বাজেট
কেসিসির ৮৬১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ৮৬১ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এ বাজেট ঘোষণা করেন।
প্রস্তাবিত এ বাজেটে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯২ কোটি ১১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা এবং সরকারি বরাদ্দ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০৮ কোটি ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৭৪.১২ শতাংশ।
বাজেট ঘোষণাকালে সিটি মেয়র বাজেটের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে বলেন, বাজেটে এবারও নতুন কোন কর আরোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত সকল স্থাপনার ওপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি একটি উন্নয়নমুখী বাজেট। বাজেটে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ, কোভিড-১৯ প্রতিরোধ, মশক নিধন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, ধর্মীয় উপাসনালয়-পার্ক-বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-রাস্তাঘাট উন্নয়ন, কেসিসির বিভিন্ন দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
মেয়র বলেন, কেসিসি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটি কেবল সরকারি বা বিদেশি সাহায্য ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারে না। কেসিসিকে নিজস্ব আয়ের ওপর নির্ভর করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
মেয়র জানান, কেসিসির নিজস্ব সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে এবং ব্যয় সংকোচন করে রাজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে মোট ৫৬ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাত থেকে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪২ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট উন্নয়নের সাথে সাথে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। মানববর্জ্য উন্নয়ন এবং মশক নিধনের জন্য কনজারভেন্সি খাতে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেটে এডিপির জন্য থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। উক্ত বরাদ্দ থেকে পূর্ত খাতে ২৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা, নগরীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্ব খুলনা ওয়াসার হলেও বিশেষ প্রয়োজনে জরুরি পানির চাহিদা মেটানোর জন্য গভীর ও অগভীর নলকূপকে সাবমারসিবল পাম্পে রূপান্তর করার জন্য এখাতে ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ভেটেরিনারি খাতে ৫০ লাখ টাকা, জনস্বাস্থ্য খাতে ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা, কনজারভেন্সি খাতে ১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর ১৮৬ কোটি ২০ লাখ ৮৯ হাজার টাকার উন্নয়ন সহায়তা পাওয়ার আশা করা যায়। এছাড়া জাতীয় এডিপিভুক্ত তিনটি প্রকল্পে ৪২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেট অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেসিসির অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর শেখ মো. গাউসুল আজম। এ সময় কেসিসির প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, কেসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন: জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পাস
বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে: জিএম কাদের
বিদেশি ঋণ নিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার অনেক মিল রয়েছে। দু’দেশই বিদেশ থেকে রেমিটেন্স গ্রহণ করে, পর্যটন ও গার্মেন্টস শিল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।’
বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির প্রধান আরও বলেন, কোভিড মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় প্রায় দশ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলেছে, কিন্তু সে কারণে দেশটি দেউলিয়া হয়নি। বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে গেছে।’
দলের প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কাকরাইল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয় পার্টি।
জিএম কাদের বলেন, ‘ঋণের ওপর নির্ভর করে ২০২২-২৩ সালের জাতীয় বাজেট দেয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা সরকারকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানোর জন্য অনুরোধ করেছি, কিন্তু এ বিষয়ে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অহেতুক ফূর্তি করতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জনগণের কাছ থেকে কর আদায় করতে পারেনি। সাধারণ মানুষ কর দিতে না পারলে এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেন, সরকার বৈদেশিক ঋণ নিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যখন সুদসহ ঋণ শোধ করতে হবে, তখন দেশের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাবে।
পড়ুন: এরশাদের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
তিনি বলেন, ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে প্রতিদিন ১ কোটি টাকা হারে বছরে ৩৬৫ কোটি টাকা আয় করলে আসল ঋণ পরিশোধ করতে ৯০ বছর সময় লাগবে।
কাদের বলেন, ‘সুদসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে গেছে।’
জাতীয় পার্টির প্রধান বলেন, ঋণ নির্ভরতার কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়েছে। পরিচালন ব্যয় না কমালে সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে।
দেশে মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের টাকা লুটপাট চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
কাদের বলেন, সরকার এখন করের বিনিময়ে অবৈধভাবে অর্জিত হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা বৈধ করার পথ বের করেছে। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই। কর দিয়ে যদি অপরাধ মাফ হয়, তাহলে খুন-ডাকাতি করেও করের মাধ্যমে বৈধ করা যাবে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় বৃহস্পতিবার সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
পড়ুন: বিদেশিদের কাছে নয়, জনগণের কাছে যান: বিএনপিকে তথ্যমন্ত্রী
বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার সরকার বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা এবং মহামারির কারণে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।’
বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে সংসদ নেতা হিসেবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও সরকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার এত বড় বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী এবং বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অন্য সকলকে তার আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘অনেকেই ভাবতে পারেনি যে আমরা এটি (বাজেট) উত্থাপন করতে পারব, তবে আমরা এটি করতে পেরেছি।’
এটি মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম জাতীয় বাজেট এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে প্রদত্ত চতুর্থ বাজেট, তিনি উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেটের কয়েকটি কর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা দরকার: ড. আতিউর
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের সর্বাত্মক সমর্থনে আমরা ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ ও করোনাভাইরাস মহামারির বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে এবং তা করতে সক্ষম হবে। আমরা দেশে-বিদেশে শত বাধা অতিক্রম করে অসম্ভবকে সম্ভব করছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতার কারণে অনেক উন্নত দেশ যখন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ সফলভাবে তার অর্থনৈতিক অগ্রগতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার মূল কৌশল হবে- পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো এবং চাহিদার বিদ্যমান প্রবৃদ্ধি হ্রাস করা। মূল্যস্ফীতি কমানোই আমাদের বড় লক্ষ্য।
তিনি বলেন, এই সপ্তাহে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ায় পণ্যের সরবরাহ অনেকাংশে সহজ হচ্ছে এবং যোগাযোগ নেটওয়ার্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কারণে মুদ্রাস্ফীতির হার কমাতেও সাহায্য করবে।
সরকার বিলাস দ্রব্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের এমন জিনিসপত্র যা খুব বেশি প্রয়োজনীয় নয়, সেগুলো আমদানি বন্ধ করার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেছেন, আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
এই প্রেক্ষাপটে তিনি সকলকে বাংলাদেশের তৈরি পণ্য ও সেবা গ্রহণের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ষড়যন্ত্রে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ২ বছর পিছিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
চসিকের ২১৬১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য দুই হাজার ১৬১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে।
রবিবার (২৬ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই বাজেট ঘোষণা করেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়র হিসেবে এবার দ্বিতীয় বাজেট ঘোষণা করলেন তিনি।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন অনুদান খাতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২১২ কোটি টাকার আয় দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে দেখানো হয়েছে বকেয়া কর ও অভিকর খাতে ২১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। হালকর ও অভিকর খাতে আয় দেখানো হয়েছে ২১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এছাড়া ফিস আদায় বাবদ ১২৫ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার, জরিমানা আদায় বাবদ ৬০ লাখ, সম্পদ হতে অর্জিত ভাড়া ও আয় বাবদ ১১১ কোটি ৮০ লাখ, ব্যাংক স্থিতি থেকে আয় বাবদ ৫ কোটি ও ভর্তুকিসহ নিজস্ব উৎস থেকে আয় বাবদ ৯০৪ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতে ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা, বকেয়া দেনা বাবদ ১৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে চসিকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পারিশ্রমিক প্রদান বাবদ ব্যয় হবে বছরে ২৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এছাড়া মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ভাড়াকর ও অভিকর বাবদ ৭ কোটি ৩৫ লাখ, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও পানি ব্যয় বাবদ ৫০ কোটি ৫০ লাখ, কল্যাণমূলক ব্যয় বাবদ ৪২ কোটি ৭০ লাখ, ডাক তার দূরালাপনী বাবদ ১ কোটি ২০ লাখ, আতিথেয়তা ও উৎসব বাবদ ৬ কোটি ৫ লাখ, বীমা বাবদ ৬৫ লাখ, ভ্রমণ ও যাতায়াত ব্যয় বাবদ ১ কোটি ৩০ লাখ, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা ব্যয় বাবদ ৬ কোটি টাকাসহ মুদ্রণ ও মনিহারী বাবদ ৬ কোটি ৮১ লাখ, ফিসবৃত্তি ও পেশাগত ব্যয় বাবদ ১ কোটি ২৩ লাখ, প্রশিক্ষণ বাবদ ১ কোটি, ভাণ্ডার ও বিবিধ খাতের ব্যয় মিলিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শুধুমাত্র বেতন, ভাতা, পারিশ্রমিকসহ চসিকের বার্ষিক পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় হবে ৫৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া বাকি ১ হাজার ৫৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা উন্নয়ন, বকেয়া দেনা, ত্রাণ ক্রয় ও অন্যান্য খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
