মূল্যস্ফীতি
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ও মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রা সংস্কার জরুরি: বিশ্বব্যাংক
কোভিড-১৯ মহামারি থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়ালেও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, অর্থপ্রদানে ভারসাম্যের ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মহামারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট হালনাগাদে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি কমাতে জরুরি মুদ্রা সংস্কার এবং একক বিনিময় হার ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ হবে। বৃহত্তর বিনিময় হারের নমনীয়তা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, 'দেশের শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনীতির মূলনীতি অতীতের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে।’
দ্রুত ও শক্তিশালী রাজস্ব, আর্থিক খাত ও আর্থিক সংস্কার বাংলাদেশকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং প্রবৃদ্ধি পুনরায় ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের গল্প অনেক দেশের জন্য অনুপ্রেরণা: বিশ্বব্যাংক এমডি
বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বলেছে, অবকাঠামো ও মানব মূলধনে বিনিয়োগকে সমর্থন করার জন্য সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর পদক্ষেপসহ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সহনশীলতা গড়ে তুলতে কাঠামোগত সংস্কার মূল চাবিকাঠি হবে।
ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করেছে। একইসঙ্গে কঠোর তারল্যের শর্ত, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানি বিধিনিষেধ এবং জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন থেকে উদ্ভূত উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৪ সালে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও ধীর হয়েছে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগে ব্যাপক মন্দার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
ব্যাংকিং খাতে নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) অনুপাত বেশি এবং শিথিল সংজ্ঞা ও প্রতিবেদনের মান, সহনশীলতা ব্যবস্থা ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগের কারণে ব্যাংকিং খাতের চাপ কমছে।
২০২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি কমানো হয়েছে এবং চলতি অ্যাকাউন্টে উদ্বৃত্ত রয়েছে।
প্রতিবেদনের সহযোগী অংশে 'জবস ফর রেজিলিয়েন্স' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছর দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চল হিসেবে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৬ দশমিক শূন্য শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।’
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি মূলত ভারত ও বাংলাদেশের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি। সেই সঙ্গে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পুনরুদ্ধারও।
কিন্তু এই দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি বিভ্রান্তিকর বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি এখনও প্রাক-মহামারি স্তরের নিচে রয়েছে এবং সরকারি ব্যয়ের ওপর নির্ভরশীল।
ক্রমাগত কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলো টেকসই প্রবৃদ্ধিকে হ্রাস করার হুমকি দেয়, এই অঞ্চলের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জলবায়ু প্রভাবের প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতাকে বাধাপ্রাপ্ত করে।
দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি দ্রুত মন্থর হয়ে পড়েছে এবং দ্রুত বর্ধমান কর্মক্ষম জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এই অঞ্চলে যথেষ্ট কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উজ্জ্বল থাকলেও ভঙ্গুর রাজস্ব অবস্থা ও ক্রমবর্ধমান জলবায়ু অভিঘাত হতাশা তৈরি করেছে।’
এতে বলা হয়, ‘প্রবৃদ্ধি আরও সহনশীল করতে দেশগুলোকে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে।’
দক্ষিণ এশিয়ার কর্মক্ষম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ছাড়িয়ে গেছে।
কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার অংশ ২০০০ সাল থেকে হ্রাস পাচ্ছে।
২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মসংস্থানের অনুপাত ছিল ৫৯ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির অঞ্চলে এই হার ৭০ শতাংশ।
এটি একমাত্র অঞ্চল যেখানে গত দুই দশকে কর্মক্ষম পুরুষদের হার হ্রাস পেয়েছে এবং এই অঞ্চলে কর্মক্ষম বয়সের নারীদের কর্মসংস্থান সবচেয়ে কম অংশ রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিসকা ওনসোর্গ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া তার জনতাত্ত্বিক লভ্যাংশকে পুরোপুরি পুঁজি করতে এই মুহূর্তে ব্যর্থ হচ্ছে। সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যদি এই অঞ্চলে অন্যান্য উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির মতো কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার একটি বৃহত্তর অংশ যোগ হয়, তবে এর ফলাফল ১৬ শতাংশের বেশি হতে পারে।’
আরও পড়ুন: নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের বিশেষ তহবিল চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
মূল্যস্ফীতি মানুষের প্রধান উদ্বেগ কি না- নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি দেশের মানুষের প্রধান উদ্বেগের বিষয় হতে পারে না।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কী আলোচনা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ কমিয়ে দেন।
এরপর সাংবাদিকরা জোর দিয়ে বলেন এটিই মূল উদ্বেগ তবে একমাত্র নয়। তখন অর্থমন্ত্রী আবার বলেন, মূল বিষয় হলো কীভাবে এক কোটি লোককে পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কম দামে বিভিন্ন পণ্য পাচ্ছেন তারা।’
অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমরা এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছি। অর্থনৈতিক সূচকের উন্নতি হচ্ছে, অর্থনীতি নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক সব সূচক বাড়ছে, অনিশ্চয়তা-হতাশার কিছু নেই: অর্থমন্ত্রী
তিনি সাংবাদিকদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আর্থিক খাতের বাস্তব ও প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার আহ্বান জানান।
ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অনুযায়ী বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতুর মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন দৃশ্যমান।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানও অংশ নেন।
আরও পড়ুন: সরকার সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে: অর্থমন্ত্রী
আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে: সরকারি নথি
মূল্যস্ফীতির হার কমানো এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বলে এক সরকারি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাজেটের আকার ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে এবং আগের অর্থবছরগুলোর তুলনায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ কমিয়ে ব্যয় বৃদ্ধি ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও ৬ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে, চলতি বাজেটে যা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকার প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
নথিটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিদ্যমান বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার চিন্তাভাবনা করছেন নীতিনির্ধারকরা।
এছাড়া বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। ফলে অন্তত ৫২ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ফলে, অর্থনৈতিক সংকট ও কৃচ্ছ্র সাধন কর্মসূচি হাতে নিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেওয়া থেকে সরে আসছে অর্থ বিভাগ।
আরও পড়ুন: ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চেম্বার ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বাজেট প্রস্তাব আহ্বান করেছে এনবিআর
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব বৃহস্পতিবার ইউএনবিকে বলেন, ‘রাজস্ব আদায় কম, আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় নতুন বাজেট হবে বেশ সংকোচনমূলক। আগামী বছরও এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, আগামী বাজেটের আকার- মোট ব্যয় ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, আয় ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।
এক্ষেত্রে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় আকার বাড়ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত চলতি বছরের বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ১০ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে এবার তা ৮ শতাংশেরও কম বাড়বে। অনেক সামঞ্জস্য করে রাজস্ব আদায়ের আকার হিসাব করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব আদায় কমেছে, আমদানি-রপ্তানি কমছে। এসব বিষয় বিবেচনায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় বড় বাজেট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ১৫ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাজেটের আকার বেড়েছে ১২ গুণ: মন্ত্রী
সাবেক আমলা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সম্প্রসারণমূলক বাজেট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিটি সরবরাহে অনিশ্চয়তা রয়েছে, বিনিয়োগ আশানুরূপ সম্প্রসারিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন বেশ চ্যালেঞ্জিং।
মির্জ্জা আজিজুল বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখন ১০ শতাংশ, যা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।’
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সময়ের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট সম্প্রসারণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে বাজেটের আকার বাড়ানোয় কোনো লাভ নেই। ডলার ও রাজস্ব আদায়ে চ্যালেঞ্জ তো আছেই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বাজেটের আকার নির্ধারণ করতে হবে। ফলে স্বল্প প্রবৃদ্ধির বাজেট সঠিক হবে।’
আরও পড়ুন: সংসদে বাংলাদেশের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে: বিশ্বব্যাংক
নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের উপর চাপ অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) ঢাকায় আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের (অ্যামচাম) মধ্যাহ্নভোজ সভায় বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, এটি বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং দেশীয় বিনিময় হার, মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির উপর নির্ভর করে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, ‘গত দুই মাসের তথ্যে আমরা ইতোমধ্যেই এই পূর্বাভাসটিকে বাস্তবায়িত হতে দেখেছি। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস পেতে দেখা গেছে।’
তিনি বলেন, আগামীতে নীতির সমন্বয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থাকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে। অতিরিক্ত বিনিময় হারের নমনীয়তা প্রবাসীদের আনুষ্ঠানিক চ্যানেল ব্যবহার করে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবে এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি উৎসাহিত করবে।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের
সেক বলেছেন, ঋণের উপর সুদের হারের সীমা নির্ধারণ পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করাসহ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে মুদ্রানীতির সংস্কার জোরদার করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘একই সময়ে কার্যকর ব্যাংক তদারকির মাধ্যমে আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক মুদ্রানীতির সংস্কারগুলো একটি সঠিক পদক্ষেপ, তবে এগুলো বাস্তবায়নে গতি বাড়ানো প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, এসব বাস্তবায়ন হলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে পারে। যেহেতু আমদানি মূল্য মধ্যম মেয়াদে স্থিতিশীল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ২০২৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাল বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার অনুমোদন বিশ্বব্যাংকের
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের আশ্বাস অর্থমন্ত্রীর
সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ মমতাজ বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থপ্রদানের ভারসাম্য উন্নত হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, পরিশোধের ভারসাম্যবিষয়ক উন্নতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি সংসদে বেশ কিছু ধাপ উপস্থাপন করেন।
এর মধ্যে মার্কিন ডলার ও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা; রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য সঠিক মূল্যে পণ্য আমদানি নিশ্চিত করা; বাণিজ্যিক ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা ধারণের সীমা হ্রাস করা; ৫ হাজার ডলারের বেশি প্রবাসী আয়ের উৎস দেখানোর বাধ্যবাধকতা রহিত করা হয়েছে এবং পাইপলাইনে বৈদেশিক অর্থায়নের বিতরণ ত্বরান্বিত করা।
আরও পড়ুন: অর্থমন্ত্রী নীরব, এস আলমের তদন্ত অব্যাহত রাখতে হবে: সংসদে চুন্নু
জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্থবির শিল্প সমস্যা সমাধানে ২০০৯ সালে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১০ ও ২০১২ সালে ২৭৯টি শোচনীয় অবস্থার পোশাক শিল্প এবং ২০১১ ও ২০২১৫ সালে ১০০টি শোচণীয় অবস্থার টেক্সটাইল শিল্পকে ঋণ বাতিলের সার্কুলার জারি করা হয়।
ময়মনসিংহ-১১ আসনের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে 'কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতি ও কর্মসূচি’র আওতায় ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে ঋণ বিতরণের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাজার, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে বর্তমান প্রচলিত কলরেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কল রেট পুনর্নির্ধারণের কোনো পরিকল্পনা নেই।’
বর্তমানে সর্বোচ্চ কলরেট ২ টাকা ও সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটরদের একটি নির্দিষ্ট প্যাকেজ/অফার/বান্ডেলে অন-নেট এবং অফ-নেট ভয়েস কলের জন্য ট্যারিফের মধ্যে প্যাকেজ ডিজাইন করতে হবে।
সর্বোচ্চ রেট ২ টাকা হলেও অপারেটররা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ১ টাকার কম হারে বিভিন্ন প্যাকেজ ডিজাইন করে।
নওগাঁ-২ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ৪টি মোবাইল অপারেটর পরিচালিত হচ্ছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে, কোম্পানিগুলো সরকারকে ৩১৭৮.৯১ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র: অর্থমন্ত্রী
স্বর্ণ বনাম হীরা: কোন বিনিয়োগটি বেশি লাভজনক?
সামাজিক অবস্থান, আভিজাত্য, নির্ভরতা তৈরির বিকল্প হিসেবে স্বর্ণ ও হীরা ধাতব বস্তু দুটি স্ব স্ব ক্ষেত্রে মূল্যবান। কিন্তু সম্পদের সময় মূল্য থেকে অর্থোপার্জনের ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি সবার আগে আসবে, স্বর্ণ নাকি হীরা, কোন বিনিয়োগটি বেশি লাভজনক?
উভয় বিনিয়োগের মাঝেই কিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। আজকের আয়োজনে আপনি জানতে পারবেন স্বর্ণ ও হীরাতে বিনিয়োগের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো এবং বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে কোন কোন বিষয়গুলো আপনার খতিয়ে দেখা জরুরি।
স্বর্ণ বিনিয়োগের সুবিধা
অনিশ্চিত সময়ে স্থিতি রক্ষাকারী
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বাজারের অস্থিরতার সময় স্বর্ণকে প্রায়ই নিরাপদ অবলম্বন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রার মূল্যহ্রাস ব্যতিরেকে এই সম্পদ নিজের দাম ধরে রাখতে পারে।
তুলনামূলকভাবে নির্ভরযোগ্য খাত
বিভিন্ন সময়ে মূল্যমান বা লাভের ক্ষেত্রে বন্ড বা স্টকের থেকে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণতা বজায় রাখে স্বর্ণ। একাধিক খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সামগ্রিক বিনিয়োগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে এই ধাতবটি।
আরও পড়ুন: হংকংয়ে রেকর্ড ৪৯.৯ মিলিয়ন ডলারে গোলাপী হীরা বিক্রি
ভৌত সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণযোগ্য
স্বর্ণ একটি ভৌত সম্পদ যা আপনি কয়েন, বার বা গয়না আকারে সংরক্ষণ করতে পারেন। এই স্থিতিশীলতা স্টক বা বন্ডের মতো অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় অধিক নিরাপত্তার অনুভূতি প্রদান করতে পারে।
জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯.৭৪ শতাংশে নেমে এসেছে: বিবিএস
জুন মাসে মাসিক মূল্যস্ফীতির হার সামান্য কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের মাসের তুলনায় শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিবিএস অনুসারে, জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, মে মাসে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে বেড়েছে, যেখানে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি মে মাসে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ থেকে কমে ৯ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে বেকার সংখ্যা ২.৭০ লাখ বেড়েছে: বিবিএস
গ্রামীণ এলাকায় সার্বিক বা সাধারণ মূল্যস্ফীতি জুনে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা মে মাসে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ছিল। গ্রামীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি মে মাসে ৯.৩২ শতাংশ থেকে জুনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৯৫ শতাংশে।
শহরে সার্বিক বা সাধারণ মূল্যস্ফীতি মে মাসে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ থেকে জুনে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি (মে) ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে জুনে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) ওপর ভিত্তি করে মুদ্রাস্ফীতির হার একটি নির্দিষ্ট সেটের চূড়ান্ত পণ্য এবং পরিষেবার মূল্যের গড় পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে, যা গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বাজারের ঝুড়িকে প্রতিনিধিত্ব করে।
সিপিআই রিলিজ জনসংখ্যার তিনটি গোষ্ঠীকে জাতীয়, শহুরে ও গ্রামীণ হিসেবে উপস্থাপন করে। এপ্রিল ২০২৩ থেকে বিবিএস দ্বারা সিপিআই সংকলনের আধুনিকীকরণ মূলত আইএমএফ-এর সর্বশেষ ২০২০ সিপিআই ম্যানুয়াল অনুসরণ করে বাংলাদেশে সিপিআই সংকলনের একটি দৃষ্টান্ত পরিবর্তন।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে দেশের প্রতিটি পরিবারের গড় ঋণ ছিল ৭০ হাজার ৫০৬ টাকা: বিবিএস জরিপ
ফেব্রুয়ারিতে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে: বিবিএস
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ লাঘবে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর বরাতে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সবার প্রধান দায়িত্ব মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা।’
রাজধানীর শেরে বাংলানগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেক বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি স্থানীয় মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশি উৎস থেকে বৃহত্তর অর্থায়নের ওপর জোর দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেন।
বাংলাদেশ কম বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার করায় বৈদেশিক ঋণের পাইপলাইন বড় হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বিদেশি ঋণ আরও বড় আকারে ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ বাইরের কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়নের প্রবণতা বাড়লে বৈদেশিক ঋণ বিতরণ বাড়বে।
তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অর্থ বিভাগসহ কর্তৃপক্ষকে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য আরও বেশি বৈদেশিক তহবিল এবং বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার করে তা নিশ্চিত করতে বলেছেন, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে।
এসময় পর্যায়ক্রমে সৌরচালিত পাম্পের মাধ্যমে শতভাগ সেচ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
১১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বিসিএস (ট্যাক্স) একাডেমির ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (ফেজ-১)’- শীর্ষক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কম জমি ব্যবহার করার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার একনেক ৪৮টি জেলার ৮৮টি পৌরসভায় নগর শাসন ও অবকাঠামো উন্নয়নে ৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার একটিসহ মোট ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
আরও পড়ুন: আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে: জেনেভায় নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বৃহস্পতিবার এক তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে এই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী ও অবাস্তব বলে অভিহিত করেছে।
চলমান সংকটের প্রেক্ষাপটে বাজেটে ঘোষিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনুমানগুলো অলীক ও অপ্রাপ্য।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে যেসব পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়েছে তা দিয়ে মূল্যস্ফীতি রোধ ও মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা অসম্ভব।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, কিন্তু ৩৮টি সেবা পাওয়ার জন্য যাদের আয় করযোগ্য আয়ের নিচে নেমে আসে তাদের ওপর ন্যূনতম ২ হাজার টাকা ধার্য করাটা অযৌক্তিক।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আমদানি করি তা থেকে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই।’
তবে সিপিডি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য পৃথক করদাতাদের জন্য বিদ্যমান ৩ লাখ টাকা থেকে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাবের প্রশংসা করেছে।
আরও পড়ুন: ৭৫ হাজার কোটি টাকার কম রাজস্বে বাড়বে বাজেট ঘাটতি: সিপিডি
সম্পত্তি কর থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত কর আদায় করা যাবে: সিপিডি
১৫০০ কোটি টাকার নিরাপত্তা তহবিল অযোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য ব্যয়: সিপিডি‘র জরিপ
বাজেটে বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭.৫ ও মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাড়ে ৭ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ৫০ দশমিক ০৬ লাখ কোটি মূল্যের আনুমানিক গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি) নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ যা এখন ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অনুমানকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থনৈতিক চাপ সত্ত্বেও কেন এবার উচ্চ প্রবৃদ্ধি আশা করছেন সে বিষয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীলতা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধির গতিপথে ফিরে আসার এবং সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছি।’
আরও পড়ুন: সমস্ত নগদ-ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ইএফটি’র আওতায় আসবে: অর্থমন্ত্রী
কামাল ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ এবং জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চলমান মেগা-প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ করার দিকে মনোনিবেশ করেন।
অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এরপর এলো মহামারি। অর্থমন্ত্রী ২০২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন, কিন্তু প্রকৃত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল তিন দশমকি ৪৫ শতাংশ, যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মহামারি প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার করার পর ২০২১ অর্থবছরে বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে ৭ দশকি এক শতাংশ হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, চলতি হিসাবের ভারসাম্য বাড়ানো এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করা প্রধান চ্যালেঞ্জ: অর্থমন্ত্রী