।
আরও পড়ুন: রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলো থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে দেয়াল লিখন ও পোস্টার অপসারণের নির্দেশ হাইকোর্টের
বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে দুদক: মোশাররফ
সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার আবারও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই চক্রান্তের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। যেন দুদক এখন বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে।’
শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মোশাররফ এ মন্তব্য করেন।
দুদকের দায়ের করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের স্থাবর (ব্যাংক হিসাব) ও স্থাবর (জমি-সম্পর্কিত) সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে আদালতের আদেশের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ বলেন, দুদকের দায়ের করা মামলায় তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও অমূলক। যে (আদালতের) আদেশটি দেয়া হয়েছে তা প্রতিশোধমূলক এবং সরকারের নির্দেশে।’
আরও পড়ুন: ১০ দফা বাস্তবায়নই বিএনপির নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ: মোশাররফ
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগে মামলা করে বর্তমান ‘প্রতিশোধমূলক’ সরকার গোয়েবলসের মতো মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল বিনষ্ট ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সরকারের নির্দেশে ‘মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আদালত এ রায় দিয়েছেন বলে জানান বিএনপি নেতা।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা সরকারের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই এবং আদালতের নির্দেশিত রায় বাতিল এবং তারেক ও জুবাইদার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক’ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।
মোশাররফ অভিযোগ করেন, তারেকের যে সম্পত্তির মালিকানা নেই এবং এর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই, ‘তাকে কাল্পনিক সম্পদের মালিক দেখানো হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এমনকি, তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদার বিরুদ্ধে কর দেয়া সম্পদের ক্ষেত্রে কাল্পনিক অভিযোগ আনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, আদালতের এমন আদেশে সরকার তারেকের নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারবে না এবং তার স্ত্রীকে হেয় করতে পারবে না। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার এবং আইনের শাসন পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনকে অন্য দিকে পরিচালিত বা বানচাল করা যাবে না।
আরও পড়ুন: সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হবে: নজরুল ইসলাম খান
মোশাররফ আক্ষেপ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ‘ব্যাপক’ দুর্নীতিতে লিপ্ত হলেও দুদক সরকারের দুর্নীতির দিকে চোখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার সমর্থিত ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা দেশে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছে তাদের বিরুদ্ধে দুদক কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
বিএনপি নেতা বলেন, তারেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ এমন সময়ে দেয়া হয়েছে যখন দেশের জনগণ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জেগে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচির প্রতি জনতার ঢেউ দেখে সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। চলমান আন্দোলনকে ঠেকাতে বা দুর্বল করতে সরকার এসব করছে।’
মোশাররফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কোনো দমনমূলক কর্মকাণ্ড জনগণকে দমন করতে পারবে না এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বর্তমান আন্দোলনকে বানচাল করতে পারবে না।
এদিকে তারেক ও জুবাইদার বিরুদ্ধে আদালতের আদেশের প্রতিবাদে নয়াপল্টন এলাকায় বিক্ষোভ করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন: বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের 'পূর্বশর্ত' প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ: গয়েশ্বর
দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া বর্তমান সংসদের ২১তম অধিবেশনে ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
এই স্বাধীন সার্বভৌম দেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সকল আশার কেন্দ্র হলো মহান জাতীয় সংসদ।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জনপ্রতিনিধি, তাই জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। নতুন প্রজন্মকে একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়া আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন: সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী চক্রান্ত রোধ করুন: রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের উন্নয়নকে গতিশীল করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শকে গ্রহণ করতে হবে।
তিনি পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও গর্বের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ, এটি নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এবং ২০২২ সালের ২৫ জুন, উদ্বোধন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘দেশের ৩ কোটিরও বেশি মানুষ এতে সরাসরি উপকৃত হবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাল্টি-লেন টানেলের দক্ষিণাঞ্চলীয় টিউব নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।’
শিগগিরই টানেলটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হবে বলেও তিনি আশাবাদী।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম মেট্রো ট্রেন চালু করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।
২০২২ সালকে চ্যালেঞ্জের বছর হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, জাতি ও সমগ্র বিশ্ব এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সফলভাবে করোনা মহামারি মোকাবিলা করতে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি, কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের অগ্রগতির গতি কমিয়ে দিয়েছে।’
হামিদ বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ১৬ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন, যা সন্তোষজনক।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ৬০ বছরের বেশি বয়সী সকল নাগরিকের জন্য পেনশন চালু করা হবে।
আরও পড়ুন: বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময়
বিজয় দিবস: মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
দুর্নীতির দায়ে সু চির চূড়ান্ত রায় ঘোষণা, ৩৩ বছরের কারাদণ্ড
সেনা শাসিত মিয়ানমারের একটি আদালত শুক্রবার দেশটির ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছেন। রাজনৈতিক বিভিন্ন মামলায় সু চিকে টানা ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একজন আইনি কর্মকর্তা বলেছেন, শুক্রবার শেষ হওয়া ফৌজদারি মামলাটি দুর্নীতি বিরোধী আইনের অধীনে পাঁচটি অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মামলায় সু চিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
তিনি জানান, এর আগেই সাতটি দুর্নীতির মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এগুলোতে সু চিকে মোট ২৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল।
৭৭ বছর বয়সী সু চি অবৈধভাবে ওয়াকিটকি আমদানি ও নিজের কাছে রাখা, করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ লঙ্ঘন, দেশের সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন, রাষ্ট্রদ্রোহ ও নির্বাচনে জালিয়াতিসহ আরও কয়েকটি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
সু চির সমর্থক ও স্বাধীন বিশ্লেষকরা বলছেন, সু চি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মূলত সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেয়ার একটি প্রচেষ্টা এবং ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে সু চিকে রাজনীতি থেকে সড়ানোর অপচেষ্টা।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে কারচুপি মামলায় সু চির ৩ বছরের কারাদণ্ড
তার সরকারের প্রধান ছিলেন সু চি। উইন মিন্ট, তার সরকারে প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনিও একই মামলার অপর অভিযুক্ত।
ওই আইনী কর্মকর্তা বলেছেন, সু চিকে চারটি অভিযোগে তিন বছরের সাজা দেয়া হয়েছে এবং হেলিকপ্টার কেনার সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগের জন্য চার বছরের সাজাসহ মোট সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। উইন মিন্টকেও একই কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
যদিও আসামিরা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তার আইনজীবীরা আগামী দিনে আপিল করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সু চি ও উইন মিন্ট দুজনেই সুস্থ আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন একটি ইমেলে দেয়া বিবৃতিতে বলেন, ‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জান্তা তার (সু চির) বিরুদ্ধে মামলা সাজানোর জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করে যাচ্ছে। আর সামরিক বাহিনী যা চাইবে, দেশটির ক্যাঙ্গারু আদালত শাস্তির সেই রায়ই দেবে।’
সামরিক সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে, আমরা কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তা বিবেচনা করব।’
আরও পড়ুন: দুর্নীতির মামলায় সু চির ৫ বছরের কারাদণ্ড
রবার্টসন বলেন, বয়সের কারণে সু চির ৩৩ বছরের কারাদণ্ড ‘তার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সমান’।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার জান্তার প্রহসনমূলক, সম্পূর্ণ অন্যায্য অভিযোগ এবং অং সান সুচির বিরুদ্ধে দোষী সাব্যস্ত করা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শাস্তির সমান। তাকে সারাজীবন কারাগারে আটকে রাখার জন্য এসব করা হয়েছে।’
মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সানের মেয়ে সু চি ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে প্রায় ১৫ বছর কাটিয়েছেন।
মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান তাকে গণতন্ত্রের জন্য অহিংস সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত করে এবং ১৯৯১ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
