পেঁয়াজ
পাঁচ দিনেও খালাস হয়নি আমদানি করা ৯০ টন পেঁয়াজ
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা ৯০ টন পেঁয়াজ পাঁচ দিনেও খালাস হয়নি। ফলে অধিকাংশ পেঁয়াজে পচন ধরতে শুরু করেছে।
গত ৫ ডিসেম্বর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৩টি ট্রাকে করে ৯০ টন পেঁয়াজ আমদানি করে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ(টিসিবি)। কিন্ত গত পাঁচ দিনেও খালাস হয়নি পেঁয়াজের চালানটি। ফলে পেঁয়াজগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর খুলনায় দাম বেড়েছে ৬০ টাকা
বেনাপোলের কোয়ারেন্টাইন উদ্ভিদ নিরীক্ষক কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, ভারত থেকে টিসিবির আমদানি করা পেঁয়াজের ট্রাকগুলো বেনাপোল স্থলবন্দরে চার দিন আগে আসে। গাড়িতে ৯০ টন পেঁয়াজ রয়েছে।
পেঁয়াজ নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার সন্তোস মণ্ডল বলেন, পেঁয়াজের ট্রাক নিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে বেনাপোল বন্দরে এসে বসে আছি। পেঁয়াজগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কেউ আনলোড করতে আসছে না। কবে নাগাদ খালাস হবে সেটাও জানতে পারছি না, খালাসের জন্য কোনো আমদানিকারকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। পণ্য চালানটি খালাসের দায়িত্বে আছে কনফিডেন্স এন্টারপ্রাইজ নামে একজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, গত পাঁচ দিন আগে থেকে বন্দরে টিসিবির ৯০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়ে বন্দরে পড়ে আছে। পেঁয়াজের চালান খালাস না হওয়ায় তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে আড়তে ঝুলছে ‘পেঁয়াজ নাই’ লেখা বোর্ড
হিলি স্থলবন্দরের মোকামে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
হিলি স্থলবন্দরের মোকামে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ঘোষণায় হিলি স্থলবন্দরের মোকামে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ফলে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে পেঁয়াজের বাজারে।
এক রাতের ব্যবধানে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ল প্রতি কেজিতে ৮০-৯০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজিতে।
অভ্যন্তরীণ সংকট ও দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ভারত সরকার হঠাৎ করেই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওযায় এই অস্থিরতা দেখা দেয়।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) মহাপরিচালক সন্তোষ কুমার সারাঙ্গী স্বাক্ষরিত গত বৃহস্পতিবারের আদেশে বলা হয়েছে- বৃহস্পতিবারের আগে যেসব পেঁয়াজ রপ্তানিতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেসব পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে।
আরও পড়ুন: ভারতে ছুটি থাকায় একদিন পর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি পুনরায় শুরু
এই আদেশ আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে বলে ওই আদেশে বলা হয়ছে।
এদিকে বন্দরের মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) বাংলাহিলি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ১৬০-১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা দামে। এক রাতের ব্যবধানে প্রকার ভেদে কেজিতে ১০০ টাকার উপরে বেড়েছে।
শনিবার বন্দরের বাংলাহিলি বাজারের কাঁচাপণ্য বিক্রেতা ময়নুল শেখ জানান, প্রতি মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। শুক্রবার ভারতীয় যে পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে শনিবার তা ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তাও আবার যৎসামান্য পেঁয়াজ আছে।
তিনি আরও জানান, শনিবারের মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যাবে। দেশি পেঁয়াজ সকালে ২২০ টাকায় বিক্রি করেছি। দুপুরের পর শেষ হয়ে গেছে। বাজারে কোনো ব্যবসায়ীর কাছে দেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।
স্থানীয় পৌর শহরের ক্রেতা সাবের আলী জানান, ভারতের কাণ্ড দেখে মনে হয় তারা সব কিছুতেই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। যখন যা মনে হচ্ছে তাই করছে। কখনো চাল বন্ধ করছে, আবার কখনো পেঁয়াজ বন্ধ করছে।
তিনি আরও জানান, সরকারের উচিৎ হবে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখা। তাহলে আমরা কম আয়ের মানুষ কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারব। ক্রেতারা দাম নিয়ে স্বস্তিতে থাকবে।
জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া ৮০০ মার্কিন ডলারের রপ্তানি মূল্যে আমরা হিলি বন্দর দিয়ে দেশে পেঁয়াজ আমদানি করছি। কিন্তু ইতোমধ্যে ভারত সরকার আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, তাদের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের দাবি জানাচ্ছি। পূর্বে ২/৩ ডলার মূল্যে পেঁয়াজ রপ্তানি করা হলেও গত ২৮ অক্টোবর রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়।
তিনি জানান, সরকারের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার। এখন থেকে বাজারে অভিযান চালানো হলে দাম বাড়ার আশঙ্কা থাকবে না। কারণ আমদানি বন্ধের ঘোষণায় ইতোমধ্যেই ভোক্তাদের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে।
এদিকে বন্দরের কয়েকজন আমদানিকারক জানান, পূর্বের অনুমতি থাকায় আজ শনিবার দুপুর থেকে ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে তিনটি ভারতীয় ট্রাকে প্রায় ৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। রবিবার থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: পূজায় ৭ দিন বন্ধ হিলি স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি, খোলা ইমিগ্রেশন
পূজা উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে ৭ দিন
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর খুলনায় দাম বেড়েছে ৬০ টাকা
২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। গণমাধ্যমে এমন খবর আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) বিকালে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয় এবং ১২ ঘণ্টার মধ্যে বাজারের দৃশ্যপট পাল্টে যায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১৫০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ২০০-২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশের মতো খুলনায়ও ভারতীয় এবং দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে।
নগরীর সন্ধ্যা বাজার, নিউ মার্কেট, জোড়াকল বাজার, বয়রা বাজার, গল্লামারী, ট্রাক টার্মিনালের পাইকারী আড়ৎ ঘুরে দেখা যায় খবর প্রচার হওয়া মাত্রই একটি সিন্ডিকেটের কালো থাবা পড়েছে বাজারে। এলাকার বাজার ঘুরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর জানা গেছে।
জানা গেছে, শুক্রবার সকালেই নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত। যা গত সপ্তাহেও ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।
এছাড়াও পাবনার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ টাকা করে।
তবে শুক্রবার সন্ধ্যার পরই পাল্টে যায় পেঁয়াজের বাজারের দৃশ্যপট।
বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি করে।
মূলত দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার খবর সন্ধ্যার মধ্যেই পৌঁছে যায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের কানে।
এরপরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেন।
আরও পড়ুন: ৯ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন সরকারের
ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা খবর পেয়ে পেঁয়াজ কিনতে বড় বাজারে আসেন সরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম।
দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্ধ্যার দিকেই দেখেছি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে, তখনই বুঝতে পারলাম দেশেও দাম বেড়ে যাবে। তাই দ্রুত বাজারে চলে এলাম, কিন্তু এসে দেখি আগেই দাম বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ দুই দিন আগেও ১০০ টাকা কেজি কিনেছি, শনিবার কিনতে হয়েছে ১৫০ টাকা করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর ব্যাপারে খুবই দক্ষ। কোনো একটা ঘোষণা আসার আগেই অটোমেটিক দাম বেড়ে যায়। ভারত আজ ঘোষণা দিয়েছে, তাই বলে আজই দাম বাড়িয়ে ফেলতে হবে?
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সন্ধ্যা বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে বেশি দামেই পেঁয়াজ আনতে হচ্ছে। যার কারণে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি।
তিনি আরও বলেন, শনিবার আবার শুনেছি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে, তাহলে তো পেঁয়াজের বাজারে আরও অস্থিরতা তৈরি হবে।
দেশি পেঁয়াজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজের সিজন শেষ, যে কারণে দামটা একটু বেশি। তবে আগামী ১৫ দিন পরই বাজারে নতুন পেঁয়াজ চলে আসবে, আশা করি দেশিটার দাম তখন কমে যাবে।
বিক্রেতা রাকিব মিয়া বলেন, গত দুই দিনের বৃষ্টিতে কৃষকের পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। যার কারণে নতুন পেঁয়াজ এলেও দাম তেমন একটা কমবে না। এছাড়া বাজারে সব জিনিসেরই তো দাম বেশি। পেঁয়াজের দাম কমবে কী করে?
