জাতিসংঘ
ট্রেনে অগ্নিসংযোগে মা-শিশুসহ ৪ জনের প্রাণহানির ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চায় জাতিসংঘ
সম্প্রতি চলন্ত ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মা ও তার শিশুসহ চারজনের প্রাণহানির ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়েছে জাতিসংঘ।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) নিউইয়র্কে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফেন ডুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি মনে করি, কারা এ হামলা চালিয়েছে তা শনাক্ত করতে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্ব।’
একই সঙ্গে অগ্নিসংযোগের হামলায় নিহতদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস 'দ্রুত' উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছে।
নাশকতার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘তদন্তে দেখা গেছে যে এই কাজ পূর্বপরিকল্পিত ছিল, এই মারাত্মক ঘটনার পরিকল্পনা করার জন্য সভা করেছিল। আসন্ন নির্বাচন ও দেশের অগ্রগতি ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে এই নাশকতা রাষ্ট্র ও জনগণের ওপর সরাসরি হামলা।’
এক প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, তারা বাংলাদেশে 'অবাধ ও সুষ্ঠু' নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে জনগণ কোনো ধরনের ভয়ভীতি ছাড়াই ভোট দিতে পারবে।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালিত
তিনি বলেন, 'অবশ্যই নির্বাচনের পর আমাদের কিছু বলার আছে, কিন্তু আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে 'দৃঢ় অবস্থান' নিয়েছে।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে,‘এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তারা শান্তি সমুন্নত রাখতে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।’
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন বৃহস্পতিবার বিকালে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, ৯টি দেশ আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ভারত, জাপান, শ্রীলঙ্কা, চীন, রাশিয়া, জাপান, উজবেকিস্তান, মরিশাস, জর্জিয়া ও ফিলিস্তিন পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে।
ওআইসি, কমনওয়েলথ ও আরব পার্লামেন্টও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউ'র চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছে।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের বিবৃতি বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে: তথ্যমন্ত্রী
একটি কূটনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে, এনডিআই-আইআরআই-এর ছোট একটি দলও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জনপ্রিয় ও রাজনৈতিক সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তাদের মিত্রদের একটি অংশ আসন্ন নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অবরোধ আরোপের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।
বিএনপির এই কৌশলগত পদক্ষেপের ফলে সারাদেশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাদের সমর্থকরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এবং তাদের বিতর্কিত দাবি মেনে নিতে সরকারের ওপর অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করতে এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা প্রতিরোধে রাষ্ট্রসমূহ বাধ্য: জাতিসংঘ কমিটি
জাতিসংঘের বিবৃতি বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্ভয়ে ভোটদানে জাতিসংঘের আহ্বানকে আমরা স্বাগত জানাই এবং এটি বিএনপি-জামায়াত, যারা নির্বাচনকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে গেছে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটির (ডিআরইউ) নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক বিবৃতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি সংস্থা ও দেশ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটি ভালো স্টেটমেন্ট। আমরা স্বাগত জানাই। কারা ভোট দানে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে, ভোট প্রতিহত করার চেষ্টা করছে, আপনারা জানেন। বিএনপি-জামায়াত ঘোষণা দিয়েছে তারা ভোট প্রতিহত করবে। ভোটকেন্দ্রে যাতে মানুষ না যায়, এজন্য তারা ভীতিসঞ্চার করছে, গাড়ি-ঘোড়া পোড়াচ্ছে, রেললাইন খুলে ফেলছে। আমি মনে করি এই বিবৃতি তাদের বিরুদ্ধে গেছে। কারণ এই বিবৃতি যারা ভোট প্রতিহত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী জ্বালাও-পোড়াও চালিয়েই যাচ্ছে, এটি প্রশাসনের ব্যার্থতা কি না- প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ওরা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল, সেটি এখন পারছে না। এটিকে শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনা আমাদের দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যে সরকার ও প্রশাসন কাজ করছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আলোচনার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আলোচনা চলছে। যে কারো সঙ্গেই স্ট্র্যাটেজিক অ্যালায়েন্স হতে পারে।
এর আগে ডিআরইউর নবনির্বাচিতদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, ডিআরইউ সংগঠনটি চমৎকারভাবে কাজ করছে। আমি অনেক আগে থেকে তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত, ভবিষ্যতেও থাকব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গঠিত সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আজ সাংবাদিকদের জন্য একটি ভরসাস্থল উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী সংগঠনগুলোর সাংবাদিকদের গ্রুপ ইনস্যুরেন্স করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, এতে করে কেউ অসুস্থ হলে এবং মৃত্যুবরণ করলে টাকা পাবে। এ সুবিধা দেশে কম।
