বিলীন
দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ঘাটে ভাঙনে ২০ মিটার বিলীন
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ফেরিঘাটে আকস্মিক ভাঙন দেখা দিয়েছে। রবিবার থেকে ভাঙন শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত ৬ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার প্রায় ২০ মিটার এলাকা ভাঙনে ধ্বসে গেছে।
এসময় একটি জামগাছ, একটি আমগাছ, একটি বটগাছ ও টিউবওয়েল ছিল তাও পদ্মা নদীতে ধ্বসে গেছে।
এছাড়া আশপাশ এলাকায় অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন সোমবার দুপুরে দেখা যায়, ৬ নম্বর ফেরিঘাট সংলগ্ন স্থানীয় বারেক মৃধার মুদিখানা দোকান ও পেছনে তার বাড়ি। তার দোকানের সামনে এক পাশে বিআইডব্লিউটিএর অব্যবহৃত পন্টুন নোঙর করে রাখা, অন্য পাশে রয়েছে ৬ নম্বর ফেরিঘাট।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে ৫০টি বাড়ি বিলীন
বেশ এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় গত বন্যায় ভাঙন রোধে ফেলানো বালুভর্তি জিওব্যাগসহ ধ্বসে পড়ছে। স্থানীয় কয়েকজন ভাঙনস্থানে রাস্তার উপরে থাকা বালুভর্তি কিছু জিওব্যাগ ফেলার চেষ্টা করেন।
এছাড়া প্রায় ৩০ ফুট এলাকা জুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। মুদি দোকানসহ ১০-১২টি পরিবারের সকলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে আসেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী।
স্থানীয় সিদ্দিক কাজী পাড়ার বাসিন্দা ও মুদি দোকানী বারেক মৃধা বলেন, রবিবার সকাল ৬টার দিকে হঠাৎ বিকট আকারে শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। স্থানীয় অনেকের সঙ্গে ভয়ে দৌড়ে নদীর পাড়ে এসে দেখি আমার দোকানের সামনের বিশাল অংশজুড়ে পদ্মায় ধ্বসে গেছে। পাশেই ৬ নম্বর ফেরি ঘাটও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বালুভর্তি জিওব্যাগ ধ্বসে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, নদী থেকে মাত্র ৮-১০ হাত দূরে আমার দোকান। দোকানের সামনে অনেক জায়গাজুড়ে ফাটল নিয়ে বিকালে আরও ভেঙে যায়। এসময় তিনটি গাছসহ টিউবওয়েল ধ্বসে নদীতে যায়।
তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দোকান, বাড়িঘর কিছুই থাকবে না।
পদ্মার পাড়ের আরেক বাসিন্দা সরোয়ার মোল্যা বলেন, সকালে ভিড় দেখে দ্রুত নদীর পাড়ে এসে দেখি প্রায় ৫০ ফুটের বেশি এলাকা ভেঙে গেছে। আমরা চাই, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদীর পাড়ের মুদি দোকানসহ ১০-১২টি পরিবারের বসতভিটা কিছুই থাকবে না।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্কে এলাকাবাসী
বলেশ্বরের ভাঙন বিলীন ১০ একর ধানি জমি
বাগেরহাটের শরণখোলায় উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা এলাকায় বলেশ্বর নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। বুধবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত বলেশ্বরের ভাঙনে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আরও ব্যাপক এলাকা জুড়ে বিশাল ফাটল ধরেছে। এদিকে প্রবল ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ১০ একর ধানি জমি। এছাড়া ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা শতাধিক পরিবার ও কয়েকশ একর জমি।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ বেড়িবাঁধের গাবতলা এলাকায় মূল বাঁধের নিচে ১০০ ফুট এলাকার বেশকিছু সিসি-ব্লকও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্কে এলাকাবাসী
এদিকে ৩৫/১ পোল্ডারের মূল বাঁধে এমন ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন যে- খুব দ্রুত নদী শাসন না করলে, মূল বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জোয়ার ও ভাটার টানে ভাঙন শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় ১০ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে ৫০টি বাড়ি বিলীন
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।
তিস্তা নদীর পানি শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকাল থেকে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
রবিবার (২৭ আগস্ট) সকালে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া রেল ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে পদ্মা-মধুমতির ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি
বৃষ্টি ও বন্যার ফলে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকাব্যাপী নদী ভেঙেছে। এই ভাঙনে সর্বশেষ বুড়িরহাট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার নদী গর্ভে চলে গেছে।
এ ছাড়াও উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে প্রায় ৫০টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পানি বাড়ার ফলে এই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘরে পানি উঠেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়াও রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে গরু, ছাগল ও হাসঁ, মুরগির খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যায় ৭০৫ হেক্টর আমন ধান, ৮ হেক্টর বীজতলা ও ১১০ হেক্টর সবজিখেত বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের মেম্বার মিনহাজুল বলেন, আমার ইউনিয়নের সরিষাবাড়ী এলাকার বাড়িগুলোতে পানি উঠেছে। এখানে ২ শতাধিক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।
জোলাপাড়ার আবুল জানান, এই গ্রামের ৭৫টি বাড়ির মধ্যে ৪৫টি বাড়িতে পানি উঠেছে।
এই গ্রামের মাহমুদা বলেন, আমার ছোট পুকুরে ৪/৫ হাজার টাকায় প্রায় ১৮ কেজি মাছের পোনা ছেড়েছিলাম, সব মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মায় ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতঘরসহ আবাদি জমি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মায় ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতঘরসহ আবাদি জমি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে।
সদর উপজেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ১৩ রশিয়া থেকে নারায়ণপুর ইউনিয়নের খলিফারচর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত দুই সপ্তাহের ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে- অর্ধশতাধিক বসতভিটা, মসজিদ ও আবাদি জমি।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে পদ্মা সেতুর চিত্রকর্ম উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
হুমকির মধ্যে রয়েছে- প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, হাট, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বসতভিটা ও ফসলি জমি।
ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদী তীরের অনেকে তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙন কবলিত এই এলাকার মানুষের একটাই দাবি ভাঙনরোধে দ্রুত নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা হোক।
জানা গেছে, পাশাপাশি অবস্থিত এই দুই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গত দুই-তিন বছর আগে পদ্মায় ভাঙন শুরু হয়।
ভাঙনে ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙনরোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্ষা মৌসুম এলেই এসব চরাঞ্চলের মানুষ থাকেন নদী ভাঙন আতংকে।
নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, পদ্মায় ভাঙনটা প্রায় সারা বছরই থাকে। কখনো কম আবার একটু বেশি। এখন এই যে বর্ষা আসলো এর তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: গোয়ালন্দে অসময়ে পদ্মায় ভাঙন
বর্তমানে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ১৩ রশিয়া থেকে তার ইউনিয়নের খলিফারচর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন চলছে। গত ১৫দিনে তার ইউনিয়নে ৭/৮টা মত বসত ভিটা, কিছু আবাদি জমি নদীতে গেছে।
ভাঙন আতংকে নারায়ণপুর আদর্শ কলেজ ও নারায়ণপুর দারুল হুদা আলিম মাদরাসা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, হাট, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অনেক বাড়িঘর ও আবাদি জমি হুমকির মধ্যে রয়েছে।
বর্তমানে এসব এলাকা থেকে নদী ১ কিলোমিটার দূরেও নাই।
তিনি আরও জানান, ১নং ওয়ার্ডের সরদারপাড়া, বাঘপাড়া, ঘোসপাড়া, মন্ডলপাড়া, ৪ নং ওয়ার্ডের পান্নাপাড়া, চটকপাড়া সবই নদী থেকে হাফ থেকে ১ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে।
ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত ব্যবস্থা না নিলো একে একে সব পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে।
এদিকে পাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, দুই মাসের উপর থেকে দক্ষিণ পাঁকা তেরো রশিয়া এলাকায় একটু একটু করে ভাঙন চলছিলো। এখন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু বাড়ি নদীতে নেমে গেছে।
আরও পড়ুন: পদ্মায় ভাঙন রোধে ১০৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন
ভাঙন আতংকে আছে অনেকে। তাদের কেউ কেউ ঘরবাড়ি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ৫০টি মত বসতভিটা নদীতে নেমে গেছে। নদী পাড়ের মানুষ এখন ভাঙন আতংকে দিন পার করছে। কেউ কেউ ভাঙনের ভয়ে ঘরবাড়ি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫০টি মত ঘরবড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান জানান, কয়েক বছর থেকে ওই এলাকা ভাঙছে। বর্তমানে নদীতে পানি বাড়ছে। এবারও অল্পদিন থেকে হালকা ভাঙন শুরু হয়েছে।
পাঁকা ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাঁকা ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে পর্যটক ও ভ্রমণকারীদের করণীয়
তবে এখনো কাজ করার কোনো অনুমতি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। প্রকল্প অনুমোদন হলে ও অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলেই কাজ শুরু করা হবে।
ফেরিঘাটে ভাঙন, নদীগর্ভে বিলীন বসতভিটা
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে মুহুর্তের মধ্যে একটি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়।
এছাড়া আতঙ্কে আরও চারটি পরিবার অন্যত্র সরে গেছে।
প্রায় ১০০ মিটার এলাকায় ভাঙনের কারণে তিন ও চার নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে ভাঙনে ছয় সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে দৌলতদিয়ার তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়।
আড়াইটার দিকে ভাঙনের মাত্রা বেড়ে গেলে নদী পাড়ে সিদ্দিক কাজী পাড়ার সালাম বেপারীর বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়।
আতঙ্কে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এসময় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দেয়।
রাতেই সালাম বেপারীসহ আব্দুর রহিম বেপারী, হান্নান কাজী, মকাই মোল্লা ও একেন বেপারীর পরিবার ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে ফেলে।
আরও পড়ুন: ঢাকামুখী মানুষদের দৌলদিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করার অনুরোধ নৌপ্রতিমন্ত্রীর
এই পাঁচটি পরিবার ফেরি ঘাটের অদূরে নিয়ে ঘরের চালাসহ জিনিসপত্র রেখেছেন।
এদিকে খবর পেয়ে রাতে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আব্দুস সাত্তার রাত আড়াইটার দিকে সরেজমিন এসে তিন নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ করে দেন।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মুঠোফোনে বলেন, বুধবার রাত আড়াইটার দিকে তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় ভাঙনের খবর পেয়ে রাতেই ঘাট পরিদর্শনে আসেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তখন থেকে তিন নম্বর ঘাটটি বন্ধ করে দেন।
প্রায় ১০০ মিটারের মতো জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়ায় পাশের চার নম্বর ঘাট ভাঙনের মুখে পড়ে। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চার নম্বর ঘাটটিও বন্ধ করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, চার নম্বর ঘাটের পন্টুনের মেরামত কাজ চলায় আপাতত বন্ধ রয়েছে। কাজ শেষে রাতের মধ্যে ঘাটটি চালু করা যাবে বলে আশা করছি। এর আগে ছয় সেপ্টেম্বর প্রায় ১০০ মিটারের মতো জায়গা ভাঙন দেখা দেয়ায় পাঁচ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে।
ভাঙনে তিন, চার ও পাঁচ নম্বর তিনটি ফেরি ঘাট বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে ছয় ও সাত নম্বর ঘাট চালু রয়েছে।
ভাঙন প্রতিরোধে বিআইডব্লিউটিসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে তিন ও পাঁচ নম্বর ঘাট চালু করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ১০টি ফেরি চলাচল করছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ক্ষতিগ্রস্ত সালাম বেপারীর ছেলে আশিক বেপারী বলেন, আমাদের মতো শতাধিক পরিবার ফেরিঘাট সংলগ্ন সিদ্দিক কাজী পাড়ায় বাস করছি। বুধবার রাত দুইটার পর তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় হঠাৎ পানির শব্দ বেড়ে যায়। শব্দের ভয়ে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। দেখতে দেখতে চোখের পলকে আমাদের একটি ঘরের ভিটা বিলীন হয়ে যায়।
তাৎক্ষণিকভাবে অন্যান্য ঘরের জিনিসপত্র দ্রুত সরিয়ে নেই। এ সময় স্থানীয় আব্দুর রহিম বেপারী, হান্নান কাজী, মকাই মোল্লা ও একেন বেপারীর ঘর ভেঙে দ্রুত সরিয়ে ফেলে। যাওয়ার কোন জায়গা না থাকায় আমরা কোথায় যাব সেই চিন্তা করছি। রাত দুইটার পর থেকে ভাঙন শুরু হলেও বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে বালুর বস্তা ফেলা শুরু করেছে।
এছাড়া এখন পর্যন্ত এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান কেউ খোঁজও নিতে আসেনি।
ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নতুন করে পানি বাড়তে থাকায় নদীতে প্রচন্ড স্রোতের দেখা দিয়েছে। স্রোতের তীব্রতায় তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকার প্রায় ১০০ মিটারের মতো ভাঙন দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার নির্দেশনা দিয়েছি।
বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে তিন ও চার নম্বর ঘাট এলাকা বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি আজকের মধ্যে তিন নম্বর ঘাট এলাকায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ শেষ হবে। তবে ঘাটটি চালু হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
এছাড়া ৬ সেপ্টেম্বর ভাঙনে বন্ধ হওয়া পাঁচ নম্বর ঘাটটি চালু করতে পানি কমার অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু নতুন করে পানি বাড়ায় আপাতত চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা।
আরও পড়ুন: তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন, ৫ নম্বর ঘাট বন্ধ
পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপ
ফরিদপুরে পদ্মা-মধুমতির ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি
গত কয়েক সপ্তাহ যাবত ফরিদপুরের দুটি নদী পদ্মা ও মধুমতি নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বসতভিটা, ফসলি জমি ও জনপদ। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বেশ কিছু স্থাপনা।
জানা গেছে, জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে মধুমতির ভাঙন শুরু হয়েছে গত ১৫ দিন ধরে। অব্যাহত এই ভাঙনের কারণে এখন হুমকির মুখে জেলার সব থেকে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প।
এখানকার বাসিন্দারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুন কন্যার উদ্যোগে আমরা যারা গৃহহীন ছিলাম তাদের বসবাসের স্থান পেয়েছিলাম । কিন্তু আগ্রাসী এই মধুমতি এখন আমাদের ঘুম নষ্ট করছে।
উপজেলার চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদ হাসান জানিয়েছেন, মধুমতির ভাঙন এ উপজেলায় দীর্ঘদিনের। বিষয়টি নিয়ে বহুবার উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেছি, আশ্বাসও পেয়েছি, কিন্তু স্থায়ী কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। এখন সরকারের স্বপ্ন নগর আশ্রয়ণ প্রকল্পটি হুমকির মুখে রয়েছে।
আরও পড়ুন: নদী ভাঙনে দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ
মানিকগঞ্জে চারতলা বিদ্যালয় ভবন পদ্মায় বিলীন
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলের একমাত্র এমপিওভুক্ত আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয় ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়। গত কয়েকদিনের ভাঙনে ভবনের সামনের অংশের মাটি সরে যায়। দুপুরে আকস্মিকভাবে ভবনটি নদীতে পড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, গত বছর বর্ষায় বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের হুমকিতে থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠদান করা হচ্ছিল।
হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের একমাত্র এমপিওভুক্ত বিদ্যালয় আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে বিদ্যালয়টিতে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে চারতলা ফাউন্ডেশনে এক তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বাকি তিন তলা নির্মাণের অনুমোদন পায়।
এদিকে, স্কুলের কাছাকাছি হাতিঘাটা এলাকায় পদ্মা ভাঙনে গত এক সপ্তাহে পূর্ব পাড়ার আশ্রয় প্রকল্পের ১০টি ঘরসহ পাঁচটি বাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে।
আজিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন জানান, আজ (মঙ্গলবার) স্কুল ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। আপাতত হাটিঘাটা এলাকায় স্কুলের ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তবে বসন্তপুর এলাকায় স্থায়ীভাবে স্কুল তোলা হবে।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, স্কুল ভবনটি আজ দুপুরে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুবিধামত জায়গায় নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন বলেন, ভাঙনরোধে গত বছর কিছু কাজ করা হয়েছিল। কয়েকদিন আগেও ভাঙন এলাকায় পরিদর্শন করা হয়েছে। স্কুলটি ভাঙন ঝুঁকিতে থাকায় আমরা দেড় বছর আগেই স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে রিপোর্ট দিয়েছিলাম। স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধও ছিল।
পড়ুন: পদ্মায় পানি বৃদ্ধি, ভাঙন ঝুঁকিতে ৩৫০ পরিবার
বন্যা: কিশোরগঞ্জে পানিবন্দি লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে
ঝিনাইদহে গড়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গড়াই নদী আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত ভাঙনে বসতভিটা ও চাষের জমি হারিয়ে অনেকে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। যে হাতে মুঠো ভরে সাহায্য দিতো অন্যকে, সেই হাত এখন সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায়।
অনেকে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ তখন যে টাকা ছিল তা দিয়ে নতুন জমি কিনতে পারত।
কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক মন্ডল তাদের একজন।
গত কয়েক বছরে তিনি নদীর তীব্র ভাঙন থেকে বাঁচতে অন্তত সাতবার জায়গা বদল করেছেন।
এক সময় তার একটি টিনশেড ঘর, দশ বিঘা ফসলি জমি থাকলেও এখন তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
মালেক বলেন, ‘ভিটেবাড়ি আর চাষের জমি সবই চলে গেছে গড়াই নদীর গর্ভে। একটা সময় ছিল যখন আমি অন্যদের সাহায্য করতাম। এখন আমি অন্যদের কাছে সাহায্য চাই।’
মালেকের মতো নদীতে বাড়িঘর ও জমি হারিয়েছে বহু মানুষ।
একই গ্রামের আব্দুর রহিম মন্ডল জানান, তিনি বসতবাড়ির জায়গা পাল্টেছেন ছয় বার। তারও ৮ বিঘা জমি ছিল। পাঁকা পোতার টিনের চৌরি ঘর ছিল। বাড়িতে গরু-ছাগল ছিল। যা হারিয়ে এখন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। তারও সবকিছু চলে গেছে এই গড়াই নদীতেই।
এই অবস্থা ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের উত্তরপাড়ার। যে পাড়াতে ৪০টি পরিবার বসবাস করতেন, এখন সেখানে আছেন ৫টি। বাকিরা নদী ভাঙনে সব হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। অনেকে ভিটেবাড়ি হারিয়ে যাবাবরের মতো জীবন কাটাচ্ছেন। যারা এখনও আছেন তারাও নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে।
পড়ুন: সেতুর অভাবে ৩০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ
ফরিদপুরে পদ্মার ভাঙন, বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি
গত কয়েকদিন ধরে ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ওপারে ইউসুফ আলী মাতুব্বরের ডাঙ্গী, ইমান মাতুব্বরের ডাঙ্গী, আলেক খার ডাঙ্গী ও শুকুর আলী মৃধার ডাঙ্গী এলাকায় ভাঙন চলছে।
শুকুর আলী মৃধার ডাঙ্গী এলাকায় ভাঙনের ফলে এর আগে ১১টি বসত ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে তীব্র আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে ইউসুফ আলী মাতুব্বরের ডাঙ্গী, ইমান আলি মাতুব্বরের ডাঙ্গী ও আলেক কার এলাকার ফসলি জমিতে ভাঙন চলছে। নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে কয়েক হাজার বসত বাড়ি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৩টি মসজিদ।
সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, গত এক মাসে পদ্মা নদীর ভাঙনের ফলে অন্তত একশ হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
পড়ুন: আড়িয়াল খাঁর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্য সহায়তা
শুক্রবার দুপুর থেকে ওই এলাকার ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শুক্রবার থেকে এ ভাঙন রোধে কাজ শুরু করছে পাউবো। ওই এলাকায় প্রতিটি ২৫০ কেজি ওজনের পাঁচ হাজার ১০৮টি বালিভর্তি বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে যাতে ওই এলাকাকে বাঁচানো যায় তার জন্য সব কিছু করা হবে।
এ সময় ফরিদপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুল আলম, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, সদরের নর্থ চ্যানেলের ভাঙনকবলিত এলাকায় ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছে পাউবো।
নির্দিষ্ট ওজনের বালুর বস্তা যাতে ফেলা হয় তা নিশ্চিত করা হবে বলে তিনি জানান।
পড়ুন: সিলেটে নদী ভাঙনে হুমকির মুখে বিশ্বনাথের গোবিন্দনগর গ্রাম
গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙনে মসজিদসহ ৫ পরিবারের বসতভিটা বিলীন
তিস্তা-ধরলা পাড়ে ভাঙন, সরকারি ভাতার বদলে বাঁধ চায় এলাকাবাসী
তিস্তা ও ধরলার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত তিন দিনে প্রবল ভাঙনে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা এবং আবাদি জমি, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে।
হুমকির মুখে রয়েছে বাঁধসহ নানান স্থাপনা। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই তীব্র ভাঙনে দিশেহারা লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা পাড়ের মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলায় মোগলহাটের ফলিমারী এলাকায় ধরলা নদীর ডান তীরে গত তিন দিনে নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বসতভিটা ও ভুট্টাসহ অর্ধশত বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। গৃহহারা হয়েছেন অনেক পরিবার। অসহায় পরিবারগুলো স্থানীয় বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে আছেন।
আরও পড়ুন: যাদুকাটা নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে সুনামগঞ্জের ২ গ্রাম
এদিকে তিস্তার ভায়াবহ ভাঙনে লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড়, বালাপাড়া, বাদিয়ারটারী ও চৌরাহা গ্রামে গত তিন দিনে তিস্তা নদীর গর্ভে বিলিন হয়েছে ২০টি পরিবারের বসতভিটা। এছাড়া অর্ধশত বসতভিটা ও শতাধিক একর আবাদি জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। কুটিরপাড় এলাকার এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি বালুর বাঁধ হুমকিন মুখে পড়েছে। এই বাঁধটি স্থানীয়রা নিজ অর্থায়রে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন। এই বাঁধ রক্ষায় তিস্তা পাড়ের হাজারও পরিবার আশায় আছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত তিন দিনে তিস্তার প্রবল ভাঙনে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ঝুঁকিতে থাকা অর্ধশত বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বালু উত্তোলন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে দিশেহারা এলাকাবাসী
এলাকাবাসীর দাবি, ‘আমরা চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিধবা ও বয়স্ক ভাতা চাই না আমার তিস্তার বাঁধ চাই।’
উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বয়সী কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, গত দুই দিনে ভিটেমাটি গিলেছে তিস্তা। সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে আজ তিনি রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফলিমারী গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল হক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত কয়েক দিন আগে চোখের সামনেই বসতভিটা ধরলা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন আশ্রায় নিয়ে আছেন অন্য জায়গায়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর বর্ষা আসার আগেই ধরলার ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্ষাকালে ভাঙন আরও তীব্র হতে পারে। ঝুঁকিতে থাকা অনেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি বিলীন
হঠাৎ তিস্তায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু পানিতে ডুবে গেছে, আর ভাঙতে শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনের কারণে চিন্তিত তিস্তাপাড়ের মানুষরা। পানিবন্দী পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছে বিপাকে। তারা তাদের বাড়িঘর নিয়ে অনেকে ঠাঁই নিচ্ছেন অন্যের বাড়িতে।
তিস্তাপাড়ের ফাতেমা খাতুন আহাজারি করে বলেন, ‘হামাক বাঁচান ব্যাহে, হামার শোগ শ্যাষ। সব নদীত ভাঙ্গিয়া গেইছে ব্যাহে। হামাক বাঁচান। হামরা কৈ যাম কি খামো, শোগ নদী ভাঙি নিয়া যাবার লাগছে। সরকার এগুলা কি কইরবার লাগছে। হামাক বাঁচান ব্যাহে, হামা বাঁচান।’
তিস্তাপাড়ের আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা রিলিপ-টিলিপ কিছু চাই না। বালুর বাঁধ থাকি শুরু করি নদীর পাশে যদি বস্তা দিত তাহল আর নদী ভাঙত না।’
তিস্তাপাড়ের মহিষখোচা বালাপাড়ার রজব পাড়ার শোভা বলেন, ‘আমাদের ভুট্টাবাড়ী ৪ দোন মাটি আবাদ কচ্চি। খুব কষ্ট করি। বাড়ি পাকা করছি তায়ও শোগ ভাঙি যাবার নাগছে। তোমরা বোল্ডার ফেলে দেও। তা হলে ভালো হবে। ৫০০ টাকার জন্য কি ভোট দেই তোমাক। হামার শরম লজ্জা থুইয়া হামরা ভোট দেই। বয়স্ক দেন, বিদুয়া দেন, আরও বাউরা হবে। আর খ্যায় লোব বাড়ি যাইবে। ওগলা বেবাক বন্দ করি দেন। ওই টাকা দেয়া বন্দ করি দেন। ওই টাকা দিয়া তোমরা বস্তা দেও বোল্ডার ফেলান।
তিস্তা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, বালুর বাঁধটির অর্ধেকের বেশি বিলীন হয়েছে। বাকিটুকু রক্ষা করতে জিও ব্যাগ প্রয়োজন। যার চাহিদা পাঠাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেটের আবেদন করেছি, কিন্তু এখন পর্যান্ত বাজেট পাইনি। ভাঙ্গন এলাকায় কিছু বস্তা ফেলা হয়েছে যাতে করে ভাঙন রোধ করা যায়।’
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, তিস্তার ভাঙ্গন এলাকা আদিতমারী ইউএনও পরিদর্শন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুত আছে, ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ বিতরণ করা হবে।’