অগ্নিকাণ্ড
বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ কেন নয়: হাইকোর্ট
রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষ থেকে করা রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: কোন কোন আদালতে লোহার খাঁচা রয়েছে জানতে চান হাইকোর্ট
আদালতের রুলে বহুতল ভবন, কারখানা ও স্থাপনায় অগ্নিনিরোধক কক্ষ ও সিঁড়ি স্থাপনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং অগ্নিনির্বাপক প্রতিরোধ আইন ও বিল্ডিং কোড আইনে কেন এবিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া হাইকোর্ট তার আদেশে ২০২৩-২৪ বর্ষে বহুতল ভবনে কতটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে এবং কী পরিমাণ প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে জানাতে রাজউক ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
এর আগে গত রবিবার জনস্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট ভবনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া তানজিনা নওরিন এসার বড় ভাই ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজমুস সাকিব তুষ্টি রিট আবেদনটি দায়ের করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, রাজউকের চেয়ারম্যান, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘গ্রিন কেজি কটেজ’ ভবনে লাগা আগুনে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে পরিবারের কাছে। দুজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে রয়েছে। গতকাল তাদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১৪ জনের মধ্যে বাসায় ফিরেছেন ১১ জন। এখনো ভর্তি আছেন তিনজন। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও দুজন।
আরও পড়ুন: বিনোদনে হাতি ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টে রিট
হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন নুর
অগ্নি দুর্ঘটনা নিরসনে জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোডের যথাযথ প্রয়োগ কেন জরুরি
আধুনিক নকশার আকাশচুম্বী অট্টালিকায় গতিশীল হচ্ছে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। কিন্তু অন্যদিকে শিল্পের এই দ্রুত প্রসারই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে জন-জীবনের জন্য। নির্মাণের ন্যূনতম মাপকাঠি মেনে না চলায় রীতিমতো মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ভবনগুলো।একের পর এক আগুন লাগার ঘটনায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে দেশের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধার শহর ঢাকা। ভবন নির্মাণের সুস্পষ্ট বিধিমালা ও আইন থাকলেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে। এমতাবস্থায় জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোড-এর বাস্তবায়ন কেন অত্যাবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
জাতীয় বিল্ডিং কোড
অবকাঠামো নির্মাণকল্পে পূর্ব নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট নীতি সম্বলিত নথির নাম বিল্ডিং কোড, যার উপর নির্ভর করে স্থাপনা তৈরির মানদণ্ড। সরকারি বা বেসরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণীত হওয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পায় এই নীতিমালা। সাধারণত স্থানীয় কাউন্সিলের কাছ থেকে পরিকল্পনার অনুমতি পাওয়ার জন্য ভবনগুলোকে এই কোড মেনে চলতে হয়। বিল্ডিং কোডের মূল উদ্দেশ্য হল জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিল্ডিং কোড বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন- আন্তর্জাতিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় কোড। স্থানভেদে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সামগ্রিকভাবে প্রতিটি কোডেরই উদ্দেশ্য এক।
বাংলাদেশের নির্মাণ প্রকল্পের জন্য সর্বতভাবে বিএনবিসি (বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড) অনুসরণ করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে হালনাগাদকৃত কোডটি এখনও বহাল রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প ঝুঁকি কমাতে বিল্ডিং কোড হালনাগাদ হচ্ছে: দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় বিল্ডিং কোডের অগ্নি সুরক্ষা সম্পর্কিত বিধান
অগ্নি দুর্ঘটনা ঝুঁকি নিরসনে পূর্ব সতর্কতা এবং জরুরী অবস্থায় করণীয় সমূহ নিয়ে অগ্নি সুরক্ষার জন্য বিএনবিসি’র সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। সেগুলো হলো:
- আগুনের বিস্তার প্রতিরোধের জন্য অগ্নি-প্রতিরোধী উপকরণ নিয়ে প্রতিটি ভবন নির্মাণ করতে হবে।
- ভবনগুলো আগুন সনাক্তকরণ এবং অ্যালার্ম সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত করতে হবে। আগুনের ধোঁয়া, তাপ ও আগুন শনাক্ত করতে এবং আগুনের ব্যাপারে বাসিন্দাদেরকে দ্রুত সতর্ক করতে এগুলো কার্যকর হতে হবে।
- অগ্নি-দুর্ঘটনার সময় দ্রুত বাইরে বের হওয়ার জন্য ভবনগুলোতে একাধিক উপায় থাকতে হবে। যেমন- সিঁড়ি, করিডোর এবং এক্সিট অগ্নিকাণ্ডের সময় বাসিন্দাদেরকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সহায়তা করে।
- আগুন নিয়ন্ত্রণ ও নেভানোর জন্য সহায়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করণে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ভবনকে সজ্জিত করতে হবে।
- আগুন লাগার সময় ধোঁয়ার বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য ভবনে ধোঁয়া পরিচালন ব্যবস্থা যেমন স্মোক ভেন্ট, এক্সস্ট ফ্যান এবং প্রেসারাইজেশন সিস্টেম থাকতে হবে।
- অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে ভবনের মালিক এবং বাসিন্দাদের জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের ভবনে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিসের ডিজি
জাতীয় ফায়ার কোড
অগ্নি প্রতিরোধ এবং অগ্নি সুরক্ষায় জরুরি নির্দেশনামুলক এবং দক্ষতা-সম্পর্কিত বিধিমালার নাম ফায়ার কোড।
বাংলাদেশের বর্তমান অনুসৃত ফায়ার কোড হচ্ছে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ বিধিমালা-২০১৪, যেটি নির্ধারিত হয়েছে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩-এর আওতায়।
এই আইন অনুযায়ী একটি বহুতল বাণিজ্যিক কাঠামোগত নকশা বা বিন্যাসের জন্য ডিপার্টমেন্ট অফ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি)-এর মহাপরিচালকের অনুমোদন নিতে হয়। বিল্ডিং নিরাপত্তা যাচাই করে একটি অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে এই সম্মতি প্রদান করা হয়। এই ছাড়পত্র দেয়ার পূর্বে যে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয় সেগুলো হচ্ছে-
- ভবনের সামনে সড়কের প্রশস্ততা
- নকশা অনুসারে ভবনের অগ্নি-নিরাপত্তা পরিকল্পনা
- ভবন থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথ
- কাছাকাছি পানির সংস্থান
- গাড়ি ঢুকতে পারবে কি না
অতঃপর এই ছাড়পত্র দেখিয়ে রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন নিতে হয়। এরপর শুরু হয় ভবন নির্মাণের কাজ। নির্মাণকাজ আংশিক বা পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর ভবনটি ব্যবহারের জন্য পুনরায় রাজউকের সরণাপন্ন হতে হয়। এ সময় রাজউক অনুমিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তা তদারক করে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তবেই প্রদান করা হয় বসবাস বা ব্যবহারের সনদ।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের ভবনটিতে ‘ফায়ার এক্সিট’ নেই: প্রধানমন্ত্রী
বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড: জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক
ঢাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছে পাঠানো শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘ঢাকার একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাতে আমি গভীরভাবে শোকাহত।’
ইয়োকো কামিকাওয়া বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
তার বার্তায় নিহতদের জন্য প্রার্থনা এবং তাদের প্রিয়জনদের হারানোর জন্য শোকাহত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় মোদির শোক
বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: ভোলার দুই যুবকের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া
বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: ভোলার দুই যুবকের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া
ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভোলার ২ যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের নিয়ে খেতে যান ও অপরজন কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী হিসেবে কর্মস্থলে যোগ দেন। দুই পরিবারে চলছে স্বজনদের আহাজারি।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমদাদুল হক জোনায়েদ আাহমদ (২৪) বৃহস্পতিবার মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষে ৪ বন্ধু নিয়ে ঢাকার বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান। অগ্নিকাণ্ডে বের হতে না পেরে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। শুক্রবার বিকালে তার মৃতদেহ ভোলায় আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
তার স্বজনরা জানান, ভোলার বিএভিএস সড়কের অবসরপ্রাপ্ত ভূমি অফিসের জেলা কর্মকর্তা মাইনুল হক হারুনের একমাত্র ছেলে। মা-বাবা ও দুই বোনসহ তারা ঢাকায় বসবাস করতেন। বৃহস্পতিবার বাসা থেকে মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বের হন। পরীক্ষা শেষে ৪ বন্ধু মিলে বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
খাবারের অর্ডার দেওয়ার পর বন্ধুরা গল্প করছিলেন। এর মধ্যে সিয়াম টয়লেটে যান। টয়লেটে গিয়ে ধোঁয়া দেখে তিনি দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে চলে আসেন এবং ফোনে বন্ধুদের দ্রুত নামতে বলেন।
বন্ধুরা সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলে সেখানে বিস্ফোরণে আগুন চলে আসলে তারা ৩ বন্ধু আটকা পড়ে আর বের হতে পারেননি।
এ অবস্থায় শেষবারের মতো তার মায়ের সঙ্গে মোবাইলে রাত ১০টার দিকে কথা হয়। জোনায়েদ বলেন, ‘মা আমি বেইলি রোডে আছি। আমি আসতেছি।’
এটাই ছিল তারা শেষ কথা। এরপর তার মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই জোনায়েদের মৃত্যু হয়। পরে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আংটি দেখে জোনায়েদকে শনাক্ত করা হয়।
এদিকে ভোলায় খলিফাপট্টি জামে মসজিদে জানাজা শেষে তাকে কালিবাড়ি রোড বিল্লা মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সন্ধ্যার দিকে দাফন করা হয়।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের চাকরিতে যোগ দেন ভোলা সদর উপজেলা চর কুমারিয়া গ্রামের মো. সিরাজের ছেলে মো. নয়ন।
দরিদ্র কৃষক বাবাকে অর্থের যোগান দিতে কাচ্চি রেস্টুরেন্টে কাজ নেন। আর তার জীবিত ফেরা হয়নি বাড়িতে। অগ্নিকাণ্ডে আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে শুক্রবার সারাদিন প্রলাপ করেছেন মা। আর নির্বাক বাবা অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন ছেলেকে শেষবার দেখার জন্য।
আরও পড়ুন: বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড: ৪৬টির মধ্যে ৩৯টি মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর
দুর্ঘটনার প্রায় ৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর পান নাজমা ও তার পরিবার। সেই থেকেই চলছে তার বিলাপ।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ১৯ বছর বয়সী নয়ন ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় যান। বাবুর্চির সহকারী হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে যোগদান করেন। ওইরাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় তার।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শুক্রবার সকালে পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর আসে।
এদিকে নিহতের ভাই দুপুরে ঢাকা মেকিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ চিহ্নিত করেন। নয়নের বাবা-মায়ের দাবি কর্মস্থলে এমনভাবে আর কাউকে যেন প্রাণ দিতে না হয়। সিরাজ-নাজমা দম্পত্তির ৬ সন্তানের মধ্যে নয়ন সবার ছোট।
নয়নের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক নয়নের বাবা মো. সিরাজ। ছেলের এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যর খবর কোনোভাবেই মানতে পারছেন তিনি।
শুক্রবার সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই নির্বাক বসে আছেন। ছেলের লাশের অপেক্ষায় গ্রহর গুনছিলেন। খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে এসেছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে ৩ জন আটক
বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে ৩ জন আটক
ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শুক্রবার ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
তারা হলেন- চা চুমুক রেস্টুরেন্টের মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন এবং কচ্চি ভাই-এর ম্যানেজার মো. জিসান।
সন্ধ্যায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মাহিদ বলেন, ব্যবসায়ীদের শুধু মুনাফার কথা চিন্তা করলে হবে না, মানুষের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবতে হবে।
ভবন মালিকদের কোনো গাফিলতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারাই দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড: ৪৬টির মধ্যে ৩৯টি মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর
তিনি সবাইকে 'সেফটি ফার্স্ট' নীতি মেনে কার্যক্রম পরিচালনার অনুরোধ জানান।
তিনি জানান, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ২০ জন পুরুষ, ১৮ নারী ও ৮ শিশুসহ মোট ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। ৩৯ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুইজনের মরদেহ মর্গের ফ্রিজে রাখা হয়েছে।
বাকিদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ছিল বেইলি রোডের আগুনে নিহত বৃষ্টির
বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড: ৪৬টির মধ্যে ৩৯টি মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর
ঢাকার বেইলি রোডে বৃহস্পতিবার রাতে বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৩৯ জনের মরদেহ শনাক্ত করে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অজ্ঞাত মরদেহের মধ্যে ছয়টি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে এবং একটি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রাখা হয়েছে।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ এসব লাশ দাবি করেনি। শনাক্তকরণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হবে।
অন্যদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ছিল বেইলি রোডের আগুনে নিহত বৃষ্টির
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বেইলি রোডের সাততলা গ্রিন কোজি কটেজ শপিং মলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ নারী ও তিন শিশুসহ ৪৬ জন নিহত এবং ২২ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জহিরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৫), ঢাকার বংশালের মোসলেম ছেলে নুরুল ইসলাম (৩২), ঢাকার প্রাণ নাথ রায়ের মেয়ে পপি রায় (৩৩), ঢাকার যাত্রাবাড়ীর শিপন পোদ্দারের সন্তান সম্পূর্ণা পোদ্দার (১১) ও সংকল্প সান (৮); ঢাকার পুরাতন পল্টনের মো. আলীর মেয়ে নাজিয়া আক্তার (৩১), একই এলাকার সায়েক আহমেদের ছেলে আরহান মোস্তাক আহমেদ (৬), মতিঝিলের কবির খানের মেয়ে মাইশা কবির মাহি (২১) ও মেহরা কবির দোলা (২৯)।
কুমিল্লার মুরাদনগরের জয়ন্ত কুমার পোদ্দারের মেয়ে সম্পা সাহা (৪৬), নারায়ণগঞ্জের আমজাদ হোসেনের ছেলে শান্ত হোসেন (২৪), ঢাকার কাকরাইলের কুরবান আলীর মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া (২২), একই এলাকার গোলাম মহিউদ্দিনের মেয়ে জান্নাতী তাজরিন নিকিতা (২৩)।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
এ ছাড়া ঢাকার রমনার জউরা ইসলামের মেয়ে লুৎফুর নাহার করিম (৫০), মাদারীপুরের জাকির হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (২২), যশোর সদরের কবির হাসানের ছেলে কামরুল ইসলাম (২০), ভোলার মাইনুল হকের ছেলে দিদারুল হক (২৩), মৌলভীবাজারের ফজলুল রহমানের ছেলে অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম (৬৫), টাঙ্গাইলের মোয়াজ্জেম মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান (২৭), কুমিল্লা সদরের আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে নুসরাত জাহান শিমু (১৯), ঢাকার মগবাজারের সৈয়দ মোবারক কায়সার (৪৮) ও তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪০), তাদের সন্তান সৈয়দা ফাতেমা-তুজ-জোহরা (১৬), সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর (১৩) ও সৈয়দ আবদুল্লাহ (৮), মুন্সিগঞ্জ সদরের আওলাদ হোসেনের মেয়ে জারিন তাসমিন প্রয়তি (২০), ঢাকার গুলশানের ইসমাইল গাজীর ছেলে জুয়েল (৩০), উত্তম কুমার রায়ের স্ত্রী রুবি রায় (৪৮) ও মেয়ে প্রিয়াঙ্কা রায় (১৮), ঢাকার মালিবাগের বেসরকারি চাকরিজীবী ঝালকাঠি জেলার বাসিন্দা তুষার হাওলাদার (২৩), পাবনার তালেব প্রামাণিকের ছেলে সাগর হোসেন (২৪), পিরোজপুরের নুরুল আলমের মেয়ে তানজিলা নওরিন (৩৫), শেরপুরের ফজর আলীর ছেলে শিপন (২১), ঢাকার কাকরাইলের ফোরকানের মেয়ে আলিশা (১৩)।
বরিশালের রিয়াজুল আমিনের ছেলে বুয়েট শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন (১৯), নাসিরুল ইসলাম শামীমের মেয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী লামিশা ইসলাম মাহি (২০), বরগুনার নান্টুর ছেলে মো নাঈম (১৮), ভোলা সদরের সিরাজের ছেলে মো. নয়ন (১৭) এবং নোয়াখালীর সেনবাগের আবুল খায়েরের ছেলে আসিফ (২৫)।
আরও পড়ুন: ‘বাবা আমি আটকা পড়েছি, আমাকে বাঁচাও’-মৃত্যুর আগে লামিসা
বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মো. নুরুল ইসলাম নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: বুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু
নিহত শিক্ষার্থীর মো. নুরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থী। বাবুবাজারের বাসিন্দা মো. মুসলিম ও রেশমা বেগমের ছেলে তিনি। তিনি সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
এ খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা ঘটনাস্থলে এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
এরপর ঢাকা মেডিকেলে দগ্ধ লাশের পকেটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড পাওয়া যায়। তার বন্ধুরা হাসপাতালে এসে লাশটি শনাক্ত করে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।
এছাড়া বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন তারা।
আরও পড়ুন: ‘বাবা আমি আটকা পড়েছি, আমাকে বাঁচাও’-মৃত্যুর আগে লামিসা
নওগাঁয় আগুনে পুড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ছিল বেইলি রোডের আগুনে নিহত বৃষ্টির
সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষার কোচিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি। স্বপ্ন পূরণ করতে দিল না ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। বৃষ্টির নিথর দেহ এখন পড়ে রয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হিমঘরে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বেইলি রোডে ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে আগুনে প্রাণ হারানো ৪৬ জনের একজন সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মায়ের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয়েছে বৃষ্টির। আর রাতেই বৃষ্টির মৃত্যুর খবর পায় পরিবার। শোকে পাগলপারা মা বিউটি বেগম।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: বুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু
শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিম পাড়ায় বৃষ্টির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির সঙ্গে কথা বলবেন বলে হন্তদন্ত হয়ে নিজের ফোন খুঁজছেন বিউটি বেগম। কখনো ফোনের জন্য চিৎকার করে সারা বাড়ি মাতম করে ফিরছেন। ফোন পেলেই মেয়ে বৃষ্টির কাছে ঢাকায় যাবেন। ছোট মেয়ে বর্ষা মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মানায় অগ্নিকাণ্ডে এত হতাহত: মেয়র তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মানায় বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে অনেক মানুষ নিহত হয়েছে এবং অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখে বেইলি রোডের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মন্তব্য করেন।
