ব্যাংকিং খাত
ব্যাংকিং খাতে প্রাথমিক স্তরে নারী নিয়োগ দ্বিগুণ হলেও পরিচালনায় এখনও পিছিয়ে
২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংকিং খাতে নারীদের কর্মসংস্থান বেড়েছে ১ হাজার ৪০৭টি।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে নারীদের কর্মসংস্থানের হার ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যেখানে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের মাত্র ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ সদস্য নারী।
লিঙ্গ সমতা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৬১টি ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৪৬ জন, যা ব্যাংকগুলোর মোট কর্মীর ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৪৩টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ২২ হাজার ২৪৮ জন, যা মোট কর্মীর ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মকর্তার অনুপাত সবচেয়ে বেশি। যা অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বোর্ড সদস্য হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বোর্ডে নারীদের অংশগ্রহণের হার ১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিকভাবে মুক্তির মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী হতে হবে: খাদ্যমন্ত্রী
অন্যদিকে আলোচিত সময়ে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নারী সদস্য নেই।
২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে ব্যাংকগুলোর জমা দেওয়া প্রতিবেদন অনুসারে, নারী কর্মীদের অংশগ্রহণের হার চাকরির প্রাথমিক পর্যায়ে ১৭ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং মাঝারি পর্যায়ে ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, উচ্চ পর্যায়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশের তুলনায় বেশি।
প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাংকিং খাতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি।
একই সঙ্গে ৩০ বছরের কম বয়সী নারী কর্মীদের অংশগ্রহণের হার ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ; যা তফসিলি ব্যাংকের তুলনায় এ হার দ্বিগুণেরও বেশি। তফসিলি ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশের বেশি।
২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান ১২ ধাপ এগিয়েছে।
আরও পড়ুন: নারী দিবসে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সমাবেশ বানচালের অভিযোগ
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য বিবেচনায় ২০২২ সালের ৭১তম স্থান থেকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ৫৯তম।
সিডিপির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সাধারণত নারীর কর্মসংস্থান বাড়ছে এবং নারীর কর্মসংস্থানের অনুপাত কমার সঙ্গে সেই হিসাবের মিল নেই।
ব্যাংকিং খাতে নারীর কর্মসংস্থানের অনুপাত কেন কমছে তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক ইউএনবিকে বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুসরণ করে ব্যাংকিং খাতে নারীর কর্মসংস্থান বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রেই নারীদের অগ্রাধিকার দেয়। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সম্পৃক্ত নারীদের উৎসাহিত করে ঋণ বিতরণ ও সুদ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও কাজ করে যাচ্ছে। নারী কর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ ও ডে কেয়ারের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি সেক্টরে নারীদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে আগ্রহী: নসরুল হামিদ
ব্যাংক ও ব্যাংকিং খাতের তথ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করুন: অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
অর্থনীতি নিয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ চিন্তাবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ব্যাংকিং খাত একটি দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড।
তিনি বলেন, 'ব্যাংকগুলো যখন ভালো করেছে, তখন অন্য খাতগুলোও ভালো করছে।’
অর্থনীতিকে সচল রাখতে তারা যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের একটি ব্যাংকের কর্মক্ষমতা জানার অধিকার রয়েছে- যেখানে তারা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ জমা দিচ্ছে। একটি ব্যাংকের আর্থিক কর্মক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য গ্রাহকদের জন্য সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ করা উচিত বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে তথ্যভিত্তিক গবেষণাগ্রন্থ 'ব্যাংকিং অ্যালমানাক'র পঞ্চম সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ব্যাংকিং অ্যালমানাক বই প্রকাশ দেশের আর্থিক খাতের জন্য একটি ভালো উদ্যোগ।
এই গতি ধরে রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের তথ্য সন্নিবেশ করে নিয়মিত বই প্রকাশ করা হচ্ছে।’ 'প্রকাশনা রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে ব্যাংকার, ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করে এমন লোক, গবেষক, বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের সবার জন্য বইটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’
আরও পড়ুন: ব্যাংককে সুরা কৃষ্ণ চাকমার জয়জয়কার
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ব্যাংকিং অ্যালমানাকের সম্পাদকীয় বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং অ্যালমানাক দেশের প্রথম এ ধরনের প্রকাশনা উদ্যোগ।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিটি সংস্করণে নতুন এবং জনস্বার্থের তথ্য যুক্ত করার চেষ্টা করি। আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এই জাতীয় প্রকাশনার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া যায় না। তারপরও আমরা সর্বশেষ তথ্য দিয়ে প্রকাশনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করছি।’
সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আমাদের যে তথ্য দিচ্ছে, আমরা তা অন্তর্ভুক্ত করে দিচ্ছি। অন্তত দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা সম্ভব। ভবিষ্যতে এটিকে আরও সমৃদ্ধ তথ্য ভান্ডারে পরিণত করার চেষ্টা করা হবে।’
এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আব্দুল বারী, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ফার্স্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নুরুল আমিন এবং ব্যাংকিং অ্যালমানাকের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ
৫ বছরের মধ্যে ব্যাংকিং খাত ডিজিটালাইজড হবে: প্রতিমন্ত্রী পলক
দেশের ব্যাংকিং খাতকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ডিজিটালাইজড করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অন্যতম সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী ইউসিবি
ব্যাংকিং খাতে অন্যতম সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী নির্বাচিত হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেড।