বাজেট
আইএমএফের শর্তের ভিত্তিতে বাজেট করা হয়নি: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের ভিত্তিতে করা হয়নি।
বাজেট পরবর্তী ভাষণে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের মতো আইএমএফ বাংলাদেশে এসেছে এবং অর্থনীতিতে সহায়তা করার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে। আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের প্রেসক্রিপশন নিয়েছি, কিন্তু বাজেট তৈরিতে সেগুলো অনুসরণ করিনি।’
শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আইএমএফ শুধু অর্থ দিয়ে দেশগুলোকে সাহায্য করছে না, তারা অর্থনীতির ওপরও নজরদারি করছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো।
মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বারবার করা প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কিত, কিন্তু এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। আমরা জনগণকে খাওয়ানো বন্ধ করতে পারি না।’
তিনি বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নমনীয় উপায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সরবরাহ করে আসছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মুদ্রাস্ফীতির কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং সেগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমাদের যদি কোনো ছাড় দিতে হয়, আমরা তা করব।’
আরও পড়ুন: বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, নতুন বাজেটে মূলত দরিদ্র জনগণের সুবিধার দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছে।
সবাইকে কর দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ট্যাক্স নেট প্রসারিত করেছি যাতে আরো কর সংগ্রহ করা যায়।’ অতীতের অন্যান্য বাজেটের মতো এটিও আগামী নির্বাচন এবং জনগণ উভয়কেই লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বাজেটের লক্ষ্য থেকে জনগণ বা নির্বাচনকে আলাদা করতে পারি না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত বাজেটে করা সব প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়েছে।
কামাল বলেন, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স আয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাজেট: নাগরিকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
নিম্নমুখী প্রবণতার পর, রেমিট্যান্স আয় আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমরা আমাদের রিজার্ভের মাধ্যমে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি বিল মেটাতে পারি।
তিনি বলেন, সরকারের কিছু পদক্ষেপের পর ধীরে ধীরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর অনুরোধে বাংলাদেশের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স এবং ব্যাংকিং খাত নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯ জুন তার মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে যেখানে এটি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রেমিট্যান্স এবং রিজার্ভ বৃদ্ধির পরিকল্পনা তৈরি করবে।
তিনি দাবি করেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে বেশি অর্থ উত্তোলন করায় মূল্যস্ফীতি বাড়বে না।
আরও পড়ুন: উচ্চাভিলাষী জিডিপি ও মুদ্রাস্ফীতির অনুমান, বাজেট বাস্তবায়নে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে: সিপিডি
উচ্চাভিলাষী জিডিপি ও মুদ্রাস্ফীতির অনুমান, বাজেট বাস্তবায়নে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে: সিপিডি
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্য সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) শুক্রবার তার বাজেট-পরবর্তী পর্যালোচনায় বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি উভয় ব্যাপারে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকটের আলোকে সেগুলো অর্জনের জন্য কোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ না রেখে।
সিপিডি বলেছে, বাজেট কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করেছে, তবে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়, তাই ঘাটতি অর্থায়নের পরিমাণ শেষ পর্যন্ত বাড়বে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন গুলশানের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনার নেতৃত্ব দেন এবং কয়েকটি টিভি চ্যানেল তা সরাসরি সম্প্রচার করেন।
তিনি বলেন, বাজেট এমন এক সময়ে পেশ করা হয়েছে যখন বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যক্তিগত ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশে অনুমান করা হয়েছিল, যা ২০২২-২৩ সালে ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
একটি প্রশ্নের উত্তরে সিপিডি’র বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৩-২৪ সালে রাজস্ব আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রকৃত রাজস্ব অর্জনের তুলনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ বাড়াতে হবে। যা ‘একেবারে উচ্চাভিলাষী’ বা বলা যায় অতিউচ্চাভিলাষী। একটি ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে বাজেটের প্রবৃদ্ধি অনুমান করা হয়েছে।
মোস্তাফিজ বাজেটের আলোকে আর্থিক নীতি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মতো একটি মুদ্রানীতির আশা করেছেন।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজেটে কৌশলগতভাবে পুঁজিবাজার উন্নয়ন নীতিকে এড়িয়ে গেছে, যা এ ধরনের উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