মেয়র বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক পরিদর্শন এবং তথ্য থেকে আমরা যতটুকু জানতে ও দেখতে পেয়েছি, এই ভবন নির্মাণে অনেক গাফিলতি রয়েছে। এই ভবন নির্মাণে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, বিএনবিসি কোডে যে নির্ণায়কগুলো রয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: সিন্ডিকেট রোধে কোটি মানুষকে টিসিবি কার্ড দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: তাপস
তিনি বলেন, ‘আমরা পরিদর্শনে দেখলাম, ১০ তলা ভবন হওয়া সত্ত্বেও মাত্র একটি সিঁড়ি রয়েছে এবং সেই সিঁড়িটাও নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী প্রশস্ত না। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী পাঁচ তলার উপরে ভবন হলেই একটি ভবনে দুটো সিঁড়ি থাকতেই হবে এবং একটি সিঁড়ি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত থাকবে। অগ্নিকাণ্ড, ভূমিধ্বসসহ যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে সেটি ব্যবহৃত হবে। কিন্তু এই ভবনে তা মানা হয়নি বলেই অগ্নিকাণ্ডে এত হতাহত হয়েছে।’
এ সময় সরকারের কাছে পাঠানো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ইমারত নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ বিধিমালা দ্রুত অনুমোদন পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তাপস বলেন, এ ধরনের ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন ও পরিপালন একান্ত আবশ্যক। বিগত বছরগুলোতে যে দুর্যোগগুলো হয়েছে সেগুলোর আলোকে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি সাড়া প্রদানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি খসড়া নীতিমালা প্রনয়ণ করছে। তাছাড়া ইমারত নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করে আমরা একটি নীতিমালা সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। সেটি নিয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মত বিনিময় চলছে। আমরা আশা করব, সরকার দ্রুত এই নীতিমালাটির অনুমোদন দেবে।
আরও পড়ুন: বিজ্ঞান-প্রযুক্তির গবেষণায় বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে: তাপস
চাঁদপুরের সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক ভূঁইয়ার মৃত্যুতে তাপসের শোক
বেইলি রোডের ভবনে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিসের ডিজি
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের (এফএসসিডি) মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, রাজধানীর বেইলি রোডের ভবনটিতে কোনো অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।
শুক্রবার বিকেলে পুড়ে যাওয়া ‘গ্রিন কোজি কটেজ শপিং মল’ নামে ভবনটির সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু এবং কয়েক ডজন লোক আহত হয়েছেন।
এফএসসিডি ডিজি বলেন, ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। পুরো ভবনে কেবল একটি ছোট সিঁড়ি ছিল। রুটিন মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে ভবন মালিকদের আগে ফায়ার সার্ভিস তিনটি নোটিশ জারি করেছিল বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন : বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: প্রিয়ন্তীর স্বপ্ন পুড়ে ছাই
ডিজি মাইন উদ্দিন আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় যে রুমে সবাই আশ্রয় নিয়েছিল, তাতে কোনো জানালা ছিল না।
এর আগে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বহুতল ভবনটিতে কোনো ফায়ার এক্সিট নেই।
সাততলা বাণিজ্যিক ভবনটিতে যা যা আছে-
ভবনের প্রথম তলায় গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের দোকান, মোবাইল শোরুম এবং চায়ের স্টল ‘চা চুমুক’ যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা গেছে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ছিল জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট ‘কাচ্চি ভাই’ এবং পোশাকের শোরুম ‘ইলিয়েন’।
চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ছিল যথাক্রমে ‘খানাস’, ‘ফুকো’ ও ‘পিজ্জা ইন’।
ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় ছিল ‘জাসদি’, ‘স্ট্রিট ওভেন’ ও ‘অ্যামব্রোসিয়া’।
শুক্রবার সকালে আগুনের একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, আগুন নিচতলার একটি দোকান থেকে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
এ অগ্নি দুর্ঘটনায় অন্তত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েক ডজন মানুষ হাসপাতালের বিছানায় লড়াই করছে।
আরও পড়ুন : বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: বুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু