চীন
চলতি মাসে কোভ্যাক্সের ৩৫ লাখ টিকা পাবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চীন ছাড়াও চলতি মাসে জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ আরও টিকা পাবার ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন ভালো অবস্থানে আছি। একটি লাইনআপ তৈরি করেছি। আমি মনে করি, এখন আর টিকার সংকট থাকবে না এবং কোনো বাধা ছাড়াই টিকা দেয়ার কর্মসূচি চলবে।’
আরও পড়ুন: গণটিকার নিবন্ধন শুরু বৃহস্পতিবার
ড. মোমেন বলেন, ‘কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশ জাপান থেকে প্রায় ২৫ লাখ ডোজ এবং ইইউ থেকে ১০ লাখ টিকা পাওয়ার আশা করছে। এগুলো সম্ভবত অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন ডোজ হতে পারে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন দেশে জাপানের টিকা দেয়ার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে আমাদের টিকা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।’
মোমেন বলেন, ‘এ সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে তারা কোভ্যাক্সের আওতায় একটা বড় অঙ্কের টিকা পাঠাবেন। কোভ্যাক্সের আওতায় বলে এটা বিনা মূল্যে পাব। জাপান থেকে ২৫ লাখ টিকা পাবে বাংলাদেশ।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জানিয়েছে আমরা আরও পাব।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে: চীনা উপরাষ্ট্রদূত
মোমেন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে চীনের সিনোফার্ম থেকে কেনা টিকার ডোজ দেশে আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
‘এই তিন মাসের পর চুক্তি সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা চলছে এবং চীনা পক্ষ জানতে চেয়েয়ে বাংলাদেশের কতটুকু লাগবে। আমরা চুক্তিটি প্রসারিত করব। পরিমাণ সম্পর্কে তাদের জানাতে তারা একটি তারিখ দিয়েছে,’ বলেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: এখন থেকে ৩৫ বছর হলেই টিকার নিবন্ধন
ভারত থেকে টিকা পাবার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত কখনো বলেনি যে তারা বাংলাদেশকে টিকা দেবে না। আমি আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি এবং উত্পাদন বাড়ার পর আমরা ভারত থেকে টিকা পেয়ে যাব।’
বাংলাদেশে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে: চীনা উপরাষ্ট্রদূত
চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে যৌথভাবে টিকা উৎদনের জন্য এখানকার অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের উপরাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
হুয়ালং ইয়ান বলেন, চীন এ পর্যন্ত প্রায় ১০০টি দেশে টিকা সরবরাহ করেছে এবং কোভ্যাক্সে এক কোটি ডোজের প্রথম চালান সরবরাহ করতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ এখন থেকে ৩৫ বছর হলেই টিকার নিবন্ধন
বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ চীনা টিকার প্রথম চালান পেয়েছে বলেও জানিয়েছেন ইয়ান। তিনি বলেন, চীন বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা ও উন্নয়নের পাশাপাশি উৎপাদন করছে। এছাড়াও অনেক দেশের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দেশের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালাতে সহায়তা করেছে।
আরও পড়ুনঃ টিকা পরীক্ষার বানর ধরতে গিয়ে ‘লাঞ্ছিত’ পাঁচ
ইয়ান বলেন, চীনের তৈরি করোনার টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ আরও টিকা পাওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন যে, বেশ কয়েকটি দেশের কাছ থেকে করোনার টিকা পাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
শুক্রবার রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ড. মোমেন বলেন, ‘করোনার টিকা নিয়ে জনগণের চিন্তিত হবার কিছু নেই। পর্যাপ্ত ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার টিকা ক্রয়ের জন্য আলাদাভাবে অর্থ বরাদ্দ রেখেছেন।’
আরও পড়ুন: দেশে এলো মডার্নার ২৫ লাখ টিকার ১ম চালান
শুক্রবার রাতে এবং শনিবার সকালে বাংলাদেশ আমেরিকার তৈরি মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা কোভ্যাক্সের আওতায় এবং চীনের সিনোফার্মের ২০ লাখ টিকা (বাণিজ্যিক ক্রয়) পেয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দুই উৎস থেকে টিকা পাবার পর বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল হয়েছে। এসময় বাংলাদেশের জন্য ভ্যাক্সিন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ড. মোমোন।
আরও পড়ুন: মডার্নার পর দেশে এলো সিনোফার্ম টিকার চালান
পাশাপাশি কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশকে টিকা দিয়ে সহায়তা করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে ধন্যবাদ জানান।