তিনি আরও বলেন, ‘একটি বাস্তবসম্মত ও টেকসই পুঁজিবাজার প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিনিয়োগের অর্থায়ন বাড়তে পারে না, সরকারি প্রণোদনাভিত্তিক পুঁজিবাজার নতুন বিনিয়োগে ভূমিকা রাখতে পারে না।’
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বহিরাগত অর্থ বকেয়া বা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিষয়ে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
সিপিডি প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বর্তমান বাজেট অর্জনের তুলনায় প্রায় ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হবে এবং ১ দশমিক ৪২ লাখ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে।
আরও পড়ুন: ৭৫ হাজার কোটি টাকার কম রাজস্বে বাড়বে বাজেট ঘাটতি: সিপিডি
সম্পত্তি কর থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত কর আদায় করা যাবে: সিপিডি
বাজেট বাস্তবসম্মত ও কৃষিবান্ধব: কৃষিমন্ত্রী
এবারের বাজেটকে খুবই বাস্তবসম্মত ও কৃষিবান্ধব বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, এবারের বাজেট অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাজেট। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ, আধুনিক উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাজেট দিয়েছি। আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছি। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার দিকে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছি। এ বাজেটের মাধ্যমে এই গতি আরও বেগবান ও গতিময় হবে।
তিনি বলেন, এটি উচ্চবিলাসী ও কল্পনাভিত্তিক বাজেট নয়। এই বাজেট বাস্তবসম্মত। অতীতেও আমরা যেমন সফল হয়েছি, তেমনি আগামী দিনেও এই বাজেট বাস্তবায়নে সফল হবো।
শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় রানী ভবানী স্কুল মাঠে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজের সংকট দূর হবে, পেঁয়াজ নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হবে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা গত ১৪ বছর ধরেই বাজেট আসলে মুখস্থ কথা বলে আসছেন- এটা উচ্চবিলাসী বাজেট, অবাস্তব বাজেট, কল্পনাভিত্তিক বাজেট। আমরা কখনো উচ্চবিলাসী বাজেট দেই নি। আগে দেশে মোট জিডিপির আকার ছিলো চার লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা, তা এখন ৪৪ লাখ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। বাজেট কল্পনাভিত্তিক হলে এটি অর্জন করা সম্ভব হতো না। এ বাজেটের মাধ্যমে জিডিপির আকার আরও বৃদ্ধি পাবে।
বাজেটটি সত্যিকার অর্থে গরীববান্ধব, কৃষিবান্ধব ও পল্লীবান্ধব উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই বছরের বাজেটে কৃষিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, নতুন জাত উদ্ভাবন, ভর্তুকি মূল্যে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রদান, ভর্তুকি অব্যাহত রাখায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গ্রামীণ ও পল্লী বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার জন্য এই বাজেটকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেছেন, আওয়ামী লীগ মোটেই বিচলিত নয়। কোনো স্যাংশনই আমাদের উন্নয়ন ব্যাহত করতে পারবে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ব্যাহত করতে পারবে না। যত ধরনের স্যাংশনই দেক, তা মোকাবিলা করার মতো যোগ্যতা বাংলাদেশের আছে।
বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা আয়োজন প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিচ্ছেন। গ্রামের গরীব মানুষেরাও এখন উন্নত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকার ৬০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ প্রায় ১০০ জনের মেডিকেল টিম সকাল ০৯ টা থেকে সারাদিন চিকিৎসাসেবা দিয়েছে।
মধুপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে পৌর মেয়র সিদ্দিক খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি, সাবেক পৌর মেয়র মাসুদ পারভেজ প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে ২-৩ দিনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে: কৃষিমন্ত্রী
হাওরে ৯০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
বাজেট গরিববান্ধব গণমুখী, সমালোচনা গৎবাঁধা: তথ্যমন্ত্রী
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী ও গরিববান্ধব বলে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেটের সমালোচকদের সমালোচনা বরাবরের মতোই গৎবাঁধা ও গতানুগতিক। অনেকে বাজেট ভালোভাবে না দেখেই তাড়াহুড়া করে সমালোচনায় ব্যস্ত।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
ড. হাছান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫তম বাজেট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০তম এই বাজেট ২০০৮-৯ সালের তুলনায় প্রায় নয়গুণ বড় এবং পিপিপিতে (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) ২০০৯ সালের একশ বিলিয়ন ডলার জিডিপির তুলনায় এখনকার জিডিপি এক ট্রিলিয়ন প্লাস ডলার, অর্থাৎ প্রায় দশগুণ বড়, যা নিঃসন্দেহে দেশের অগ্রগতি সমৃদ্ধির পরিচায়ক।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বময় মন্দা, ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকটের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে শৈথিল্য আসায় বাজেট প্রণয়ন বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো তারপরও এবারের বাজেট গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ লক্ষ হাজার কোটি টাকা বেশি।
