অগ্নিকাণ্ড
রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ডে মা-ছেলে দগ্ধ
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বাড়িতে আগুন লেগে ৪৬ বছর বয়সী এক নারী ও তার ২৫ বছর বয়সী ছেলে গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন।
দগ্ধরা হলেন- আম্বিয়া খাতুন ও তার ছেলে কাজল।
দগ্ধদের মধ্যে মা আম্বিয়া শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তার শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে এবং কাজলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া এবং হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ি।
আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটি শহরে অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ ১৩ দোকান ভস্মীভূত
আম্বিয়ার পরিবারের সদস্য ও পুলিশ জানায়, সকাল ৬টার দিকে নবীনগর হাউজিং সোসাইটির টিনশেডের ঘরে আম্বিয়া চুলা জ্বালানোর চেষ্টা করলে আগুন লেগে যায়, এতে তিনি দগ্ধ হন। কাজল তার মাকে বাঁচাতে গিয়ে আগুনে সামান্য আহত হন।
রাঙ্গামাটি শহরে অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ ১৩ দোকান ভস্মীভূত
রাঙ্গামাটি শহরের কলেজ গেইট এলাকায় আগুন লেগে দুইটি বসত ঘরসহ ১৩ দোকান পুড়ে গেছে। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. রফিকুজ্জামান বলেন, রাত ৩টার দিকে শহরের কলেজ গেইট মসজিদের সামনে একটি দোকানে আগুন লাগে। আমরা ৩টা ১০ মিনিটে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাই এবং দুটি ইউনিট এক ঘণ্টা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৩টি দোকান ও দুটি বসত ঘর পুড়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুর মার্কেটে আগুন লেগে পুড়ল ১২ দোকান
তিনি বলেন, কোনো কারণে আগুন নেভাতে দেরি হলে কয়েকশ বাড়ি-ঘর পুড়ে যেতো। তাছাড়া তৎক্ষণিকভাবে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি তিনি।
তবে স্থানীয়দের দাবি প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গাজীপুরে আগুনে পুড়ল ৩০ ঘর
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় শনিবার সকালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ঘটে। এতে অন্তত ৩০টি ঘর পুড়ে গেছে।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.সাইফুল ইসলাম জানান, শনিবার সকালে উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় একটি কলোনির ঘরে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে মুহূর্তেই আগুন কলোনির অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আরও পড়ুন: ডিপোতে বিস্ফোরক ছিল না, আগুন নাশকতা কি না তদন্তে বেরিয়ে আসবে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৩০টি ঘর ও ঘরে থাকা মালামাল পুড়ে যায়।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন বানচালের ষড়যন্ত্র নস্যাতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন: প্রধানমন্ত্রী
বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন বানচালের লক্ষ্যে এর বিরোধীরা কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এত বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে যে কাজটা আমরা সম্পন্ন করেছি, যারা এর বিরোধিতা করেছিল, তাদের কিন্তু একটা উদ্দেশ্য আছে। কিছু কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি, যেমন এমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে যাতে ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধন অনুষ্ঠান যেন করতে না পারি।’
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বর্ষাকালে অন্তত তিনটি করে গাছ লাগান: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার বন্ধু হিলারি ক্লিনটনের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়, তখন তার সরকার ঘোষণা করে যে তারা নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করবে।
‘সে সময়, অনেকে ভেবেছিল যে আমরা এটি করতে পারবো না। কিন্তু আমরা এটা করেছি,’ বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি দেশের বৃহত্তম বহুমুখী সড়ক-রেল সেতু উদ্বোধনের আগে নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে সতর্ক থাকতে এবং দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: উদ্বোধনকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেন, লঞ্চ ও ফেরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি সীতাকুণ্ডে যে আগুন সেটা কিন্তু..একটা জায়গায় আগুন ধরে। কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় আগুন ধরে কি করে? আর রেলের আগুনটা, এটা কিন্তু আমি একটা ভিডিও পেয়েছি. নিচের দিকে রেলের চাকার কাছ থেকে আগুন জ্বলছে। এটা কি করে হয়? সমস্ত জিনিস রহস্যজনক। কাজেই সবাইকে বলব, একটু সতর্ক থাকতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে, নিরাপত্তা দিতে হবে।’