ডিআরইউ সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভর নেতৃত্বে নবনির্বাচিত নির্বাহী পরিষদ সদস্যরা এ সময় মন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম, সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান (মিজান রহমান), সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, নারীবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদা ডলি, তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো. রাশিম (রাশিম মোল্লা), ক্রীড়া সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মনোয়ার হোসেন, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ), কল্যাণ সম্পাদক মো. তানভীর আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ শিপন, মুহিববুল্লাহ মুহিব ও মো. শরীফুল ইসলাম এ সাক্ষাতে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: রেললাইন কাটা, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো- এ কোন রাজনীতি: তথ্যমন্ত্রী
বিএনপি আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালিত
যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২৩’ পালন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
আরও পড়ুন: মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত
এরপর দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। আলোচনা পর্বে মূল বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের উপস্থায়ী প্রতিনিধি ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তৌফিক ইসলাম শাতিল।
উপস্থায়ী প্রতিনিধি তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারের শাহাদাৎ বরণকারী সব সদস্য, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে নিহত সব শহীদ বুদ্ধিজীবী, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ এবং নির্যাতনের শিকার মা-বোনদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
দিবসটিকে আমাদের ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতির এই বীর সন্তানেরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের পথ প্রশস্ত করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা যখন বুঝে গিয়েছিল যে তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তখনই তারা বাংলাদেশকে মেধাশূণ্য করতে বেছে বেছে পরিকল্পিতভাবে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে।’
‘প্রতিটি বাংলাদেশি ভয়ভীতিমুক্তভাবে ভোট দিতে পারে তা দেখতে চায় জাতিসংঘ’
জাতিসংঘ বলেছে, তারা দেখতে চায় প্রতিটি বাংলাদেশি ভয়ভীতিমুক্ত এবং কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ভোট দিতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) নিউইয়র্কে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছি এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে প্রতিটি বাংলাদেশি ভয়ভীতি ছাড়া বা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ভোট দিতে পারে।’
প্রশ্নকারী রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং আইসিএইডিসহ ছয়টি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কথা উল্লেখ করেন, যারা বাংলাদেশের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
একই ধরণের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘সরকার কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করছে না, সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তরুণরা দৃঢ়ভাবে কাজ করছে: রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই
মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'যারা সন্ত্রাসী, আমরা তাদের গ্রেপ্তার করছি। আমরা রাজনৈতিক কারণে কাউকে হয়রানি করছি না।’
তিনি সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস এবং যানবাহন ও নিরপরাধ মানুষের ওপর অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করেন।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রদর্শন করে।
যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদেরকে সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে যথাযথ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ একটি মডেল দেশ।
তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের জনগণের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেন।
মোমেন বলেন, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের বিষয়ে অন্যান্য দেশের বাংলাদেশের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
তিনি গাজা এবং কিছু উন্নত দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরেন, যেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন: ৬৯০ মিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তিতে শর্তারোপ আইএমএফের
গাজায় মানবিক যুদ্ধ বিরতির জাতিসংঘের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো
গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবিতে স্থানীয় সময় শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের উত্থাপিত প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
১৫ সদস্যের কাউন্সিলে ১৩ সদস্য পক্ষে এবং একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। যুক্তরাজ্য ভোটদানে বিরত ছিল।
এতে গাজায় ইসরায়েলের মাসব্যাপী বোমাবর্ষণ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্ন অবস্থান এবং তার কিছু ঘনিষ্ঠ মিত্রের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান ফাটল লক্ষ করা যায়।
যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থনকারীদের মধ্যে ফ্রান্স ও জাপানও ছিল।
প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সনদের ৯৯ অনুচ্ছেদ বলে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
এই অনুচ্ছেদে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘ প্রধানকে।