প্রস্তাবিত এ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আনার এবং এ খাতে বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই বাজেটের সবচেয়ে বড় উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এই অর্থ বছরেই প্রথম সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত। কোনো রাজনৈতিক দল এ ধরণের সার্বজনীন পেনশন চালুর প্রস্তাব দেয়নি। আপনারা বিএনপির দাবি-দাওয়া জানেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য, তার ও তারেক জিয়ার শাস্তি-মুক্তির বাইরে জনমানুষ নিয়ে তাদের কোনো দাবি থাকে না।’
আরও পড়ুন: অনলাইন নিউজ পোর্টাল পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনার পরিকল্পনা করছে সরকার: তথ্যমন্ত্রী
১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সের যে কেউ দশ বছরের জন্যে চাঁদা দিয়ে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চাশের বেশি বয়স হলেও দশ বছর চাঁদা দিয়ে পেনশনের সুযোগও রয়েছে।
বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন
আয়কর নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, 'বাংলাদেশের কর ও জিডিপি'র অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। গত ১৪ বছরে দেশের জিডিপি প্রায় দশগুণ, বাজেট প্রায় ৯ গুণ বৃদ্ধি পেলেও আয়কর দেওয়ার হার বেড়েছে মাত্র ৩ গুণ। ২০০৯ সালে ১১ লক্ষ মানুষ আয়কর দিতো, গত বছর ২৯ লক্ষ মানুষ আয়কর দিয়েছে। অথচ দেশে অন্তত ২ কোটি মানুষ আয়কর দিতে সক্ষম। কিন্তু মানুষ কর দেয় না। তাই করের আওতা বাড়ানো অযৌক্তিক নয়।'
বাজেট বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর নয়
'আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে এ বাজেট লুটপাটের'- বিএনপির এমন সমালোচনা খন্ডন করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপি'র অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট দিতে প্রতিবার বাজেটের আগে প্যারিস কনসোর্টিয়ামে ছুটে যেতেন সাহায্যের জন্যে। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজেট কোনভাবেই বিদেশি সাহায্যনির্ভর নয়। এ বাজেটে ১ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে। বিএনপি লুটপাটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, তারা পরপর পাঁচবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল। তাদের মুখে লুটপাটের অভিযোগ শুনলে হাসি পায়।'
পাণ্ডিত্য ফলাতে গিয়েই সিপিডির সমালোচনা
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বাজেটকে বাস্তববিবর্জিত বলেছে, এ নিয়ে প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী হাছান বলেন, 'গত ১৪ বছরে সিপিডি বাজেটের প্রশংসা করতে পারেনি। এবছর তো বাজেট প্রস্তাব অধিবেশন চলমান থাকা অবস্থায়ই তারা বলেছে, এই বাজেট উচ্চাভিলাষী, বাজেট বাস্তবায়ন হবে না।'
তারা বলেছে, ‘অথচ বাংলাদেশের বাজেট বাস্তবায়নের গড় হার ৯৭ শতাংশ। ডলারের মূল্য না বাড়লে আমাদের মাথাপিছু আয় তিন হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতো। এ সময় দেশের জিডিপি বেড়েছে, দারিদ্র্য ৪১ শতাংশ থেকে কমে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এগুলো তাদের চোখে পড়ে না। আসলে সিপিডিকে তাদের পাণ্ডিত্য দেখাতে হয় এবং ভুল ধরাটাই তাদের পেশা। এভাবেই তারা নানা জায়গা থেকে ফান্ড পায়। এ কারণেই তারা প্রশংসা করতে পারে না।'
ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের চলতি বাজেট নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকবে, ইতিবাচক সমালোচনাকে আমরা সবসময় স্বাগত জানাই।
আরও পড়ুন: সরকারের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ ও মানবিক রাষ্ট্র: তথ্যমন্ত্রী
মার্কিন ভিসা নীতি বিএনপির ওপরই বড় চাপ তৈরি করেছে: তথ্যমন্ত্রী
সংসদে দেশের সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ঘাটতিসহ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন।
অডিও-ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে উপস্থাপিত তার ২৫২ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বিদ্যমান মুদ্রাস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে থেকে প্রায় ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার আশা করেছিলেন। অর্থনীতিবিদেরা এই লক্ষ্যকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কামাল টানা তার পঞ্চম বাজেট উপস্থাপন করেছেন।
তিনি এবারের বাজেটে ব্যয়ের প্রস্তাব করেছেন ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যেখানে মোট রাজস্ব ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে এবং ৭০ হাজার কোটি টাকা আসবে অন্যান্য উত্স থেকে।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ।
তিনি পরিচালন ও অন্যান্য খাতে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে, যা বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কম।
আরও পড়ুন: বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