টিকার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, নতুন করে টিকা প্রাপ্তির ফলে সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।
আরও পড়ুন: দেশে করোনায় একদিনেই সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু
তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন দেশের সাথে অক্সফোর্ডের টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে কথা বলছে এবং বেশ কয়েকটি দেশ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিন প্রাপ্তির ব্যাপারে আলোচনা ফলপ্রসূ ভাবে আগাচ্ছে। এমনকি ভারতের কাছ থেকেও আগামী আগস্ট মাস নাগাদ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাক্সিন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
চীনা শাসন ব্যবস্থা একটি অনন্য মডেল: ইমরান খান
চীনা শাসন ব্যবস্থাকে একটি অনন্য মডেল হিসেবে উল্লেখ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) নেতৃত্বে চীন দারিদ্র্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চীনা গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেন, চীনে দরিদ্রতা নির্মূলে কমিউনিস্ট পার্টির চেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়েছে।
ইমরান বলেন, 'আমি মনে করি যে কোনো মানব সভ্যতার জন্য এটা অন্যতম একটা অর্জন। আগে কোনো সমাজ এই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি না।'
আরও পড়ুন: চীনকে দমন করতে চাইলে মাথা থেতলে দেয়া হবে: জিনপিং
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শতবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী চীনা শাসন ব্যবস্থাকে অনন্য মডেল হিসেবে উল্লেখ করেন।
গত কয়েকবছরে কয়েকবার চীন সফর করা তেহরিক- ই- ইনসাফ পার্টির এই নেতা বলেন, দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের অংশ হিসেবে চীন যেভাবে মেধা যাচাই ও পরিচর্যা করছে সেটা তাকে খুব আকৃষ্ট করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, মানবসভ্যতা অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হয়েছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক নিয়ে ইমরান বলেন, কূটনীতিক সম্পর্ক তৈরির পর থেকে কঠিন সময়ে দুই দেশ পরস্পর পরস্পরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে আসছে। এই গভীর, শক্তিশালী সম্পর্ক শুধু দুই দেশের সরকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং দুই দেশের জনগণের মধ্যেও বিদ্যমান।
তিনি বলেন, পাকিস্তান যখনি কোনো বিপদে পড়েছে চীন তখনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের জনগণের মনে চীনের জনগণের জন্য বিশেষ এক জায়গা রয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবেলায় চীন দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকায় রাখার পাশাপাশি পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশকে টিকা দেয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন চীন টিকা দেওয়ার কারণে পাকিস্তান দেশব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে পেরেছে এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চীন বিশ্বস্ত অংশীদার: প্রধানমন্ত্রী
চীন- পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পের আওতায় পাকিস্থানের বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর এবং পরিবহন ব্যবস্থায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন খান।
ভবিষ্যতে চীনের সাথে শিল্প, কৃষি এবং দক্ষতা উন্নয়নের ব্যাপারে একসাথে কাজ করবেন উল্লেখ করে ইমরান বলেন, সিপিইসি প্রকল্প আমাদের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছে।
বিশ্ব পরিস্থিতি যেমনই হউক চীনের সাথে রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নতিতে পাকিস্তান কাজ করে যাবে। চীন- পাকিস্তান সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী বলেও মন্তব্য করেছেন ইমরান খান।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চীন বিশ্বস্ত অংশীদার: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চীনকে বিশ্বস্ত অংশীদার হিসাবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু'দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন নতুন পথ খোঁজার প্রতি জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন পথ খুঁজছি। একই সাথে শান্তি ও নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু নিয়েও একসাথে কাজ করছি।’
বৃহস্পতিবার বিকালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার (সিপিসি) ১০০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে পূর্বে ধারনকৃত এক ভিডিও বাতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: চীনকে দমন করতে চাইলে মাথা থেতলে দেয়া হবে : জিনপিং
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ এবং জাতীয় মৌলিক স্বার্থের ভিত্তিতে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশ চীনকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশ্বস্ত অংশীদার হিসাবে মনে করে।’
তিনি কোভিড -১৯ মহামারী চলাকালীন সিপিসির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে সাম্প্রতিক ভ্যাকসিন ডোজ এবং মেডিকেল সরঞ্জামাদি উপহার দেয়া সহযোগিতা ও সহায়তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
‘আমি নিশ্চিত যে আগামী দিনে আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে,’ বলেন হাসিনা।
আরও পড়ুন: চীন থেকে শিগগিরই আরও ২০ লাখ টিকা আসছে
বাংলাদেশ কখনও ঋণের ফাঁদে পড়বে না: চীনা রাষ্ট্রদূত
তিনি বিগত কয়েক দশকে বেশ কয়েকজন সিপিসি নেতার বাংলাদেশ-চীন এবং সিপিসি-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্পর্ক উন্নয়নে অবদানের কথা তুলে ধরে তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আপনাকে (চীনের প্রেসিডেন্ট ও সিপিসি’র মহাসচিব শী জিনপিং) এবং আপনার মাধ্যমে চীন সরকার, সিপিসি’র সদস্য ও চীনের বন্ধু-প্রতিম জনগণকে আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন।’
চীনকে দমন করতে চাইলে মাথা থেতলে দেয়া হবে: জিনপিং
চীন যেভাবে নিজেদের তৈরি করছে তাতে কেউ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে-এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীন কাউকে দমন করে না। চীনকে দমন করতে চাইলে মাথা থেতলে দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়ানানমেন স্কয়ারে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক গণ সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে জিনপিং এই হুঁশিয়ারি দেন।
আরও পড়ুনঃ চীন থেকে শিগগিরই আরও ২০ লাখ টিকা আসছে
যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে জিনপিং বলেন, আমরা কাউকে দমন করার চেষ্টা করি না। তাই আমাদের কখনোই কোনো বিদেশি বাহিনী দমন, পীড়ন ও পরাধীন করতে পারবে না। কেউ চেষ্টা করলে চীনের ১.৪ বিলিয়ন (১৪১) কোটি মানুষের গ্রেট ওয়ালে মাথা থেতলে দেয়া হবে।
চীন বরাবর অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র তাদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও দেশটির জাতির পিতা মাও সে তুংয়ের মতো ধূসর রঙের পোশাক পড়ে বিশাল জনসমাবেশে জিনপিং বলেন, চীনের জনগণের আত্মমর্যাদাবোধ দৃঢ়। তারা অতীতে কখনো অন্য দেশের জনগণ দ্বারা দমন, পীড়ন এবং দাসত্বের শিকার হয়নি, বর্তমানেও হচ্ছে না এবং ভবিষ্যতেও হবে না।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ কখনও ঋণের ফাঁদে পড়বে না: চীনা রাষ্ট্রদূত
৭ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জিনপিং এর এই মন্তব্যে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈশ্বিক ক্ষমতার অবস্থান নিয়ে এবং ভারতের সাথে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত ইস্যুতে আরও গভীরভাবে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়লো।
এ সময় ক্ষমতা এবং জনগণ কমিউনিস্ট পার্টিকে নির্বাচন করছে বলেও মন্তব্য করেন শি জিনপিং।
আরও পড়ুনঃ চট্টগ্রাম পৌঁছেছে চীনের টিকা
যদিও বেইজিং ক্ষমতার অপব্যবহার, ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর জনগণকে আটক এবং মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সমালোচিত হয়েছে।
১৯২১ সালে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর ৭২ বছর আগে ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর চীনা কমিউনিস্ট নেতা মাও সেতুং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (পিআরসি) গঠনের ঘোষণা দেন।
চীন থেকে শিগগিরই আরও ২০ লাখ টিকা আসছে
চীন থেকে শিগগিরই টিকার একটি বড় চালান আসছে। চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কেনা সিনোফার্ম টিকার ২০ লাখ ডোজের প্রথম চালান সরবরাহের জন্য প্রস্তুত বেইজিং।
বুধবার রাজধানীর চীনা দূতাবাসের ডেপুটি চিফ মিশন হুয়া লং এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শিগগিরই এই চালান ঢাকায় পৌঁছাবে।করোনা মহামারির নতুন ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন তার বাংলাদেশি বন্ধুদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
মিশন হুয়া লং জানান, চীন থেকে বাংলাদেশের দেড় কোটি সিনোফার্ম টিকার ডোজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং চীন প্রয়োজন হলে আরও সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
বাংলাদেশ শিগগিরই কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় মডার্নার টিকার ২৫ লাখ মিলিয়ন ডোজ পাবে।