শুক্রবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে অন্যান্য দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত।
এর আগে গত ২০ আগস্ট ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির উপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যার ফলে স্থানীয় বাজারে মূলত মশলা হিসেবে ব্যবহৃত পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে লক্ষাধিক মেট্রিক টন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রত্যাশা
ভারতের শুল্ক আরোপ করায় খুলনার বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
ডিসেম্বরে পেঁয়াজ-আলুর দাম কমবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, নিজেদের উৎপাদন শুরু হলে আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পেঁয়াজ ও আলু কম দামে পাওয়া যাবে।
বুধবার (৮ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি মনিটরিং ও রিভিউ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
আমদানি ও বাজার মনিটরিং নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আলু ও ডিম আমদানি করতে হলে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। আমরা সেই অনুমতি নিয়ে দুই মাস আগে আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছি। যদি পেছনের সমর্থন না পাই, তাহলে আমরা অনেক সময় করতে পারি না। সংকট যখন প্রকট হয়ে যায়, তখন তারা মেনে নেন, কিন্তু তখন আবার অনেক দেরি হয়ে যায়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরবরাহ যদি ভালো থাকে, তাহলে সমস্যা হয় না। আবার আলু যদি অতিরিক্ত থেকে যায়, তখন প্রশ্ন করা হয়, কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছেন না, আপনি কী ব্যবস্থা করেছেন? দুইভাবেই সমস্যা। উৎপাদন যাতে বাড়ে, সেই প্রচারটা করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একটা হলো আমাদের দেশের উৎপাদন, আরেকটি আমদানি করে আনা হয়। বিভিন্ন জিনিসের বিভিন্ন রকম অবস্থা। পেঁয়াজের দাম কবে কমবে? এটা আমরা সবাই বুঝি যে যখন নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠবে, কৃষক যখন ফসল ঘরে তুলবে। হয়ত আগামী মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজটা বাজারে উঠবে, তখন হয়ত পেঁয়াজের দাম কমবে। আবার আলু যেমন ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাজারে উঠতে শুরু করবে, তখন দাম কমবে।
আরও পড়ুন: ৩০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ: বাণিজ্যমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে ভারতীয় বাজারে ৮০ রুপি প্রতি কেজি পেঁয়াজ, যা আমাদের টাকায় ১০৫ বা ১১০ টাকা করে। পেঁয়াজের ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ভারত ৮০০ ডলার। ওই টাকায় আমরা আমদানি করলে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০ কিংবা ১২৫ টাকা পড়ে যাবে। এজন্য আমাদের নিজেদের উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতে হবে।
তিনি বলেন,‘একইভাবে আলু আমাদের যা আছে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে, তা প্রয়োজন অনুসারে ভীষণ টাইট অবস্থা। ডিসেম্বরের শেষের দিকে আলু উঠতে শুরু করবে। তখন দাম কিছুটা কমবে। আমদানিও শুরু হয়েছে, বাজারে সেটার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।’
মন্ত্রী বলেন, আমদানিটা ভালোভাবে এলে দাম কিছুটা সাশ্রয় হবে। ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি, বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে কিছুটা সময় লেগেছে। এরইমধ্যে প্রথম চালান এসেছে।
টিপু মুনশি বলেন,‘যখন মুদ্রাস্ফীতি থাকে, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দামের ওপর মূল্যস্ফীতি একটা বড় প্রভাব বিস্তার করে। এখন প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি। সেটার সমাধান করতে না পারলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অন্য কেউ খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।’
আরও পড়ুন: নিত্যপণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর
পেঁয়াজ-আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা আমাদের দুর্বলতা: কৃষিমন্ত্রী
শুধু সরকারের দুর্বলতা নয়, সফলতার দিকগুলোও গণমাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক
তিনি বলেন, পেঁয়াজ ও আলুর দাম বেঁধে দিলেও সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এ নিয়ে সমালোচনা করেন, আমরা মেনে নেব। কারণ, এটা আমাদের দুর্বল দিক। কিন্তু আমাদের সবল দিকগুলোও দয়া করে মিডিয়াতে তুলে ধরবেন।
রবিবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: নিজেদের খোঁড়া কবর থেকে উঠতে পারবে না বিএনপি: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ডাল, তেল এগুলো এগুলো আমদানি নির্ভর, সেখানে আমরা খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারি না। কিন্তু সবগুলো মিলে একজন মানুষের জীবনধারণের জন্য যে খাদ্য খাই তার মধ্যে চালের পেছনে খরচ হয় ৬৫-৭০ ভাগ। কাজেই চালটা কিন্তু প্রথম ও প্রধান উপাদান খাদ্যের। পেঁয়াজের দাম আলুর দাম কতটুকু সেটা আমি ওইভাবে বলতে চাই না। তবে চাল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। মানুষের যে খাদ্য নিরাপত্তা, ন্যূনতম যে খাবারটা সেটা কিন্তু কিনতে পারছে।
আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মোটেই হাল ছেড়ে দিইনি। আমরা এখনও যথেষ্ট তৎপর রয়েছি। উৎপাদনের পার্টটা হলো আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয়ের। বাজার মনিটর করার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তারপরেও আমি দায় এড়াতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডনসিয়াল ফর্মে প্রেসিডেন্ট সব দায়িত্ব পালন করেন। কেবিনেট সিস্টেম অব গভর্মেন্টে সব মন্ত্রীই সব কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী, প্রধানমন্ত্রীসহ।
তিনি বলেন, কাজেই আমরা মোটেই হাল ছেড়ে দিইনি। আমরা চেষ্টা করছি। কোল্ডস্টোরেজের মালিকরা খুবই অসহযোগিতা করছে, তারা ঠিকমতো সরবরাহ করছে না। এটা বড় অন্তরায়, নানাভাবে আমাদের কর্মকর্তারা মাঠ লেভেলে তাদের চাপ সৃষ্টি করলেও সাপ্লাইই দেয় না। বন্ধ-টন্ধ করে চলে যায়, এ ধরনের কিছু ব্যাপার রয়েছে, তা সত্বেও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, এপ্রিল-মে মাসে পেঁয়াজ তোলার পর দুই মাসের বেশি থাকে না। পেঁয়াজ পচে যায়, শুকিয়ে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসে আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গত বছর যথেষ্ট পেঁয়াজ হয়েছিল, চাষিরা বিক্রি করতে পারেনি। আলুরও একই অবস্থা হয়েছিল, রাস্তায় ফেলে দিয়েছে, এবার উল্টো পরিস্থিতি। দুই-তিন লাখ কম হয়েছে এই সুযোগে কোল্ড স্টোরেজের মালিক ও আড়ৎদাররা ব্যাপকভাবে মুনাফা করছে। এত লাভ করা উচিত না। ২০ টাকা খরচ হয় না সেটাকে সে ৪০-৫০ টাকা বিক্রি করছে।
পেঁয়াজ সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি আনা হয়েছে জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, ওভাবে পেঁয়াজ রাখলে ৫ শতাংশও পচে না। এই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারলে দুই বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। নতুন জাত বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন হেক্টরে ৪০-৫০ টন উৎপাদন হয়। আগামী দিনে বাংলাদেশে পেঁয়াজেরও কোনো সমস্যা থাকবে না।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হল পেঁয়াজে আমরা স্বনির্ভর হতে চাই। তার জন্য সাময়িক একটু কষ্ট হয়েছে। মানুষ বেশি দামে কিনেছে, কিন্তু চাষিদের আমরা উৎসাহিত করছি। স্থানীয়ভাবে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদন করব।
তিনি বলেন, জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি। এদিক দিয়ে আমরা খুবই একটা ভালো অবস্থায় আছি। শীতকাল আসছে, পর্যাপ্ত সবজি হবে। সব সবজির দামই কমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশি। আরও অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। দেশে মুদ্রাস্ফীতি আছে, এসব বিবেচনায় সবজি ও অনেক পণ্যের দাম বেশি।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে: কৃষিমন্ত্রী
খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে কম সময়ে অধিক ফলনে গুরুত্ব দিচ্ছি: কৃষিমন্ত্রী
৯ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন সরকারের
দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) কৃষি মন্ত্রণালয় ভারতসহ ৯টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলামের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চীন থেকে ২৪০০ টন, মিশর থেকে ৩৯১০ টন, পাকিস্তান থেকে ১১৮২০ টন, কাতার ১১০০ টন, তুরস্ক ২১১০ টন, মিয়ানমার ২০০টন, থাইল্যান্ড ৩৩ টন, নেদারল্যান্ডস ৪টন এবং ইউএই থেকে ৩ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ৭৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদনের বিপরীতে দেশে এসেছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টন।
প্রতিবেশী দেশ ভারত ২০ আগস্ট থেকে পেঁয়াজের উপর ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপের পর দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
তা ছাড়া শুল্ক আরোপের পর সারাদেশে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন: ভারত ৪০% শুল্ক আরোপ করায় হিলি দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে
ভারতের শুল্ক আরোপ করায় খুলনার বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত
ভারত ৪০% শুল্ক আরোপ করায় হিলি দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে
গত শনিবার থেকে হঠাৎ করেই ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন করে ৪০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করে। এরফলে আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। পরে নতুন শুল্ক দেওয়া হলে আমদানি শুরু হয়।
তবে ভারতের এই নতুন শুল্ক আরোপের কারণে পেঁয়াজ আমদানি অনেকটা কমে গেছে। গত রবিবার বন্দরের মোকামে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায় পাইকারী বিক্রি হয়েছে। আজ সোমবার আমদানি করা পেঁয়াজের দর এখনো পাওয়া যায়নি।
এদিকে গত শনিবার ভারতের এই সিদ্ধান্তের খবরে বন্দরের মোকামে ও খুচরা বাজারে অন্তত কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে শুল্কমুক্তভাবে দেশে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এতদিন ভারত সরকারকে কোনো শুল্ক দিতে হয়নি। এখন পেঁয়াজ আমদানি করতে হলে ৪০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। ফলে প্রতি কেজিতে ১০ টাকার উপরে বাড়তি খরচ হবে। যার ফলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে বাংলাদেশি টাকায় ৫০ থেকে ৫৬ টাকা পড়বে। এ কারণে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরও বেশি হবে।
আরও পড়ুন: ভারতের শুল্ক আরোপ করায় খুলনার বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
তিনি আরও জানান, আমদানি করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্তের জন্য আমরা আজ সোমবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করিনি।
যেহেতু আগের এলসির পেঁয়াজ সীমান্তের ওপারে এসে আটকে ছিল। তাই ভারতের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন শুল্ক দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে। না হলে প্রচন্ড গরমে পেঁয়াজ নষ্ট হতে পারে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, এটা আমাদের জন্য সতর্ক বার্তা। এখন থেকে সরকারকে ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখতে হবে। সামনে আরও দাম বাড়বে। ভারত বরাবরই আমাদের সঙ্গে বাণিজ্যের নিয়ম ভঙ্গ করে।
তারা সবকিছুই হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা চাই ভারত সরকার এই শুল্ক প্রত্যাহার করে পেঁয়াজ রপ্তানি স্বাভাবিক রাখবে।
ভারতের হিলি বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানিকারক অরিন্দম জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক বাড়ানোর কথা ভাবছিল। যার ফলে শনিবার পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
যা গতকাল রবিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে ভারতে পেঁয়াজের দাম অনেক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত
কারণ দীর্ঘ সময় ধরে অত্যধিক গরম থাকার কারণে পেঁয়াজের মান নষ্ট হওয়ায় ভালো মানের পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ফলে সরকার রপ্তানিতে শুল্ক বসিয়ে অভ্যন্তরীণ মজুদ স্বাভাবিক রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের বেসরকারী অপারেটর পানামা হিলি পোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক জানান, গতকাল রবিবার ভারতীয় ৭টি ট্রাকে দুইশত এগার মেট্রিকটন এবং গতকাল সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সতেরটি ট্রাকে চারশত মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আগের চেয়ে এখন কম আমদানি হচ্ছে।
এদিকে শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি অমরিতা টিটুস -এর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ভারতে অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। প্রচন্ড গরমের কারণে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এটা বহাল থাকবে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার বেশি
ঢাকায় পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার বেশি
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর সোমবার ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
দেশি জাতের পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৮ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে এবং আমদানি করা হাইব্রিড পেঁয়াজের দামও কেজিতে ১৫ থেকে ১৮ টাকা বেড়েছে।
এ প্রতিবেদক সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার মগবাজার, মালিবাগ, ফকিরাপুল, হাতিরপুল, রামপুরা, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তারা মানের ভিত্তিতে প্রতি কেজি দেশি জাতের পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১০৫ টাকায় কিনেছেন।
নিউ ইস্কাটনের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বুলবুল সোমবার বিকালে কারওয়ান বাজার থেকে ৯৫ টাকায় ১ কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন।
আরও পড়ুন: ৬০ টাকায় থমকে আছে দেশি পেঁয়াজ, ভারতীয় ৪০ টাকা
পরীবাগের বাসিন্দা মঞ্জুর আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, এদিন ২ কেজি পেঁয়াজ নিতে তাকে ২১০ টাকা দিতে হয়েছে।
রামপুরা এলাকার বাসিন্দা রাবেয়া খাতুনও একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, সোমবার ১ কেজি পেঁয়াজ ৯৮ টাকায় কিনেছেন।
সোমবার প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়, যার দাম শনিবার ছিল মাত্র ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা।
এ ছাড়া ১৯ আগস্ট ভারত তার নিজস্ব স্টোরেজ বাড়ানোর জন্য পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। ফলে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সোমবার বলেছেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি শুল্ক বাড়ানো খুবই দুঃখজনক।