ঘাটতি অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা অর্থায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং বাইরের উত্স থেকে ১২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা আনা হবে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট।
নির্বাচনকে সামনে রেখে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন পণ্যের ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের পাশাপাশি করমুক্ত ব্যক্তির আয়কর সাড়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন।
সামনের দিনগুলোতে সরকার যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে সেগুলোও তিনি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে আমাদের বর্তমান চ্যালেঞ্জ হল মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, চলতি হিসাবের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করা।’
তিনি ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে টেকসই উত্তরণ এবং উত্তরণ-পরবর্তী বাস্তবতা’ মোকাবিলা করার জন্য কৌশলগুলো গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে শুল্ক যুক্তিযুক্তকরণ, রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে দেশীয় সম্পদ সংগ্রহ, ভর্তুকি প্রত্যাহার বা নগদ সহায়তা বা বিকল্প অন্বেষণ.. এখনই বিবেচনা করা উচিত।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘জনবান্ধব’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে, যা দেশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সংকট থেকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একে ‘জনগণের টাকা লুটপাটের স্মার্ট বাজেট’ বলে নিন্দা করেছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বাজেটকে অবাস্তব আখ্যায়িত করে বলেছেন, সরকার জনগণের অর্থ ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন: 'স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলার, দারিদ্র্যসীমার ৩ শতাংশের কম হবে'
বাজেট ২০২৩-২৪: ভ্রমণ কর বাড়বে
বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বৃহস্পতিবার এক তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে এই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী ও অবাস্তব বলে অভিহিত করেছে।
চলমান সংকটের প্রেক্ষাপটে বাজেটে ঘোষিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনুমানগুলো অলীক ও অপ্রাপ্য।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে যেসব পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়েছে তা দিয়ে মূল্যস্ফীতি রোধ ও মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা অসম্ভব।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, কিন্তু ৩৮টি সেবা পাওয়ার জন্য যাদের আয় করযোগ্য আয়ের নিচে নেমে আসে তাদের ওপর ন্যূনতম ২ হাজার টাকা ধার্য করাটা অযৌক্তিক।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আমদানি করি তা থেকে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই।’
তবে সিপিডি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য পৃথক করদাতাদের জন্য বিদ্যমান ৩ লাখ টাকা থেকে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাবের প্রশংসা করেছে।
আরও পড়ুন: ৭৫ হাজার কোটি টাকার কম রাজস্বে বাড়বে বাজেট ঘাটতি: সিপিডি
সম্পত্তি কর থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত কর আদায় করা যাবে: সিপিডি
১৫০০ কোটি টাকার নিরাপত্তা তহবিল অযোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য ব্যয়: সিপিডি‘র জরিপ
বাজেট ২০২৩-২৪: ভ্রমণ কর বাড়বে
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনসাধারণের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ কমাতে, মিতব্যয়ীতার অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং অর্থনীতিতে নতুন রাজস্ব ধারা তৈরি করতে ভ্রমণ কর হার বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন।
বৃহস্পতিবার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করার সময় তিনি বলেন, ‘এই নীতি একদিকে আমাদের আরও রাজস্ব দেবে এবং অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ কমিয়ে ডলার সাশ্রয় করবে।’
বিমান পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকীকরণ এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করার প্রয়াসে সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৯৬৯ কোটি টাকা বেশি, যা ছিল ৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।
বাণিজ্যের সুবিধার্থে এবং বিমান চলাচলের খরচ কমানোর জন্য নিবন্ধিত এয়ারলাইন্স দ্বারা আমদানি করা এয়ারক্রাফ্ট ইঞ্জিন, টার্বো জেট এবং বিমানের যন্ত্রাংশ আমদানিতে অগ্রিম কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
এক দশক ধরে চলমান রেয়াতি হারে হোটেল সামগ্রী আমদানির বিদ্যমান প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারেরও প্রস্তাব করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু অনেক বড় মাপের এবং উচ্চ মানের হোটেল ইতোমধ্যে এই সুবিধার অধীনে নির্মিত হয়েছে, তাই শুল্ক কর অব্যাহতি অব্যাহত রাখা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে। তাই রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে আমি বিদ্যমান বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি।’
আরও পড়ুন: সংসদে দেশের সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী
বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
বাজেটে বিদেশ থেকে আনা স্বর্ণের জন্য বিদ্যমান শুল্ক দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে আসা প্রতি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম সোনার জন্য শুল্ক কর দ্বিগুণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল শুল্ক কর বর্তমান ২ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব ঘোষণা করেন।
প্যাসেঞ্জার (ননট্যুরিস্ট) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬-এর বিধি ৩-এর উপ-বিধি (১০) অনুসারে, একজন যাত্রী বিদেশ থেকে আগমনের সময় ২৩৪ গ্রাম ওজনের সোনার বার বা সোনার টুকরা আমদানি করতে পারেন সমস্ত শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে।
দেশে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে অর্থমন্ত্রী এই সুবিধা কমিয়ে সোনার পরিমাণ ২৩৪ গ্রামের পরিবর্তে ১১৭ গ্রাম করার প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও, আমি ঘোষণার অতিরিক্ত বা যাত্রী দ্বারা লুকিয়ে আনা যে কোনও পরিমাণ সোনা বাজেয়াপ্ত করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যমান ব্যাগেজ নিয়ম সংশোধন করার প্রস্তাব করছি।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, লাগেজ নিয়মের অধীনে একজন যাত্রীকে বিদেশ থেকে আসার সময় প্রতি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম সোনার বার বা সোনার টুকরোগুলোর জন্য মোট দুই হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। আমি প্রতি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম সোনার বার বা সোনার টুকরার জন্য মোট শুল্ক-কর বাড়িয়ে টাকা ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।
আরও পড়ুন: সংসদে দেশের সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী
বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
বাজেট ২০২৩-২৪: ভ্রমণ কর বাড়বে
বাজেট ২০২৩-২৪: সাংস্কৃতিক খাতে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার তার বাজেট বক্তৃতায় দেশের সাংস্কৃতিক খাতে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।
এর মধ্যে ৪৩৭ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয়ে এবং ২৬২ কোটি টাকা উন্নয়নে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে আগের অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে ৬২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৬৩৭ কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করে ৬৬২ কোটি টাকা করা হয়।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য রক্ষায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে এবং ভাষা, সাহিত্য, চারুকলা, সঙ্গীত ও নাটকসহ আরও অনেক কিছুর উন্নয়নে উদ্যোগ নিচ্ছে।
সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা দেশের সাতটি জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও চর্চার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং ঐক্যবদ্ধ সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছি। গবেষক, চিন্তাবিদ ও সৃজনশীল মননের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নিয়মিত পুরস্কার/ফেলোশিপ দেওয়া হচ্ছে।’
এছাড়া দরিদ্র সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ, গবেষণা, প্রদর্শন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক শিল্প ও সাহিত্যের প্রকাশনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শনাক্তকরণ, খনন, পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, ভাষা শহীদদের স্মৃতিসহ সৃজনশীল সৃষ্টির কপিরাইট সংরক্ষণ, দিবস ও বাংলা নববর্ষকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৩-২৪: ভ্রমণ কর বাড়বে
'স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলার, দারিদ্র্যসীমার ৩ শতাংশের কম হবে'
বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
বাজেটে দাম বাড়ানো ও কমানো হয়েছে যেসব পণ্যের
প্রতি বছরের মতো এবারও বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বা শুল্ক পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি সরাসরি এসব পণ্যের দামকে প্রভাবিত করে।
সাধারণত বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই এই পরিবর্তন কার্যকর হবে।
কর অব্যাহতি প্রত্যাহার এবং কিছু ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ কর এবং আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট আরোপের কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
পণ্যগুলো হলো- বলপয়েন্ট কলম, প্লাস্টিক পণ্য, খেজুর, গগলস ও সানগ্লাস, সব ধরনের টিস্যু, মোবাইল ফোন সেট, গ্যাস সিলিন্ডার, সিমেন্ট, ইট, সিগারেট, তরল নিকোটিন, বাসমতি চাল, কাজুবাদাম, আঠা, বিদেশি সফটওয়্যার, বিদেশি লিফট এবং এসকেলেটর, সাইকেল এবং বিদেশি স্যান্ডউইচ প্যানেল, জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মিষ্টি ও মিষ্টি সংক্রান্ত পণ্যের দাম কমতে পারে।
এছাড়াও, হাতে তৈরি বিস্কুট, কেক, শিশুর ডায়াপার ও প্যাড, দেশি এলইডি বাল্ব, সুইচ, মাংস এবং মাংস সংক্রান্ত পণ্য, ই-কমার্সের ডেলিভারি চার্জ এবং অভিজাত বিদেশি কাপড়ের দামও কমতে পারে।
আরও পড়ুন: বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
'স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলার, দারিদ্র্যসীমার ৩ শতাংশের কম হবে'