আরও পড়ুন: জুলাই মাসে ব্যাপকভাবে টিকাদান শুরু হবে: প্রধানমন্ত্রী
৪ জুলাইয়ের আগেই মডার্নার দুটি চালান বাংলাদেশ পাবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন
আরও পড়ুন: টিকাদান বন্ধ হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার টুইট করেছেন, বাংলাদেশ শিগগিরই জিএভিআইটিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মডার্নার টিকার ২৫ লাখ ডোজ উপহার পাবে।
মিলার বলেন, কোভ্যাক্সের অন্যতম অংশীদারি দেশ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপীকরোনা মহামারি মোকাবিলা করতে টিকা সরবরাহ বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও পড়ুন: শিগগরই মডার্নার ২৫ লাখ টিকা আসছে দেশে
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস বেইজিংয়ের
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের চাওয়া পূরণে চীন সব সময় দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের সেতু হিসেবে কাজ করে যাবে।’
কসমস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনায় তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য বাংলাদেশের আগ্রহ আমরা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছি এবং দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানে দুই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীকে সহায়তার ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা কখনই বদলাবে না।’
মূল বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত লি বলেন, ’এই বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে মিয়ানমারে হঠাৎ করে সেনা অভ্যুত্থান সবাইকে অবাক করে দিয়েছে এবং যে কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।’
তিনি বলেন, চীন মিয়ানমারের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, আশা করছি শিগগিরই দেশটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
আরও পড়ুন: কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
বৃহস্পতিবার রাতে ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষৎতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক এই সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
এতে আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মুবিন চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম বলেন, ‘বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ও উপ আঞ্চলিক ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়াতে আমি চীনকে অনুরোধ করব, বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে চীন সহায়তা করার ক্ষমতা রাখে।’
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশটিতে বর্তমানে যে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে তার প্রভাব চীন, বাংলাদেশ, ভারত এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর ওপরও পড়তে পারে।
তারিক এ করিম বলেন, ‘তাই, আমি এই ইস্যুটিকে নতুন করে দেখার এবং তাদের প্রভাব ব্যবহার করে দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ কখনও ঋণের ফাঁদে পড়বে না: চীনা রাষ্ট্রদূত
রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত লি’র মন্তব্যের বিষয়ে শমসের মুবিন বলেন, এই ইস্যুর সন্তোষজনক সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অনেক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি মানবিক সমস্যা, এই সম্প্রদায়ের সম্মানের কথা মাথায় রেখে এর সন্তোষজনক সমাধান না হলে এটি নিরাপত্তা ইস্যুতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
সাবেক এই কূটনীতিক মনে করেন, এই ইস্যুর সমাধান যে দেশগুলো সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে তাদের আর দেরি না করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সন্ধান করা উচিত।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, রোহিঙ্গরা কি আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এবং ভূ-তাত্ত্বিক স্বার্থের শিকার? আমি মনে করি এ প্রশ্নটিই এই অঞ্চলের প্রভাবশালী রাষ্ট্রদের খুব খোলামেলা ও আন্তরিকতার সাথে জিজ্ঞাসা করা দরকার। এটি অনেক বেশি মানবিক সমস্যা এবং আমি মনে করি এর কার্যকর এবং সময়োপযোগী সমাধান হওয়া উচিত।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সার্বজনীন প্রশংসা পেয়েছে বলেও সাবেক এই কূটনীতিক উল্লেখ করেন।
রাখাইন রাজ্যের সঙ্কটকে একটি জটিল ও ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, চীন মিয়ানমার সরকারকে রক্ষা করছে।
এই বিশ্লেষক বলেন, ভারতও মিয়ানমারে প্রভাবের জন্য প্রতিযোগিতা করছে এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সমালোচনা করছে।
