অর্থবছর
১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আরএডিপি অনুমোদন দিল এনইসি
মূল এডিপির ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)।
মঙ্গলবার(১২ মার্চ) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
সড়ক পরিবহন, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎসহ আরও কিছু খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া আরএডিপি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার আকার থেকে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার জানান, মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত আরএডিপির মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা স্থানীয় উৎস থেকে আসবে। আর বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে আরএডিপিতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮টি। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৩৪৫টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ৩৬টি সম্ভাব্যতা যাচাই, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১৫টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রকল্প ৯২টি।
পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম বলেছেন, চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়নে স্বল্প তহবিল ও কম সময় লাগবে, সেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রকল্প প্রণয়ন, অনুমোদন ও বাস্তবায়নের বিষয়ে ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনার আলোকে বৈঠকে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ১৯৭৬৪৩ কোটি টাকা সংশোধিত এডিপি এনইসিতে অনুমোদন
তিনি বলেন, প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে স্বাভাবিক বিলম্বের প্রবণতা রোধে সম্ভাব্যতা যাচাই পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো খাতে বরাদ্দ ও বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
'স্থিতিশীলতা উন্নয়নের পূর্বশর্ত এবং এটি এখন রয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এখন সুষ্ঠুভাবে চলছে।
এডিপির আকার কমানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সালাম বলেন, এডিপি সংশোধন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি অব্যাহত থাকবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন এনে বর্তমান ও বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর আরএডিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের মধ্যে কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে এমন প্রায় ৩৩০টি প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ২,০৭,৫৫০ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন করেছে এনইসি
২০২০-২১ অর্থবছরের আরএডিপি অনুযায়ী, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৬৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা (২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ), বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৭ হাজার ৮৯৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা (১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ), আবাসন ও কমিউনিটি সুবিধা খাতে ২৮ হাজার ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা (১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ), স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৯ হাজার ৯৬৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা (৮ দশমিক ১৫ শতাংশ), শিক্ষা খাতে ১৭ হাজার ২২৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা (৭ দশমিক ০৩ শতাংশ), পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ১৪ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা (৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ) বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ১২ হাজার ৬৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা (৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ), কৃষিতে ১০ হাজার ৩১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা (৪ দশমিক ২১ শতাংশ), শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা ৪ হাজার ৬৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা (১ দশমিক ৮৯ শতাংশ) এবং বিজ্ঞান ও আইসিটি খাতে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি ১২ লাখ (১ দশমিক ৪৮ শতাংশ) টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৪২ হাজার ৭০০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা (১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ), সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৭ হাজার ৮০৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা (১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ), বিদ্যুৎ বিভাগ ২৭ হাজার ১২৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা (১১ দশমিক ০৭ শতাংশ), রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩ হাজার ১১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা (৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ), পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ১৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৪১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা (৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৯ হাজার ৩৪৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা (৩ দশমিক ৮১ শতাংশ) বরাদ্দ পেয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ২.৬৩ লাখ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করেছে এনইসি