‘সুতরাং, আমি সবাইকে সতর্ক থাকতে, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকে মনোযোগ দিতে এবং এগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলছি,’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু মর্যাদার প্রতীক, এর ওপর অনেকটাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে: জয়
অগ্নিকাণ্ডে নাশকতার যোগ থাকতে পারে: তথ্যমন্ত্রী
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো এবং পরবর্তীতে একাধিক ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতার বিষয়টি স্পষ্টতর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছিলোম যে, সেখানে নাশকতা ছিল কি না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার, আস্তে আস্তে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। আপনারা জানেন, সিলেটের ট্রেনে আগুন লেগেছে টয়লেট থেকে, তারপর দাঁড়ানো অবস্থায় খুলনাগামী ট্রেনে আগুন লেগেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এগুলোর সাথে নাশকতার যোগ আছে। আসলে সারাদেশে যে আনন্দ-উল্লাস, তা ম্লান করার জন্য, দেশে একটি আতঙ্ক তৈরি করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’
‘যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, গুজব রটিয়েছে, বিভিন্ন সময় গুজব রটায় তারাই এই কাজগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের মাধ্যমে সেটি আরও স্পষ্ট হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এগুলোর সঙ্গে নাশকতার যোগ আছে।’
এর আগে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স -এটকো’র পক্ষ থেকে সহসভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে ছয় দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকপত্র হস্তান্তর করেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদিজা বেগম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪
আইন অনুযায়ী অনলাইন নিউজ পোর্টাল টক শো ও বুলেটিন প্রচার করতে পারে না: তথ্যমন্ত্রী
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: বিএম কন্টেইনার ডিপো থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার
সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আট দিন পর সোমবার পুলিশ ডিপোর ভেতর থেকে মানুষের দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে। সোমবার কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সুমন বণিক জানান, কন্টেইনারগুলো অপসারণের সময় বিকাল ৪টার দিকে ডিপো থেকে একটি মানুষের মাংসসহ একটি হাড় উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, মানবদেহটির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, সোমবার সীতাকুণ্ড ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি জানিয়েছে শ্রমিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্কপের সমন্বয়ক তপন দত্ত বলেন, ‘আমরা বন্দর শহর ও আবাসিক এলাকা থেকে সব ডিপো স্থানান্তর করতে চাই।’
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: ফায়ার সার্ভিসের আরও এক কর্মীর মৃত্যু
রবিবার চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আহত দুই ব্যক্তি মারা যাওয়ায় বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৭-এ পৌঁছেছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফায়র সার্ভিসের ১০ জন সদস্য মারা গেছেন। একক ঘটনায় এটিকে ফায়ার সার্ভিসের ‘সবচেয়ে বড় মৃত্যুর পরিসংখ্যান’ বলা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও পরবর্তী বিস্ফোরণে ২০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে মামলা
কোন ধরনের আগুন কীভাবে নেভাবেন?
আগুনের ব্যবহারের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিলো মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ। কিন্তু শক্তির এই উৎসটিই হতে পারে মানুষের প্রাণনাশের কারণ। এর ভয়াবহতার পরিধি অবলোকন করা যায় ইতিহাস জুড়ে ধ্বংস যজ্ঞগুলোর দিকে ফিরে তাকালে। তাছাড়া সভ্যাতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নিয়ন্ত্রণহীনতা, অসাবধানতা ও অপপ্রয়োগের ঘটনা। ফলশ্রুতিতে, বহু উপকারের এই শক্তির উৎসটির কবল থেকে বাঁচার জন্য বের করতে হচ্ছে নানা উপায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘন ঘন আগুন লাগার দুর্ঘটনাগুলোর কারণে আগুন নেভানোর উপায়গুলো জানা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলুন, এই দুর্ঘটনাগুলোর সম্ভাব্য কারণসহ জেনে নেই বিভিন্ন ধরণের আগুন নেভানোর উপায়সমূহ।
আগুনের উৎপত্তির সাধারণ কারণ সমূহ
পুড়ে ছাই বা কয়লা হওয়া জিনিস
কাঠ, বাঁশ, প্লাস্টিক, কাগজ, পোশাক, মোমবাতি ও আবর্জনার মত কঠিন দাহ্য বস্তুগুলো এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত। এগুলো থেকে সৃষ্ট আগুন খুব সাধারণ এবং প্রাথমিক বা ক্ষুদ্র পরিসরে এগুলো তেমন ঝুঁকিপূর্ণ হয় না। খুব ছোটখাট ব্যাপার থেকে এই আগুনের সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে কয়লা বা ছাই হওয়ার জিনিসের সংস্পর্শে কোন দাহ্য বস্তু আসাও অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টির কারণ হতে পারে। এই ক্যাটাগরির সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড হলো বজ্রপাতের ফলে সৃষ্ট আগুন।
মানুষের চলাচলের বাইরে বড় ডাস্টবিনে সৃষ্ট হওয়া আগুন ক্ষতির কারণ হয় না। অনেক সময় আপনাতেই নিভে যায় বা কেউ খুব সহজে নিভিয়ে দেয়। তবে এক জায়গায় বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকায় এখানে দীর্ঘক্ষণ ধরে জ্বলতে থাকা আগুন পরবর্তীতে লেলিহান শিখার জন্ম দিতে পারে। বাসা-বাড়ির চুলা বা গ্রামাঞ্চলের মাটির চুলার আগুনের সঙ্গে অন্য কোন দাহ্য বস্তুর সংস্পর্শ থেকে ছড়ানো আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
আরও পড়ুন: এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে কি করবেন ? এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
তেল ও তেলজাত তরল
তেল থেকে সৃষ্ট আগুনের নেপথ্যে থাকে আলকাতরা, অ্যালকোহল, পেট্রোলিয়াম গ্রীস, পেইন্ট বা তেলজাত রং, পেট্রল, ও কেরোসিন। এগুলো থেকে সৃষ্ট আগুন যে কোনও জায়গায় লাগতে পারে। তবে গুদাম ঘরের মতো জায়গায় যেখানে একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য তরল থাকে এমন জায়গায় অধিকাংশ অগ্নিকান্ড ঘটে।
আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবনগুলোর রান্নাঘরে ব্যবহৃত তেলেরও কখনো কখনো মারাত্মক রূপ দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ রান্না করতে গিয়ে তেল চর্বি থেকে অঘটন ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে গ্রীস, লার্ড, অলিভ অয়েল, মাখন, পশুর চর্বি এবং উদ্ভিজ্জ চর্বি বেশ বিপজ্জনক। অনেক সময় এগুলোর কারণে রেস্তোরাঁগুলোতে চুলা, ওভেন বা গ্রিলে স্ফুলিঙ্গ থেকে ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
গ্যাসীয় পদার্থ
বিউটেন, গ্যাসোলিন, মিথেন এবং প্রোপেন গ্যাস কোন নগ্ন শিখা বা ইগনিশনের উৎসের সঙ্গে মিলিত হয়ে মারাত্মক আগুন সৃষ্টি করতে পারে। আগুন চারপাশ অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ে বিধায় এটি আগুন লাগার শীর্ষকারণগুলোর মধ্যে একটি।
আরও পড়ুন: ৮৫ ঘণ্টা পর নিভল চট্টগ্রামের কন্টেইনার ডিপোর আগুন
গৃহস্থালি কাজে চুলার গ্যাস-পাইপ লিক এবং সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগার ঘটনাগুলো বাংলাদেশে খুব দেখা যায়। এছাড়া ফ্যাক্টরিগুলোতে বিশাল সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনাও দুর্লভ নয়।
বৈদ্যুতিক গোলযোগ
পুরনো বা ক্ষত-বিক্ষত বৈদ্যুতিক তার, ঘর-বাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, পুরানো যন্ত্রপাতি জরাজীর্ণ সার্কিট ব্রেকার বক্স বা ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি, অতিরিক্ত চাপযুক্ত সার্জ প্রোটেক্টর প্রভৃতি এই ধরনের আগুন লাগার মূল কারণ।
ট্রান্সফরমার ও মোটর জনিত বিস্ফোরণ আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় এলাকাতেই দেখা যায়। ত্রুটিপূর্ণ ওয়্যারিং অনেক দিন ধরে রেখে দেয়ার দরুণ ছোট শিখা থেকেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন: রাতে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা
ধাতব পদার্থ
পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জির্কোনিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সোডিয়াম, টাইটেনিয়াম, ও লিথিয়ামের মতো ধাতুগুলো থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে এই আগুন তৈরির জন্য অতিরিক্ত উচ্চ মাত্রার তাপ প্রয়োজন। তাই এই দুর্ঘটনাগুলো সাধারণত পরীক্ষাগার এবং বড় ফ্যাক্টরিগুলোতে দেখা যায়। এগুলোর অধিকাংশই ক্ষারীয় ধাতু, যা বাতাস বা জলের সংস্পর্শে এলে আগুন ধরে যায়। ধাতব পদার্থগুলোর গুঁড়োও বেশ মারাত্মক আকারের লেলিহান অগ্নিশিখা সৃষ্টি করতে সক্ষম।
বিভিন্ন ধরনের আগুন নেভানোর উপায়
নিরবচ্ছিন্ন পানির প্রবাহ
পানি আগুনের তাপ সরবরাহের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো থেকে বের হওয়া পানির চাপ অনেক বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে জনসাধারণের জন্য যে বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত তা হলো, পানি শুধু পুড়ে ছাই হওয়া বা কয়লা হওয়া থেকে উদ্ভূত আগুন নেভাতেই বেশি কার্যকর। আগুন লাগার অন্য উৎসগুলোতে পানি তো কাজ দেয়ই না বরং উল্টো ক্ষয়-ক্ষতি আরও বাড়িয়ে তোলে।
আরও পড়ুন: চকবাজারে প্লাস্টিক কারখানায় আগুন
তেল জাতীয় উপাদান থেকে সৃষ্ট আগুনের ক্ষেত্রে পানি জ্বলন্ত উপাদানটিকে নেভানোর পরিবর্তে আরও ছড়িয়ে দেয়। বৈদ্যুতিক আগুন নেভানোর জন্য পানি ব্যবহার করা রীতিমত বিপজ্জনক, কারণ পানি বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সৃষ্ট আগুনে পানি দিলে ব্যক্তির নিজেরও বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ অবস্থায় সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হওয়ার পরেও নিরাপদ দূরত্বে থেকে পানি দেয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে পানির ছিটা যেন শরীরের কোন অংশে না লাগে।
কখনো কখনো পানি নির্বাপক যন্ত্রগুলো আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে তুলে আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এটি রান্নার তেলের আগুনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ধাতব পদার্থের আগুন নেভাতে কখনই পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। পানি কোন কোন ধাতুর সংস্পর্শে এলে আগুন ধরে যায়।
বস্তা বা ভারী কাপড়
ছাই বা কয়লা থেকে উদ্ভূত আগুন নেভানোর জন্য ভেজা বস্তা বা ভারি কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। বস্তা বা ভারি কাপড় দিয়ে বাড়ি দিয়ে আগুনের হলকা দূর করা যেতে পারে। এভাবে প্রাথমিকভাবে গরম বাতাস বন্ধ করা যায়।
আরও পড়ুন: সিলেটে হকার্স মার্কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণে
সিলিন্ডার অগ্নিকাণ্ডে সিলিন্ডারের অগ্নিমুখে ভেজা কাঁথা ও কম্বল দিয়ে চাপ দিয়ে বা নব ঘুরিয়ে পানির জোর ঝাপটা দিতে হবে। তেলের আগুনেও ভেজা বস্তা বা কাঁথা কাজ দিতে পারে।
পেট্রল বা ডিজেলের মতো তেলের আগুন যদি ক্ষুদ্র পরিসরে হয়, তবে বস্তা বা কাঁথার মতো ভারি কাপড় দিয়ে আগুন ঢেকে দেয়া যেতে পারে।
বালু
কাঠ কয়লা, চুলার আগুন থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে শুকনো বালি ব্যবহার করা যেতে পারে। ধাতব পদার্থের আগুনে শুকনো বালি দিয়ে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বালুর ছিটা তেলের আগুন বশে আনতে সাহায্য করে। পেট্রল বা ডিজেল থেকে লাগা ক্ষুদ্র আগুনে বালির নিক্ষেপ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
আরও পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
কার্বন-ডাই-অক্সাইড
চাপযুক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্বাপক যন্ত্র তেল বা গ্যাস থেকে সৃষ্ট আগুনের ক্ষেত্রে দারুণ কাজ দেয়। কার্বন ডাই অক্সাইড বিদ্যুৎ অপরিবাহী বিধায় বৈদ্যুতিক আগুনের শিখা দমনে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। রাসায়নিক পদার্থ থেকে উদ্ভূত আগুন প্রাথমিকভাবে পানির কুয়াশা তৈরি করে আগুন নেভানো যায়। তবে এক্ষেত্রে কার্বন ডাই-অক্সাইড-ই সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
শুষ্ক পাউডার
বৈদ্যুতিক আগুন নেভানোর জন্য শুকনো পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো মূলত মনো অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা এবিসিই শুষ্ক পাউডার। শুকনো পাউডার নির্বাপক যন্ত্রগুলো অক্সিজেন থেকে জ্বালানী আলাদা করে বা আগুনের তাপ উপাদানকে সরিয়ে দেয়। এই পাউডারগুলো একটি আদর্শ নির্বাপক।
গ্রাফাইট পাউডার, গুঁড়ো তামা এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড শুকনো পাউডারের শক্তিশালী এজেন্ট হিসাবে স্বীকৃত। শুষ্ক পাউডারের তাপ শোষণ প্রভাব সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত রাসায়নিক পদার্থের আগুন নেভানোর জন্য। তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে, এজেন্টগুলো যেন রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়ায় আগুন তৈরিতে সহায়ক না হয়।
আরও পড়ুন: সরিষাবাড়ী ইউএনও কার্যালয়ে আগুন, নথিপত্র পুড়ে ছাই
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার পর বৈদ্যুতিক গোলযোগের সৃষ্ট আগুনেও শুকনো পাউডার ব্যবহার করা যায়। গ্যাস থেকে উদ্ভূত আগুনের ক্ষেত্রেও একইভাবে এই পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে।
সাবানের ফেনা বা ফোম
কয়লা বা ছাই থেকে সৃষ্ট আগুন পানির পাশাপাশি সাবানের ফেনা বা ফোম দিয়ে নেভানো যায়। এটি শুধু আগুন নিভিয়েই দেয় না, সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে। তেল জাত পদার্থের আগুনে শুধু ফেনা ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে সাবানের ফেনা বা ফোম একটু দেরিতে কাজ করে।
তবে বৈদ্যুতিক আগুন নেভানোর জন্য এই ফেনা বা ফোম সঠিক নির্বাচন নয়। কেননা পানির মত এটিও বিদ্যুৎ পরিবাহী। ধাতব ও রাসায়নিক পদার্থ থেকে অগ্নিকান্ডের আগুনের ক্ষেত্রে ফোমের প্রভাব নেতিবাচক।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি এবং দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু সতর্কতা
শেষাংশ
আগুন লাগা থেকে বাঁচতে এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলোর পেছনের কারণগুলো থেকে পরিত্রাণে পূর্ব সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। কেননা এই দুর্ঘটনাগুলোর আকস্মিকতায় সম্বিত ফিরে পাবার আগেই অনেক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। উপরোক্ত উপায়গুলো এই ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণটা বেশ কমিয়ে আনতে পারে। এ বিষয়গুলো আয়ত্ত্বে থাকলে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সময়টুকুতে যথাসাধ্য ব্যবস্থা নেয়া যায়। এ অবস্থায় মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হলেও যারা আগুন থেকে মোটামুটি নিরাপদ অবস্থানে আছেন তাদেরকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো সংগ্রহ করতে হবে। পাশাপাশি এগিয়ে যেতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে।
তবে মনে রাখতে হবে যে সব ধরণের আগুন নেভানোর পদ্ধতি এক নয়। একেক ধরেন আগুন নেভাতে একেক পদ্ধতি কার্যকর। ভুল উপায়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে আগুন নিভে যাওয়ার পরিবর্তে আরো বেড়ে যেতে পারে। আগুন কিভাবে নেভাবেন তা অনেকাংশে নির্ভর করে আগুনের উৎপত্তির কারণের উপর। তাই আগুন কিভাবে লেগেছে সেটা জেনে সতর্কতার সঙ্গে অগ্নি নির্বাপক পদ্ধতি গ্রহণ করা জরুরি।
আরও পড়ুন: নাটোরে চলন্ত পিকনিক বাসে আগুন
হাটহাজারীতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের উৎপাদন সাময়িক বন্ধ
সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন হাটহাজারী থানার দক্ষিণ পাহাড়তলীতে অবস্থিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কারখানার উৎপাদন ও ডেলিভারি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার বিকালে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার জাফর আলম সহ স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আল রাজী ক্যামিকেল কমপ্লেক্সের জিএম ইব্রাহীম খলিল ও ম্যানেজার এডমিন মোবিন হোসেন এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, এই কারখানায় যদি সরকারি নীতিমালা মেনে যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড তৈরী করা হয় তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে যতদিন পর্যন্ত সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোর ঘটনায় তদন্ত শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত এই কারখানায় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদন ও ডেলিভারি বন্ধ রাখার জন্য আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করেছি।
আল রাজী ক্যামিকেল কমপ্লেক্সের ম্যানেজার এডমিন মোবিন হোসেন খান জানান, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসীর দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। সরকারী তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই কারখানা থেকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কোন চালান বাহিরে যাবেনা।
ক্যামিকেল কমপ্লেক্সের জিএম ইব্রাহীম খলিলও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ৪১: প্রশাসন
সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের শতভাগ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি বিএনপির
সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করতে সরকারের কাছে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে এবং এর জন্য যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করার জন্য অবিলম্বে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত।’
সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল এসব কথা বলেন।
অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
একই সঙ্গে দেশের সব কন্টেইনার ডিপোতে ‘নজরদারি ব্যবস্থা’ চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি নেতা।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।
পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ৪১: প্রশাসন
সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার জনগণের কল্যাণে কিছু করে না, তাদের নিরাপত্তার কথাও ভাবে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ‘তথাকথিত অবকাঠামো নির্মাণের নামে নিজেদের পকেট ভারি করা এবং দুর্নীতি করা।’
চট্টগ্রাম অগ্নিকাণ্ডের পর দেশের পোশাক খাত ও অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা বলেন, ‘অবশ্যই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
তাজরীন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পোশাক খাতের অবস্থা ভালো ছিল না। ক্রেতা ও পোশাক উৎপাদনকারী ও মালিকদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে গেছে বলে জানান তিনি।
এর জন্য সরকারকে দায়ী করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের উচিত ‘জাতীয় শোক দিবস’ ঘোষণা করা।
আওয়ামী লীগ এখন লুটপাট, দুর্নীতি ও অর্থপাচারে লিপ্ত। তারা শুধু জনগণের আশা নষ্ট করছে, পদ্মা সেতু ছাড়া আর কিছুই নেই।
এদিকে, সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে ভয়াবহ আগুন ও কন্টেইনার বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ৫০ নয় ৪১ বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা থাকায় মারা যাওয়া ব্যাক্তিদের একজনকে একাধিকবার গণনায় আনার ফলে ভুল হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘একই মরদেহ দুবার কাউন্ট হয়েছে। পরে সবগুলো মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রকৃত সংখ্যা ৪১ জন পাওয়া গেছে। গণনার ভুলে লাশের সংখ্যা বেড়ে গেছে। মূলত এখন পর্যন্ত ৪১টি মরদেহ পাওয়া গেছে।’
পড়ুন: পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ ম্লান করতে নাশকতা কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে: তথ্যমন্ত্রী
বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারির কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারির কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে যদি কারো অবহেলার কারণে ঘটে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যে অপরাধ করেছে আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। আমরা কোন অপরাধকে দায়মুক্ত করিনি। তদন্ত হচ্ছে, আইন অনুযায়ী বিচার হবে।
মন্ত্রী আজ সোমবার (৬ জুন) সীতাকুণ্ডে ডিপোতে বিস্ফোরণে আহতদের দেখতে এসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো অপরাধকেই আমরা দায়মুক্ত বলি না। যে অপরাধ করছে, আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগুনের ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের পর দোষীরা চিহ্নিত হবে।
মন্ত্রী বলেন, অবহেলা বা দায় থাকলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সে যত বড় শক্তি শালী হোক না কেন। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এ ঘটনায় কারও বিন্দুমাত্র অবহেলা বা দায় থাকলে অবশ্যই তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’
এর আগে দুপুরে সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণে অন্তত ৫০ জন নিহত ও ২শতাধিক মানুষ আহত হয়।
পড়ুন: এখনও জ্বলছে সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপো
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: নিহতদের পরিচয় শনাক্তে চলছে ডিএনএ টেস্ট