গুতেরেস গাজায় সৃষ্ট ‘মানবিক বিপর্যয়’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে মার্কিন ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর রবার্ট উড বলেছেন, সামরিক অভিযান বন্ধ করা হলে হামাসকে গাজা শাসন চালিয়ে যেতে এবং ‘পরবর্তী যুদ্ধের বীজ রোপণ করার সুযোগ দেবে’।
ভোটের আগে উড বলেছিলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি শান্তি এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান চায় না হামাস। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে চায়, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা উভয়েই যাতে শান্তিতে ও নিরাপদে বসবাস করতে পারে। তাই আমরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করি না।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপত্যকায় ১৭ হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত এবং ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেসামরিক নাগরিক ও সামরিক সদস্যদের মৃত্যুর আলাদা করে কোনো হিসাব দেয়নি।
তবে তারা জানায়, নিহতদের ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু।
অন্যদিকে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলি পক্ষের প্রায় ১২০০ জন মারা গেছে।
ইফতারকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করেছে ইউনেস্কো
জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউএন এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেস্কো) বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ‘ইফতার’কে অপরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করেছে।
ইরান, তুরস্ক, আজারবাইজান ও উজবেকিস্তান যৌথভাবে সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য ইউনেস্কোয় আবেদন জমা দেয়।
ইউনেস্কো তার সাইটে পোস্ট করেছে, সাধারণত রমজান মাসে সূর্যাস্তের সময় মুসলমানরা ইফতার করে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কঠিন অনুশাসন মেনে রোজা রাখা হয় এবং প্রাত্যহিক রোজা শেষ করতে বিভিন্ন বয়স, লিঙ্গ ও বংশোদ্ভূত মানুষ ইফতার করে।
ইউনেস্কোর পোস্টে বলা হয়েছে, এটি প্রায়ই মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য মিলন (একত্রিত) বা ডিনারের উৎসবে পরিণত হয়, পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং দাতব্য, সংহতি ও সামাজিক বিনিময়কে উৎসাহিত করে।
আরও পড়ুন: ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেল ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র
এমনকি যারা রমজান মাসজুড়ে রোজা রাখেন না, তারাও ইফতারের সঙ্গে সম্পর্কিত উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
পরিবারের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের প্রায়ই ঐতিহ্যগত খাবারের উপাদান তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সময়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের রোজা রাখার সুবিধার পাশাপাশি ইফতারের সামাজিক আদর্শ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কেও শিক্ষা দেন।
ইউনেস্কোর পোস্টে আরও বলা হয়েছে, ইফতার উপলক্ষে প্রায়ই সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং দাতব্য সংস্থাগুলোর পাশাপাশি টেলিভিশন, রেডিও, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহায়তা করা হয়।
আরও পড়ুন: ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভারতের শান্তিনিকেতন
তিন বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রচারে একসঙ্গে ইউনেস্কো-সিসিমপুর
অযৌক্তিক রাজনৈতিক চাপের মধ্যে গঠনমূলক ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা চেয়ে জাতিসংঘে মোমেনের চিঠি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’ বলে জাতিসংঘকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিরোধী দল ও তাদের মিত্ররা বিক্ষোভের নামে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি পোড়ানো এবং মানুষের জীবন পোড়ানো সহ্য করবেন না বলেও জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জাতিসংঘ মহাসচিবের কার্যালয়ের প্রধান আর্লে কোর্টনে রাট্রেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলেন, 'আমরা আশা করি জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সম্মান সমুন্নত রাখতে নির্দলীয়তা, সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখবেন।’
মোমেন লিখেছেন, যদি তাদের প্রতিবেদনগুলো মিথ্যা ও বস্তুনিষ্ঠতা ব্যতীত হয় এবং যদি সত্যভিত্তিক না হয়, তাহলে তারা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে পারে যা জাতিসংঘ ব্যবস্থার জন্য একটি খারাপ লক্ষণ হবে।
চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন মহল থেকে আমরা যে অযৌক্তিক, অযাচিত ও স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছি, তার প্রেক্ষাপটে আমরা আশা করি, জাতিসংঘের সচিবালয়, এজেন্সি ও কান্ট্রি অফিসসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন ব্যবস্থা বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অবিচল থাকতে গঠনমূলক ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করবে।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মতো বেআইনি পদক্ষেপের বিরোধী রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
গত ১৯ নভেম্বর চিঠিটি লেখা হয় এবং ২০ নভেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন তা প্রেরণ করে।
ইউএনবির হাতে পাওয়া চিঠিতে ড. মোমেন লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'গণতন্ত্রের একজন নির্ভীক কর্মী' এবং তিনি ভোটাধিকার, খাদ্যের অধিকার এবং একটি উন্নত জীবনের অধিকার নিশ্চিত করতে অনেক কষ্ট করছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা তার ১৫ বছরের শাসনামলে উপনির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন, আঞ্চলিক নির্বাচন, মেয়র নির্বাচনসহ হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছেন। এসব নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সবই অবাদ ও সুষ্ঠু হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ তার নাগরিকদের মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী এবং আশাবাদী যে জাতিসংঘ ব্যবস্থা জাতীয় পর্যায়ে সবার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় বিশ্বস্ত অংশীদার হিসাবে কাজ করে যাবে।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সমর্থন অব্যাহত রেখেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ‘এটি বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ৩০ লাখ জীবন উৎসর্গ করেছে।’
মোমেন বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার পক্ষে একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসাবে তাদের অবস্থান বজায় রেখেছে।
চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ একটি সক্রিয় ও সহায়ক সদস্য রাষ্ট্র। আমাদের জনগণের রাজনৈতিক অগ্রগতি ও আর্থ-সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের জাতীয় যাত্রায় সহযোগিতা ও সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে উচ্চ প্রত্যাশা রয়েছে।’
আরও পড়ুন: জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার শিকারদের অপরিহার্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে: প্রতিবেদন
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন মোমেন
আগামী ৫-৬ ডিসেম্বর ঘানার রাজধানী আক্রায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
রবিবার (৩ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিকল্প মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় কৌশলগত যোগাযোগ, শান্তিরক্ষীদের মানসিক সুস্থতা, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার ওপরও জোর দেবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন: ১৯৭১ সালে ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে কিসিঞ্জারের ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল: মোমেন
জাতিসংঘ বলেছে, মিশনের কার্যকারিতা এবং তারা যেসব সম্প্রদায়ের সেবা করে তাদের উপর নিজেদের প্রভাব জোরদার করার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সদস্য দেশগুলো একত্র হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হলো ইউনাইটেড ন্যাশন্স পিসকিপিং মিনিস্ট্রিয়াল মিটিং।
২০২১ সালে সিউলের অন্তর্ভুক্তিসহ এটি ২০১৪ সাল থেকে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার বা মন্ত্রী পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সিরিজের সর্বশেষ বৈঠক।
অ্যাকশন ফর পিসকিপিং, এফোরপি+ এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে চলমান সংস্কারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কার্যক্রমের উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর উপর আলোচনা করা হবে।
পূর্ববর্তী আলোচনার উপর ভিত্তি করে এবং দ্রুত বিকশিত কর্ম পরিবেশকে বিবেচনায় রেখে সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন বিষয় যেমন: জাতিসংঘের চাহিদা মেটাতে উচ্চ-কর্মদক্ষতা, বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রজন্ম এবং অন্যান্য অঙ্গীকারের প্রজন্ম; নতুন বা সম্প্রসারিত টেকসই ক্ষমতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করা।
শান্তিরক্ষা হলো বহুপক্ষীয় সহযোগিতার একটি শক্তিশালী প্রদর্শন।
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বিশেষ কমিটিতে প্রতিনিধিত্বকারী সব সদস্য রাষ্ট্রকে এই আয়োজনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা সক্রিয়, মার্কিন শ্রম নীতি নিয়ে খুব উদ্বেগ নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
কোয়াত্রার সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে না: মোমেন
ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড পেলেন শেখ হাসিনা
জলবায়ু বিষয়ে কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিযুক্ত মানুষের পক্ষে বিশ্বব্যাপী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে 'ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড' দিয়েছে আইওএম ও জাতিসংঘ সমর্থিত গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি সংস্থা।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে দুবাইতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন-কপ ২৮ এর সাইডলাইনে একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্যানেল অধিবেশনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি রাষ্ট্রদূত ডেনিস ফ্রান্সিস এবং ইন্টারন্যাশনাল অর্গাইনাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপের কাছ থেকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।
কপ-২৮ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান তথ্যমন্ত্রী ও পরিবেশবিদ ড. হাছান মাহমুদ এ সময় 'অভিযোজন ও সহনশীলতার জন্য জলবায়ু গতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ'-শীর্ষক উচ্চ-পর্যায়ের এ প্যানেল অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
হাছান মাহমুদ জানান, জলবায়ু গতিশীলতার বিষয়টিকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনার মূলধারায় আনার এখনই উপযুক্ত সময়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ক্লাইমেট মোবিলিটি সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ুজনিত কারণে বাধ্য হয়ে অভিবাসন ও বাস্তুচ্যুতির দিকটি বিশ্ব নেতাদের নজরে নিয়ে আসেন। এর আগেও বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে ঢাকায় আইওএমের সহযোগিতায় আয়োজিত দুটি সংলাপ এবং গত বছর মিশরের শার্ম এল শাইখে কপ-২৭ সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরেছে।
