কারফিউ
সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট
পদত্যাগের দাবিতে গণবিক্ষোভের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন বলে দ্য স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে।
সিঙ্গাপুরের সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, রাজাপাকসেকে বহনকারী সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে (১১১৭ জিএমটি) সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
তিনি কতদিন সিঙ্গাপুরে থাকবেন বা এরপর তার গন্তব্য কোথায় সে বিষয়টি স্পষ্ট নয় বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে।
এর আগে রাজাপাকসে ও তার স্ত্রী বুধবার ভোরে মালদ্বীপের উদ্দেশে শ্রীলঙ্কান বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাইটে দেশ ছেড়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট বানানোর পদক্ষেপ জনসাধারণের বিক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলে।
এদিকে দেশটিতে চলমান কারফিউ শুক্রবার পর্যন্ত থাকবে বলে সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। ফলে বিক্ষোভকারীদের প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরে যেতে দেখা গেছে।
পড়ুন: মালদ্বীপ ছেড়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট
শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভে একজন নিহত, আহত ৮৪: হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভে একজন নিহত, আহত ৮৪: হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে বুধবার বিক্ষোভের ঘটনায় একজন নিহত ও ৮৪ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্মকর্তারা।
বিবিসির সূত্রমতে, পুলিশ বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করলে শ্বাসকষ্টে ২৬ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি মারা যান।
প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা হয়।কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আরও বিক্ষোভের সূত্রপাত করে।
একজন সামরিক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, আহতদের মধ্যে একজন সৈনিক ও পুলিশ কর্মকর্তাও আছেন।তিনি অভিযোগ করেছেন যে গোলাবারুদ সহ একটি অ্যাসল্ট রাইফেল একজন বিক্ষোভকারী চুরি করেছে যা এখনও উদ্ধার করা হয়নি।
এদিকে দেশটিতে চলমান কারফিউ শুক্রবার পর্যন্ত থাকবে বলে সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কায় সংসদ ভবনে সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড
শ্রীলঙ্কায় দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট
শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি, বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের টিয়ারশেল
অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র ঘাটতি এবং মানুষের জীবিকা ব্যাহত হওয়ার কারণে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে করা বিক্ষোভে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কার রাজধানী ও আশেপাশের এলাকায় পুলিশ কারফিউ জারি করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, কালো পোশাক পরা, কালো পতাকাধারী, সরকারবিরোধী স্লোগান ও ব্যানার বহনকারী হাজার হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছুঁড়ছে।
বিক্ষোভকারী এবং অন্যান্য সমালোচকরা বলেছেন, ১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দায়ী। তারা ঘাটতি দূর করার প্রতিশ্রুতি পূরণ না করতে পারায় দুই মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া রনিল বিক্রমাসিংহেকেও দায়ী করে।
সাধারণ নাগরিক ও বিরোধী দলীয় কর্মীরা শনিবার আরও কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী নিয়ে কলম্বোতে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু তার আগেই পুলিশ শুক্রবার রাত ৯টা থেকে কলম্বো ও এর শহরগুলোতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করেছে।
কারফিউ ঘোষণা করায় দেশটির বিরোধী দলসমূহ ও শ্রীলঙ্কার বার অ্যাসোসিয়েশন সরকারের সমালোচনা করেছে। তারা বলছে ‘কারফিউ স্পষ্টতই বেআইনি ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।’
বিরোধী নেতা সজিথ প্রেমাদাসা কারফিউকে ‘এক ধরনের প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি এক টুইটে বলেছেন, ‘আগামীকাল রাস্তায় নামুন। স্বৈরাচারকে পরাজিত করে গণতন্ত্রকে বিজয়ী করতে জনগণের সঙ্গে যোগ দিন। হ্যাঁ আমরাও পারি।’
আরও পড়ুন: গোতাবায়ার বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের হামলা
শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চুং, দেশটির জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভ করার জন্য স্থান ও নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি এক টুইটে বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা ও বলপ্রয়োগ অর্থনীতিকে ঠিক করবে না কিংবা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে পারবে না। শ্রীলঙ্কানদের এই মুহূর্তে যা (সবচেয়ে বেশি) প্রয়োজন।’
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে তারা বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে অপারগতার কথা জানায়। দেশটির বিদেশি ঋণের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলারে ঋণ পরিশোদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভ প্রায় শূন্যের কোটায় এবং দেশটি নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, জ্বালানি, রান্নার গ্যাস ও ওষুধ আমদানি করতে অক্ষম।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালানোর জ্বালানির অভাবে প্রতিদিন মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকছে। জ্বালানি ও গ্যাস কিনতে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য প্রতিবেশি ভারতের সাহায্যের ওপর দেশটি টিকে আছে।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশচুম্বি হয়ে পড়েছে। যার ফলে দরিদ্র ও দুর্বল গোষ্ঠী মারাত্মক চাপে পড়েছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে দেশটির স্কুলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সরকার প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুললোতে থাকা অন্যান্য রাজ্যের কর্মচারীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি সংকটে শ্রীলঙ্কায় আরও এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ
শ্রীলঙ্কায় তীব্র সংকটের মুখে সরকারের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের
শ্রীলঙ্কায় কারফিউ উপেক্ষা করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত
শ্রীলঙ্কায় দেশব্যাপী কারফিউ উপেক্ষা করে কয়েক শতাধিক বিক্ষোভকারী মঙ্গলবারও সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে।
দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে।
প্রতিবাদকারীরা বিক্ষোভের ৩২তম দিনে দেশটির রাজধানী কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের কার্যালয়ের প্রবেশপথে ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাকে পদত্যাগের দাবি জানান।
সোমবার রাতে জারি করা একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করছে দেশটির সরকার।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ
বিক্ষোভকারীদের একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার চামাথ বোগাহাওয়াট্টা বলেছেন, ‘আমাদের উত্তেজিত করতে সরকার খুব ঘৃণ্য কিছু কাজ করেছে। আমি মনে করি না জনগন সেনাবাহিনীর সাহায্যে শাসন করার প্রচেষ্টাকে সহ্য করবে।’
তিনি বলেন, তারা কতদিন কারফিউ দিয়ে দেশ শাসন করবে?
সোমবার রাতে ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্যসহ অন্তত চারজন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছেন।
ঘটনায় দেশটির কর্তৃপক্ষ দেশের অনেক জায়গায় সশস্ত্র সেনা মোতায়েন করেছে এবং বুধবার পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে।
আরও পড়ুন: কিউবার পাঁচ তারকা হোটেলে বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৩১
সংকট সমাধানে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের আহ্বান শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্টের
দেশের চলমান সংকটের সমাধান খুঁজতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে সরকারের সঙ্গে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশটির মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রীরা তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই আহ্বান জানানো হয়।
সোমবার একটি বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের মিডিয়া বিভাগ বলেছে, বর্তমান সঙ্কটটি বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক কারণ ও বৈশ্বিক উন্নয়নের ফলাফল এবং একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কার সমাধান খুঁজে বের করা উচিত।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় একসঙ্গে ২৬ মন্ত্রীর পদত্যাগ
কারফিউ সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভ
চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ও কারকিউ জারি করেছেন। তবে প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে মিছিল করেছেন লঙ্কান বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা ও জনগণ।
এদিকে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হলে রবিবার প্রায় ১৫ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এসব প্লাটফর্মে ঢুকতে পারেননি। পরবর্তীতে সমালোচনার মুখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পুনরায় চালু করা হয়।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি
বিক্ষোভকারীরা দেশটির এমন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দায়ী করেন এবং তার পদত্যাগের দাবিতে এসব প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তারা বিক্ষোভ সংগঠিত করেন।
শুক্রবার মধ্যরাতে রাজাপাকসে জরুরি ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সোমবার সকাল পর্যন্ত সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে রবিবার দ্বীপ দেশটিতে আরও বেশি বিক্ষোভ হয়েছে।
বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে দেখা গেছে, তরুণরা সরকারবিরোধী স্লোগান ও গান গাইছেন।
রাজধানীতে, ‘দমন বন্ধ করুন’ এবং ‘গোতা গো হোম’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে আইনপ্রণেতারা কলম্বোর প্রধান চত্বরের দিকে মিছিল করে স্লোগান দেন। ‘গোতা’ হলো প্রেসিডেন্টের প্রথম নামের সংক্ষিপ্ত রূপ।
সশস্ত্র সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারা চত্বর অভিমুখী সড়কে ব্যারিকেড স্থাপন করে রাখেন। চত্বরটি ১৯৪৮ সালে ব্রিটেন থেকে দেশটির স্বাধীনতার স্মরণে নির্মিত।
সেনা সদস্যদের উদ্দেশে বিরোধীদলীয় নেতা সজিথ প্রেমাদাসা বলেন, ‘এটি অসাংবিধানিক। আপনারা আইন লঙ্ঘন করছেন। যারা কষ্ট পাচ্ছে তাদের কথা চিন্তা করুন। আপনি কেন এমন সরকারকে রক্ষা করছেন?’
আরেক আইনপ্রণেতা নলিন বান্দারা বলেছেন, ‘তারা কতদিন জরুরি অবস্থায় শাসন করতে পারবেন?’
আরও পড়ুন: বিক্ষোভের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি
শ্রীলঙ্কার বিশাল ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে। দেশটি আমদানির জন্য অর্থ পরিশোধেও লড়াই করছে। মানুষ জ্বালানির জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন। পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকায় দেশটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এ জন্য প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা দেশটিতে বিদ্যুৎ থাকছে না।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য দায়ী করা হচ্ছে- দেশটির সরকারের রপ্তানি ক্ষেত্রে বৈচিত্র না আনা এবং চা, পোশাক ও পর্যটনের মতো ঐতিহ্যবাহী উৎসের ওপর নির্ভরতা এবং আমদানি করা পণ্য ভোগের সংস্কৃতিকে।
করোনা মহামারিও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গত দুই বছরে দেশটির সরকার ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে সাড়ে ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যা গত মাসে ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং তা আরও বাড়তে পারে।
তীব্র এই অর্থনৈতিক সংকট দ্বীপ দেশটির সর্বস্তরের মানুষের ওপর আঘাত হেনেছে। মধ্যবিত্ত পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী যারা সাধারণত সড়কে প্রতিবাদ করেন না তারাও দেশের অনেক জায়গায় রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করেছেন।
শ্রীলঙ্কায় ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি
জরুরি অবস্থার মধ্যেই বিক্ষোভ ঠেকাতে শ্রীলঙ্কায় ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সকাল সকাল পর্যন্ত এই কারফিউ চলবে।
এর আগে দ্বীপ দেশটিতে চরম অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে তার বাসভবনের কাছে বিক্ষোভ এবং দেশব্যাপী বিক্ষোভ পরিকল্পনার একদিন পর দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে শুক্রবার জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন।
রাজাপাকসে বলেন, জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সম্প্রদায়ের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও পরিষেবার রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতিবাদকারীদের পক্ষে রবিবার দেশব্যাপী জনবিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়েছে।
পড়ুন: বিক্ষোভের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি
শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ
ইউক্রেন সঙ্কট: রাজধানী কিয়েভে কারফিউ অব্যাহত
একের পর এক বিস্ফোরণ এবং সড়কে লড়াইয়ের জেরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
শহরটির মেয়র ভিটালি ক্লিচস্কো বলেছেন,‘কারফিউ চলাকালীন রাস্তায় থাকা বেসামরিক নাগরিকদের শত্রু পক্ষের লোক বা সাহায্যকারী দলের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
রুশ সেনারা রাজধানী অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে। বাসিন্দারা প্রাণ বাঁচাতে ভূগর্ভে আশ্রয় নিচ্ছেন। রাশিয়ান সেনারা কতদূর অগ্রসর হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট জানা যায়নি। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা রুশ হামলা প্রতিরোধে কিছু সাফল্যের কথা জানিয়েছেন, তবে রাজধানীর প্রান্তে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
দেশটির প্রসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি নিরাপদে দেশ ছাড়ার মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন,শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।
অন্যদিকে রাশিয়ার দাবি, তারা শুধু ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা করছে, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এই হামলায় সবচেয়ে বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: রুশ হামলায় ১৯৮ জন নিহত, আহত সহস্রাধিক: ইউক্রেনের মন্ত্রী
একটি ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভের একটি বিমানবন্দরের কাছে শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকণ্ঠে উঁচু অ্যাপার্টমেন্টে আঘাত হেনেছে। অ্যাপার্টমেন্টটির বেশ কয়েকটি তলায বিধ্বস্ত হয়েছে।
একজন উদ্ধারকর্মী জানিয়েছেন, এই হামলায় ছয়জন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।
ইতোমধ্যে কয়েক হাজার ইউক্রেনীয় বাড়িঘর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, এক লাখ ২০ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় পোল্যান্ড, মলদোভা এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
রুশ সেনারা উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দুই দিনের ব্যাপক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর শনিবারের প্রকাশ্য সড়কে সংঘর্ষ হয়। হামলার ফলে সেতু, স্কুল এবং আবাসিক এলাকা ভেঙে পড়ছে এবং শত শত মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
এখনও এটা স্পষ্ট না যে ইউক্রেনের কতটা এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং কতটা রুশ বাহিনী দখল করেছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, রুশ সামরিক বাহিনী আজভ সাগর উপকূল থেকে প্রায় ২২ মাইল অভ্যন্তরীণ দক্ষিণের শহর মেলিটোপোলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
আরও পড়ুন: কিয়েভের সড়কে লড়াই শুরু
তারা আরও বলেছে, রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ডনবাসের পূর্ব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সফল হয়েছে।
ইউক্রেনীয় ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার অগ্রযাত্রাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। ইউক্রেনের অবকাঠামো মন্ত্রণালয় বলেছে, একটি রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র শনিবার ভোরের আগে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সরকারকে উৎখাত করতে এবং তার নিজের ইচ্ছাধীন একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করতে বদ্ধপরিকর। এই আক্রমণের মাধ্যমে পুতিন ইউরোপের মানচিত্র পুনরায় আঁকতে এবং মস্কোর স্নায়ু-যুদ্ধ যুগের প্রভাবকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে। এর ফলে পুতিনের ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা দেয়াসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনার সূত্রপাত করছে।
জেলেনস্কি শনিবার নতুন করে আশ্বাস দিয়ে বলেছে,দেশের সামরিক বাহিনী রুশ আক্রমণের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াবে।
কিয়েভ থেকে রেকর্ড করা একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, তিনি শহরেই রয়েছেন এবং ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে এটা মিথ্যা দাবি।
তিনি বলেন, আমরা অস্ত্র প্রত্যাহার করব না। আমরা দেশকে রক্ষা করব। আমাদের অস্ত্রই এখন আমাদের বড় সত্য এবং আমাদের ভূমি, আমাদের দেশ ও আমাদের সন্তান সবই সত্য। আমরা আমাদের সবকিছুকে রক্ষা করব।
জেলেনস্কি শনিবারে রেকর্ড করা দ্বিতীয় ভিডিওতে বলেন, মস্কোর দ্রুত রাজধানী দখল এবং একটি পুতুল সরকার স্থাপনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। আবেগঘন বক্তব্যে তিনি রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বেসামরিক এলাকা ও অবকাঠামোতে আঘাতের অভিযোগ তোলেন।
আরও পড়ুন: পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের
বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে একটি ফেনালাপে জেলেনস্কি বলেন, তিনি রাশিয়ার এক নম্বর টার্গেট এবং তারা তাকে আর জীবিত দেখতে নাও পারেন।
এরই মধ্য ইউক্রেন থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তবে জেলেনস্কি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একজন সিনিয়র মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মার্কিন প্রস্তাবের জবাবে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এখানে লড়াই হচ্ছে, আমার গোলাবারুদ এবং অস্ত্র দরকার, আমাকে সরিয়ে নেয়ার দরকার নেই। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।’
