চীন
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মতৈক্য ছাড়াই ভারতে জি-২০ বৈঠক শেষ
ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ অর্থনীতির প্রধানদের একটি বৈঠক কোনো ঐক্যমত্য ছাড়াই শেষ হয়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধের বর্ণনার একটি চূড়ান্ত নথিতে রাশিয়া এবং চীন আপত্তি জানিয়েছে।
শনিবার ভারতে ব্যাঙ্গালুরুতে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
ভারত আয়োজিত জি-২০ এর বৈঠকটির সভাপতির সারসংক্ষেপ এবং একটি ফলাফলের নথিতে বলা হয় ইউক্রেনে যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও চুক্তি ছিল না। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বার্ষিকীর প্রথম দিন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
সাতটি প্রধান শিল্পোন্নত দেশ শুক্রবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে। ঠিক সেসময় জি-২০ গ্রুপের আলোচনা ভারতীয় প্রযুক্তি কেন্দ্র বেঙ্গালুরুতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন রাশিয়ান কর্মকর্তাদের অংশগ্রহনে একই অধিবেশনে ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বেআইনি এবং অন্যায় যুদ্ধের’ নিন্দা একই সঙ্গে ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য এবং মস্কোর যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে বাধা দেয়ার জন্য জি-২০ দেশগুলোকে আরও কিছু করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার আহ্বান চীনের
গত নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে শেষ শীর্ষ জি-২০ বৈঠকে নেতারা যুদ্ধের তীব্র নিন্দা করে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে সংঘাত বিশ্বের অর্থনীতিতে ভঙ্গুরতাকে তীব্রতর করছে। এই গোষ্ঠীতে রাশিয়া এবং চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোও রয়েছে যাদের মস্কোর সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য রয়েছে।
ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সাংবাদিকদের বলেছেন যে বেঙ্গালুরু বৈঠকের জন্য প্রস্তুত করা বিবৃতিতে বালি ঘোষণার দুটি অনুচ্ছেদ রয়েছে। তবে রাশিয়া এবং চীন তাদের মুছে ফেলার দাবি করে বলেছে যে তারা এবার চূড়ান্ত নথির অংশ হতে পারবে না।
সীতারামন বলেছিলেন, তাদের বিরোধ ছিল তারা তখনকার পরিস্থিতিতে বালি ঘোষণা অনুমোদন করেছিল। ‘এখন তারা এটা চায়নি।’ এর বেশি কিছু তিনি জানাননি।
বালি ঘোষণায় বলা হয়েছে যে ‘বেশিরভাগ সদস্যরা ইউক্রেনে যুদ্ধের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং জোর দিয়েছিলেন যে এটি বিশাল মানবিক দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে বিদ্যমান ভঙ্গুরতাকে বাড়িয়ে তুলছে। এরমধ্যে রয়েছে- প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি, সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত করা, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকি।’
আরও পড়ুন: বুরকিনা ফাসোতে ৭০ জনের বেশি সেনা হত্যার দায় স্বীকার আইএসের
ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে: ‘অন্যান্য মতামত এবং পরিস্থিতি এবং নিষেধাজ্ঞার বিভিন্ন মূল্যায়ন ছিল। জি-২০ নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানের ফোরাম নয়, আমরা স্বীকার করি যে নিরাপত্তা সমস্যাগুলো বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি হতে পারে।’
ঘোষণার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ বলেছে, এখন রাশিয়া এবং চীনের কাছে অগ্রহণযোগ্য। ‘আন্তর্জাতিক আইন এবং বহুপক্ষীয় ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখা অপরিহার্য যেটি শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করে। ... পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকি অগ্রহণযোগ্য। দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধান, সংকট মোকাবিলার প্রচেষ্টা, সেইসঙ্গে কূটনীতি এবং সংলাপ অত্যাবশ্যক। এই সময় অবশ্যই যুদ্ধের নয়।’
সীতারামন বলেছিলেন যে রাশিয়া এবং চীনের আপত্তির কারণে বৈঠকটি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারেনি এবং একটি সারসংক্ষেপ এবং একটি ফলাফলের নথি বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন: মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করলো হংকংয়ের বেইজিং অফিস
মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করলো হংকংয়ের বেইজিং অফিস