বাজেট ঘোষণাকালে মেয়র রেজাউল করিম চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে তার একগুচ্ছ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। বর্তমান ও ভবিষ্যতের আলোকে চসিক নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর প্রত্যাশা ও চট্টগ্রাম নগরকে পরিবেশগত, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, নান্দনিক ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই বাজেট বলে জানান তিনি। জনগণের প্রত্যাশিত সেবা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিশ্চিত করার জন্য নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পড়ুন: ৯২২.৪৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দিল ঢাবি সিন্ডিকেট
আয়কর, ট্রেড লাইসেন্স এ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে চসিকের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মেয়র রেজাউল জানান, নগরের ব্যবসায়ীদের সঠিকভাবে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা গেলে সেটার সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ লাখ। অথচ চসিকের রেজিস্টার অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা মাত্র ৮৫ হাজার।
মেয়র রেজাউল বলেন, অবসর ও মৃত্যুজনিত কারণে চসিকের অনুমোদিত বিভিন্ন পদ শূন্য হওয়ায় উক্ত পদগুলো পূরণের লক্ষ্য কার্যক্রম চলছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী অস্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের ব্যাপারে কার্যক্রম চলছে। মানবিক দিক বিবেচনায় বিভিন্ন পদের কর্মচারীদের দুই দফা বেতন বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কর আদায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাজেট ঘোষণাকালে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম, সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া চসিক ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত আছেন।
পড়ুন: সরকারের সুবিধাভোগীদের স্বার্থ রক্ষায় বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে: বিএনপি
বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন বড় চ্যালেঞ্জ: এফবিসিসিআই
নতুন নারী উদ্যোক্তাদের ৮ বছর পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার দাবি
নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৬-৮ বছর পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়েছে উইমেন এন্টারপ্রিনেয়ার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব)।
বুধবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা করে ওয়েবের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
নারীবান্ধব করনীতি প্রণয়ন করার ওপর জোর দিয়ে ওয়েব বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট ও কর মওকুফ করা হয়েছে, যা এক কোটি টাকা করা প্রয়োজন। নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ব্যবসা শুরু থেকে ৬-৮ বছর পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা রাখা হলে উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন।এছাড়া এম এস এম ই ও এস এম ই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কমপক্ষে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত আয়সীমা করা প্রয়োজন।
বক্তারা বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বুটিক, বিউটি পার্লার এবং ক্যাটারিং, রেস্তোরাঁ, খাদ্য ও দেশীয় পণ্য ব্যবসা সহ পরিষেবা খাতে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হলে উদ্যোক্তরা উৎসাহিত হবেন। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের আমদানি করা যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের ওপর আরোপিত আমদানি কর হ্রাস করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন প্রথম আদিবাসী নারী রাজনীতিবিদ
ওয়েব’র বাজেট বিবৃতিতে বলা হয়, করোনার প্রভাব মোকাবেলায় নারী উদ্যোক্তাদের ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ভ্যাট ও ট্যাক্স মওকুফ করা হলে এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি ৫০ শতাংশ হ্রাস করা হলে নারী উদ্যোক্তারা কোভিডের ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকার বাইরের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনলাইন মার্কেটিং, অনলাইন প্রোডাক্ট প্রমোশন ও অনলাইনে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা ও ইন্সুরেন্স এর ব্যবস্থা করা হলে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থা করারও দাবি জানিয়েছে ওয়েব।
বিবৃতিতে বলা হয়, এস এম ই খাতের উন্নয়নে জামানত ছাড়া ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। এ ব্যপারে সরকারকে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
নারী উদ্যোক্তারা যাতে কম সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন, সে জন্য সুদহার কমানোর দাবি করেছে সংস্থাটি।
