সুনামগঞ্জ
নৌকাডুবি: সুনামগঞ্জের হাওরে নিখোঁজ ২ কৃষক
সুনামগঞ্জে চাপাতি হাওরে ঝড়ের কারণে নৌকা ডুবে দুই পোল্ট্রি খামারি নিখোঁজ হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার রাতে জেলার দিরাই উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ কৃষকরা হলেন-উপজেলার মজিবুর রহমান (৪৫) ও আনহার মিয়া (১৭)।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার বিকালে তিনজন কৃষক হাঁসের খাবার সংগ্রহ করতে একটি ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চাপাতি হাওরে গেলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঝড়ে সেটি উল্টে যায়।
স্থানীয়রা তিন কৃষকদের একজন পারভেজ মিয়াকে (২৩) উদ্ধার করে কলিয়ারকাপন বাজার এলাকার নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাকি দুজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী জানান, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালালেও নিখোঁজ দুজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে হাওরে নিখোঁজ যুবকের লাশ উদ্ধার
বরগুনায় সমুদ্রসৈকতে নিখোঁজ এনএসআই কর্মকর্তা ও ভাগনির লাশ উদ্ধার
দিরাইয়ে ত্রাণ বন্টনে অনিয়মের অভিযোগে চেয়ারম্যানকে মারধর
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও তাঁর পেটোয়া বাহিনীকে পিটিয়ে খেতে ফেলে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিষয়টি নিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ৮ জুলাই শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে শ্যামারচর রোডে ইউনিয়নের ফাতেমানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
৮নং ওয়ার্ডের কয়েকজন সাংবাদিকদের জানান, মেম্বার সাইদ আহমদ খসরু আমাদের নামের লিস্ট চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন। ত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা ঘটনার দিন ঠিক সময়ে ত্রাণ আনতে গেলে আমাদেরকে ত্রাণ না দিয়ে তাড়িয়ে দেন চেয়ারম্যান। তখন আমরা মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, আমি তোমাদের নাম দিয়েছি তোমরা চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করো। বিক্ষুব্ধ জনতা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েলকে পরিষদ থেকে দিরাই যাওয়ার পথে রাস্তায় আটকিয়ে তাদের নাম লিস্ট থেকে বাদ পড়ার কথা জানতে চান। এসময় চেয়ারম্যান রাগান্বিত হয়ে দু'চার জনের ওপর হাত তুললে বিক্ষুব্ধ জনতা মিলে চেয়ারম্যানকে বেধড়ক মারধর করে রাস্তার পাশে আমন খেতে ফেলে দেয়।
৮নং ওয়ার্ড মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান সাইদ আহমদ খসরু জানান, আমরা কজন খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। এসময় চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা সঙ্গীরা আমার ওপরও হামলা চালায়। এতে আমার হাত ভেঙ্গে যায় তখন উভয় পক্ষে বেশ কজন গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে উভয় পক্ষে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে দিরাই থানার (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ঢাবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে
গাছের ডালে জুলেখা ও রাকিবের ১৭ দিন!
বন্যায় ঘর হারিয়ে এতিম দুই ভাই-বোন গাছের ডালে বাস করেছে। ১৭ দিন মাঁচা বেঁধে থাকার পর এখন তারা এক প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের ঢালাগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
বোন জুলেখার বয়স (২২) ও ছোট ভাই রাকিবের বয়স (১৩)।
নিঃস্ব এই পরিবারটি প্রধানমন্ত্রীর ১০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছে। এই সহায়তা পেয়ে তারা খুশি। তবে এ টাকা দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে তারা। এলাকাবাসী এতিম এ দুই ভাই-বোনের পাশে দাঁড়াতে বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে নামছে বন্যার পানি
জানা যায়, শিমুলবাক ইউনিয়নের ঢালাগাঁও গ্রামে একটি মাঁচা বেঁধে বাস করত জুলেখা ও রাকিব। তাদের বাবা জবান আলী ও মা অনেক আগেই মারা গেছেন। এতিম দুই ছেলেমেয়ে সাহায্য সহায়তায় নিয়ে দিনাযাপন করে আসছে। বন্যায় ঘরের সব মালামালসহ মাথা গোঁজার ঠাঁইটি ভাসিয়ে নেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা। কোথায়ও আশ্রয় না পেয়ে বড় একটি গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। এখানেই ১৭ দিন কাটে তাদের।
জুলেখা জানায়, হঠাৎ করে বন্যার পানি এসে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। আমরা দুই ভাই-বোন ভয়ে কাঁপতে থাকি। ১৭ তারিখ সকাল বেলা দেখি চোখের সামনেই বানের তোড়ে ঘরটি ভেসে যাচ্ছে। চারদিকে নৌকাও নেই। আশ্রয়ের কোন জায়গাও নেই। সবার ঘরে পানি। দিশেহারা হয়ে ভেসে যাওয়া বাঁশ, টিন, কাঠ ও ঘরের আসবাবপত্র কোন রকম ধরে পাশের একটি গাছের ডালে ওঠাই। এবং এখানেই দুই ভাইবোন মিলে মাঁচা বাঁধি। এভাবেই ১৭ দিন খেয়ে না খেয়ে থাকার পর দালান একটি বাড়িতে উঠি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘর নির্মাণের জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কয়েকদিন পরে ঘর নির্মাণে হাত দিব।
শিমুলবাক ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, ‘অসহায় এ পরিবারকে চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু খাবার দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর ১০ হাজার টাকা হাতে পৌঁছে দিয়েছি এবং অন্য একটি বাড়িতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছি। আমি নিজ উদ্যোগে এতিম ছেলেমেয়ে দুটির থাকার জন্য মাটি ভরাট করে একটি ঘর তৈরি করে দেব।’
আরও পড়ুন: বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৩: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সুনামগঞ্জে নামছে বন্যার পানি
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় প্লাবিত অঞ্চলগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে।
বন্যার পানি উপজেলার নিন্মাঞ্চলের জনবসতি থেকে নামলেও বসত বাড়িঘরের নাজুক অবস্থার জন্য এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি বানবাসি লোকজন। তারা বাধ্য হয়েই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। বন্যায় এ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হলে জানা গেছে।
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ১নং আটগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আন নোমান জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় তিনশ’ পরিবারের বসত ঘর সম্পূর্ণরূপে ও দুই হাজার পাঁচশ’ বাড়ির আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় আরও ২ জনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ১১২
তিনি আরও জানান, পশুখাদ্য নষ্ট হয়েছে প্রায় কোটি টাকার ওপরে।
২নং হবিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস বলেন, তার ইউনিয়ন এলাকায় চলতি বন্যায় প্রায় তিনশ’ পরিবারের বসত ঘর সম্পূর্ণরূপে ও তিন হাজার তিনশ’টির বেশি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং প্রায় দেড় কোটি টাকার ওপরে পশু খাদ্যের ক্ষতি হয়েছে।
৩নং বাহাড়া ইউনিয়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, এই ইউনিয়নে প্রায় ৩৫০টির বেশি বসত ঘর সম্পূর্ণরূপে ও এক হাজার পাঁচশ’টির বেশি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং পশুখাদ্যের ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকার ওপরে।
এছাড়া ৪নং শাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মিয়া জানান, তার ইউনিয়নে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দেয়া প্রায় সবকটি ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া প্রায় ২৫০টির বেশি পরিবারের বসত ঘর সম্পূর্ণরূপে ও তিন হাজার দুইশ’টির বেশি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বন্যায় ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত: জাতিসংঘ
তিনি আরও জানান, তার ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় তিন কোটি টাকার পশুখাদ্যের ক্ষতিসহ কৃষকদের সংরক্ষিত প্রায় ছয়শ’ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের ক্ষতি হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, বন্যায় লোকজনের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো চুড়ান্ত ভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। তবে, প্রাথমিকভাবে পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ ছয়শ’ ৩০টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল হতে নগদ ১০ হাজার টাকা করে মোট ৬৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত ৩০কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করতে পেরেছে।
বন্যা: দোয়ারাবাজারে কমেছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে নরসিংপুর, বাংলাবাজার, লক্ষীপুর ইউনিয়নসহ উঁচু এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘর থেকে পানি নামলেও বাকি ৬ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িঘর থেকে এখনও পানি সরেনি।
কিছু এলাকায় পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ। জ্বালানি ও খাদ্য সংকট, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও পানিবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধিসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন বিশেষত নিম্নাঞ্চলের বন্যার্ত পরিবারগুলো।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চিলাই, খাসিয়ামারা ও চেলা নদীর বেড়িবাঁধ কাম সড়কের শতাধিক স্থানে ভাঙন ছাড়াও উপজেলার সবকটি পাকা ও কাঁচা সড়কজুড়ে ভাঙনসহ ধসে গেছে অনেক ব্রিজ-কালভার্ট। ফলে অফিসপাড়াসহ জেলা ও উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন পেশাদার মানুষজন।
আরও পড়ুন: সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন সংগঠনগুলো বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণসহ নানাভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। তবে বেসরকারি ত্রাণের তুলনায় সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগীরা।
পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ, বন্যা পরবর্তী গৃহ ও কৃষি পূনর্বাসনের জন্য বকেয়া কৃষিঋণ মওকুফ করে বিনা সুদে চাহিদামাফিক ঋণ বিতরণে স্থানীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিকসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, পানি দ্রুত কমছে, তবে পুরো উপজেলাজুড়ে পরপর তিনদফা আগ্রাসি বন্যায় সৃষ্ট ভাঙনে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভর্টি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে সর্বক্ষেত্রে দুর্ভোগ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বন্যা দুর্গত এলাকায় সরকারি ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরাও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বন্যায় লণ্ডভণ্ড সিলেট-ছাতক রেলপথ
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই জেলের মৃত্যু
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই জেলের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলা সদর ইউনিয়নের মুগরাইন হাওরে চাঁই পেতে মাছ শিকার করার সময় জ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।
নিহত মানিক মিয়া (২৮), মিয়াশা মিয়া (৩০) উপজেলা সদর ইউনিয়নের জানিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, সোমবার ভোরে তারা দু’জন বাড়ির পাশে হাওরে মাছ ধরছিলেন। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে তারা মারা যান। পরে স্থানীয়রা তাদের লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে দুই জেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পড়ুন: বজ্রপাতে ১২ জনের মৃত্যু, চলতি বছরে সর্বোচ্চ
সুনামগঞ্জে ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, ১৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি
সাম্প্রতিক বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলার অন্তত দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন অধিকাংশ সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব রাস্তায় পায়ে হাঁটাও কষ্টকর। মোটরসাইকেল বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চললেও এটি যেন মরণ ফাঁদ।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক জয়নাল মিয়া জানান, সুনামগঞ্জ-দোয়ারা-ছাতক সড়কের মান্নারগাঁও এলাকার পুটিপুসি সড়কের বান্দেরবাজার যাওয়ার আগে গভীর খাল হয়ে গেছে, ওখানে এখন নৌকা চলে।
এছাড়া ডাউকাখালি-ব্রাহ্মণগাঁও-আমবাড়ী সড়কে ব্যবহৃত বিটুমিন ও পাথর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এই এলাকায় আগে রাস্তা ছিল তা এখন দেখে বোঝাই যায় না।
পড়ুন: দৃশ্যমান হলো রূপসা রেল সেতু
বন্যা মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান পরিকল্পনামন্ত্রীর
বন্যা মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
তিনি বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পাশে সরকার রয়েছে। সরকারি ভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত আছে। সরকারের পাশাপাশি যারা বেসরকারি ভাবে ত্রাণ বিতরণ করছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এখন দুর্গত মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সামগ্রী। তাই এ বন্যা মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দাঁড়াতে হবে অসহায় মানুষের পাশে। করতে হবে সাধ্যমতো সহায়তা।
শনিবার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন এলাকায় বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বন্যায় অসহায় মানুষের ক্ষতি হওয়া কাঁচা ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণে সরকারের পদক্ষেপ কী- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বন্যায় ক্ষতি হওয়া কাঁচা ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য সরকারিভাবে টিনসহ মেরামত সামগ্রী দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: বন্যায় কুড়িগ্রামে কৃষি খাতে ক্ষতি ১২৭.৫৪ কোটি টাকা
এ সময় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ সিদ্দিক আহমদ, জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপম দাস, সহকারি পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) শুভাশীষ ধর, জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবদুল কাইয়ূম মশাহিদ, যুগ্ম-সম্পাদক লুৎফুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য মাহতাবুল হাসান সমুজ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব, জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাফরোজ ইসলাম মুন্না, সহকারি জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুর রব সরকার, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আজিজুল ইসলাম আজাদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মধূ সদন ধর, উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন, পাটলি ইউপি চেয়ারম্যান আংগুর মিয়া, চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল, রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম, উপজেলা আ.লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক মাসুম আহমদ, আ.লীগ নেতা আকমল খান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন, পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দ, যুবলীগ নেতা হুমায়ূন আহমদ, পৌর যুবলীগ নেতা রাজিব চৌধুরী বাবু, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল মুকিত, সাবেক সভাপতি কল্যাণ কান্তি রায় সানি, জেলা ছাত্রলীগ নেতা সজিব রায় দুর্জয়, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতা শাহ জামাল, আজিজ মিয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: ৩৭ হাজার মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমেছে, বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি গতকালের তুলনায় কিছুটা কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল সাত দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা সাত দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ২১ মিলিমিটার। এর আগের দিন বৃষ্টি হয়েছিল ১৮৫ মিলিমিটার।
আরও পড়ুন: সিলেটে ফের বৃষ্টি, বন্যার অবনতির আশঙ্কা
পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বৃষ্টি হলেই জেলার নদ-নদীর পানি কিছুটা বাড়বে। তবে সেটার পরিমাণ বেশি হবে না। আগের মতো পরিস্থিতি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই।
এদিকে জেলায় বানভাসি অনেকেই এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়ে গেছেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে তাঁবু টাঙিয়ে শত শত পরিবার দিন যাপন করছেন। তাদের অনেকেই বাড়িঘর হারিয়েছেন। অন্যদের ঘর থেকে পানি নামছে না। বন্যা পরিস্থিতি উত্তরণ না হওয়ায় চারটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যায় ঘরবন্দী সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাজীর পয়েন্ট, বিলপাড়া, নবীনগর, পশ্চিম নতুনপাড়া এলাকার যেসব স্থানে বৃহস্পতিবার নতুন করে পানি উঠেছিল, রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় সেসব স্থান থেকে পানি নেমে গেচে।
তিন প্লাবিত জেলায় ১,৭১৪টি মোবাইল নেটওয়ার্ক সাইট পুনরায় চালু
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার দুই হাজার ৫২৮ টি মোবাইল নেটওয়ার্ক সাইটের মধ্যে এক হাজার ৭১৪ টি শনিবার পর্যন্ত পুনরায় চালু করা হয়েছে।
এই তিনটি জেলায় বিদ্যুতের অভাবে ১৯০টি সাইট এখনও নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে নেটওয়ার্কের আওতাবহির্ভূত থাকা সাইটগুলো দ্রুত সচল হবে।
নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটর (বাহন লিমিটেড, ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড এবং সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড) তিনটি বন্যাপ্রবণ জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে। এই নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের বেশিরভাগ লিঙ্ক পেরিফেরাল প্রসেসর (এলপিপি)বর্তমানে সক্রিয়।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ সিলেট বিভাগের অন্যান্য এলাকায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ১০৫টি আইএসপি প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে আসছে। উক্ত এলাকায় বর্তমানে আইএসপি অপারেটরদের ৩৭৫টি পয়েন্ট অফ প্রেজেন্স আছে।যার মধ্যে বিদ্যুতের তীব্র ঘাটতির কারণে ৩৪ টি বন্ধ আছে।
আরও পড়ুন: স্কুল থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা: শিক্ষামন্ত্রী
বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে পৌঁছেছে