একজন চীনা কূটনীতিক হংকংয়ে নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেলকে বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেছেন যে, মার্কিন কনসাল জেনারেলের কর্মকাণ্ডে তার শহরের স্বাধীনতা নষ্ট হচ্ছে এবং তিনি তাকে রাজনীতির ‘চূড়ান্ত সীমা’ লঙ্ঘন না করার জন্য সতর্ক করেছেন।
মার্কিন কনসাল জেনারেল গ্রেগরি মে গত মাসে একটি ভিডিও বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি হংকং-এর ক্রমহ্রাসমান স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে এর খ্যাতি আন্তর্জাতিক মান ও আইনের শাসন মেনে চলার ওপর নির্ভর করে।
হংকংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে কার্যালয়ের কমিশনার লিউ গুয়াংইয়ুয়ান সম্প্রতি তার ‘অনুপযুক্ত’ কথা ও কাজের বিষয়ে আপত্তি জানাতে মে-এর সঙ্গে দেখা করেছেন।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রশ্নের উত্তরে তার অফিস বলেছে, ‘লিউ হংকংয়ে মার্কিন কনসাল জেনারেল এবং মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেলের জন্য তিনটি চূড়ান্ত সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এগুলো হলো- চীনের জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করবে না, হংকংয়ে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশে জড়িত হবেনা এবং হংকংয়ের উন্নয়নের সম্ভাবনার বিষয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াবে না বা ক্ষতি করবে না।’
অফিস আরও বলেছে, লিউ মে-কে কূটনৈতিক নৈতিকতা মেনে চলারও আহ্বান জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন কনস্যুলেটের এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা সাধারণত ব্যক্তিগত কূটনৈতিক বৈঠকে মন্তব্য না করলেও, হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের অবক্ষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশ করতে তারা দ্বিধা করবে না।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার আহ্বান চীনের
মে, ইউএস সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে তার ভাষণে চীনের আইনসভার একটি সিদ্ধান্তের কথাও উল্লেখ করেন।
যাতে হংকংয়ের নির্বাহী শাখা সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে বিদেশি আইনজীবীরা শহরের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে জড়িত হতে পারবে কিনা।
শহরের শীর্ষ আদালত গণতন্ত্রপন্থী প্রকাশক জিমি লাইকে তার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একজন ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগের অনুমতি দেয়ার পরে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কারণ তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে।
লিউয়ের কার্যালয় মে-কে হংকংয়ে আইনের শাসন এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে। কেননা তিনি বেইজিংয়ের আইনি সিদ্ধান্ত এবং হংকংয়ের শাসন ব্যবস্থায় অন্যান্য পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য গণতন্ত্র চর্চাকারী দেশগুলো প্রাক্তন এই ব্রিটিশ উপনিবেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার ওপর চীনের আধিপত্যের সমালোচনা করেছে।
প্রযুক্তি ও বাণিজ্য, মানবাধিকার, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে হুমকি এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের দাবিসহ যেসব সমস্যা বেইজিং ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ককে চূড়ান্ত খারাপ করে তুলেছে হংকং তার মধ্যে অন্যতম।
আরও পড়ুন: দেশের আকাশসীমায় ১০টিরও বেশি মার্কিন বেলুন উড়েছে: চীন
চীনের বেলুন গোয়েন্দা সংকেত সংগ্রহ করতে সক্ষম: যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার আহ্বান চীনের
এবার রাশিয়ার পরিক্ষিত মিত্র চীন; ইউক্রেন ও মস্কোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাতের অবসানের জন্য ১২-দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে শান্তি আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার সকালে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিকল্পনায় রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অবসান, পারমাণবিক স্থাপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা, বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্য মানবিক করিডোর স্থাপন এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় শস্য রপ্তানি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।
চীন এই সংঘাতে নিরপেক্ষ থাকার দাবি করেছে, তবে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের ‘হ্রাস’ করতে এবং ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এমনকি চীন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সংঘাতে উসকানি দেয়ার অভিযোগ এনেছে এবং বলেছে তারা মূলত ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে এই সংঘাতকে টিকিয়ে রেখেছে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিরোধীতা করতে গিয়ে ক্রমেই চীন ও রাশিয়ার বৈদেশিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই সপ্তাহে মস্কো সফরের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলো শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ: বাংলাদেশসহ ৩২টি দেশ ভোট দেয়নি
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা সম্ভবত রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে তারা কোনও প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
চীনের এই অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তার দেয়া ১২-দফা প্রস্তাব নিয়ে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেয়ার কোনও আশা আছে কিনা- বা চীনকে নিরপেক্ষ ভাবা হচ্ছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রস্তাবটি প্রকাশের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চীন যে ইউক্রেনের শান্তির পক্ষে কথা বলা শুরু করেছে, আমি এটিকে খারাপ মনে করি না। আমাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত দেশ আমাদের অর্থাৎ ন্যায়বিচারের পক্ষে আসছে।’
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বৃহস্পতিবার বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে আলোচনা করবে, তবে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্কের ধরনই বলে দেয় যে চীন এ ক্ষেত্রে কোনওভাবেই একটি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি ন্যায্য এবং টেকসই শান্তি ছাড়া আর কিছুই চাই না ... তবে এই প্রস্তাবগুলো নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক হবে কিনা এ বিষয়ে আমরা সন্দিহান।’
শান্তি প্রস্তাবে প্রধানত সব দেশের ‘সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করার’- প্রয়োজনীয়তার উল্লেখসহ দীর্ঘকাল ধরে থাকা চীনা অবস্থানের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
এটিকে ‘স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতার’- অবসানও বলা হয়েছে। যেটি মার্কিন আধিপত্য এবং অন্যান্য দেশে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য এটি একটি আদর্শ শব্দ।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের খসড়া রেজ্যুলেশন: ইউক্রেনের শান্তি নিশ্চিত করতে হবে
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘একটি দেশের নিরাপত্তার বিনিময়ে অন্য একটি দেশ নিরাপত্তা পেতে পারে না এবং সামরিক ব্লকগুলোকে শক্তিশালী করে বা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষা করা যায় না।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সব দেশেরই যৌক্তিকভাবে নিরাপত্তা স্বার্থ ও উদ্বেগগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত এবং সঠিকভাবে তা সমাধান করা উচিত।’
বৃহস্পতিবার চীন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং রাশিয়ার প্রতি ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে পাশ হওয়া প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
চীন সেই ১৬টি দেশের মধ্যে একটি, যারা জাতিসংঘে ইউক্রেনের পক্ষে তোলা আগের পাঁচটি প্রস্তাবের প্রায় সবকটির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে বা ভোট দেয়ায় বিরত থেকেছে।
ইউক্রেন তার মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবারের প্রস্তাবটির খসড়া তৈরি করেছে। ১৪১টি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে এবং ৭টি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এসময় ৩২টি দেশ ভোট দেয়ায় বিরত ছিল।
যদিও চীন খোলাখুলি মস্কোর সমালোচনা করেনি, তবে তারা বলেছে যে সংঘাত তাদের ‘কাম্য নয়’ এবং বারবার বলেছে যে কোনওভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
এটি মূলত পুতিনের বক্তব্যের প্রতিউত্তরে বলা হয়েছে।
কেননা এর আগে পুতিন তার বক্তব্যে বলেছে, রাশিয়া তার ভূখণ্ড রক্ষা করার জন্য ‘সব ধরনের উপায়’- ব্যবহার করবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধে কেউই বিজয়ী হয়না।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সকল পক্ষের উচিত যুক্তিবোধ এবং সংযম বজায় রাখা... রাশিয়া ও ইউক্রেনের সমঝোতায় সমর্থন করা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুনরায় সরাসরি সংলাপ শুরু করা, ধীরে ধীরে সংঘাতের পরিস্থিতি হ্রাসের চেষ্টা করা এবং যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।’
আরও পড়ুন: রাশিয়ার নিকট যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দাবির জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ
চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বন্ধু: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বন্ধু।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুসহ অনেক বড় বড় স্থাপনা নির্মাণে চীন কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে আমাদের পাশে রয়েছে।
এছাড়া বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে প্রত্যাবর্তনে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
আরও পড়ুন: নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বড় ধরনের দুর্যোগে অনুসন্ধান ও উদ্ধারে সমন্বিত কার্যক্রমের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চীন সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে।
এই লক্ষ্যে চীন সরকারের সঙ্গে শিগগিরই বাংলাদেশ সরকারের একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করছি।
এসময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: দুর্যোগ মোকাবিলায় টেলিযোগাযোগ সেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ডব্লিউএফপিএ'র কান্ট্রি ডিটেক্টরের সাক্ষাৎ
দেশের আকাশসীমায় ১০টিরও বেশি মার্কিন বেলুন উড়েছে: চীন
চীন বলেছে, গত এক বছরে ১০টিরও বেশি মার্কিন হাই-অ্যালটিটিউড বেলুন বিনা অনুমতিতে তাদের দেশের আকাশসীমায় উড়েছে। বেইজিং বিশ্বজুড়ে নজরদারি বেলুনগুলোর একটি বহর পরিচালনা করছে বলে ওয়াশিংটনের এমন অভিযোগের পরই চীন এ দাবি করলো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুলি করে একটি সন্দেহভাজন চীনা গুপ্তচর বেলুন ধ্বংস করার পরে চীনের পক্ষ থেকে এ দাবি করা হলো।
সন্দেহভাজন চীনা গুপ্তচর বেলুনটি আলাস্কা থেকে দক্ষিণ ক্যারোলিনা অতিক্রম করেছিল। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে এই দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
সোমবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন অভিযুক্ত মার্কিন বেলুনগুলো সম্পর্কে জানালেও, এগুলো সম্পর্কে কোনও বিশদ বিবরণ দেননি। এমনকি কীভাবে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল বা এগুলোর সঙ্গে মার্কিন সরকারের বা সামরিক বাহিনীর কোনও সম্পর্ক ছিল কিনা তাও জানানো হয়নি।
আরও পড়ুন: বেলুন ইস্যুতে ব্লিঙ্কেনের চীন সফর বাতিল
ওয়াং তার প্রাত্যাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মার্কিন বেলুনগুলো অন্য দেশের আকাশসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশ করা সাধারণ ব্যাপার।’
তিনি বলেন, গত বছর থেকে, মার্কিন গোয়েন্দা বেলুনগুলো চীনের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ১০ বারের বেশি অবৈধভাবে চীনের আকাশসীমার ওপর দিয়ে উড়েছে।’
ওয়াং বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ‘প্রথমে নিজের কর্মকাণ্ডের বিচার করা এবং সংঘাত সৃষ্টি না করে মনোভাব পরিবর্তন করা।’
চীন বলেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংস করা বেলুনটি ছিল আবহাওয়া গবেষণার জন্য তৈরি একটি মনুষ্যবিহীন বিমান।
তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এটিকে গুলি করে অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখানোর অভিযোগ করেছে এবং এই প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিয়েছে।
ঘটনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার বেইজিং সফর বাতিল করেছেন।
এ ঘটনার আগে অনেকেই আশা করেছিলেন যে তাইওয়ান, বাণিজ্য, মানবাধিকার এবং বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা পদক্ষেপের হুমকির বিষয়ে সম্পর্কের তীব্র অবনতি এবার কিছুটা কমবে।
এছাড়াও, সোমবার ফিলিপাইন একটি চীনা উপকূলরক্ষী জাহাজকে একটি সামরিক-গ্রেড লেজার দিয়ে ফিলিপাইনের উপকূলরক্ষী জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করা এবং দক্ষিণ চীন সাগরে কয়েকজন ফিলিপিনো ক্রুকে সাময়িকভাবে অন্ধ করে দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
ফিলিপাইন এটিকে ম্যানিলার সার্বভৌম অধিকারের ‘স্পষ্ট’ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
ওয়াং বলেন, ফিলিপাইনের একটি উপকূলরক্ষী জাহাজ ৬ ফেব্রুয়ারি অনুমতি ছাড়াই চীনা জলসীমায় অনুপ্রবেশ করেছিল এবং চীনা উপকূলরক্ষী জাহাজগুলো ‘পেশাদারভাবে ও সংযমের সঙ্গে’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
চীন মৌখিকভাবে তার আশেপাশের সমস্ত কৌশলগত জলপথের মালিকানা দাবি করছে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তার সামুদ্রিক বাহিনী ও দ্বীপ ফাঁড়ি গড়ে তুলছে।
ওয়াং বলেছেন, ‘চীন ও ফিলিপাইন এই বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখছে।’
তবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ ঘটনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
অন্যদিকে, উত্তেজনা আরও বাড়াতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে রবিবার একটি মার্কিন যুদ্ধবিমান লেক হুরনের ওপর একটি ‘অজ্ঞাত বস্তু’কে লক্ষ্য করে গুলি করে।’
গত বৃহস্পতিবার বাইডেন প্রশাসন আমেরিকান ইউ-২ গুপ্তচর বিমানের ছবির কথা উদ্ধৃত করে বলে, তাদের ধ্বংস করা চীনা বেলুনটি ৪০টিরও বেশি দেশকে লক্ষ্যবস্তু করে গোয়েন্দা সংকেত শনাক্ত এবং তথ্য সংগ্রহ করছিল।
বেলুনকাণ্ডের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি চীনা সংস্থার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসও সর্বসম্মতভাবে চীনকে মার্কিন সার্বভৌমত্ব ‘লঙ্ঘন’ এবং ‘গোয়েন্দা অভিযান সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রতারিত করার চেষ্টা করা’র জন্য অভিযুক্ত করেছে।
চীনের মুখপাত্র ওয়াং এই অভিযোগকে ফের প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘বস্তুগুলোকে গুলি করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘন ঘন উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো।’
আরও পড়ুন: চীনের বেলুন গোয়েন্দা সংকেত সংগ্রহ করতে সক্ষম: যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্রের উপর চীনা বেলুন ধ্বংস করল, ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ
চীনের বেলুন গোয়েন্দা সংকেত সংগ্রহ করতে সক্ষম: যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে চীনা বেলুনটি ভূপাতিত করেছে সেটি মূলত একটি বিশাল আকারের সামরিক সুবিধাসংযুক্ত বিমান নজরদারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোয়েন্দা সংকেত শানাক্ত এবং সংগ্রহ করার জন্য সজ্জিত ছিল।
যা ৪০টিরও বেশি দেশকে লক্ষ্য বস্তু করেছিল বলে মার্কিন ইউ-২ গুপ্তচর বিমানের ছবি উদ্ধৃত করে বাইডেন প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে চীনা গুপ্তচর বেলুনের সন্ধান মিলেছে: পেন্টাগন
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বেলুনের একটি বহর পিপলস লিবারেশন আর্মির নির্দেশে পরিচালিত হয় এবং বিশেষভাবে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহৃত। যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ্যবস্তু থেকে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহের জন্য ডিজাইন করা উচ্চ প্রযুক্তির সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত। পাঁচটি মহাদেশের ওপর দিয়ে একই ধরনের বেলুন চলাচল করেছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার একটি বিবৃতি আটলান্টিক মহাসাগরে গত সপ্তাহান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূপাতিত বেলুনের সঙ্গে চীনের সামরিক বাহিনীকে সংযুক্ত করার সবচেয়ে বিশদ বিবরণ দিয়েছে। এই কর্মসূচির পরিধি ও সক্ষমতা সম্পর্কে জনসাধারণের বিবরণের উদ্দেশ্য ছিল বেলুনটি গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল বলে চীনের ক্রমাগত অস্বীকারকে অস্বীকার করা, যার মধ্যে বৃহস্পতিবার দাবি করা হয়েছিল যে বেলুন সম্পর্কে মার্কিন অভিযোগ গুলি তথ্য যুদ্ধের সমতুল্য।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
বেইজিংয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন তথ্য প্রকাশ করার আগে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জোর দিয়ে বলেছিলেন যে বিশাল মনুষ্যবিহীন বেলুনটি একটি বেসামরিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বেলুন।
আরও পড়ুন: পরিবেশ, সুশাসন ও মানবাধিকার পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশিদের সংবর্ধনা দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত
যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্রের উপর চীনা বেলুন ধ্বংস করল, ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ
বেলুন ইস্যুতে ব্লিঙ্কেনের চীন সফর বাতিল
বড় একটি চীনা বেলুন মার্কিন সামরিক স্থাপনায় নজরদারি চালানোর সন্দেহে কূটনৈতিক সম্পর্কে অনেকটা টানাপোড়েন শুরু হয়। ফলে চীনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন-এর সফর বাতিল করে দিয়েছে। তবে বলা হচ্ছে যে কোনও পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে এই জাতীয় কোনও পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি।
শনিবার সকালে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাস্তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন কখনোই কোনও সফর ঘোষণা করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের কোন ঘোষণা তাদের নিজস্ব ব্যবসা এবং আমরা এটিকে সম্মান করি।’
মার্কিন-চীন উত্তেজনা হ্রাস করার লক্ষ্যে আলোচনার জন্য ব্লিঙ্কেন রবিবার বেইজিং সফর করার কথা ছিল। গত নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় দেশগুলোর নেতাদের বৈঠকের পর এই ধরনের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর। কিন্তু চীনের দাবি যে এটি নিছক একটি আবহাওয়া গবেষণা ‘এয়ারশিপ’ ছিল। চীনের এমন দাবি সত্ত্বেও বিশাল বেলুন আবিষ্কারের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে ট্রিপটি বাতিল করে।
পেন্টাগন বেলুনটি নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে না চীনের এমন দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে এটির পর্যবেক্ষণের সীমিত ন্যাভিগেশন ক্ষমতা ছিল।
চীনা ইন্টারনেটে সেন্সরবিহীন প্রতিক্রিয়াগুলো সরকারি অবস্থানকে তুলে ধরেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতিকে খারাপের দিকে নিচ্ছে।
অনেক ব্যবহারকারী বেলুন নিয়ে রসিকতা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে যেহেতু মার্কিন প্রযুক্তি চীনা প্রযুক্তি শিল্পকে দুর্বল করার জন্য চীন যে প্রযুক্তি কিনতে সক্ষম তার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তাই তারা বেলুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
আরও পড়ুন: লাতিন আমেরিকার উপর দিয়ে উড়ছে আরেকটি চীনা গুপ্তচর বেলুন: পেন্টাগন
অন্যরা এটিকে একটি ‘ওয়ান্ডারিং বেলুন’ বলে অভিহিত করেছে যা ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ -২’ নামক সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত চীনা সাই-ফাই ফিল্মকে নির্দেশ করে।
এখনও অন্যরা এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ে মজা করার সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করছে। তারা বলছে যে তারা একটি বেলুনকেও থামাতে পারে না। জাতীয়তাবাদী প্রভাবশালীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উপহাস করতে সংবাদটি ব্যবহার করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। একজন রূঢ়ভাবে লিখেছেন: ‘বেলুনের ঘটনায় ব্লিঙ্কেনের চীন সফর পিছিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।’
সেন্সরশিপ বিষয়টিতে দৃশ্যমান ছিল। ওয়েইবোতে ‘ওয়ান্ডারিং বেলুন’ হ্যাশট্যাগটি শনিবার সন্ধ্যায় আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে চীনা গুপ্তচর বেলুনের সন্ধান মিলেছে: পেন্টাগন
তাইহে ইনস্টিটিউটের চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞ চেন হাওয়াং প্রধান জাতীয় টিভি চ্যানেল ফিনিক্স টিভিতে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে চীনের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে তুলে ধরেছে। বাস্তবে আমরা এই ধরনের সামরিক হুমকির মতো কিছু করিনি। সাধারণত আমাদের লক্ষ্য করে মার্কিন সামরিক হুমকির তুলনায় আপনি কি বলতে পারেন এটি সামান্য? তাদের নজরদারি বিমান, তাদের সাবমেরিন, তাদের নৌ জাহাজ সবই আমাদের সীমান্তের কাছাকাছি আসছে।’
প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মন্টানার উপরে বেলুনটি আগে দেখা গিয়েছিল, যা ম্যালমস্ট্রম এয়ার ফোর্স ঘাঁটিতে আমেরিকার তিনটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো ফিল্ড এলাকা।
প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বেলুনটিকে গুলি করতে অনুমতি দেয়নি। কারণ আশঙ্কা করেছিলেন যে ধ্বংসাবশেষ নীচের লোকেদের আহত করতে পারে। এদিকে, বাইনোকুলার এবং টেলিফটো লেন্স সহ লোকেরা আকাশে ‘গুপ্তচর বেলুন’ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিল যখন এটি ৬০ হাজার ফুট (১৮ হাজার ৩০০ মিটার) কানসাস এবং মিসৌরির উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চলেছিল।
পেন্টাগনও লাতিন আমেরিকার ওপর দিয়ে দ্বিতীয় বেলুন উড়ে যাওয়ার খবর স্বীকার করেছে। ‘আমরা এখন পরীক্ষা করছি এটি আরেকটি চীনা নজরদারি বেলুন।’ পেন্টাগন প্রেস সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে দ্বিতীয় বেলুন নিয়ে কোনও প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
ব্লিঙ্কেনের গত শুক্রবার বেইজিংয়ের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ত্যাগ করার কথা ছিল উল্লেখ করে বলেছিলেন যে তিনি সিনিয়র চীনা কূটনীতিক ওয়াং ইকে একটি ফোন কলে বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর বেলুন পাঠানো ‘একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ এবং (চীন) আমার সফরের প্রাক্কালে আমরা যে সারগর্ভ আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এই পদক্ষেপ তার জন্য ক্ষতিকর।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র: ব্লিঙ্কেন
চীন গুপ্তচরবৃত্তির দাবি অস্বীকার করে বলেছে এটি একটি বেসামরিক-ব্যবহারের বেলুন। যা আবহাওয়া গবেষণার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে তাদের প্রতিক্রিয়া কার্যকর ছিল।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেছেন যে অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ককে উৎসাহিত করবে না। বিশেষ করে চীনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছিল যে তারা বেলুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি এবং এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে মার্কিন মহাকাশে প্রবেশ করায় দুঃখ প্রকাশ করেছে।
শনিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবারও জোর দিয়ে বলেছেন যে বেলুন ওড়ানো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বেলুনের উপর ভিত্তি করে এটিকে ‘দোষারোপ’ না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ওয়াং বলেন, চীন সর্বদা আন্তর্জাতিক আইন কঠোরভাবে অনুসরণ করেছে। আমরা কোনো ভিত্তিহীন জল্পনা-কল্পনা ও প্রচার গ্রহণ করি না। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে হবে। সময়মত যোগাযোগ করতে হবে। ভুল ধারণা এড়াতে হবে এবং পার্থক্য নির্ণয় করতে হবে।’
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক আলফ্রেড উ বলেছেন, চীনের ক্ষমাপ্রার্থনা আন্তরিকভাবে দেখা যায়নি।
‘এরই মধ্যে, অদূর ভবিষ্যতে সম্পর্কের উন্নতি হবে না ... দুরত্বটি বিশাল।’
আরও পড়ুন: ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সোমবার ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক
চীনা ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়াল দ. কোরিয়া
চীনে চান্দ্র নববর্ষের ছুটির পর দেশটিতে কোভিড-১৯ এর বিস্তার আরও বাড়তে পারে-এই আশঙ্কায় ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত দেশটি থেকে স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণকারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।
জানুয়ারির শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়া চীনে তার কনস্যুলেটগুলোতে বেশিরভাগ স্বল্পমেয়াদী ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেয়। চীন ডিসেম্বরে হঠাৎ করে করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ শিথিল করে এবং নতুন মিউটেশনের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে দেশে ভাইরাসের বৃদ্ধির উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
চীন, হংকং এবং ম্যাকাও থেকে আসা সমস্ত যাত্রীদের তাদের আগমনের ৪৮ ঘন্টা আগে নেতিবাচক পরীক্ষার প্রমাণ জমা দিতে এবং তারা পৌঁছানোর পরে তাদের আবার পরীক্ষা করার জন্য বাধ্যতামূলক করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।
মূলত জানুয়ারি মাসের জন্য এই পদক্ষেপগুলো আরোপ করা হয়েছিল। যা দক্ষিণ কোরিয়ার স্বল্পমেয়াদী ভিসা আবেদন স্থগিত করে প্রতিশোধ নিতে চীনকে উসকে দিয়েছিল।
এমন একটি দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ জাগিয়েছিল যা চীনে রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি বৈঠকের পরে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ চীন থেকে স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণকারীদের ওপর করোনভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ আরও এক মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন: ছবিতে চীনা নববর্ষ
চীনের প্রধান শহরগুলোতে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব ধীর হয়ে যাওয়ার কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা এই সপ্তাহে শেষ হওয়া চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে বিশাল সমাবেশ এবং ক্রস-কান্ট্রি ভ্রমণের পরে ভাইরাল পুনরুত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন।
স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, চীনের কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে গেলে বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করার সম্ভাবনাটি উন্মুক্ত রাখেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এজেন্সির তথ্যানুসারে ২ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার(২৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত চীন থেকে আসা ছয় হাজার ৯০০ স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণকারীর প্রায় ১০ শতাংশ বিমানবন্দরে পরীক্ষা করার পর ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়।
বিদ্যমান ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর অনুমতি দেয়ার সময় সরকারি প্রয়োজন, কূটনৈতিক এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং মানবিক কারণ ছাড়া বেশিরভাগ স্বল্পমেয়াদী ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে চীনে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার কনস্যুলেট।
আরও পড়ুন: রাজাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় থাই যুবকের ২৮ বছরের কারাদণ্ড
আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে আরও চীনা বিনিয়োগের আশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
চীন আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অংশীদার হওয়ার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে নতুন রাষ্ট্রদূতের মেয়াদে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
বাংলাদেশে নবনিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সংযোগ এবং সাউথ সাউথ কোঅপারেশনসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় চীন বাংলাদেশে যে ‘মূল্যবান’ সহায়তা করেছে, তা স্বীকার করেছেন মোমেন।
তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে চীনের অব্যাহত সমর্থন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন করা দরকার এবং আশা প্রকাশ করেন যে প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু হবে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা রুশ জাহাজ গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিব্বতের তুষারধসে আরও লাশ উদ্ধার, মৃত্যু বেড়ে ২৮
চীনের তিব্বতের একটি মহাসড়কে শুক্রবারের দুর্ঘটনায় আরও লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ জনে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এ তথ্য জানিয়েছে।
দুর্ঘটনায় মহাসড়ক টানেলের বাইরে যানবাহনগুলো তুষারপাতে আটকে গিয়েছিল।
তিব্বতের দক্ষিণ-পশ্চিমে নাইংচি শহরকে একটি অন্য একটি প্রদেশের সঙ্গে সংযোগকারী টানেলের বহির্গমন এলাকার ছবিতে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি খনন যন্ত্র গভীর তুষার খনন করছে।
আরও পড়ুন: নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা: ডাটা বক্স ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছে
টেলিভিশনটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে উদ্ধার কার্যক্রমে প্রায় এক হাজার উদ্ধারকর্মী যোগ দিয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টানেলের মুখে প্রচুর তুষার ও বরফ ধসে পড়লে চালকরা তাদের যানবাহনে আটকা পড়ে।
রবিবার থেকে শুরু হওয়া চীনের চন্দ্র নববর্ষের ছুটিতে অনেক লোক বাড়ি ফিরেছিল।
নিংচি প্রায় ১০ হাজার ফুট (তিন হাজার ৪৮মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত। আঞ্চলিক রাজধানী লাসা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার এই মহাসড়ক পথ ২০১৮ সালে খুলে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৪ জন নিহত