আগামী দুই অর্থবছরে রাজস্ব সংগ্রহের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা সরকারের
২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে উচ্চাভিলাষী রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য এ লক্ষামাত্রা ৫ হাজার ৮৭২ বিলিয়ন এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ হাজার ৯৭ বিলিয়ন টাকা। তবে ডিজিটালাইজেশনের পরিধি বাড়ানো এবং ব্যক্তি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে কর পদ্ধতি সহজ করার ওপর এ বিষয়টি নির্ভর করছে।
এছাড়াও রাজস্ব বাড়াতে প্রত্যক্ষ কর ও মূল্য সংযোজন করের ওপর নজর দিচ্ছে সরকার। কর নেট সম্প্রসারণ ও কর কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর অব্যাহতির যে ব্যাপক সুযোগ রয়েছে সে বিষয়টি যৌক্তিকতা যাচাই করতে এবং বাজেট বক্তৃতায় আরও স্বচ্ছতা আনতে সরকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৪-২৫ থেকে ২০২৫-২৬) অনুযায়ী, কর রাজস্ব খাত থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার ৩৪৩ বিলিয়ন টাকা এবং ২০২৫-২৬ সালে ৬ হাজার ৪৬৩ বিলিয়ন টাকা আসবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগামী দুই অর্থবছরে যথাক্রমে ৫০ হাজার ৯৫ কোটি টাকা এবং ৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা দেবে।
আরও পড়ুন: চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.০৭%
আয়কর শাখা থেকে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত সংগ্রহ হবে ১ হাজার ৭৫৩ বিলিয়ন টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১২৩ বিলিয়ন টাকা। আমদানি শুল্ক থেকে আদায় হবে যথাক্রমে ১ হাজার ৫১১ বিলিয়ন টাকা এবং ১ হাজার ৮৩০ বিলিয়ন টাকা।
আর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক থেকে রাজস্ব আদায় হবে যথাক্রমে ১ হাজার ৮৩১ বিলিয়ন টাকা এবং ২ হাজার ২১৮ বিলিয়ন টাকা।
২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য এনবিআর বহির্ভূত কর হবে যথাক্রমে ২৪৮ বিলিয়ন টাকা এবং ২৯২ বিলিয়ন টাকা।
কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায় হবে যথাক্রমে ৫২৯ বিলিয়ন টাকা এবং ৬৩৪ বিলিয়ন টাকা।
চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৫০০ বিলিয়ন টাকা রাজস্ব করসহ মোট ৫ হাজার বিলিয়ন টাকা। মোট রাজস্বের মধ্যে এনবিআর থেকে আসবে ৪ হাজার ৩০০ বিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে আয়কর থেকে ১ হাজার ৪৮০ বিলিয়ন টাকা, আমদানি শুল্ক থেকে ১ হাজার ২৭৫ বিলিয়ন টাকা, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪৫ বিলিয়ন টাকা।
অন্যদিকে এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে প্রায় ২০০ বিলিয়ন টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব খাত থেকে ৫০০ বিলিয়ন টাকা আদায় করা হবে।
আরও পড়ুন: চলতি অর্থবছর ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ ২১৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে
মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত রাজস্ব আয় এবং পরবর্তী দুই বছরের আনুমানিক রাজস্ব আয়ে যে উচ্চ স্থিতিস্থাপকতা এবং ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি দেখা যায়, তাতে রাজস্ব সংগ্রহের জোরালো আভাস পাওয়া যায়।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজস্ব সংগ্রহে কর ও কর-বহির্ভূত অংশগুলোর মধ্যে, কর-বহির্ভূত অংশের তুলনায় কর রাজস্ব আরও ক্রিয়াশীল ও স্থিতিস্থাপক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও এই তথ্যউপাত্তে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ন্যূনতম জিডিপি থেকে সামগ্রিক রাজস্ব ১ দশমিক ৬৫ গুণ বেশি বাড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে।
বিবৃতি অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য জিডিপির রাজস্ব স্থিতিস্থাপকতা গত অর্থবছরের তুলনায় ১ দশমিক ২৮ গুণ বেশি এবং পরবর্তী অর্থবছরে এটি ১ দশমিক ৪০ গুণ বেশি হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে জিডিপির কর রাজস্ব স্থিতিস্থাপকতা ১ দশমিক ৩৩ গুণ বেশি হবে, যা পরবর্তী অর্থবছরে ১ দশমিক ৫০ গুণ বেশি এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ দশমিক ৬৬ গুণ বেশি হবে।
চলমান অর্থবছরের জন্য জিডিপির কর-বহির্ভূত রাজস্ব স্থিতিস্থাপকতা চলতি অর্থবছরে ০.৯২ গুণ বেশি, পরবর্তী অর্থবছরে ০.৪৭ গুণ বেশি এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১.৫৭ গুণ বেশি হবে।
অন্যদিকে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে করের রাজস্ব প্রকৃত জিডিপির প্রবৃদ্ধির চেয়ে ৯৮ শতাংশ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নীতি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজস্ব সংগ্রহ একটি দেশের উন্নয়ন করতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশ হতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১)’- অনুযায়ী রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ২০৩১ সালের মধ্যে ১৯.৫৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ২৪ শতাংশে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির ১১.২% কর আদায়ের লক্ষ্য সরকারের
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ চমকপ্রদ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, তবে বাংলাদেশ সমন্বিত রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়নি। রাজস্বের একটি বড় অংশ আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংগৃহীত প্রত্যক্ষ (আয়কর) এবং পরোক্ষ কর (ভ্যাট এবং শুল্ক) থেকে। এছাড়াও এনবিআরবহির্ভূত কর এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) হিসেবেও সামান্য অংশ আসে।
এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য কম রাজস্ব সংগ্রহের কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। অর্থনৈতিক কাঠামো (বৃহৎ অনানুষ্ঠানিকতা এবং অব্যাহতি), কাঠামোগত দুর্বলতা (জটিল প্রক্রিয়া এবং তথ্যের অসামঞ্জস্য) এবং সাংস্কৃতিক কারণ (কর প্রদানের প্রতি উদাসীনতা) কম রাজস্ব সংগ্রহের উল্লেখযোগ্য কারণ।
নীতিগত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতে সহায়তা নিয়ে সরকার কর প্রদান পদ্ধতি সহজীকরণ, কর বিধি যেন সহজে বুঝা যায় এবং কর অব্যাহতি যেন যৌক্তিক হয় সে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
এতে আরও বলা হয়, কর প্রশাসনের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের সুযোগ, স্বচ্ছতা ও অনুমানযোগ্যতা আনতে ডিজিটালাইজেশন বাড়ানো এবং কর ব্যবস্থায় গতিশীলতা আনার মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহে সাফল্য জোরদার করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: এডিবি'র সর্বশেষ প্রতিবেদন: ২০২৪ অর্থবছরকে বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো বছর হিসেবে পূর্বাভাস
আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে: সরকারি নথি
মূল্যস্ফীতির হার কমানো এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বলে এক সরকারি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাজেটের আকার ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে এবং আগের অর্থবছরগুলোর তুলনায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ কমিয়ে ব্যয় বৃদ্ধি ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও ৬ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে, চলতি বাজেটে যা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকার প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
নথিটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিদ্যমান বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার চিন্তাভাবনা করছেন নীতিনির্ধারকরা।
এছাড়া বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। ফলে অন্তত ৫২ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ফলে, অর্থনৈতিক সংকট ও কৃচ্ছ্র সাধন কর্মসূচি হাতে নিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেওয়া থেকে সরে আসছে অর্থ বিভাগ।
আরও পড়ুন: ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চেম্বার ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বাজেট প্রস্তাব আহ্বান করেছে এনবিআর
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব বৃহস্পতিবার ইউএনবিকে বলেন, ‘রাজস্ব আদায় কম, আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় নতুন বাজেট হবে বেশ সংকোচনমূলক। আগামী বছরও এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, আগামী বাজেটের আকার- মোট ব্যয় ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, আয় ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।
এক্ষেত্রে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় আকার বাড়ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত চলতি বছরের বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ১০ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে এবার তা ৮ শতাংশেরও কম বাড়বে। অনেক সামঞ্জস্য করে রাজস্ব আদায়ের আকার হিসাব করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব আদায় কমেছে, আমদানি-রপ্তানি কমছে। এসব বিষয় বিবেচনায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় বড় বাজেট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ১৫ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাজেটের আকার বেড়েছে ১২ গুণ: মন্ত্রী
সাবেক আমলা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সম্প্রসারণমূলক বাজেট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিটি সরবরাহে অনিশ্চয়তা রয়েছে, বিনিয়োগ আশানুরূপ সম্প্রসারিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন বেশ চ্যালেঞ্জিং।
মির্জ্জা আজিজুল বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখন ১০ শতাংশ, যা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।’
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সময়ের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট সম্প্রসারণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে বাজেটের আকার বাড়ানোয় কোনো লাভ নেই। ডলার ও রাজস্ব আদায়ে চ্যালেঞ্জ তো আছেই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বাজেটের আকার নির্ধারণ করতে হবে। ফলে স্বল্প প্রবৃদ্ধির বাজেট সঠিক হবে।’
আরও পড়ুন: সংসদে বাংলাদেশের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস
জুলাই-অক্টোবরে রাজস্ব আদায় ১৪.৩৬% বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে: এনবিআর