ভারত থেকে আমদানি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পেঁয়াজের বিকল্প বাজার খুঁজবে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত
পেঁয়াজ ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হতো ৩৮ থেকে ৪৬ টাকায়। শুল্ক আরোপের পর এখন এই খরচ দাঁড়াবে প্রতি কেজি ৫৩ থেকে ৬৫ টাকা।
এদিকে, ব্যবসায়ীরা এখনো বেশি দামে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেননি। কিন্তু শুল্ক আরোপের খবর শুনে স্থানীয় বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয় তারা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ভারতের শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণার পর পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার খবরে অসাধু ব্যবসায়ীরা উচ্চমূল্যের পণ্য দেশে আসার আগেই অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের স্বভাব।’
আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাম কমলেও পণ্য এখনো আসেনি এমন যুক্তি দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে চান না বলেও জানান হোসেন।
আরও পড়ুন: ভারতের শুল্ক আরোপ করায় খুলনার বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
ভারতের শুল্ক আরোপ করায় খুলনার বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরেই সোমবার (২১ আগস্ট) খুলনার বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
বর্তমানে খুলনার বাজরগুলোতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, রবিবার (২০ আগস্ট) ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা অথচ শনিবার (১৯ আগস্ট) দেশি পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ একদিনে বাজার ও আকার ভেদে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
নগরীর ময়লাপোতা সান্ধ্য বাজারের ব্যবসায়ী সুজন ও কাওসার বলেন, বাজারে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। তবুও পেঁয়াজ বেশি দামে কিনতে হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশিতে পেঁয়াজ কিনেছি। ফলে বাড়তি দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।
আমদানিকারকরা জানান, পেঁয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশকে এতদিন কোনো শুল্ক দিতে হতো না। ১৯ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ভারত। দেশটির বাজারে পেঁয়াজের দামের নাগাল টানতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানানো হয়। এটি ২০ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত
সর্বশেষ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে ৩৮ থেকে ৪৬ টাকা খরচ হতো। শুল্ক আরপের পর প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি খরচ ৫৩ থেকে ৬৫ টাকায় পৌঁছাবে।
খুলনার দৌলতপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৬২ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
ক্রেতারা জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমদানি শুল্কের অজুহাতে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ মজুদ হতে পারে। ফলে দাম আবারও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ইব্রাহীম হোসেন বলেন, এ বিষয়টি আমাদের নজরদারীতে রয়েছে।
আরও পড়ুন: স্বপ্নতে আলু, পেঁয়াজ ও চিনিতে বিশেষ ছাড়
স্বপ্নতে আলু, পেঁয়াজ ও চিনিতে বিশেষ ছাড়
ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট ও চট্টগ্রামের গ্রাহকদের জন্য আলু, দেশি পেঁয়াজ, চিনিতে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে সুপারশপ স্বপ্ন। ১১ ও ১২ জুলাই এই দুই দিন পণ্য বিক্রির ঘোষণা নিয়ে এলে।
ঢাকা ও কুমিল্লার গ্রাহকদের জন্য থাকছে প্রতি কেজি আলু ৪৪ টাকায় (খোলা বাজারে যা ৪৮ টাকা প্রতি কেজিতে), বিশেষ ছাড়ে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৬ টাকায় (যা খোলা বাজারে ৭০-৭৫ টাকা প্রতি কেজিতে), চিনি (খোলা) স্বপ্নতে প্রতি কেজি বিক্রি হবে ১৩৬ টাকায় (বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়)।
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে এক কোটি নিম্ন-আয়ের পরিবারের কাছে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি শুরু আজ
অন্যদিকে চট্টগ্রাম আউটলেটের জন্য প্রতি কেজি আলু ৪৭ টাকায় (খোলা বাজারে যা ৫০ টাকা প্রতি কেজিতে), বিশেষ ছাড়ে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৭ টাকায় (যা খোলা বাজারে ৬০ টাকা প্রতি কেজিতে), চিনি (খোলা) প্রতি কেজি বিক্রি হবে ১৩৬ টাকায় (বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়)।
সবশেষ সিলেটের স্বপ্ন গ্রাহকদের জন্য থাকছে বিশেষ ছাড়। প্রতি কেজি আলু ৪০ টাকায় (খোলা বাজারে যা ৪২ টাকা প্রতি কেজিতে), বিশেষ ছাড়ে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৭ টাকায় (যা খোলা বাজারে ৪৯-৫০ টাকায় প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে)।
আরও পড়ুন: রমজানকে সামনে রেখে টিসিবির ৫টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি শুরু
১ কোটি পরিবারের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে পণ্য বিক্রি শুরু টিসিবির