বাংলাদেশ কখনও ঋণের ফাঁদে পড়বে না: চীনা রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন যে, বাংলাদেশকে কখনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঋণ বা কথিত ঋণের ফাঁদে পড়ার চিন্তা করতে হবে না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতায় ‘ঋণ’ কখনও কূটনৈতিক নিয়ন্ত্রণের চাবি-কাঠি হয়ে উঠবে না বলে আশ্বস্ত করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ খুব দক্ষতার সাথেই বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা করে আসছে।
চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘আমি অবশ্যই বলবো যে, আপনারা খুবই দক্ষতার সাথে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা করেছেন এবং আপনাদের কোনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঋণ নেই। আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বেশ সুনাম অর্জন করেছে। তাই, কথিত ঋণের ফাঁদ নিয়ে চিন্তা করবেন না।’
আরও পড়ুন: কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
বৃহস্পতিবার কসমস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় (ওয়েবিনার) এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত। অনুষ্ঠানটি কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
উক্ত আলোচনায় উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান এবং সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।এছাড়া সভায় আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের এম চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। ওয়েবিনারে মূল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
আরও পড়ুন: দ্রুতই টিকা রপ্তানি শুরু করতে পারে সেরাম
আলোচনার এক পর্যায়ে চীনের অর্থায়নে সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার ঋণের ফাঁদে পড়ার বিষয়টি উঠে আসে। ঋণের ফাঁদ বর্তমান বিশ্বে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের এক অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ অঞ্চলে চীনের ব্যাপক ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলার অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংস্থা।
এরই প্রেক্ষিতে চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর কোনও দেশেই ঋণের ফাঁদ তৈরির চেষ্টা করেনি চীন। তিনি দাবি করেন এমন কোনও কার্যক্রমের প্রমাণ নেই।লি বলেন, ‘আপনাদের দেশে সুপরিকল্পিত নীতিগত কাঠামো এবং দক্ষ কর্মকর্তা ও মন্ত্রী রয়েছেন। তাই আপনাদের এই ব্যাপারে চিন্তিত হবার কিছু নেই।’এসময় চীনা রাষ্টদূত জানান, সম্প্রতি এক নিবন্ধ পড়ে তিনি জানতে পারেন, শ্রীলঙ্কার বর্তমান মোট ঋণের মাত্র ৮ শতাংশ চীনের কাছ থেকে নেয়া। তাছাড়া, এই ৮ শতাংশ ঋণের অধিকাংশই বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে রয়েছে।
আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চীন বাংলাদেশের শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে পরিণত হচ্ছে। দেশের বড়-বড় প্রকল্পগুলোতে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে। তার মতে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে চীনের এমন অর্থনৈতিক কাযক্রমকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ঋণের ফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করছে। আর এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
তবে এই অর্থনীতিবীদ বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে এবং দেশের মোট ঋণের বড় অংশই আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া।’কিন্তু ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক শুধুমাত্র ঋণের কারণেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে, বলে মনে করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে মোদির চিঠি: মানবজাতি শিগগিরই মহামারি কাটিয়ে উঠবে
ওয়েবিনারে ঋণ বিষয়ক আলোচনার জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বর্তমান চলমান সম্পর্ক ও বাংলাদেশের প্রতি চীন সরকার ও জনগণের সমর্থনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি দুই দেশের সুসম্পর্ক বাংলাদেশকে আরও লাভবান করবে বলে আশ্বস্ত করেন।
বাংলাদেশের সুতোয় বাঁধবে চীন-ভারত সম্পর্ক
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশ চীনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় চীনা রাষ্ট্রদূত বেশ হৃদ্যতা প্রকাশ করেন। তার মতে, ভারতকে কখনও নিজেদের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেনি চীন।তিনি বলেন, ‘চীন কখনও ভারতকে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না। আমরা মনে করি আমাদের (চীন-ভারত) সম্পর্ক আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। তাই এটা কখনও ভাববেন না যে, ভারতের প্রতি চীনের বিদ্বেষমূলক মনোভাব রয়েছে। এমন কিছুই নেই।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘ মহাসচিবের হস্তক্ষেপ চায় বাংলাদেশ
ভারতের মানুষ ও এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে লি বলেন, ‘আমরা এখনও অনেক বিষয়ে একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। আর ঐতিহাসিক ভাবে গত দুই থেকে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুই অঞ্চলের মানুষের মাঝে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে। যেকোনও শিক্ষিত চীনা নাগরিকের ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আলাদা একটি শ্রদ্ধার জায়গা রয়েছে, যা কখনও জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি।’
ভারত সম্পর্কে চীনা রাষ্ট্রদূতের আলোচনার আলোকে কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান ২০০৪ সালে চীনের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই-এর (তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) সাক্ষাৎকার নেয়ার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ভারত-চীন সম্পর্কে মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই উত্তর দিয়েছিলেন- ভারত এবং চীনের মাঝে সেতু বন্ধন করতে পারে বাংলাদেশ।’
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন বাণিজ্যে স্বচ্ছতার আহ্বান বাংলাদেশের
প্রযুক্তির আদান-প্রদান
প্রযুক্তির আদান-প্রদান বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত লি জানান, বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে ব্যাপক হারে প্রযুক্তির আদান-প্রদান চলছে।এসময় উদাহরণ হিসেবে লি আরও জানান, বেশ কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের কাছ থেকে পোশাক আমদানি করতো না চীন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের এক নম্বর রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্প খাত চীনেও জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এখন চীনে পোশাক আমদানি করছে।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনাদের তৈরি পোশাক শিল্প খাত এখন এতটাই উন্নতি করেছে যে, বাংলাদেশের কাছ থেকে চীন গারমেন্টস পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয় যে, দুই দেশের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির আদান-প্রদান ঘটছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা দেবে জার্মানি
‘কোয়াড’ প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের ভাবনা
আলোচনার এক পর্যায়ে একজন আলোচক চীন বিরোধী আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারতের জোট- কোয়াড প্রসঙ্গ তুলে আনেন। এ বিষয়ে গত মে মাসে লি জিমিং এর মন্তব্য চীন-বাংলাদেশের মাঝে বেশ অস্বস্তির তৈরি করে।কোয়াড প্রসঙ্গ উঠে আসায় চৈনিক এই কূটনীতিক নিজের সাফাই দেয়ার সুযোগটি লুফে নিয়ে জানান, একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি শুধু এই জোটে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভাবনার কথা আলোচনা করতে চেয়েছিলেন।এসময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হবার পর এদেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে প্রথম যা জানতে পেরেছি, তা হলো বাংলাদেশ সকলের সাথে বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে এবং কারো সাথে বৈরিতায় জড়াতে চায় না। তাই আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ কোনও ক্ষুদ্র চক্রান্তকারী গোষ্ঠির সাথে জড়াবে না, বিশেষ করে কোনও যুদ্ধবাজ সামরিক জোটে।’
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনের জন্য চিকিৎসা সামগ্রী গ্রহণ করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিস্তা প্রকল্প
চীনের অর্থায়নে তিস্তার গভীরতা বাড়ানো প্রকল্পের ব্যাপারে লি জিমিং কে প্রশ্ন করা হয়।তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা প্রকল্পের ব্যাপারে যে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত সাধারণ মানের।চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রস্তাবনার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা প্রথমে একটি পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাই এর প্রতিবেদন তৈরি করুন। এর পরে আমরা এই প্রকল্প মূল্যায়নের কাজ শুরু করবো। এই প্রকল্পের অর্থনৈতিক, প্রকৃতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটগুলোও আমাদের যাচাই-বাছাই করতে হবে।’
কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
ভূ-রাজনীতির এই টানাপোড়েনের সময়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রেখে দুই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার বিষয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি অনলাইন সংলাপে তারা দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সকল সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীনের প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের অবস্থা মূল্যায়ন করেন এবং এই সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো চিহ্নিত করেন।
আরও পড়ুন: সন্ধান মেলেনি পদ্মায় নিখোঁজ চীনা প্রকৌশলীর
‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষৎতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক এই সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের এম চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
আরও পড়ুন: কসমস সেন্টারে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত
সম্পর্ক উন্নয়নে পাঁচ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ চীনা রাষ্ট্রদূতের
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং মূল বক্তব্যে বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে আমরা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্ব প্রত্যাশা করি।’ রাষ্ট্রদূত লি পাঁচটি বিষয় তুলে ধরেন যেখানে বাংলাদেশ ও চীন বর্তমান অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে পারে। এগুলো হলো মহামারি রোধে সহযোগিতা আরও বাড়ানো, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে এগিয়ে নেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা, তাৎক্ষণিক উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা এবং বহুপাক্ষিকতা বহাল রাখা।
চীনা রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, মহাসচিব শি জিমিংয়ের নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) শিগগিরিই তার শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে। বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী এবং আরও প্রাণবন্ত করতে সিপিসি বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: তিন নভোচারী নিয়ে চীনের প্রথম মহাকাশ যাত্রা
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া
উদ্বোধনী বক্তব্যে চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই রাষ্ট্র দুটির জনগণের মধ্যে যোগাযোগের যে ব্যাপ্তি ও প্রসার রয়েছে তা প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। এ সময় তিনি অনেক আগে তার নেওয়া চীনের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাক্ষাৎকারের কথা স্মরণ করেন।ওয়াং ইয়েকে অন্যতম জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, তিনি (ওয়াং ইয়ে) আমাকে বলেছিলেন, চীনের মূলনীতি হল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক সুশীল এবং উভয় পক্ষের অংশীদাররা এই সম্পর্ককে আরও প্রশস্ত ও গভীর করতে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী চীনের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যন্য রাষ্ট্রের অভূতপূর্ব উত্থানে এর প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “চীনের উত্থান সম্ভবত সমসাময়িক সময়ের বড় ঘটনা। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুততম সময়ে প্রথম হতে প্রস্তুত।
ড. চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চেয়ে চীনের দৃষ্টি আরও বেশিকিছুর দিকে। ভ্যাকসিন কূটনীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেটি জানান দিচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতিতে সর্বদাই উদীয়মান শক্তি এবং বর্তমানে এগিয়ে যাওয়াদের মধ্যে দ্বন্দ্বের আশঙ্কা থাকে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব আশা করে যে এ ধরনের সংঘাত এড়ানো যায় এবং শেষ পর্যন্ত বড় শক্তিগুলো যেমন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। চীনের স্বপ্ন বলতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যা বলেছেন তা এভাবেই বাস্তবায়িত হতে পারে।
আরও পড়ুন: ৯৭ ভাগ পণ্য রপ্তানিতে বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে চীন: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ভূ-রাজনৈতিক বিন্যাস
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কূটনীতিকে প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন হিসাবে এবং বিরোধ নিষ্পত্তির প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারে বিশ্বাসী। বাংলাদেশ পারস্পরিক লাভজনক এবং বহুপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক রক্ষায় সচেষ্ট। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ সার্মথ্য এবং সংকল্পের পরিচয় দিয়েছে।’
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিশ্লেষকরা অবশ্যই এই অঞ্চলের প্রতিযোগিতারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্ম্পকের ওপর দৃষ্টি রাখতে চান। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটিকে একটি স্বাস্থ্যকর বিকাশ হিসাবে দেখছি যা সকলের, বিশেষত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উপকার করতে পারে।’
যেহেতু রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তাই শমসের মনে করেন যে বিষয়টি সবার মাথায় রাখা খুব জরুরি। তিনি আরও বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ, এ ক্ষেত্রে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে আমরা যোগাযোগ বৃদ্ধিতে বিশ্বাসী। আমরা কেবল দ্বিপক্ষীয়ভাবে নয়, এশীয় প্রশান্ত মহাসগারীয় সীমান্তের ক্ষেত্রেও ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারিত্বে বিশ্বাসী।’তিনি রাষ্ট্রদূত লি এর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদকে ভ্যাকসিন আন্তর্জাতিকতায় প্রতিস্থাপন করা উচিত। ‘আমি মনে করি এই বিষয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং একসাথে আমাদের ভূমিকা পালন করতে হবে, কারণ ভাইরাস কমপক্ষে আরও বেশ কিছু সময়ের জন্য থাকবে।’
চীনা বিশেষজ্ঞ ড. জু বলেছেন, ‘সাধারণ লক্ষ্য এবং পারস্পরিক সুবিধার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিজস্বতা অর্জন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে আমরা চীনা ও বাংলাদেশিরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, ভরসাপূর্ণ বন্ধুত্ব ভাগ করে নিয়েছি; যা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করছে।’ ড. জু আশা প্রকাশ করেন যে সহযোগিতার অভিজ্ঞতা দু'দেশকে আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যাশার সাথে হাতে হাত রেখে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, চীন-বাংলাদেশের সম্পর্ককে ভূ-রাজনীতির টানাপোড়েনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া যাবে না, কারণ তাদের দূরদৃষ্টি অনুযায়ী আগামী দিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বেশি রাজনৈতিক সম্পর্কে পরিণত হবে। এই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্কের আওতায় কীভাবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নিজস্ব ভিত্তিতে রক্ষা করতে পারে তা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য নীতিনির্ধারণের স্বাধীনতা এবং নীতিনির্ধারণের সার্বভৌমত্ব আরও জটিল হবে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের ফলে চীনের অগ্রাধিকারযোগ্য বাজারে প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসের মাসব্যাপী ভার্চুয়াল চিত্র প্রদর্শনী ‘দ্য ব্ল্যাক স্টোরি’ শুরু
কূটনৈতিক সর্ম্পকের বাইরে
চীনা বিশেষজ্ঞ ড. নিং শেংনান বলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল হিসাবে আর্বিভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব কেবল তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যেই নয়, একই উন্নয়ন ফিলোসফির মধ্যে নিহিত। চীন এবং বাংলাদেশ উভয়ই শ্রমঘন শিল্প থেকে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বায়ন বিরোধী এই শক্তিশালী তরঙ্গের মুখোমুখি হয়ে চীন ও বাংলাদেশের যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান করা এবং একে রক্ষা করা প্রয়োজন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই পূর্বাভাস এমন একটি পথের সন্ধান দিচ্ছে যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীন ভবিষ্যতে চমৎকার সহযোগিতা প্রত্যাশা করতে পারে।
ড. রাশেদ আল তিতুমীর বলেন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য কমপক্ষে তিনটি প্রয়োজনীয় শর্ত রয়েছে যা হল: দুই দেশের মধ্যে উৎপাদন নেটওর্য়াক তৈরি, ঝুঁকি-ভাগ করে নেওয়ার ভিত্তিতে বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তির স্থানান্তর।সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’-বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, মর্যাদা ও আত্মসম্মান অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ-চীন: একই স্বপ্ন দেখে
চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান তার সমাপনী বক্তব্যে চীনের রোড এবং বেল্ট ইনিশিয়েটিভের কথা উল্লেখ করেন, যা দূর ও নিকটবর্তী দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশাল প্রতিশ্রুতি বহন করে। তিনি বলেন, সারাবিশ্বের মধ্যে চীনের উন্নয়ন বাংলাদেশিদের কাছে গর্ব এবং আনন্দের অন্যতম উৎস। আমরা জানি যে চীনের জনগণের একটি স্বপ্ন আছে; বাংলাদেশের জনগণেরও সেই স্বপ্ন রয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টায় রয়েছি আমরা।