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুসারে, আগের অর্থবছরের ২০২২-২৩ একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ২০২৩-২৪ প্রথম চার মাসে রাজস্ব সংগ্রহ ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা হয়েছে।
রবিবার (৩ ডিসেম্বর) এনবিআর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজস্ব বোর্ডের তিনটি শাখা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং শুল্ক বাবদ ১ লাখ ০৩ হাজার ৯৭৬ টাকা সংগ্রহ করেছে। এটি চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ রাজস্ব বেড়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব বোর্ড ৯০ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল।
খাতভিত্তিক রাজস্ব আয় হয়েছে- শুল্ক থেকে ৩২ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা, ভ্যাট থেকে ৪০ হাজার ০৪৮ দশমিক ৬২ কোটি টাকা এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর খাত থেকে ৩১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা।
তবে এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। চার মাসে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ দশমিক ২৩ লাখ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: ব্যক্তিগত আয় বিবেচনায় করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে পৌঁছাতে হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা দুই মাস বাড়াল এনবিআর
জুলাই-আগস্টে রাজস্ব কমেছে ৪৮৭০ কোটি টাকা: এনবিআর
বাংলাদেশের ২০২৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাল বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংক তার সর্বশেষ হালনাগাদে আগামী জুনে শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।
এপ্রিলে দেওয়া তার আগের পূর্বাভাসে চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলেছিল বৈশ্বিক ঋণদাতা বিশ্বব্যাংক।
মঙ্গলবার প্রকাশিত সর্বশেষ 'সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট- টুওয়ার্ডস ফাস্টার, ক্লিনার গ্রোথ' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা বিশ্বের অন্য যেকোনো উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অঞ্চলের চেয়ে বেশি। কিন্তু এটি করোনা মহামারি পূর্বের গতির চেয়ে ধীর এবং এর উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণের জন্য যথেষ্ট গতির নয়।
বিশ্বব্যাংক তার হালনাগাদে আরও বলেছে, বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারি থেকে একটি শক্তিশালী পুনরুদ্ধার করেছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক খাতে দুর্বলতা, বাহ্যিক চাপ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মহামারি পরবর্তী ২০২৩ অর্থবছরে পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে নতুন ফ্রন্টিয়ারস বলছে, মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় আর্থিক ও রাজস্ব নীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতের দুর্বলতার মাধ্যমে সংস্কার দেশের প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।’
এতে আরও বলা হয়, একটি একক বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহকে আকর্ষণ করতে এবং অর্থপ্রদানের ভারসাম্য এবং রিজার্ভ জমাতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে দেশে ৪০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স এসেছে
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়তায় বাংলাদেশ জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি করেছে এবং ২০১৬ সালের চরম দারিদ্র্য ৯ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। যা লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে তুলনীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের চেয়ে ভালো।
বিশ্বব্যাংক বলছে, আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা ২ দশমিক ১৫ ডলার (২০১৭ ক্রয় ক্ষমতা সমতা ব্যবহার করে) এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গৃহস্থালি আয় ব্যয় জরিপ ২০২২ এবং ২০১৬ সালের পুনঃনিরীক্ষণের উপর ভিত্তি করে নতুন দারিদ্র্যের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেছেন, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বহুমাত্রিক- এটি শিশু মৃত্যুহার ও অপুষ্টি হ্রাস এবং বিদ্যুৎ, স্যানিটারি টয়লেট ও শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে উন্নতি সাধন করেছে। শহর ও নগরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব অর্জন সত্ত্বেও, অসমতা গ্রামীণ এলাকায় কিছুটা সংকুচিত হয়েছে এবং শহরাঞ্চলে প্রশস্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে জরুরি সংস্কারের জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’
আরও পড়ুন: অর্থনীতিকে করোনা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফেরাতে চায় সরকার
আঞ্চলিক প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, কারণ মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধার হ্রাস পেয়েছে এবং আর্থিক কঠোরতা, আর্থিক একত্রীকরণ এবং বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাসের সমন্বয়ে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের উপর প্রভাব পড়ে।
ভঙ্গুর আর্থিক অবস্থানের কারণে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাগুলো নেতিবাচক ঝুঁকিসাপেক্ষ। ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সরকারি ঋণ জিডিপির গড় ৮৬ শতাংশ, যা খেলাপির ঝুঁকি ও ঋণের খরচ বাড়ায় এবং বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সরিয়ে নেয়। এই অঞ্চলটি চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও মন্দা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও ঘন ঘন এবং তীব্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে পড়তে পারে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়া যখন ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি করছে, তখন এই অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশই এক প্রজন্মের মধ্যে উচ্চ আয়ের সীমায় পৌঁছানোর মতো দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে না।
তিনি আরও বলেন,‘দেশগুলোকে জরুরিভিত্তিতে আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করতে হবে এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক জ্বালানি রূপান্তরের ফলে সৃষ্ট সুযোগগুলো কাজে লাগানোসহ প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: শিগগিরই এসক্রো বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে শুল্ক অব্যাহতি বেড়েছে ১৭.৬৪ শতাংশ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম কমার কারণে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ব্যবসাগুলো ৬১ হাজার ৩২ কোটি টাকা শুল্ক অব্যাহতি পেয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠনের নেতারা বলছেন, কিন্তু, যেসব ক্ষেত্রে শুল্ক অব্যাহতি রয়েছে ব্যবসায়ীরা প্রকৃতপক্ষে তাদের পণ্য অভ্যন্তরীণ বাজারে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করেন এবং মোটা অঙ্কের মুনাফা করেন।
এনবিআর প্রজ্ঞাপন ও বিশেষ বিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশের (এসআরও) মাধ্যমে আমদানি শুল্কে এ অব্যাহতি দিয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন ইউএনবিকে বলেন, শুল্ক অব্যাহতি পেলেও ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমায়নি।
তিনি এটিকে সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসার সিন্ডিকেশন বলে অভিহিত করেন।
আরও পড়ুন: বাজেটে বিদেশ থেকে আনা স্বর্ণের জন্য বিদ্যমান শুল্ক দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
শুল্ক অব্যাহতি অর্থবছর ২২-এর তুলনায় অর্থবছর ২৩-এ ৯ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। ওই বছর শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয় ৫১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।
অংশীজনরা মনে করেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং স্থানীয় ব্যবসার সুরক্ষার জন্য অব্যাহতি বৃদ্ধি বাজারে বড় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি।
মূলধনী সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতির একটি বড় অংশ দেওয়া হয়েছে। এ খাতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এরপর ডিফেন্স স্টোরের জন্য ৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা অব্যাহতি পান ব্যবসায়ীরা।
২০২৩ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। আর অর্থবছর শেষে কর আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করলে এবং অব্যাহতি না দিলে এনবিআর ১৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা ঘাটতির সম্মুখীন হতো।
আরও পড়ুন: শুল্ক সমস্যা অমীমাংসিত রেখেই বাংলাদেশে আদানির বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
২০২৩ অর্থবছরে মূলধনী সরঞ্জাম আমদানিতে ৯ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা, ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা ৩ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা, কাঁচামাল আমদানিকারকরা ১ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা, মোবাইল প্রস্তুতকারক ২ হাজার ২৪১ কোটি টাকা এবং ডিফেন্স স্টোর ৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা শুল্ক অব্যাহতি পেয়েছে।
এ ছাড়া পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি ৮২৭ কোটি টাকা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৪ হাজার ৪১ কোটি টাকা, বিভিন্ন খাতে ৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা (বিশেষ), ত্রাণ পণ্যে ৪০৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন সময়ে ৫ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা শুল্ক রেয়াত হিসেবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে শুল্ক অব্যাহতির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। এ খাতে ২০২২ অর্থবছরে অব্যাহতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: ৩১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তামাবিলসহ তিন শুল্কস্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ
২০২৩ অর্থবছরের পূর্বাভাসের চেয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেশি: এডিবি
২০২৩ অর্থবছরের (জুনের ৩০ তারিখ শেষ হয়েছে) জন্য ৬ শতাংশের উচ্চতর বরাদ্দ শক্তিশালী নিট রপ্তানিকে প্রতিফলিত করে, কারণ আমদানি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত হ্রাস পেয়েছে এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে কম হ্রাস পেয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
সরবরাহের দিক থেকে সমস্ত আকারের উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার জন্য সহায়ক সরকারি নীতিগুলো ব্যবহার করেছে। বন্যা, সাইক্লোন এবং খরার কারণে ফসলের ক্ষতি আংশিকভাবে ভর্তুকি, প্রণোদনা এবং অন্যান্য ব্যবস্থার মাধ্যমে পূরণ করা হয়েছিল।
সেবা খাত উচ্চতর গুদাম ও সহায়তা কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবার মাধ্যমে বজায় ছিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন এডিবি’র
চাহিদার দিক থেকে জনসাধারণের ভোগের বৃদ্ধি প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে, যেহেতু জনসাধারণের বিনিয়োগও বেড়েছে।
এডিও এপ্রিল ২০২৩ এর পূর্বাভাস ২০২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির জন্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এ বছর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য তার প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বজায় রেখেছে, কারণ শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এই অঞ্চলের পুনরুদ্ধারকে সমর্থন করে চলেছে।
বুধবার প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) জুলাই ২০২৩ অনুযায়ী, জ্বালানি ও খাদ্যদ্রব্যের দাম কমে যাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি কমতে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এপ্রিলে ৪ দশমিক ২ শতাংশের তুলনায় পূর্বাভাসে উন্নয়নশীল এশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতি এই বছর ৩ দশমিক ৬ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।
এদিকে, ২০২৪ সালের জন্য মুদ্রাস্ফীতির দৃষ্টিভঙ্গি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ করা হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (পিআরসি) পুনরায় চালু হওয়ার ফলে এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি জোরদার হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি
সেবা খাতে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদার মধ্যে পিআরসির অর্থনীতি এই বছর ৫ শতাংশ প্রসারিত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, এপ্রিলের পূর্বাভাস থেকে অপরিবর্তিত। যাইহোক, উন্নয়নশীল এশিয়ার ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির চাহিদা ধীর গতিতে চলছে, কারণ আর্থিক কঠোরতা প্রধান উন্নত অর্থনীতির অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে টেনে আনছে। আগামী বছরের জন্য এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এপ্রিলের ৪ দশমিক ৮ শতাংশ অনুমান থেকে সামান্য সংশোধন করে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যালবার্ট পার্ক বলেন, ‘এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল স্থিতিশীল গতিতে মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার অব্যাহত রেখেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং পরিষেবা ক্রিয়াকলাপ প্রবৃদ্ধিকে চালিত করছে, যখন অনেক অর্থনীতি পর্যটনে শক্তিশালী পুনরুদ্ধার থেকে উপকৃত হচ্ছে। যাইহোক, শিল্প ক্রিয়াকলাপ ও রপ্তানি দুর্বল রয়ে গেছে এবং আগামী বছরের জন্য বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ও চাহিদার দৃষ্টিভঙ্গি আরও খারাপ হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ফাতিমা ইয়াসমিনকে সেক্টর ও থিমের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে এডিবি
২০২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ
বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানি করেছে, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বছরে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার (৩ জুলাই) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য জানিয়েছে।
২২’ অর্থবছরের তুলনায় ২৩’ অর্থবছরে রপ্তানি ৩ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার বা ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে, যখন রপ্তানি আয় ছিল ৫২ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার।
২৩’ অর্থবছরে সংখ্যাটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে, এই অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ বিলিয়ন ডলার। সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ বা ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার কম রপ্তানি আয় হয়েছে।
ইপিবির তথ্যে দেখা গেছে, জুন মাসে ৫ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জুনের তুলনায় এই রপ্তানি ছিল ২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি।
ডলার সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতি চাপে পড়েছে। আর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি উৎস হচ্ছে প্রবাসী আয় রেমিটেন্স ও পণ্য রপ্তানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত অর্থবছরে উভয় উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কিছুটা কমলেও, পরে আবার ঘুরে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন: রপ্তানি আয়ের জন্য ডলারের বিনিময় হার বেড়ে ১০৭.৫ টাকা
২৩’ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিটেন্স ছিল ২১ দমমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের ২২’ অর্থবছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইপিবির তথ্যে দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক পণ্য ও চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি বেড়েছে।
অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল এবং প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।
তৈরি পোশাকের পর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি ছিল ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ মে মাসে ৪.০৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে
১১ মাসে রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৫০.৫২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে: ইপিবি
২০২৩’ অর্থবছরে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে, এ যাবৎকালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্স এসেছে, যা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল, তখন কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে রেমিটেন্স প্রাপ্তি ৩.১৭% হ্রাস পেতে পারে: আরএমএমআরইউ
রবিবার (২ জুলাই) হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)।
সিপিডিসহ বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা মনে করে, হুন্ডির মতো অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে।
২০২৩ সালের জুন মাসে, বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাসে প্রবাসীরা ঈদুল আযহার সময় ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২৩’ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্স সংগ্রহ ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২’ অর্থবছরে ছিল ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার। প্রায় তিন বছরের মধ্যে এক মাসে এটাই সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়।
এর আগে, ২০২১’ অর্থবছরের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় ছিল ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার।
এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকটসহ নানা কারণে সরকার আইনি মাধ্যমে বেশি রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় আনতে নানা উদ্যোগ নেয়।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যাশিত হারে রেমিটেন্স বাড়েনি।
আরও পড়ুন: কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বেড়েছে রেমিটেন্সের গতি
দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের হুন্ডি পরিহার করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় সংসদে বিদায়ী অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস
সংসদ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বর্ধিত ব্যয় মেটাতে মঙ্গলবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১৭ হাজার ২৯৯ কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস করেছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১ জুন জাতীয় বাজেটের সঙ্গে সম্পূরক বাজেট সংসদে উত্থাপন করেন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে মোট বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
সম্পূরক বাজেটে ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ব্যয় বেড়েছে ১০১ হাজার ২৫৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং ৪০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ব্যয় কমেছে ৪২ হাজার ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
ফলে এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাজেট বরাদ্দ কমেছে ১৭ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা এবং মোট বরাদ্দ এখন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
এর ওপর সাধারণ আলোচনা শেষে মঙ্গলবার সংসদে সম্পূরক বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান অনুদানের জন্য ৩৯টি দাবিতে বর্ধিত পরিমাণ চেয়েছে।
১৬৩টি কাট-মোশন ১১ সদস্য দ্বারা সরানো হয়েছিল।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়- এ তিনটি কাট-মোশন নিয়ে আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন: সংসদে দেশের সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক, ফখরুল ইমাম, রওশন আরা মান্নান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, পীর ফজলুর রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, রুস্তম আলী ফরাজী, গণফোরামের সাংসদ মোকাব্বির খান ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোঃ রেজাউল করিম এই কাট মোশন আনেন।
তবে সেই কাট-মোশন কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সর্বনিম্ন ২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
অর্থ বিভাগ প্রাইম ৫০৪ কোটি ০৫ লাখ টাকা, পরিকল্পনা কমিশন ২ হাজার ২৪৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১১২ কোটি ০৫ লাখ টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮৭৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৭০৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৩৫২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩ হাজার ৪৯১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয় ৭০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, খনিজ সম্পদ বিভাগ ৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৩৫৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৮৮৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৫৩৫ কোটি ০৮ লাখ টাকা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ৫৫১ কোটি ৬১ লাখ টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৬২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগ ১ হাজার ১১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৭৭ কোটি ০৮ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী
সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু