বাঘ
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা দুটি বাঘের বিনিময়ে দুই জলহস্তী পাচ্ছে
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি হিসেবে আসছে দুটি জলহস্তী। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে জলহস্তী জোড়া আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
এর পরিবর্তে ঢাকা চিড়িয়াখানাকে দেওয়া হচ্ছে এক জোড়া বাঘ।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জলহস্তী রাখার জন্য তৈরি করা হচ্ছে নতুন খাঁচা।
আরও পড়ুন: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
দিন দিন দেশ বিদেশের বিচিত্র সব পশু-পাখিতে সমৃদ্ধ হওয়া চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এখন পর্যন্ত মোট ৬৮ প্রজাতির পশু-পাখি রয়েছে।
কুমিরের আগের জায়গায় নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে চিড়িয়াখানার নতুন অতিথি জলহস্তীর বাসস্থান। আর কুমিরের খাঁচা তৈরি করা হয়েছে পাহাড়ের পশ্চিম পাশে লেকের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে।
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা হচ্ছে এক জোড়া জলহস্তী। বিনিময়ে ঢাকা চিড়িয়াখানাকে দেওয়া হচ্ছে এক জোড়া বাঘ। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১৬টি বাঘ আছে।
চলতি বছর ১৬ মার্চ চট্টগ্রাম আনা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এক জোড়া সিংহ। একই সময় আনা হয় চার জোড়া ওয়াইল্ড বিস্ট।
দরপত্রের মাধ্যমে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকায় সিংহ, ম্যাকাও, ওয়াইল্ড বিস্ট, ক্যাঙ্গারু ও লামা আমদানি করা হয়। ফ্যালকন ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রাণীগুলো আমদানি করে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মোহাম্মদ বলেন, দুই দশক আগে মৃতপ্রায় এই চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের জন্য আনা হয়েছে ম্যাকাউ, সিংহ, ক্যাঙ্গারু, ওয়েলবিস্ট ও লামাসহ অনেক প্রাণী। জলহস্তী যুক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রাণীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬২০টিতে।
৩৪ বছর বয়সী এই চিড়িয়াখানায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৬৮ প্রজাতির পশু-পাখি রয়েছে। এর মধ্যে- ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৪ প্রজাতির পাখি ও চার প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী আছে। যা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে।
প্রতিদিন এই চিড়িয়াখানায় ৪-৫ হাজারের মতো দর্শনার্থী আসছেন। আর শুক্র ও শনিবারসহ যে কোনো বন্ধের দিনে তা ১০ হাজার পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নতুন অতিথি আফ্রিকার ২ সিংহ ও ৮ ওয়াইল্ড বিস্ট
করোনা: অনির্দিষ্টকালের জন্য মিরপুর ও রংপুর চিড়িয়াখানা বন্ধ
সুন্দরবনে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১১৪ টিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ ৫ বছরে সুন্দরবনের বাঘ বেড়েছে অনেক।
সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ রয়েছে বলে ক্যামেরা ট্রাকিং জরিপে উঠে এসেছে।
সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ম্য কমা এবং বনবিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
বিশেজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমিকে তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ করা গেলে দ্রুত বাঘের সংখ্যা আরও বাড়বে।
বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘ গণনার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পশ্চিম বিভাগের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে পূর্ব বিভাগে গণনার কাজ শুরু করা হবে। তবে পশ্চিম বিভাগে ক্যমেরা ট্র্যাকিং শেষে বাঘ বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করছে বন বিভাগ।
সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অবাধ বিচরণ ও প্রতিনিয়ত বাঘের শাবকের দেখা মিলছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে ও বাওয়ালীরা।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি এবং এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়।
১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান।
২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি।
১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের বাঘের মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন আব্দুল ওয়াজেদ
সুন্দরবনে অর্ধগলিত বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার
বন বিভাগ সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী বনস্টেশন অফিসের সদস্যরা সুন্দরবন থেকে একটি অর্ধগলিত বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।
রবিবার সকাল ৯টার দিকে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) নূর আলমের নেতৃত্বে বনকর্মীরা সুন্দরবনে কলাগাছিয়া সংলগ্ন মুরালী খাল নামক বনের ভিতর থেকে অর্ধগলিত বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের ফরেস্ট অফিসের কাছে ৩ বাঘ, আতঙ্কিত বনরক্ষীরা
বনস্টেশন কর্মকর্তা (এসও) নূর আলম জানান, সকালের দিকে জেলেদের কাছে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল থেকে একটি অর্ধগলিত বাঘের লাশ উদ্ধার করা হয়।
বাঘটি আনুমানিক এক মাস আগে মারা গেছে বলেও তিনি জানান।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) একেএম ইকবাল হোসেন চৌধুরী সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মৃত বাঘের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় শ্যামনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
তবে বাঘটি মৃত্যুর কারণ জানা যায় নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল ইসলাম বাদল সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মৃত বাঘ উদ্ধারের ঘটনায় শ্যামনগর থানায় জিডি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন থেকে গরু আনতে গিয়ে বাঘের মুখে কৃষক
বাঘের চামড়াসহ ২ চোরা শিকারী আটক
বাঘের চামড়াসহ ২ চোরা শিকারী আটক
সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়াসহ দুই বাঘ শিকারীকে আটক করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৬ খুলনার সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান অধিনায়ক কর্নেল মোসতাক আহমেদ।
অধিনায়ক জানান, সাতক্ষীরা ক্যাম্পের র্যাব গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী অবৈধভাবে কৌশলে শিকার করে সেসব চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চোরাচালানের মাধ্যমে পাচার করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার র্যাবের সাতক্ষীরা ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদে জানতে পারে, জেলার শ্যামনগর থানা এলাকায় পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বাঘের একটি চামড়া পাচার করার উদ্দেশে অবস্থান করছেন।
সেই সংবাদের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি গতকাল সন্ধ্যায় হরিণনগর ধল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে কুমিরসহ ১৮ বন্যপ্রাণী অবমুক্ত
তখন মো. হাফিজুর শেখ (৪৭) ও মো. ইসমাইল শেখকে (২৪) আটক করা হয়।
এ সময় উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আটক করা আসামিদের কাছ থেকে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা স্বীকার করেছেন মাছধরা ও গোলপাতা সংগ্রহের পাশ নিয়ে সুন্দরবনে যান। পরে ছাগলের মাংসের সঙ্গে কীটনাশক ব্যবহার করে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী শিকার করেন।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া দেশে ও দেশের বাইরে শৌখিন মানুষদের কাছে কোটি টাকায় বিক্রয় করেন।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ লাখ টাকার লোভে আসামিরা মাছ ধরা ও গোলপাতা সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করে। এরপর ছাগলের মাংসের সঙ্গে বিষাক্ত কীটনাশক মিশিয়ে বাঘসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী শিকার করে।
এছাড়া গত ২৭ জানুয়ারি শ্যামনগর এলাকা থেকে বাঘটি শিকার করে তারা। পরে চামড়া ছাড়িয়ে পাচারকারীর কাছে সরবরাহের চেষ্টা করছিল তারা।