সংস্থাটির দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, রপ্তানী খাতের সঙ্গে জড়িত নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ প্রনোদনার ব্যবস্থা করা, আমদানি করা যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের ওপর আরোপিত আমদানি কর হ্রাস করা, দরিদ্র নারী ও বিধবাদের জন্য বয়স্ক ভাতা বাড়ানো, ইন্টারনেটে নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধ করার জন্য নারীদের সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া, ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহন এবং স্টার্টআপ বিজনেস খাতে বাজেটে বরাদ্দ প্রদান।
আরও পড়ুন: দেশের প্রথম নারী অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সে প্রথম নারী প্রধান
মেডিটেশনকে ভ্যাটমুক্ত করার আহ্বান বিশিষ্টজনদের
প্রস্তাবিত চলতি বাজেট থেকে মেডিটেশনের উপর স্থায়ীভাবে ভ্যাট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, সংসদ সদস্যসহ বিশিষ্টজনেরা। মেডিটেশন বা ধ্যানকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে গ্রহণ করে এ সেবাকে পুরোপুরি ভ্যাটমুক্ত করার আহ্বান জানান তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, যেখান থেকে মানুষের সেবা শুশ্রূষা বা সুস্থতার একটা পদ্ধতি করা হয় মেডিটেশন হচ্ছে সেরকম একটা মাধ্যম বা পথ। এর উপর সাধারণত কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স হওয়ার কথা না। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভলি এবং যৌক্তিকভাবে এটা রিভিউ করা দরকার।
কবি অসীস সাহা জানান, মেডিটেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত উপকার হয়, চিন্তা-চেতনার বিকাশও হয়। তাই মেডিটেশনের উপর যেন কোনো ভ্যাট আরোপ করা না হয়। এটা যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে এক্ষেত্রে যারা উদ্যোগ নিয়েছেন, শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে-তা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের লাখ লাখ মানুষ।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তিনি মানবিক মানুষ এবং মানবিক কাজে তার ভূমিকা সর্বত্র নন্দিত। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীরও এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়া উচিত। এবং তিনি যদি হস্তক্ষেপ করেন তবে এ ধরনের বৈপরীত্যমূলক কাজে যে ক্ষতি হয় সে ক্ষতিটা অন্তত হবে না এবং বহু মানুষ উপকৃত হবে। মেডিটেশন আরও বেশি বিস্তৃত হোক এবং সারাদেশে ছড়িয়ে যাক, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাক এটাই আমার প্রত্যাশা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন, তাদের মনোজগত ও দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীর পরিবর্তন ঘটে। তাদের হৃদয় পূর্ণ হয়ে ওঠে মমতা ও সমমর্মিতায়। এটি নিজের পরিবারের সদস্য ও আপনজনদের জন্যেই শুধু নয়, অচেনা অজানাদের জন্যেও তাদের সমমর্মিতা খুব গুরুত্ব পায়। এ অনুভূতিটা হয় সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ। ইতিবাচক এই দৃষ্টিভঙ্গি জীবনকে করে তোলে প্রশান্ত, স্থির। এতে ইতিবাচক আবেগের প্রাবল্যও বৃদ্ধি পায়। ফলে মস্তিষ্কের গঠন ও কর্মপন্থায় পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। ইলেক্ট্রো-এনসেফালোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হয়েছে। গবেষকরাও বলছেন, নিয়মিত মেডিটেশনের কথা। শারীরিক-মানসিক সুস্বাস্থ্য অর্জনসহ সবদিক থেকে ভালো থাকার এই চর্চা মেডিটেশন বা ধ্যানের উপর কর না নিয়ে এটিকে চিকিৎসা সহায়ক হিসেবে স্থায়ীভাবে ভ্যাটমুক্ত করা হোক।
এর আগে সংসদে চলতি বাজেট বক্তৃতায় মেডিটেশনের উপর ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। মঙ্গলবার নীলফামারী-৪ আসনের আহসান আদেলুর রহমান, এমপি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, আপদকালীন বরাদ্দ বাড়াতে হবে, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে হবে। মেডিটেশন সেবা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা। স্বাস্থ্য সেবা ভ্যাটের আওতামুক্ত। মেডিটেশন সেবাকেও স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে স্থায়ীভাবে ভ্যাটের আওতামুক্ত করার আবেদন করছি।
পটুয়াখালী-৩ আসনের এসএম শাহজাদা, এমপি সংসদে তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, কোভিডের কারণে অনেকেরই অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। এই যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এটা নেয়ার জন্য মেডিটেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ মেডিটেশনের ওপর আবার ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এই দুটি জিনিস পরস্পর-বিরোধী হয়ে যাচ্ছে। একদিকে সিগারেটের উপর ভ্যাট কম হচ্ছে, কর কম হচ্ছে অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য চর্চার জন্য যে মেডিটেশন তার উপর আবার ভ্যাট বসানো হচ্ছে। আমি মনে করি, মানসিক স্বাস্থ্য থেকে ভ্যাট বসিয়ে ইনকামের যে টার্গেট নেয়া হয়েছে সেই টার্গেটই যদি আবার সিগারেটের উপরে আরও চড়াও করে দেওয়া হয় তাহলে সে টার্গেটটা অন্তত পূরণ হবে। এই দুটো জিনিস অর্থমন্ত্রীকে বিবেচনা করার জন্য স্পিকারের মাধ্যমে আবেদন করছি।
পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেটের কয়েকটি কর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা দরকার: ড. আতিউর
ঢাকা-৮ আসনের রাশেদ খান মেনন, এমপি তার বাজেট বক্তৃতায় প্রশ্ন রেখে বলেন, মেডিটেশনকে মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিধায় একে করের বাইরে রাখা প্রয়োজন। কোভিড প্রতিক্রিয়ায় মানুষের মন যখন বিপর্যস্ত সেখানে মেডিটেশনের আশ্রয় নিলে তাকে বেশি মূল্য দিতে হবে। কেন মাননীয় স্পিকার?