একইসঙ্গে কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত, ৪০০ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম বহুতল সামাজিক আবাসন প্রকল্প নির্মাণসহ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উদ্যোগের নানা দিক তুলে ধরেন তিনি।
আরও পড়ুন: জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি মানবিক সংকটে পরিণত হওয়ার আগে বিশ্বকে পদক্ষেপ নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
মন্ত্রী হাছান বলেন, ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং জলবায়ু গতিশীলতা এবং এ থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ক্রমাগত নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বের সমর্থন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সন্তুষ্ট যে এখন জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একটি বিস্তৃত জোট এই ইস্যুতে একযোগে কাজ করছে।
পুরস্কার প্রদানকারী গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি সংস্থাটি জাতিসংঘ, আঞ্চলিক আন্তঃসরকারি সংস্থা এবং উন্নয়ন অর্থ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতায় জলবায়ু গতিশীলতা মোকাবিলায় সহযোগিতামূলক বিস্তৃত সমাধানের জন্য কাজে ব্যাপৃত।
কমনওয়েলথ মহাসচিবের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর বৈঠক
এদিন বিকালে দুবাইয়ে কপ-২৮ সম্মেলনস্থলে কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এ সময় বন ও পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবু জাফরসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রী হাছান সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে, কমনওয়েলথ মহাসচিব তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে তার সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।'
আরও পড়ুন: গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে জি-২০ নেতাদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে পেছনে ফেলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম বাজার হবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী
কপ-২৮: বিশ্বব্যাপী জলবায়ু প্রতিক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের (ইউএন) ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (কপ-২৮) সম্মেলনের ২৮তম অধিবেশন শুরু হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবার সম্মেলনের আয়োজক। দেশটির দুবাই শহরে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে শুরু হওয়া এ সম্মেলন চলবে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এই বছরের জলবায়ু সম্মেলনটি বিশেষভাবে বিশ্ববাসীর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কারণ গ্লোবাল স্টকটেকের মূল্যায়নের সময় এসে গেছে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী এবারই প্রথম বিশ্বের সামগ্রিক অগ্রগতির দ্বিবার্ষিক মূল্যায়নই (স্টকটেক) হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে কপ-২৮ এর সভাপতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ আল জাবের বলেন, ‘গ্লোবাল স্টকটেকের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নতুন পথচলা শুরু হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ভবিষ্যৎ কী হবে, এটা থাকবে এবারের সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয়। এটি এমন একটি সিদ্ধান্ত যা কার্যকর করতে, ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে এবং ২০৩০ পর্যন্ত পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে।’
আল জাবের বিশ্ব নেতাদের কাছে একটি সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি জীবাশ্ম জ্বালানির ভবিষ্যৎ বিষয়ে বৈশ্বিক মূল্যায়নের উপর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং এজেন্ডাগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল কপ-২৮ সম্মেলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে: পরিবেশমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘এই প্রেসিডেন্সি (সবুজ) অর্থায়ন শুরু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বের দক্ষিণাংশের দেশগুলোর আর উন্নয়ন ও জলবায়ু কর্মকাণ্ডের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে না।’
তিনি সমাধানের জন্য সব পক্ষকে এগিয়ে আসার এবং ঐক্যমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের নির্বাহী সেক্রেটারি সাইমন স্টিয়েল বলেন, ‘আমরা ছোট ছোট পদক্ষেপ নিচ্ছি। অস্থিতিশীল বিশ্ব থেকে খুব ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে, বর্তমানে আমরা যে জটিল প্রভাবগুলোর (জলবায়ু পরিবর্তনের) সম্মুখীন হচ্ছি তা সমাধানের সর্বোত্তম প্রতিক্রিয়া তৈরি করার জন্য স্থিতিস্থাপকতার অভাব রয়েছে।’
তিনি দ্রুত প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপ নেওয়ার এবং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরের জন্য দৃঢ় আহ্বান জানানোর সময় জাতিসংঘের এই জলবায়ু কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, ‘দেশের মধ্যে এবং এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্কে ন্যায়বিচার’ নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও সতর্ক করেছেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫-ডিগ্রি সীমা অতিক্রম করার আগে পৃথিবীর কার্বন নির্গমন সহ্য করার ক্ষমতা শেষ হওয়ার আগে আমাদের হাতে এখনও প্রায় ছয় বছর আছে।’
এবারের কপ-২৮ সম্মেলন পৃথিবী ও সমস্ত মানবজাতির মুখোমুখি থাকা জলবায়ু সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ৭০ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধিকে স্বাগত জানাবে।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ এর আগেই জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
সংসদ সদস্যদের গোলটেবিল বৈঠক: কপ-২৮ এর আগে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের ককাস গঠনের প্রস্তাব