তিনি জানান, র্যাব-৬ সাতক্ষীরার কমান্ডার মেজর গালিব অভিযান চালিয়ে বাঘের চামড়াসহ তিনজনকে আটক করেন। পরে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দু’জনকে আটক করা হয়। বাকি একজনকে মুচলেকায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের ফরেস্ট অফিসের কাছে ৩ বাঘ, আতঙ্কিত বনরক্ষীরা
সুন্দরবনের ফরেস্ট অফিসের কাছে ৩ বাঘ, আতঙ্কিত বনরক্ষীরা
সুন্দরবনের সুপতি স্টেশনাধীন চান্দেশ্বর ফরেস্ট অফিস এলাকায় তিনটি বাঘের উপস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বনরক্ষীরা। শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে দুটি বাঘ ওই অফিস প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে এবং শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল পর্যন্ত বাঘগুলো বনে ফিরে যায়নি।
গত ২৪ ঘণ্টা ধরে বাঘগুলো একই স্থানে ঘোরাঘুরি করছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। এই অবস্থায় ওই ক্যাম্পের ৫ বনরক্ষী আতঙ্কিত হয়ে অফিসেই অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় লোকালয়ে বাঘ, আতঙ্কে গ্রামবাসী
চান্দেশ্বর ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ইনচার্জ ফারুক জানান, শুক্রবার দুপুরে আসা দু’টি বাঘের সঙ্গে রাতে আরও একটি যোগ দিয়েছে। রাতে বনরক্ষীরা পুকুর পাড়ে টর্চ লাইটের আলো জ্বেলে তিনটি বাঘের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন। সকালেও বাঘ তিনটি পুকুর পাড়ের অদূরে বনে ঘোরাঘুরি করছিল। এখনও বাঘগুলো অফিসের দক্ষিণ পাশে নদী তীরে অবস্থান করছে।
তিনি জানান, বনরক্ষীরাও সতর্ক অবস্থানে থেকে বাঘের গতিবিধি লক্ষ্য করছেন।
এ ব্যাপারে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সামসুল আরেফীন জানান, এই সময়টা বাঘের প্রজননকাল। তাই সঙ্গীসহ বাঘগুলো নিজের মতো করে চলাচল করছে। তাদের কোনো ক্ষতি না করতে বনরক্ষীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত
মতলবে খাঁচায় বন্দি মেছো বাঘ, জনমনে আতঙ্ক
অর্থসংকটে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত মৌয়ালদের পরিবার
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যতিন্দ্রনগর গ্রামের হালিমা খাতুন।
২০০৬ সালে বন বিভাগ থেকে পাশ দিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য যান তার স্বামী গোলাম গাজী। দু’দিন পরে খবর আসে গোলাপ গাজী বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এর কয়েকদিন পরে তার ছিন্ন-বিছিন্ন লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে তার সঙ্গে যাওয়া অন্য মৌয়ালরা।
সেই থেকে হালিমা খাতুন তার ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে বাস করছেন। বর্তমানে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তার ছেলে।
স্বামীকে হারিয়ে ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন হালিমা খাতুন।
সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের হাতে প্রাণ হারানো অপর ব্যক্তি শ্যামনগরের গাবুরা গ্রামের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন।
মোশাররফের মা খালেদা বেগম ইউএনবিকে জানান, ২০১২ সালে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন মোশাররফ।
একই উপজেলার হরিনগর গ্রামের সুন্নত আলী শেখের স্ত্রী কোহিনূর বেগম জানান, ২০১৪ সালে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি তার স্বামী সুন্নত আলী শেখ।
তিনি জানান, পরে শুধু তিনি শুনেছেন, তার স্বামীকে বাঘে খেয়েছে। আর কোনো সন্ধান তিনি পাননি তার প্রিয় স্বামীর।
অন্যদিকে নিহত মৌয়াল শ্যামনগরের কাউসার গাইনের ভায়রা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চলতি বছরের ২০মে বাঘের আক্রমণে মারা যান কাউসার।
একইভাবে ২০২১ সালে প্রাণ হারান হাবিবুর মোল্লা ও জিয়াউল ইসলাম নামের দুজন মৌয়াল।
গত এক দশকে ছয়জন মৌয়াল সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এরা সকলেই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বাসিন্দা।
নিহতদের কোন পরিবার আর চায়না তাদের পরিবারের কেউ আর সুন্দরবনের সঙ্গে জড়িত থাকুক।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় লোকালয়ে বাঘ, আতঙ্কে গ্রামবাসী
সুন্দরবন বাংলাদেশ তথা বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন। দেশের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলা নিয়ে বিস্তৃত এ বন। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। যার মধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার, আর ভারতের পশ্চিম বাংলায় রয়েছে প্রায় ৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য সুন্দরবন বিখ্যাত। এ ছাড়া হরিণ, বানর, কুমির সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও রয়েছে এ বনে।
সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদীতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার মাছ। আর রয়েছে মধু, এ বনের মধু পৃথিবী বিখ্যাত।
পর্যটকদের জন্য বরাবরই সুন্দরবন একটি আকর্ষণীয় জায়গা। আর পদ্মাসেতু হওয়ার পর পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধু পর্যটন নয়, এই বনকে ঘিরে কয়েক লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ বনজীবী, জেলে বা মংস্য সংগ্রহকারী আবার কেউ মৌয়াল বা মধু সংগ্রহকারী।
এই সুন্দরবনকে ঘিরে অনেকে যেমন জীবিকা নির্বাহ করে তেমনি অনেকে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের শিকার হয়েছেন বা আক্রমণে মারা গেছেন। এদের অধিকাংশই ছিল মৌয়াল।
সম্প্রতি প্রথমবারের মতো খুলনায় মৌয়াল, চাষি, বণিক, গবেষক ও ভোক্তা জাতীয় জোটের উদ্যোগে বাঘের আক্রমণে নিহত মৌয়ালদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
এসময় মেয়র বলেন, মৌয়াল, চাষি, গবেষক ও ভোক্তা জাতীয় জোট বাঘের আক্রমণে নিহতদের পরিবারকে অর্থিক সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, মৌয়াল, চাষি, গবেষক ও ভোক্তা জাতীয় জোটের এই সহযোগিতা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. মো. মোহসীন হোসেন বলেন, মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে যারা নিহত হন, বন বিভাগ তাদের বিষয়ে সচেতন।
তিনি আরও বলেন, বন বিভাগ সবসময়ই তাদেরকে সহযোগিতা করে থাকে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত
সুন্দরবনে বাঘের হামলায় নিহত জেলের মরদেহ উদ্ধার
সুন্দরবনে বাঘ স্থানান্তর করতে চায় বন বিভাগ
বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে বাঘের অবাধ বিচরণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নিজেদের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন হওয়ায় বাঘ রোগাক্রান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আন্তঃপ্রজনন রোধ করতে সুন্দরবনের মধ্যে বাঘ স্থানান্তর করতে চায় বন বিভাগ।
এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনের মধ্যে শিপশা, পশুর ও পাঙ্গাশিয়াসহ বড় বড় নদীর কারণে বাঘ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সুন্দরবনের কিছু অংশে বাঘের ভ্যারাইটি কমে গেছে। ফলে নিজেদের মধ্যে বাঘের আন্তঃপ্রজনন হচ্ছে। আন্তঃপ্রজননের কারণে বাঘ নানা ভাবে দুর্বল এবং রোগাক্রান্ত হচ্ছে। সুন্দরবনের একস্থান থেকে নিয়ে অন্য স্থানে বাঘ স্থানান্তর করা গেলে প্রজননের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন।
‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুক্রবার (২৯ জুলাই) বাগেরহাটে সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় আলাদা ভাবে বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, শতবছরে বিশ্বের বনাঞ্চল থেকে বাঘের সংখ্যা এক লাখ থেকে কমে মাত্র চার হাজারের নিচে দাঁড়িয়েছে। বাঘের আটটি উপ-প্রজাতির তিনটি এরইমধ্যে বিশ্ব থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগেও বিশ্বের মাত্র ১৩টি দেশে বাঘ ছিল। সেখান থেকে আরও একটি দেশ বাঘ হারিয়েছে। এখন বাংলাদেশসহ মাত্র ১২টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। সারা বিশ্বের বন উজাড়, চোরশিকারি ও পাচারকারিদের কারণে বাঘ মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বর্তমানে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের আনাগোনা দেখা গেছে। পর্যটক এবং বন বিভাগের সদস্যদের নজরে পড়ছে বাঘ ও তার বাচ্চা। এ অবস্থায় সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিচরণের খবর আশার আলো জাগিয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, বাঘের আটটি উপ-প্রজাতির মধ্যে ইতোমধ্যে বালিনীজ টাইগার, জাভানীজ টাইগার ও কাম্পিয়ান টাইগার বিশ্ব হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে পাঁচটি উপ-প্রজাতি কোন রকম টিকে আছে। সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার ও আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরিত প্রটোকল অনুসারে সুন্দরবনে বাঘ রক্ষার জন্য বন বিভাগ কাজ করছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে টাইগার অ্যাকশান প্লান নামে ১০ বছর মেয়াদি প্লানের আওতায় বাঘ রক্ষায় কাজ চলছে।
জানা গেছে, দেশে বাঘের একমাত্র আবাসস্থল সুন্দরবন। চোরাশিকারীচক্র ও জলদস্যু-বনদস্যুদের তৎপরতার কারণে কয়েক বছর আগেও সুন্দরবনে অনেকটা হুমকির মুখে ছিল বাঘ। দস্যুরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায়, বিগত কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনে দস্যুতা প্রায় শুন্যের কোঠায়। এছাড়া চোরাশিকারিদের তৎপরতাও কমে এসেছে। একারণে সুন্দরবনে বাঘ অনেকটা সুরক্ষিত এবং বাঘের বিচারণ ক্ষেত্র নিরাপদ বলে মনে করছে বন বিভাগ।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি গণনা করা হবে হরিণ ও শূকর
বন বিভাগ জানায়, ২০১৩-২০১৫ সালে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রথম জরিপ করে বাঘ পাওয়া গেছে ১০৬টি। দ্বিতীয় বার ২০১৭-২০১৮ একই পদ্দতিতে জরিপ করে সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে বাঘের ১১৪টি সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়।
জানা গেছে, সুন্দরবনের মোট আয়াতন ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে সুন্দরবনের মোট আয়াতনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আর গোটা সুন্দরবন জুড়েই রয়েল বেঙ্গল টাইগার কম বেশি বিচরণ করে থাকে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে নানা ভাবে প্রায় অর্ধশত বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২২ টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা ১১টি বাঘের চামড়া এবং বাঘের অঙ্গপ্রতঙ্গ উদ্ধার করে।
বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোংলা উপজেলার দেলোয়ার হোসেন, জামাল হোসেন, ইউসুফ আকনসহ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সম্প্রতি তারা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় নদী-খালের চড়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছে। মাঝে মধ্যে তাদের কানে বাঘের ডাক ভেসে আসে।
বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী আরও জানান, চোরাশিকারী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে সুন্দরবনে বাঘ হুমকির মুখে রয়েছে। বাঘের আবাস্থল নিরাপদ রাখতে বন বিভাগ কাজ করছে।
বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর তথ্যমতে, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের পর সুন্দরবনে আর বাঘ গণনা হয়নি। সম্প্রতি সুন্দরবন ‘বাঘ সংরক্ষণ’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন হলেও এখন পর্যন্ত অর্থবরাদ্ধ পাওয়া যায়নি। অর্থবরাদ্ধ পাওয়া গেলে চলতি বছরের শীত মৌসুমে সুন্দরবনে বাঘ গণনার কাজ শুরু করা হবে। নতুন করে বাঘ গণনা হলে জানা যাবে সুন্দরবনে বাঘের সঠিক সংখ্যা।
বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনে বাঘের ধারণক্ষমতা ২০০টি। বাঘের বর্তমান সংখ্যা থেকে ২০০টিতে উন্নীত করতে বন বিভাগ নানা উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করছে। বাঘসহ সব ধরণের বন্যপ্রাণির প্রজনন নির্বিঘ্নে করতে জুন, জুলাই ও আগস্ট-এই তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক ও জেলেসহ সব ধরণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তবে সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে পর্যটক ও বনের স্টাফরা ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের বাঘ দেখেছে। একই সাথে বনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের চিহ্ন দেখা গেছে; এতে করে মনে হচ্ছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন আরও জানান, বাঘ শিকারিদের তৎপরতা রুখে দিতে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি স্মার্ট পেট্রোল চলছে সুন্দরবনে। বন বিভাগের পাশাপাশি সিএমসি, সিপিজি ও বিটিআরসি নিয়মিত সুন্দরবন বাউন্ডারি এলাকায় নিয়মিত টহল দেয়।
বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষ্যে বাগেরহাটে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় পৃথক র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। চাঁদপাই রেঞ্জে বাঘ দিবসের আলোচনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ২১ বছরে ৪০ বাঘের মৃত্যু
বাঘ সংরক্ষণে সুন্দরবনে মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে: পরিবেশ উপমন্ত্রী
সাতক্ষীরায় লোকালয়ে বাঘ, আতঙ্কে গ্রামবাসী
সুন্দরবন সংলগ্ন জনবসতি এলাকায় বাঘের দেখা পাওয়ার পর থেকে শ্যামনগর উপজেলার গোলাখালী দ্বীপে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
রবিবার গ্রামের রফিকুল নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন চিংড়ির খামারের কাছে বাঘটিকে ঘুরে বেড়াতে দেখে স্থানীয়রা। বাঘটি সেখানে প্রায় ২০ মিনিটের মতো ছিলো বলে জানা গেছে।
গ্রামের বাসিন্দা ভোলানাথ মণ্ডল বলেন,‘বাঘের ভয়ে কেউ এখন তাদের ঘর থেকে বের হতে সাহস করছে না।’
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, গ্রাম্য টাইগার রেসপন্স ফোর্স এবং বন বিভাগের একটি যৌথ দল ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখছে। তবে গ্রামের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি গণনা করা হবে হরিণ ও শূকর
সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি গণনা করা হবে হরিণ ও শূকর
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি হরিণ ও শূকর গণনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন।
‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ এর আওতায় এটি করা হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং প্রকল্পটির সময় চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত।
এর আগে ২৩ মার্চ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়।
বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের ইউএনবিকে বলেন, বনের অভয়ারণ্য ও অভয়ারণ্য এলাকার বাইরে এই বাঘ শুমারি করা হবে। বনের কম, মধ্যম ও বেশি লবণাক্ত সব এলাকাই জরিপের আওতায় আসবে।
তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের লক্ষ্য বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা এবং তাদের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা প্রণয়ন করা।’
তিনি জানান, বাঘ প্রধানত হরিণ, শূকর, বানর ও কাঁকড়া খায়। তাই প্রকল্পটির আওতায় এগুলোও জরিপের আওতায় আনা হবে। তবে তা করা হবে শুমারির শেষের দিকে ২০২৪ সালে।’
২০১৮ সালে করা সর্বশেষ জরিপ অনুয়ায়ী, বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ১১৪টি যা ২০১৫ সালে ছিল ১০৬টি।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে পর্যটন: সেবা কার্যক্রম উন্নত করতে অটোমেশনের দিকে নজর
সুন্দরবন বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের সময় বাঘের আক্রমণে এক মৌয়াল নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সাতক্ষীরা রেঞ্জের কাচিকাটা এলাকায় সকাল ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মৌয়াল সালাইমান শেখ (৫০) শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের গোদাড়া গ্রামের আনছার আলী শেখের ছেলে।
বনবিভাগ বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন অফিসার (এসও) নূরআলম জানান, সপ্তাহ খানেক আগে বুড়িগোয়ালিনী বন অফিস থেকে মধু সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বনের ভেতরে যায় সোলাইমান শেখসহ তার কয়েকজন সঙ্গী। শুক্রবার সকালে কাচিকাটা এলাকায় তিনি বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) এম.এ হাসান জানান, সোলাইমান শেখকে তার মৌয়াল সহকর্মীরা উদ্ধার করেছে। তার লাশ লোকালয়ে না আনা পর্যন্ত কোন কম্পার্টমেন্টে মারা গেছেন তা বলতে পারছিনা। তবে, যেহেতু তিনি বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে বনে গিয়েছিলেন, বিধি অনুযায়ী তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবেন।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ২১ বছরে ৪০ বাঘের মৃত্যু
সুন্দরবনে মৃত বাঘ উদ্ধার