শনিবার ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া রুশ আক্রমণে এখন পর্যন্ত তিন শিশুসহ ১৯৮ জন নিহত এবং সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছে। তবে হতাহতরা সামরিক নাকি বেসামরিক নাগরিক বিবৃতি থেকে তা স্পষ্ট জানা যায়নি।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধে শত শত রুশ সেনা নিহত হয়েছে। তবে রুশ কর্তৃপক্ষ কোন হতাহতের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি।
জাতিসংঘ অনুমান, যুদ্ধ আরও বাড়লে চার মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যূত হতে পারে। হাঙ্গেরির সীমান্ত শহর জাহোনিতে আগত শরণার্থীরা বলেছেন যে যুদ্ধ করার মতো উপযুক্ত বয়সী পুরুষদের ইউক্রেন ছেড়ে যেতে দেয়া হচ্ছে না।
দেশে নতুন লকডাউন: দুর্দান্ত কোনো ফলাফলের বিষয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা
কোভিড-১৯ এর ক্রমবর্ধমান সংক্রমণে লাগাম টানতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে বুধবার থেকে নতুন একটি লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের প্রস্তুতির অভাবে এই লকডাউনে কোনো দুর্দান্ত ফল লাভের সম্ভাবনা নেই।
তারা বলছেন, লকডাউনের সময় নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করে জনগণকে জোরপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং বাড়ির অভ্যন্তরে থাকতে বাধ্য করে 'কারফিউ জাতীয়' পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা লকডাউনের সময় কল-কারখানাগুলো খোলা রাখার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও করেছেন। কারণ তারা আশঙ্কা করছেন এতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকবে।
তারা বলছেন, লকডাউন কার্যকর করার আগে সরকারের উচিত হতদরিদ্র, দিনমজুর ও বস্তিবাসীদের জীবন চালাতে খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরবরাহ করা।
আরও পড়ুন: ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু; প্রজ্ঞাপন জারি
৫ এপ্রিল থেকে প্রায় সবকিছু খোলা রেখে এক সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী লকডাউন কার্যকর করা হয়েছিল। আর এই লকডাউনের কোনো ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান নয়। কারণ দেশে এই সময়ে ৪৭ হাজার ৫১৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হয় এবং ৫০৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রাণহানির সাপ্তাহিক বৃদ্ধি সর্বোচ্চ দেখা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার থেকে সকল অফিস এবং গণপরিবহন বন্ধ করে সাত দিনের কঠোর লকডাউন কার্যকর করার জন্য সরকার সোমবার নতুন কতগুলো নির্দেশনা জারি করে। তবে, লকডাউনের সময় কারখানাগুলো খোলা থাকবে।
লকডাউনের প্রস্তুতি
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বে-নাজির আহমেদ বলেন, লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির প্রয়োজন।
তিনি বলেন, 'বড় সমস্যা হলো সরকার কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই আবারও লকডাউন বাস্তবায়ন করতে চলেছে। আপনি ১৭ কোটি লোককে সাত দিনের জন্য বাড়ির ভিতরে রাখতে চাইলে অনেক প্রস্তুতি নেয়াও জরুরি। এর সফল বাস্তবায়নের জন্য এমন পদক্ষেপে বিপুল সংখ্যক লোককে ব্যস্ত থাকার কথা।'
এই বিশেষজ্ঞ জানান, প্রতিটি এলাকায় অস্থায়ী দোকান তৈরি করা উচিত ছিল যাতে মানুষ রমজান মাসে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সেখান থেকে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে সংগ্রহ করতে পারে।
তিনি বলেন, প্রণোদনার মাধ্যমে স্বল্প আয়ের লোকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং বাড়িতে থাকতে উৎসাহিত করা উচিত ছিল।
আরও পড়ুন: লকডাউনে ৮টি বিশেষ পার্সেল ট্রেন চলবে: রেলপথ মন্ত্রী
'একজন বস্তির বাসিন্দা প্রতিদিন রোজগার না করে বাঁচতে পারে না। আমাদের প্রয়োজন হতদরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করা এবং তাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরবরাহ করা যেন তাদের লকডাউনে জীবিকার জন্য বাইরে যেতে না হয়।'
করোনা প্রাদুর্ভাবের লাগাম টানতে ফের স্পেনে জরুরি অবস্থা জারি
স্পেনে ফের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লাগাম টানতে রবিবার দেশব্যাপী দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।