তার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টি ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে সহজেই জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে এবং ১৯৬২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো সত্যিকারের বেসামরিক সরকার গঠন করে।
কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর ২০১৭ সালের দমন-পীড়নের নৃশংসতাকে উপেক্ষা করে, অবিশ্বাস্যভাবে সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য সু চি সমালোচিত হয়েছিলেন।
তার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি ২০২০ সালের নির্বাচনে আবার ভূমিধস বিজয় লাভ করে। কিন্তু তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সংসদে তাদের আসন গ্রহণ থেকে বিরত রাখা হয় এবং তার সরকার ও দলের শীর্ষ সদস্যদের আটক করা হয়।
সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি হয়েছে, কিন্তু স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা কোন বড় অনিয়ম খুঁজে পাননি।
২০২১ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। সেসময় দেশব্যাপী ব্যাপক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী সেসব বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে এবং শিগগিরই এই আন্দোলন সশস্ত্র প্রতিরোধে পরিণত হয়।
সেনাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হত্যা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা একটি বেসরকারি সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের তালিকা অনুসারে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী কমপক্ষে দুই হাজার ৬৮৫ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে এবং ১৬ হাজার ৬৫১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আরও পড়ুন: সু চির আরও ৪ বছরের কারাদণ্ড
এমজিএইচ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
অবৈধভাবে ১৩৬ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এমজিএইচ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনিস আহমেদ গোর্কির বিরুদ্ধে বুধবার মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুদক সচিব মাহবুব হোসেন।
উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে আনিসের বিরুদ্ধে মামলা করেন বলে জানান তিনি।
দুদক সচিব মাহবুব বলেন, মানি লন্ডারিংসহ শত শত কোটি টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি আনিস আহমেদের নামে অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দিতে কমিশন আদেশ জারি করেছে।
আরও পড়ুন: কাউন্সিলর মতি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগপত্র
তার দায়ের করা সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আসামি আনিস আহমেদ কর বছরে সাল ২০২০-২১, ২০০৮-২০০৯ থেকে ২০২১-২০২২ পর্যন্ত আয়ের বিভিন্ন উৎস থেকে ১৩৬ কোটি তিন লাখ টাকার আয়ের তথ্য দিয়েছেন।
সম্পদের বিবরণী যাচাইয়ের সময় অভিযুক্তকে একজন নিয়মিত আয়করদাতা হিসেবে পাওয়া গেছে কিন্তু আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ধারা ১৯ এএএএএ-তে উল্লিখিত মোট আয় পরিমাণকে ২০২০-২১ কর বছরের আয়কর রিটার্নে বিনিয়োগ হিসাবে দেখানো হয়েছে।
দুদক জানায়, অভিযুক্ত আনিস আহমেদ ঘোষিত অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে দেখানোর পক্ষে কোনো সন্তোষজনক রেকর্ড দেখাতে পারেননি।
কমিশনও বলেছে, আনিস অসৎ উদ্দেশ্যে অসৎ উপায়ে অর্জিত এই অর্থের অবৈধ সম্পদকে বৈধতা দিতে চেয়েছিল।
আরও পড়ুন:আমীর খসরুসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
তদন্তকালে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থে আর্থিক ফায়দা হাসিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের চলমান তদন্তে অভিযুক্ত হওয়া এড়াতে তিনি ওই অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে দেখিয়েছেন বলে কমিশন দেখতে পায়।
অর্থ আইন-২০২০ (সংশোধিত ২০২১) আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ১৯ এএএএএ অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করার তারিখ বা তার আগে বা সংশোধিত রিটার্ন আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর অধীন কর ফাঁকির জন্য যে কোন কার্যধারা বা যেকোনও অধীন কোন আর্থিক কার্যক্রম অন্যান্য আইনে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহলে এই বিভাগটি আর কাজ করবে না।
কমিশনের কর্মকর্তা বলেছিলেন, যেহেতু কমিশন তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তদন্ত এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, তাই তার পরে এই আইনী সুবিধা পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল দুদকের
দুর্নীতির অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট লিকে বিশেষ ক্ষমা ঘোষণা দ. কোরিয়ার
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়েলের সরকার দুর্নীতির অপরাধে ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত সাবেক প্রেসিডেন্ট লি মিউং-বাককে এক বিশেষ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন।
মঙ্গলবার দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বুধবার বিশেষ ক্ষমাপ্রাপ্ত এক হাজার ৩৭৩ সাজাপ্রাপ্তের মধ্যে লি অন্যতম।
তারা আরও জানায়, একটি জাতীয় ঐক্য প্রচারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লি’র মতো কিছু রাজনীতিবিদকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
৮১ বছর বয়সী লি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে জুন মাসে অস্থায়ীভাবে কারাগার থেকে মুক্তি পান।
সিইও থেকে পরবর্তীতে রক্ষণশীল রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া লি স্যামসাং সহ বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ নেয়া, তার মালিকানাধীন একটি কোম্পানির তহবিল আত্মসাৎ এবং ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে এবং তার সময়কালে (প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালনকালে) অন্যান্য দুর্নীতি-সম্পর্কিত অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন।
তিনি ব্যবসায়িক থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম ব্যক্তি এবং তার দেশের অর্থনৈতিক উত্থানের প্রতীক ছিলেন।
আরও পড়ুন: সিউলে বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া যৌথ পিপিপি প্লাটফর্ম মিটিং অনুষ্ঠিত
১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি হুন্দাই গ্রুপের কনস্ট্রাকশন আর্মে এন্ট্রি-লেভেল চাকরির মাধ্যমে তার ব্যবসায়িক কর্মজীবন শুরু করেন। আগে তিনি হুন্দাই গ্রুপের অধীনে ১০টি কোম্পানির সিইও পদে অধিষ্ঠিত হন। এবং ১৯৫০-৫৩ সালের কোরিয়ান যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে হুন্দাই গ্রুপের দ্রুত উত্থানের নেতৃত্ব দেন।
তার উত্তরসূরি ও সহকর্মী রক্ষণশীল পার্ক জিউন-হেকে ২০১৬-১৭ দুর্নীতি কেলেঙ্কারির জন্য ক্ষমতাচ্যুত এবং কারাগারে পাঠানোর পরে লি’র দুর্নীতির মামলাটি শুরু হয়েছিল। সাবেকদের কেলেঙ্কারিগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণশীলদের গভীরভাবে আঘাত করেছে এবং দেশটির জাতীয় বিভাজন আরও গভীর করেছে।
পার্ক দীর্ঘ কারাভোগ করেছেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ইউনের উদারপন্থী পূর্বসূরি মুন জে-ইন ক্ষমতায় আসার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তাকে ক্ষমা করা হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ‘পরবর্তী পর্যায়ে’ নিয়ে যেতে আগ্রাহী কোরিয়া
বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতায় বৈচিত্র্য চান দ. কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে সরকার: আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশকেও দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এছাড়া দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যা থেকে পৃথিবীর কোনও দেশই মুক্ত নয় এবং এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক ইসলামী সংস্থা (ওআইসি) এর সদস্য দেশগুলোর দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের জন্য প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের দু’দিনব্যাপী সম্মেলনে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আজ সকালে সৌদি আরবের জেদ্দায় শুরু হয়েছে এই সম্মেলন। এ সময় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) উপস্থিত ছিলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নত নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও তদারকির ব্যবস্থা, বিভিন্ন স্তরে জাতীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কাঠামো, উন্নত শাসন ব্যবস্থা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক এবং কমিউনিটি পর্যায়ে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেছি।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা ইউনিট, সততার দোকান ও সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার জন্য গণশুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সকল স্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধে ফৌজদারি আইন, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্যের অধিকার নিশ্চিতে তথ্য কমিশন, মানি লন্ডারিং আইন, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে পারস্পরিক আইনি সহায়তা, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম প্রতিরোধসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
ওআইসির সভায় আইনমন্ত্রী বলেন, অবৈধ আর্থিক প্রবাহ রোধ করা এবং বাজেয়াপ্ত সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং ফেরত দেয়ার মাধ্যমে একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কনভেনশন (UNCAC) এর সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে অবৈধভাবে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে কিছু কিছু দেশের বিভিন্ন ধরনের অসহযোগিতায় আইনমন্ত্রী তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: জেনেভায় মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠক
দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন হাজী সেলিম
দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে জামিন দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ১০ বছর দণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে হাজী সেলিমকে আপিলের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন (লিভ টু আপিল) মঞ্জুর করে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
এর আগে গত ২২ মে হাইকোর্টের রায় অনুসারে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে কারাগারে ডিভিশন ও সুচিকিৎসার আবেদন জানান। বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী জেল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। ২৪ মে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাইকোর্টের দেয়া দণ্ডের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন। একইসঙ্গে জামিন আবেদনও করেছিলেন হাজী সেলিম। সেই আবেদনের আজ শুনানি হয়।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আরও পড়ুন: ভাইয়ের মৃত্যু, সাড়ে ৫ ঘণ্টার প্যারোলে মুক্ত হাজী সেলিম
এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন।
পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় আপিল শুনানির জন্য নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
সে অনুসারে শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন।
রায়ে ১০ বছরের দণ্ড বহাল থাকলেও তিন বছরের সাজা থেকে খালাস পান হাজী সেলিম। একইসঙ্গে রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এরপর ২২ মে হজী সেলিম আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। এখন জামিন পাওয়ায় তার কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
আরও পড়ুন: হাজী সেলিমের জামিন আবেদন নথিভুক্ত, আপিলের শুনানি ২৩ অক্টোবর
দণ্ড বাতিল চেয়ে হাজী সেলিমের আপিল
৩ আসামিকে অব্যাহতির আদেশ বাতিল হাইকোর্টের
অবৈধভাবে ঋণ দিয়ে সোনালী ব্যাংকের ১২ কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় তিন আসামির অব্যহতির আদেশ বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এক আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এ রায় দেন।
অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন-ব্যাংকটির প্রাক্তন ডিজিএম আলতাফ হোসেন হাওলাদার, মেলবা টেক্সটাইলস মিলসের চেয়ারম্যান মোরশেদ রাজ্জাক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকি আহমেদ।
আদালতে এদিন সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম বায়েজীদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী গোলাম রহমান ভূঁইয়া। হাইকোর্টের এ রায়ের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে বলে জানিয়েছেন এই আইনজীবী।
আরও পড়ুন: ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে বিএফআইইউকে তিন মাসের সময় হাইকোর্টের
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মিরন মিয়া ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। তার সেই মামলায় আসামি করা হয় ব্যাংকটির সাবেক ডিজিএম আলতাফ হোসেন হাওলাদার, মেলবা টেক্সটাইলস মিলসের চেয়ারম্যান মোরশেদ রাজ্জাক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকি আহমেদকে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আলতাফ হোসেন হাওলাদার ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রমনা করপোরেট শাখার প্রধান থাকাকালে মেলবা টেক্সটাইলস মিলসের অনুকূলে বৈদেশিক বাণিজ্যিক সংক্রান্ত ঋণ নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বিধিবর্হিভূতভাবে আসামিদের যোগসাজশে ১২ কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার ৬৭৯ কোটি ঋণ নিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেছেন। সেই টাকার সুদে আসলে ২১ কোটি ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৩ টাকা পাওনা রয়েছে।
এ মামলার তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২৫ মে আসামিদের দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয় তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ৩০ জুন চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করে আসামিদের অব্যাহত দেয় ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জহুরুল হক। বিচারিক আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করেন মামলার বাদী।
শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ১৫ জুন অব্যাহতির আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এরপর ওই রুলের ওপর দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ হাইকোর্ট রুল অ্যাপসুলেট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেয়।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি নিয়োগ পরীক্ষায় বাধা নেই
জজ মিয়াকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের রুল
মির্জা আব্বাসের দুর্নীতির মামলার বিচার চলবে: আপিল বিভাগ
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা বাতিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ আদেশের ফলে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে এ মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুর রেজাক খান ও সগীর হোসেন লিয়ন।
সোমবার এ বিষয়ে শুনানি শেষে আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছিলেন আপিল বিভাগ।
৫ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫৮১ টাকা তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শফিউল আলম ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে দেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৬ এ সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
পড়ুন: দুর্নীতি মামলায় বরখাস্ত ডিআইজি বজলুর রশীদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড
দুর্নীতি, অনিয়ম করে নিয়ন্ত্রণহীন সরকার দুর্ভিক্ষের কথা বলছে: ফখরুল