মার্কিন ডলার
৭ মাসে ইউরোপে ১৩.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১৩.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য জানিয়েছে।
আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও পোল্যান্ডে রপ্তানি যথাক্রমে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ, ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ, ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে। তবে, ইতালিতে স্থানীয় পোশাক রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ: সালমান এফ রহমান
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার জার্মানিতে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে রপ্তানি কমেছে ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
একই সময়ে, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রপ্তানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩.৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৮৭১ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্ভাবন নীতি উন্মোচন
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি মাসে, অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে ৫ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে যা আগের বছরের একই সময়ে ৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল।
প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াতে রপ্তানি যথাক্রমে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ২৩ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে, ভারতে পোশাক রপ্তানি ২১ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে।
আরও পড়ুন: রপ্তানিতে নতুন পণ্য বাছাইয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
চলতি অর্থবছর ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ ২১৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে
ফেব্রুয়ারিতে ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন (২১৬ কোটি) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে; যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৮ মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মধ্যে সর্বোচ্চ।
রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈধ চ্যানেলে ২১৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগের মাস জানুয়ারি মাসে ২১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
বৈধ চ্যানেলে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১৩ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক ইউএনবিকে বলেন, সরকার ও ব্যাংকগুলো প্রণোদনা দেওয়ায় বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে তাদের আর্থিক উৎস থেকে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
প্রবাসী আয়ের ওপর সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে। মোট প্রণোদনা পাচ্ছে ৫ শতাংশ। ফলে বৈধ চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স আসছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, রেমিট্যান্সের ওপর ৫ শতাংশ প্রণোদনা সাময়িকভাবে রেমিট্যান্স বাড়াতে সহায়তা করবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান হবে না।
ড. রায়হান বলেন, ‘রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে। হুন্ডি বন্ধ করতে হলে মানি লন্ডারিং বন্ধ করতে হবে। এখন প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। যেকোনো উপায়ে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
বেনাপোলে বিপুল পরিমাণ মার্কিন ডলারসহ নারী আটক
যশোরের বেনাপোল চেকপোস্টে ৭৬ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলারসহ এক নারী যাত্রীকে আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে তাকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৪টি স্বর্ণের বার জব্দ, আটক ২
ভারত থেকে আসা ওই নারীর নাম নাসরিন আক্তার। তিনি কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানার সাতবাড়িয়া গ্রামের জামাল উদ্দিন এর মেয়ে।
বেনাপোল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের পরিদর্শক কামাল হোসেন জানান, শুল্ক গোয়েন্দার একটি দল ইমিগ্রেশন কাস্টমসে ভারত থেকে আসা ওই নারীকে আটক করে। এ সময় তার ব্যাগ থেকে ৭৬ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার উদ্ধার করা হয়। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকা।
আটক যাত্রীর বিরুদ্ধে আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান কামাল হোসেন।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত, স্বামী আটক
বেনাপোলে ২টি স্বর্ণের বার জব্দ, যুবক আটক
মেহেরপুর সীমান্তে ৩৩,২০০ মার্কিন ডলার উদ্ধার করেছে বিজিবি
মেহেরপুর জেলার সদর থানার অন্তর্গত বুড়িপোতা সীমান্ত এলাকা থেকে ৩২ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৩৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা) উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবি-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা থেকে বিজিবি-৬ ব্যাটালিয়নের একটি দল সকাল (শনিবার) সাড়ে ১০টার দিকে ১১৬/৪-এস নম্বর পিলারের কাছে অভিযান চালিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় কালো পলিথিনে মোড়ানো মার্কিন ডলার উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এ ঘটনায় মেহেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উদ্ধার অর্থ মেহেরপুর জেলার কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: টেকনাফে বিজিবি'র অভিযান: ২ লাখ ১০ হাজার ইয়াবা জব্দ
সাতক্ষীরায় ২০টি স্বর্ণের বার জব্দ, আটক ২: বিজিবি
এক মার্কিন ডলার ১২০ টাকা: মানিচেঞ্জাররা বলছেন হাত খালি, নেটওয়ার্কে বিক্রি হচ্ছে ডলার
মার্কিন ডলারের জন্য খোলা বাজারে জনসাধারণের নির্ভরতা বাড়ায় প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২১ টাকায়।
সম্প্রতি খোলা বাজারে বেশি দামে ডলার বিক্রির অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানি চেঞ্জারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পর খোলা বাজারে ডলারের সংকট আরও তীব্র হয়।
এ অবস্থায় অনেকেই তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতি ডলার ১২০-১২১ টাকায় ডলার বিক্রি করছেন। সূত্র জানিয়েছে, যারা চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে বিদেশে ভ্রমণ করছেন তাদের জন্য তারা ডলারের একমাত্র উৎস হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রার পরিসংখ্যান মিলছে না: অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন
জানতে চাইলে ঢাকার মতিঝিল এলাকার একটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের মালিক জামাল (ছদ্মনাম) আজ ইউএনবিকে বলেন, আমরা ১১৫ টাকায়ও ডলার কিনতেও পারি না। ‘আমরা কীভাবে প্রতি ডলার ১১৩ দশমিক ৩০ টাকায় বিক্রি করতে পারি।’
অন্যান্য অনেক মানি চেঞ্জার ও মার্কিন ডলারের স্বতন্ত্র ভাসমান ব্যবসায়ীরা মুদ্রার সরবরাহ সংকটের কারণে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
এক মাসের ব্যবধানে খোলা বাজারে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১২ টাকা থেকে ১২০-১২১ টাকায় পৌঁছেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানি চেঞ্জারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে প্রতি ডলার ১১৩ টাকা ৩০ পয়সা দরে বিক্রি করতে বলে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রিজার্ভ-সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করছে আইএমএফ
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে মার্কিন ডলারের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে এবং টাকার মান কমছে। ফলে খোলা বাজারে ডলারের দাম ১২০ টাকা ছাড়িয়েছে।
বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউস এবং ডলার ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে ইউএনবি জানতে পেরেছে যে বেশিরভাগ মানি চেঞ্জারের কাছে ডলার নেই।
মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব শেখ হেলাল সিকদার বলেন, মানি চেঞ্জারদের জন্য ডলারের ক্রয়মূল্য ১১১ দশমিক ৮০ টাকা এবং ১১৩ দশমিক ৩০ টাকা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি বলেন, ‘এই দামে কেউ ডলার পাচ্ছে না, তাই মানি চেঞ্জাররা এখন খালি হাতে বসে আছে।’
খোলা বাজারে ডলারের ঘাটতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেসবাউল হক ইউএনবিকে বলেন, ডলার লেনদেন হচ্ছে, কিন্তু সবাই তা বিক্রি করছে না।
আরও পড়ুন: মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় ঋণের সুদের হার বাড়াল বিবি
নভেম্বরে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে পারে বাংলাদেশ
চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে আইএমএফ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ৪ দশামিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।
সোমবার (২৮ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার ঢাকা সফর করেছেন এবং বিভিন্ন খাতে সন্তোষজনক অর্জন পেয়েছেন। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি যথাসময়ে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: আইএমএফ’র হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৩.৫৭ বিলিয়ন ডলার
ইতোমধ্যে, বাংলাদেশ কিছু খাতে সংস্কার করেছে এবং আইএমএফের প্রয়োজনীয় শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সর্বশেষ তথ্য হালনাগাদ করেছে। তাই ঋণের পরবর্তী কিস্তি সময়মতো পাওয়ার বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফের নির্ধারিত মানদণ্ডের নিচে নেমে এসেছে। এ কারণে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর।
তবে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি যথাসময়ে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল একাধিক বৈঠক করেছে। ঋণের দ্বিতীয় ধাপ যথাসময়ে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে ওই বৈঠকে আশ্বস্ত করেছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
গত ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৭০.৬২ মিলিয়ন ডলার।
২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সাত কিস্তিতে আইএমএফের পুরো ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের।
আরও পড়ুন: আইএমএফের শর্তের ভিত্তিতে বাজেট করা হয়নি: অর্থমন্ত্রী
২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী মুদ্রা
বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড এবং অর্থনৈতিক লেনদেনে সাবলীলতার দরুণ মুদ্রা বিশ্ব অর্থনীতির একটি অপরিহার্য উপাদান। স্বভাবতই সবগুলো মুদ্রা মূল্যমান এক পাল্লায় পরিমাপ করা হয় না। এমনকি কিছু কিছু মুদ্রা অন্যগুলোকে ছাড়িয়ে আশ্চর্যজনক উচ্চতায় উঠে আসে। এই আকাশচুম্বী তারতম্যের কারণ কী! বর্তমান বিশ্বের সব থেকে দামি ১০টি মুদ্রার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি চলুন পটভূমিটাও জেনে নেওয়া যাক।
বৈদেশিক মুদ্রার মান নির্ধারণ হয় কীভাবে?
বৈদেশিক মুদ্রার মূল্যমান মূলত নির্ধারিত হয় দু’টি প্রধান উপায়ে: ফ্লোটিং রেট ও ফিক্সড রেট।
ফ্লোটিং রেট
এই রেটটি নির্ধারিত হয় মুক্ত বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। যখন একটি মুদ্রার চাহিদা বেশি হয়, তখন এর মূল্য বাড়ে। আর চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে তার দামটা পড়তে থাকে। বিভিন্ন প্রযুক্তিগত এবং মৌলিক কারণ একটি ন্যায্য বিনিময় হার সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে প্রভাবিত করে। আর সেই অনুযায়ী পরিবর্তন হতে থাকে চাহিদা ও সরবরাহ।
উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয়দের মধ্যে মার্কিন ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ইউরোর তুলনায় মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যায়। এর পেছনে নটবর হিসেবে কাজ করে সুদের হারের পরিবর্তন, বেকারত্বের হার, মুদ্রাস্ফীতি ও ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলো।
ফিক্সড রেট
বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হিসেবে একটি দেশের সরকার নিজেদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট হার নির্ধারণ করে দেয়। এই হার বজায় রাখার জন্য সরকার সেই বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রা ক্রয় ও বিক্রয় করে।
আরও পড়ুন: আমদানিতে কড়াকড়ি সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে
স্বল্পমেয়াদে ফ্লোটিং রেটের গতিবিধিকে ঘিরে দানা বাধতে থাকে অনুমান ও গুজব। কখনো সত্যিকার অর্থেই রেটের বিপর্যয় ঘটে, যার সূত্র ধরে পরিবর্তিত হতে থাকে দৈনন্দিন সরবরাহ ও চাহিদা। স্বল্পমেয়াদের এই অস্থিরতার চরম অবস্থায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো হস্তক্ষেপ করে।
অর্থাৎ একটি মুদ্রার দাম অত্যধিক বেশি বা কম হয়ে গেলে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর এই হস্তক্ষেপ ঘটে। অন্যথায় এই অস্থিতিশীলতাটি দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং ঋণ পরিশোধের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সর্বপরি, মুদ্রার ফ্লোটিং রেটকে তুলনামূলকভাবে অনুকূল অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য ফিক্সড রেটের ব্যবস্থাগুলো প্রয়োগ করা হয়।
২০২৩ সালে পৃথিবীর শীর্ষ ১০ মূল্যবান মুদ্রা
কুয়েতি দিনার
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি মুদ্রা হলো কুয়েতি দিনার (কেডব্লিউডি), যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রায় যার বিনিময় হার ৩ দশমিক ২৭ মার্কিন ডলার। কুয়েতের ভৌগলিক অবস্থান সৌদি আরব এবং ইরাকের মাঝে হওয়ায় দেশটিকে তেল রপ্তানিকারক হিসেবে বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। ১৯৬০-এর দশকে প্রবর্তিত মুদ্রা দিনার সর্বপ্রথম ব্রিটিশ পাউন্ডের বিপরীতে ফিক্সড রেট করা হয়েছিল। এই কৌশলগত পদক্ষেপটি কুয়েতকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং একক মুদ্রামুখী ঝুঁকিগুলো হ্রাস করতে সাহায্য করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কুয়েতি দিনারের দাম ৩৫৩ দশমিক ৭০ টাকা।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতিকৃতি বিশিষ্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার এখন কি করা হবে?
ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য শুরু করল বাংলাদেশ
অবশেষে আজ মঙ্গলবার (১১জুলাই) থেকে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) বাণিজ্য লেনদেন শুরু করেছে বাংলাদেশ।
এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
এ উপলক্ষে ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকার একটি হোটেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা (এই উদ্যোগ নিয়ে) দীর্ঘদিন ধরেই চলছে; ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি করে আসছিলেন... এখন তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে।’
এখন ডলারের পাশাপাশি রুপিতেও ব্যবসা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে এবং ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে।
টাকা-রুপির ডুয়েল কারেন্সি কার্ড চালু হলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের সময় লেনদেনের খরচ কমে যাবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ও ভারতের মুদ্রায় বাণিজ্য লেনদেন রিজার্ভের ওপর চাপ কমাবে: হাইকমিশনার
ভারতীয় হাইকমিশনার আশা প্রকাশ করেছেন যে এই পদ্ধতির মাধ্যমে উভয় দেশই উপকৃত হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম; ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মো. সলিমুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিডা চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া; বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ; এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন; ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ এবং বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
সোনালী ব্যাঙ্ক ও ইস্টার্ন ব্যাংক অব বাংলাদেশ এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক অব ইন্ডিয়া হল দুই দেশের মধ্যে রুপিতে লেনদেনের জন্য মনোনীত ব্যাংক।
মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেসবাউল হক উদ্বোধনী দিনে এলসি খোলার কথা জানান।
আরও পড়ুন: ঢাকা-দিল্লি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ পরিকাঠামো নির্মাণে অগ্রাধিকার দেয়: হাইকমিশনার
‘মিলেট’ সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা করতে পারে: হাইকমিশনার
ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার লাফিয়ে বেড়ে ১০৯ টাকায় পৌঁছেছে
বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে মার্কিন ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০৯ টাকায় পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) তথ্য প্রকাশ করেছে যে বুধবার আন্তঃব্যাংক লেনদেন হয়েছে ১০৯ টাকায়। এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ডলারের লেনদেন হয় ১০৮ টাকা ৭০ পয়সা।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বুধবার ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ডলার বিনিময় করেছে ১০৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১০৯ টাকা পর্যন্ত।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি মাসে প্রায় প্রতিটি কর্মদিবসেই আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। ১ জুন প্রতি ডলারের দাম ছিল ১০৮ টাকা।
আরও পড়ুন: ১১ মাসে রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৫০.৫২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে: ইপিবি
এক বছর আগে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৯২ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের তুলনায় দেশীয় মুদ্রার (টাকা) ১৪ টাকা ৮৬ শতাংশ বা ১৬ টাকা ২০ পয়সা অবমূল্যায়ন হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমা, আমদানি ব্যয় প্রভাবিত এবং স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম আরও ধাক্কা দিয়েছে।
কিন্তু এর বিপরীতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ে তেমন গতি নেই।
আরও পড়ুন: 'স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলার, দারিদ্র্যসীমা ৩ শতাংশের কম হবে'
বৃহস্পতিবার থেকে রেমিট্যান্সের জন্য মার্কিন ডলারের দর ১০৮.৫ টাকা, রপ্তানির জন্য ১০৭ টাকা
মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির দর রেকর্ড সর্বনিম্নে
পাকিস্তানি রুপি মার্কিন ডলারের বিপরীতে একটি বড় ধাক্কা খেয়েছে। বৃহস্পতিবার স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের মতে, আন্তঃব্যাংক বাজারে ২৮৫ দশমিক ০৯ টাকার ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।
এটি বুধবারের ২৬৬ দশমিক ১১ টাকার সর্বশেষ মূল্য থেকে ছয় দশমিক ৬৬ শতাংশ কমেছে।
আরও পড়ুন: নাটোরে রুপা ও ভারতীয় রুপি উদ্ধার, আটক ২
সিনহুয়ার সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তানের আর্থিক উপদেষ্টা এবং বিনিয়োগ কৌশল সংস্থা আলফা বেটা কোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খুররম শেহজাদ বলেছেন, এই নাটকীয় পতনের মূল কারণ হলো বাজারে আস্থাহীনতা।
অদূর ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও সঙ্কুচিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্মসূচি এখনও মুলতুবি থাকায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও ভারতীয় রুপিকে বৈদেশিক বাণিজ্যে অনুমতি দেয়নি
‘রুপি বা টাকা ব্যবহার করুন’: বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে ডলারে লেনদেন থেকে বিরত থাকার আহ্বান ভারতের