সোমবার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রহুল হক বলেন, মেডিটেশনে ট্যাক্স দেয়া হয়েছে। সেটা কমিয়ে গতবারের মতো জিরো করার জন্য আমি আহ্বান জানাই।
খুলনা-৫ আসনের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ তার বক্তব্যে বলেন, মেডিটেশন পরে একটি শুল্ক ধার্য হতে যাচ্ছে। এ শুল্ক যাতে ধার্য্য না হয় সে দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া সংসদের বাজেট বক্তৃতায় মেডিটেশনের উপর থেকে ভ্যাট আরোপ প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রস্তাব করেন বরিশাল-৪ এর পংকজ দেবনাথ এমপি।
প্রসঙ্গত, মেডিটেশন সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে। অথচ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জন্যে প্রকাশিত উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসার গাইডলাইনে যৌথভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম চর্চার কথা বলা হয়েছে।
পড়ুন: বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন বড় চ্যালেঞ্জ: এফবিসিসিআই
অর্থ পাচারকারীদের দায়মুক্তির সমালোচনা সংসদ সদস্যদের
সাত শতাংশ কর দিয়ে পাচার করা অর্থ বৈধ করার বিষয়ে বাজেট প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।
রবিবার সংসদে তারা ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রস্তাব করায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সমালোচনা করেন।
অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, যারা টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তা না হলে অর্থপাচার বিরোধী আইনের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগ বাতিলের আহ্বান টিআইবির
পীর ফজলুর রহমান বলেন, যারা টাকা চুরি, অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছে তাদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটি মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়।
গাইবান্ধা থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি এই সাধারণ ক্ষমা পাসের পর চলমান মামলার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
পাটোয়ারী বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এই সাধারণ ক্ষমা লাভ করা যাবে না এমন একটি নীতি থাকা উচিত।
জাতীয় পার্টির সাংসদ বলেন, ভারতে এ ধরনের সাধারণ ক্ষমা দেয়া হলেও তা কোনো সফলতা আনতে পারেনি।
সিলেট থেকে নির্বাচিত গণফোরামের সাংসদ মোকাব্বির খান দেশের শীর্ষ ১২ দুর্নীতিবাজের শাস্তি দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না: অর্থমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে আমরা দেশের ৫০ শতাংশ দুর্নীতি কমিয়ে আনতে পারব, অন্যথায় আমি সংসদ থেকে পদত্যাগ করব।’
মোকাব্বির খান অভিযোগ করে বলেন,বড় বড় পদে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা বড় দুর্নীতিবাজদের ছোঁয়ার সাহস কর্তৃপক্ষের নেই।
কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ সদস্য প্রাণ গোপাল দত্ত অর্থ পাচারকারীদের সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাব সংশোধনের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটার কোনো ইতিবাচক প্রভাব নেই, যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, তারা সৎ থাকলে দেশেই টাকা রাখত।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ
৯২২.৪৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দিল ঢাবি সিন্ডিকেট
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিন্ডিকেট।
রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি এই বাজেট অনুমোদন করে।
ঢাবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ সভায় প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন যা আগামী ১৬ জুন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে উপস্থাপনের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর এ বাজেটের পরিমাণ ছিল ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
‘হলের সিট দখল’ নিয়ে ঢাবিতে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ
সরকারের সুবিধাভোগীদের স্বার্থ রক্ষায় বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে: বিএনপি
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট শুধু সরকারের সুবিধাভোগীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই বাজেট কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের বাজেট নয়। এটা শুধু অর্থ পাচারকারী ও যারা ডলার পাচার করে তাদের বাজেট।’
তিনি বলেন, ‘দেশের এই কঠিন সময়ে এবারের বাজেট সম্পূর্ণ অবাস্তব বাজেট। এটি শুধু সরকার সমর্থিত লোকদের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে।’
শনিবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় বাজেট নিয়ে দলটির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে ফখরুল এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন বড় চ্যালেঞ্জ: এফবিসিসিআই
এর আগে বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ পাচারকারীদের দায়মুক্তির প্রস্তাব দেয়ায় সরকারের নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, লুটেরাদের অবৈধ অর্থ বৈধ ও নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিতে নতুন বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও তাদের আত্মীয়স্বজন এবং ব্যবসায়ীদের বিদেশে টাকা পাচারের সুযোগ তৈরি করতেও এই বাজেট করা হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, চাল, ডাল, লবণ, চিনি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি এবং অন্যান্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ও ইউটিলিটি সার্ভিসের দাম কমানোর কার্যকর কোনো কৌশল না নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সম্পদ বাড়াতে ও অর্থ উপার্জনের সুযোগ দিতে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
অর্থ পাচারকারীদের জন্য প্রস্তাবিত দায়মুক্তিকে তিনি অবৈধ বলেছেন। ‘এটি শুধু অনৈতিকই নয়, আইনের পরিপন্থীও। এটি দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে ক্ষমা করার সমতুল্য।’
ফখরুল বলেন, এই পদক্ষেপ চলমান অর্থপাচারের মামলার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলবে এবং পাচারকারীরা আরও বেশি অর্থ বিদেশে পাচার করতে উৎসাহিত হবে। ‘এটি একটি অন্যায়, বেপরোয়া ও আত্মঘাতী পদক্ষেপ।’
আরও পড়ুন: বাজেটে নিম্ন-মধ্যম আয়ের জনগণের জন্য কোনো সুখবর নেই: সিপিডি
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি একটি অসাংবিধানিক পদক্ষেপ যা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের তথাকথিত জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার সুযোগ বাতিলের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান বিএনপির এই নেতা।
একইসঙ্গে অবিলম্বে অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমে স্বচ্ছতা আনতে আর্থিক ও ব্যয় নিরীক্ষা বাস্তবায়নের দাবি আইসিএমএবির
অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমে স্বচ্ছতা আনতে আর্থিক নিরীক্ষার পাশাপাশি ব্যয় নিরীক্ষা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)।
আইসিএমএবি সভাপতি মো. মামুনুর রশীদ বলেন, প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
শনিবার বাজেট পরবর্তী সংস্থাটির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ বছর ভ্যাট আইনে অনেক বাস্তব ও ব্যবসা-বান্ধব পদক্ষেপ নেয়া হলেও ব্যবসা সহজ, স্বচ্ছ ও রাজস্ব বাড়াতে সিএমএ অন্তর্ভুক্ত করে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন বড় চ্যালেঞ্জ: এফবিসিসিআই
একটি সঠিক ও স্বচ্ছ অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের জন্য এবং রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য, অ্যাকাউন্টিং স্টেটমেন্টে সিএমএ দ্বারা প্রত্যয়িত পণ্য বিক্রির মূল্য থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মামুনুর রশীদ।
আইসিএমএবি সভাপতি বলেন, যদি ইনপুট আউটপুট সহগ (মুসক ৪.৩)সিএমএ দ্বারা প্রত্যয়িত হয়, তাহলে সঠিক মূল্যে ভ্যাট সংগ্রহ করা হবে। সিএমএ-এর সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করবে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্র ছাড়া পণ্যের মূল্যের পুনঃনিরীক্ষার প্রয়োজন হবে না।
তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে এই বিশাল বাজেট অর্জন করা সরকারের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ, তবে এটি অসম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেটের কয়েকটি কর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা দরকার: ড. আতিউর
সভাপতি বলেন, প্রবীণ নাগরিক যাদের আয়ের একমাত্র উৎস হলো পেনশন এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ তাদের রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি দেয়া উচিত।
তিনি খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা, শিল্পায়ন, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন, গার্মেন্টস খাতের বিশেষ সুবিধা, পরিবহন শিল্প ও বিমান শিল্পের বিশেষ সুবিধার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
আইসিএমএবি সভাপতি বলেন, সবাই শেয়ার বাজার বোঝে না, তাই ডিপিএসের সীমা ৬০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা করা উচিত।
আরও পড়ুন: বাজেট অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে: অর্থমন্ত্রী